বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি নানান কাজের সাথে যুক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় মুক্ত চিন্তার জায়গা। শিক্ষার্থীরা থিয়েটার, কবিতা আবৃত্তি, রক্তদানের সংগঠন, ফটোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজের সাথে যুক্ত থেকে তাদের মেধাকে আরও বিকশিত করে। বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফটোগ্রাফির কাজ করা শখে পরিণত হয়েছে। এমনই একজন শখের বশে ফটোগ্রাফি শুরু করা জাবি ক্যাম্পাসের ছবি তোলার জন্য যে নিপুণ দক্ষতার প্রয়োজন তা ইতিমধ্যে সে অর্জন করেছে। ফলে ক্যাম্পাসে এখন সে একজন জনপ্রিয় ছবি তোলার কারিগর।
ছবি তোলার এত অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন তিনি? আসাদুজ্জামান নূর জানান, যারা আমার তোলা ছবি দেখেন, তারা-ই আমার বড় অনুপ্রেরণা। একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপে ৬টি ছবি পোস্ট করেছিলাম, সেই ছবিগুলোতে ক্যাম্পাসের অনেক বড় ভাই-আপু, বন্ধু-বান্ধবী, ক্যাম্পাসের জুনিয়ররা কমেন্টে ছবির প্রশংসা করেছিল। ছবিগুলো ভালোলাগার ফলে ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র-জুনিয়র আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। বিশেষ করে যে সব বড় ভাই-আপুরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তারা ক্যাম্পাসে আসলে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। এ রকম ভালোলাগার অনেক গল্প আছে যেটা প্রতি মুহূর্তে ছবি তুলতে আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই ছবি তোলার প্রতি আগ্রহ ছিল তার কিন্তু সুযোগের অভাবে আর হয়ে ওঠেনি। ক্যাম্পাসে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি উঠাতাম। ২০১৭ সালে আমি DSLR ক্যামেরা কিনি, তখন থেকে আমার ফটোগ্রাফির যাত্রা শুরু।
ক্যামেরা হাতে পেয়ে আমি নিজের মতো ছবি তোলা শুরু করলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টা অনেক সুন্দর, সবাই এ কথা বলে। ছবি উঠাতাম আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের বড় প্লাটফর্ম ‘আমরা’ ও‘শুধুই ’ গ্রুপে পোস্ট করতাম। আমার নিজের চেয়ে অন্যদেরই আমার ছবির প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। আমার ফেসবুকের বন্ধুগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ভালোবাসাই আমাকে ছবি তুলতে, ফটোগ্রাফি করতে উৎসাহিত করেছে।
ছবি তুলতে গিয়ে মজার কিছু স্মৃতিও রয়েছে তার। তিনি বলেন, ছবি তুলতে গিয়ে মজার স্মৃতি বলতে অনেক ঘটনা তো আছেই। তবে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, ক্যাম্পাসের বৃষ্টির ছবি তুলতে বের হয়েছিলাম, একটি কাপল ছবি তুলেছিলাম, গ্রুপে আপলোড দেওয়ার পর জানতে পারি তারা কাপল না। অন্যদিকে ছবিটি দেখে মেয়েটির রিলেশন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে! পরে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ছবি তোলার জায়গা হিসেবে জাবি ক্যাম্পাসটা তার কাছে উপযুক্ত স্থান মনে হয়েছে। কারণ, তিনি বলেন, আমার ফটোগ্রাফির পূর্ণতা দিয়েছে জাবি ক্যাম্পাস। বসন্তের শুরুতে কোকিলের ডাক, আর ফুলের সমারোহে সাজে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দর ফুল ক্যাসিয়ান রেনিজেরা; এছাড়া কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু কাঠগোলাপ ইত্যাদি।
পশু-পাখির অভয়ারণ্য বলা যায় জাবিকে। শিয়াল, টিয়া, হলদে পা হরিয়াল, কাঠবিড়ালি সব কিছুর দেখা মিলবে এই ক্যাম্পাসে।
তার তোলা ছবি দিয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন ক্যাম্পাসের ফটোগ্রাফিক সোসাইটিতে। জাবি ক্যাম্পাসের ফটোগ্রাফিক সোসাইটি একটি ফটো প্রদর্শনীর আয়োজন করে, সেখানে তার ছবি সিলেক্ট হয় এবং তারা তাকে একটি সনদপত্রও দেয়।
তার তোলা ছবি ও ফটোগ্রাফি নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। তিনি ছবি তোলেন ভালোবাসা থেকেই, মূলত সবসময় চেষ্টা করেন পশু-পাখি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে। তিনি বলেন, এখন ছাত্র আছি, সঙ্গে বেকারও। বিভিন্ন সময় ছবি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়, ছবি সিলেকশন হয়, অর্থাভাবে কিংবা সময়ের অভাবে অংশগ্রহণ করা হয় না। কোনো একটা চাকরিতে যোগদানের পর ওদিকে মনোযোগ দেব। তিনি স্বপ্ন দেখছেন তার ছবি প্রদর্শিত হবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বড় বড় প্রদর্শনীতে।
তিনি বলেন, আমি সাধারণত পাখি, ফুল, সাপ, শিয়াল, কচ্ছপ, প্রকৃতির ছবি তুলতে পছন্দ করি। সাথে বৃষ্টিভেজা ক্যাম্পাস নিয়ে ভিডিও তৈরি করি, যেটা প্রায় সকলে পছন্দ করে, বিশেষ করে যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। আর এগুলো নিয়েই আমি যেতে চাই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে
অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল। ধন্যবাদ আপনাকে।