আমাদের মধ্যবিত্ত সংসার যদি একটা উপন্যাস হয়, বাবা সেখানে নেহাতই যেন একটা অতিথি চরিত্র। মা নিয়ে আমাদের কত কাব্য, গল্প, উপন্যাস। কিন্তু বাবা?
এমনকি মায়ের দোয়া হোটেল আছে। বাবার দোয়া হোটেল নাই। মায়ের দোয়া পরিবহনও দেখেছি। বাসে-ট্রাকে বড় করে লেখা থাকে 'মা'। মা শব্দটাও যত আবেগ তৈরি করি, বাবা শব্দটায় তার কোথায় যেন একটু খামতি!
বাবা যেন বাড়ির বাইরের দেয়াল। চার কি পাঁচ বছরে একবার রঙের যত্নআত্তি পায়, তাও দায়সারা চুনকাম। অথচ এই দেয়ালটাই সব ঝড়-ঝঞ্ছা-ধুলো; রোদ-বৃষ্টি-শীত-দাবদাহ বুক পেতে নেয়। ভেতরের সবাইকে সুরক্ষা দেওয়াতেই তার যত আনন্দ।
বেশির ভাগ পারিবারিক উৎসবেও যেন বাবারা দূরে চেয়ারে বসে থাকা নীরব দর্শক। তবে একদিন...
একদিন বাবাকে নিয়ে পুরো পরিবারে ভীষণ আলোড়ন হয়, একদিন তিনি সব মনোযোগের কেন্দ্রে। একদিন তাকে নিয়ে সব আবেগ, কান্না। কিন্তু সেদিন তাকে এর কিছুই স্পর্শ করে না।
সেদিন তিনি চোখ বুজে। মুখে স্থির নির্ভরতার হাসি, যে হাসিতে মিশে থাকে থাকে পরিবারের কঠিনতম দিনটাতেও সবাইকে অভয় দেওয়ার বার্তা। চিরঘুমের সেই শয্যায় গিয়েও যেন বাবা অভয় দিতে চান সবাইকে, ভয় কীসের,আমি তো আছিই!
বাবারা চলে গেলেই প্রকাণ্ড, আকস্মিক এক শূন্যতা হঠাৎ হাজির হয়। বাবারা চলে গেলেই আমরা বুঝি, কী বিরাট এক মহাপ্রাচীর ছিলেন। বড় কিছুর বিশালত্ব অনুভব তখনই করা যায়, যখন সেটা দূরে থাকে। বাবারা যেন সেই হিমালয়।
আর সেদিন হয়তো আমরা বুঝি, কী বোকামিই না করেছি। জড়িয়ে ধরার ছল খুঁজতে অন্তত প্রতি বছর দুটো ঈদের কোলাকুলিও তো ছিল!
[deleted]