অন্তঃসত্ত্বা পর্ব১

0 10
Avatar for Devbratoanu
4 years ago

১২ বছরের বাচ্চা মেয়েটির চেকাপ করার পর যখন ডাক্তার, করিম সাহেবকে বললেন, "ওহ মাই গড! আপনার মেয়েতো প্রেগনেন্ট।" কথাটা শুনে করিম সাহেব রিতীমত হতভম্ব হয়ে গেলেন। এটা কী করে হলো! একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এই কাজ কে করবেন! তার বাড়িতে তিনি ছাড়া আর কোনো পুরুষ নেই। ডাক্তার সাহেব নিজেও বেশ চমকে গিয়েছেন রিপোর্টটা দেখে। তার এই পুরো জীবনে এত অল্প বয়সের কোনো মেয়েকে তিনি প্রেগনেন্ট হতে দেখেননি। এছাড়া মেয়েটার বয়সঃন্ধী শুরুর বয়সই হয়নি এখনও। কিন্তু চেকাপে তার পেটে স্পষ্ট একটা বাচ্চার ভ্রূণ দেখা যাচ্ছে। যার বয়স কম করে হলেও ৩-৪মাস। ভ্রূনটির মানব আকৃতির মতোই হয়ে গেছে। অথচ বাচ্চা মেয়েটির পেট দেখে কিছুই টের পাওয়া যায় না বাইরে থেকে। এই পেটে এই ভ্রূণের অস্থিত্ব থাকা অসম্ভব। কিন্তু রিপোর্ট এটাকেই প্রমাণ করতে চাইছে। তাই ডাক্তার আরও কয়েকবার চেকাপ করলেন। না, তার কোনো ভূল হয়নি। আসলেই মেয়েটির গর্ভে একটি সন্তান রয়েছে।

মেয়েটার নাম রুপা । রুপার বাবা করিম সাহেব ডাক্তারের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে রইলেন। রুপা ৩-৪দিন ধরে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কোনো খাবার মুখে দিচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই করিম সাহেব তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন। যদিও সমস্যাটা অনেক বছর ধরেই রুপার সাথে ঘটছে। আর ডাক্তার কী আজব কথা বলছে! তাই করিম সাহেব বেশ উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে বলতে লাগলেন, আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন ডাক্তার? এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে সম্পর্কে এমন অদ্ভুত কথা বলতে আপনার মুখে বাজল না! এর চেহারা দেখে আপনার কী মনে হয় এর গর্ভে এতবড় একটা সন্তান থাকবে? আর থাকলে তা শরীরের বাহিরের অংশ জানান দিবে না?

.

ডাক্তার সাহেব মুখ গোমড়া করে রইলেন। এর উত্তর তার কাছেও নেই। এমন অদ্ভুত ব্যাপার তিনি এর আগে কখনই দেখেন নি বা শুনেননি। সন্তান ধারণের ক্ষমতার জন্য মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট বয়স রয়েছে। সেটা ১৬ এর উপরে। কিন্তু মেয়েটার বয়স মাত্র ১২। করিম সাহেবও বেশ রেগে উত্তেজিত হয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করলেন। বাড়িতে ফিরে এসে রুপা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চুপচাপ তার মাথার পাশে বসে রইলেন তিনি। রুপা রং অসুস্থতা আগের মতই আছে। কিছুই খেতে চাচ্ছে না। কিছুদিন ধরেই প্রচন্ড জ্বর মেয়েটার। সামান্য জ্বর থেকে রোগটা বড় হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে একটা সুস্থ মস্তিষ্কের ডাক্তার এমন অদ্ভুত কথা কী করে বলতে পারেন! করিম সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আকাশ হোসেন। খুব বড় ডাক্তার তিনি। পরিবার নিয়ে গেছেন বিদেশে বেড়াতে। আজই তার দেশে ফেরার কথা। তাকে এই বিষয়ে জানানো দরকার। করিম সাহেব আকাশ হোসেনকে কল করে জানতে পারেন তিনি গতকালের ফ্লাইটেই দেশে ফিরেছেন। রুপার অসুস্থতার কথা শুনেই তিনি বলেন এখনই তিনি আসবেন।

