তানিম যখন ডিভোর্স পেপারে সই করছিলো তার এক সেকেন্ড আগেও আমি ভেবেছিলাম সে তার সিদ্ধান্ত বদলাবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে সই করে দিলো।৭ বছরের সংসারের ইতি টানলো সে।
বাবা আমাকে কোর্ট থেকে টেনে বের করে আনলো।কারণ আমি হাঁটার মতো শক্তি পাচ্ছিলাম না।তানিম একটাবার আমার দিকে তাকালো না।তানিমের ছোট বোন তানফি আমার দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকালো।
এসে আমার হাত ধরলো তানফি।
-দেখো ভাবি...ওহ সরি।এখন তো তুমি ভাবি না।যাই হোক!যা হয়েছে তা তোমাদের দুজনের জন্য ভালো হয়েছে।
বাবা আমাকে টেনে সরিয়ে দিলেন।
-দেখো মা,আমার মেয়ের কি অবস্থা তা নিশ্চয়ই তুমি দেখতে পাচ্ছো।আর কোনো কথা না।প্লিজ!কখনো ধমক পর্যন্ত দিইনি আমার মেয়েকে।কেন?কারণ সেরকম কাজই করেনি আমার সায়মা।আজ কোর্টে ডিভোর্স পেপারে স্পষ্ট লেখা ছিলো,আমার মেয়ের চরিত্রহীনা।তোমার ভাইয়ের কথা তো লিখা ছিলো না।আসল চরিত্রহীন তো সে।
-আঙ্কেল,আপনি আমার ভাইযার ব্যাপারে কিচ্ছু বলবেন না।
-লেগেছে তো গায়ে?সত্যিটা বলার পরও গায়ে লেগেছে।আমার মেয়ের নামে যে মিথ্যে বলা হয়েছে তখন এই বাবার কেমন লেগেছে ভাবো।
চল সায়মা।এরা শুধু চরিত্রহীন না,হৃদয়হীনও।
আমি ঘুরে দাঁড়ালাম।একটু যাওয়ার পর দাঁড়িয়ে পিছনে তাকালাম।তানফি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। তানফির কাছে গেলাম।
-তানফি,তানিমকে বলে দিও,একটা সময় আমার কাছে সে যাবে।যেতে তাকে হবেই।বলে দিও,তাকে আমি আজ এখনই ক্ষমা করে দিয়েছি তবে কখনো গ্রহণ করবো না আর।
তানফি কিছু বলতে নিয়েছিলো।বলতে না দিয়েই আমি হাঁটা শুরু করি।আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে।আমি কিভাবে মুভ অন করবো তা ভাবতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।তানিমকে ভুলে থাকা আমার জন্য কতটা সহ্যকর তা আমি জানিনা।
তানিম আর আমার বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো।তখন আমি কলেজে ভর্তি হয়েছি মাত্র।তানিম আমাকে কলেজে যাওয়ার সময় দেখে আর তার পরেরদিনই বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসে।ছেলে এস্টাব্লিশড।ভালো পরিবার,দেখতে সুন্দর।আমার বাবা মাও রাজি হয়ে যায়।এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়।
আমি কখনো রিলেশনে জড়াইনি।তানিমের সাথে প্রথমদিনে আমার স্বপ্নের কথা বলেছি।আমি আমার জামাইকে কেমন ভালোবাসবো,তার থেকে কি কি চাই সব।
আমার চাওয়াগুলো সামান্য।বৃষ্টিতে ভেজা দুজনে,মাঝে মাঝে রিক্সায় ঘুরা,হাত ধরে সোডিয়াম লাইটের আলোতে হাঁটা,মাঝে মাঝে ছোট খাটো গিফট-হোক তা একটা ফুল বা চকলেট!
তানিমকে আর বলতে হয়নি।প্রতিদিন আসার সময় একটা ফুল এনে প্রপোজ করতো।মনে হতো যে প্রথমবার প্রপোজ করছে।ঘুরতে নিতো।এদিকে আমার পড়ালেখাও চলছিলো।শ্বশুর বাড়িতে মানুষ বলতে,আমি, শ্বশুর শ্বাশুড়ি,আমার ননদ আর তানিম।মিলেমিশে বেশ চলছিলো।
বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তানিমের অফিসের এক কলিগ আমাকে কল দেয়।
কল দিয়ে যা বলে তা শুনার পর হাত থেকে ফোন পড়ে যায় আমার.....(চলবে)
#ভালোবাসার_বহুরূপ