২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২২৭ জন

7 24
Avatar for Din
Written by
3 years ago

সারা দেশে গত বছর সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৭০২টি। এতে নিহত হয়েছে ৫ হাজার ২২৭ জন। আর আহত ৬ হাজার ৯৫৩ জন। এ সময় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়, ৩০৯টি। বছরটিতে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ২০১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিসচা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদন এবং নিসচার ১২০টি শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে নিসচা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে রেলপথে ১৬২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৯৮ জন, আহত ৩৪৭ জন। নৌপথে ৩০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৪ জন এবং আহত হয়েছে ১৫৭ জন, আর নিখোঁজ ১১০ জন। তবে গত বছর আকাশপথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে গত দুই বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা ১ হাজার ৫৯৯টি বেশি হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩৯ জন ও আহত হয়েছিল ৭ হাজার ৪২৫ জন। এর আগের বছর ৩ হাজার ৩৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৪৫ জন নিহত ও ৭ হাজার ৯০৮ জন আহত হয়েছিল।

নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। আর ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা, রাস্তা চলাচল ও পারাপারে মোবাইল ফোন ব্যবহার, জেব্রা ক্রসিং, আন্ডারপাস, পদচারী-সেতু ব্যবহার না করা, যত্রতত্র পারাপারের ফলে পথচারীরা দুর্ঘটনায় পড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা ও সঠিক তথ্য নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা করার দায়িত্ব সরকারের। এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসন থেকে নিরাপত্তা কাউন্সিলে নিয়মিত কোনো তথ্য প্রদান না করার কারণে সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয় না।’

২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯ জন বাসচালক-সহকারী ও ৭২ জন ট্রাকচালক ও সহকারী মারা গেছে। এছাড়া ২ হাজার ৬৬১ জন পথচারী মারা গেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিসচার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বড় শহর ও মহাসড়কগুলোয়। অবৈধ যানবাহন, ভ্যান, রিকশা, নছিমন, অটোরিকশা এজন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ২০১৯ সালে। গত বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ১ হাজার ৯৮টি। এতে ৬৪৮ জন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে নিসচার প্রতিবেদনে।

সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের(বিআরটিএ) ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৪টি। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৯০৩টি। ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৫১ জন চালক অবৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন।

নিসচা ২০১৯ সালের জেলাভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যও প্রকাশ করেছে। ঢাকায় ৩০৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৩৫ জন ও আহত হয়েছে ৩২৭ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়িতে। এ জেলায় সাতটি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৭ ও আহত হয়েছে ১০ জন। গত বছর সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ময়মনসিংহে, ৪৮৮ জন। আর সড়ক দুর্ঘটনায় কম মারা গেছে ঝালকাঠিতে। জেলাটিতে পাঁচজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিসচার পক্ষ থেকে আটটি সুপারিশ দেয়া হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল মানা, যত্রতত্র পার্কিং না করা, ওভারটেক বিষয়ে আইন প্রয়োগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়গুলো স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা, মিডিয়ায় সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো, দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মহাসড়ক ও প্রধান সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, সড়কের ত্রুটি দূর করা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসান-উল হক, উপদেষ্টা ও বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদসহ আরো অনেকে।

16
$ 0.00
Avatar for Din
Written by
3 years ago

Comments

sad

$ 0.00
3 years ago

Good

$ 0.00
3 years ago