আধা ঘন্টার মধ্যেই আকাশ তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে করিম সাহেবের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। রুপা বিছানায় শুয়ে আছে। আকাশ কিছুক্ষণ রুপার পরীক্ষা করে বলেন,তেমন কিছুইতো হয়নি। সামান্য জ্বর আর শরীরটা দুর্বল। কয়েকটা ভিটামিন খাওয়াতে হবে। এছাড়া ভালো কিছু খাবার খাওয়ালেই সে সুস্থ হয়ে যাবে। করিম সাহেব ডাক্তার আকাশ কে নিয়ে রুপার ঘর থেকে বের হলেন। রুপা কে চেকাপ করার পর সেই ডাক্তারের বলা সব কথা খুলে বললেন। আকাশ কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে বড় বড় চোখ করে করিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বেশ রেগেই বললেন, কোন ছাগল এমনটা বলেছে! একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে এই ধরণের রসিকতার কোনো মানে হয়! করিম সাহেব ডাক্তারের নাম বলতেই আকাশ বেশ অবাক হয়। এই ডাক্তারকে আকাশ চেনে। সে আকাশের চেয়েও সিনিয়র ডাক্তার। এবং শহরে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। তিনি অকারণে এইরকম অদ্ভুত একটা কথা কখনও বলবেন না।

.

আকাশ করিম সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলেন ডাক্তার ইলিয়াসের চেম্বারে। যেখানে রুপাকে চেকাপ করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে রুপা সম্পর্কে সব কিছু জানতে চাইলেন আকাশ। ডাক্তার ইলিয়াস তাকে রুপা সমস্ত রিপোর্ট দেখালেন। আকাশ রিপোর্টটা দেখে পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। রিপোর্টে রুপার গর্ভে স্পষ্ট একটা ভ্রুণের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। সাধারণত মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বয়স ২৪-২৬ সপ্তাহ হলে ভ্রূণ এমন আকৃতি হয়।

আকাশ বিস্ময়ভরা কন্ঠে ইলিয়াসকে বলল:

-ওহ মাই গড! একটা ১২ বছরের বাচ্চা মেয়ের গর্ভে এত বড় একটা ভ্রূণের অস্তিত্ব কী করে থাকতে পারে? এছাড়া মেয়েটাকে আমি মাত্র পরীক্ষা করে এলাম। তার শরীর দেখতে একেবারে স্বাভাবিক।

-আমিও কিছুই বুঝতে পারছি না। এইরকম বিরল কেস আমি এর আগে কখনও দেখিনি।

-এইটা কী টিউমার হতে পারে না?

-এতবড় একটা টিউমার হলে শরীরের বাহিরে তা জানান দিত অবশ্যই।

-মেয়েটাকে বাহির থেকে দেখতে তো স্বাভাবিক লাগে। তার কোনো বড় ধরণের রোগ থাকলেও বোঝার উপায় নেই। কিন্তু আপনি হঠাৎ এতকিছু বাদ দিয়ে মেয়েটার পেট চেক আপ করতে গেলেন কেন? আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আপনার কেন মনে হলো মেয়েটের পেটে কোনো রোগ থাকতে পারে?

-আসলে আমি মেয়েটাকে স্বাভাবিক ভাবেই চেক আপ করছিলাম। মেয়েটা প্রচন্ড জ্বরে একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। হঠাৎ সে ঘোরের মধ্যেই বলতে শুরু করল তার পেটের ভেতর থেকে নাকি অনেকদিন ধরেই কিছু একটা প্রচন্ড আঘাত করে, তাকে খুচায়। আমি বেশ অবাক হলাম। কৌতুহল বসতই চেকাপ করলাম। আর এইরকম অদ্ভুত একটা জিনিস দেখলাম।

.

ডাক্তার ইলিয়াস এবং ডাক্তার আকাশ বেশ কিছুক্ষণ নীরব ভাবে বসে রইলেন। এরপর ডাক্তার ইলিয়াস আকাশের কাছে রুপার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। এবং তিনি কী করে করিম সাহেবকে চেনেন তাও জানতে চাইলেন। আকাশ এবার বেশ উত্তেজনার সাথেই বলতে আরম্ভ করলেন। চলবে,,,

গল্পটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট এবং সাবস্ক্রাইব করুন ।

4
$ 0.00
Avatar for Devbratoanu
4 years ago

Comments