ভালোবাসার গল্প

4 20
Avatar for Bipul55
3 years ago

Excuse me যদি কিছু মনে না করেন আমি আপনাকে লিফট দিতে পারি?
-আমি আপনাকে চিনি না জানি না আপনার কাছ থেকে কেন লিফট নিব? 
-এই যে আমার ভোটার আইডি কার্ড এই যে আমার ভার্সিটির আইডি কার্ড আপনি চাইলে আমার বাইক এর কাগজ পত্র গুলো আপনার কাছে রাখতে পারেন, যদি আপনার ক্ষতি করি আমার ক্ষতি করতে আপনার তেমন সমস্যা হবে না।
-আপনি ঢাকা ভার্সিটি তে পরেন? আর রাস্তায় এইভাবে মেয়েদের লিফট দিয়ে বেরান! 
-আপনি প্রথম মেয়ে হবেন যাকে আমি সেধে লিফট দিতে চাচ্ছি, বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনার কাছে।
-আমাকে কেন দিতে চাচ্ছেন?
-কারন আপনাকে প্রথম দেখায় ই মনে হয়েছে আমার বাইক এর পিছনের সিট টা এতদিন আপানর জন্য ই খালি ছিল।
-ফ্লারট করছেন?
-জী করছি। আমি ঘন ঘন ব্রেক মারি না, নিরাপদ দূরত্তে বসে থাকতে পারবেন। আমি কি আপনাকে গন্তব্যে পৌছানোর একটা সুযোগ পেতে পারি ম্যাম?
-না পারেন না বলেই বাইক এর পিছনে বসে পরেছিল মিতু।

ভার্সিটি তে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় অবাক করে দিয়ে সাহিল তার নাম্বার বা নাম কিছুই জানতে চায় নি। মিতু অনেকটা শকের মতই খেল, বাইক দিয়ে যেতে যেতেই ভেবে রেখেছিল নাম্বার চাওয়ার পর কি বলবে। কি অদ্ভুত ছেলে, শুধু বলল আবার দেখা হবে। মিতু ক্যাম্পাস এ ঢুকে যাচ্ছে দেখেও একবার পিছন থেকে ডাকল না।

মিতু পরের কয়দিন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সাহিল কে খুজতে লাগল নিজের অজান্তেই। মিতু প্রায় নিশ্চিত ছিল সাহিল বাইক নিয়ে ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে থাকবে, কিন্তু না প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল সাহিল এর কোন পাত্তা  নেই। মিতু মনে মনে ভাবছে সাহিল কে কেন খোঁজে সে! প্রথম দেখাতে ছেলেটা কে ভাল লেগে গেছে তার, নাকি মিতুর মত সুন্দরী একটা মেয়ের প্রতি কোন আগ্রহ দেখাল না সাহিল সেই জিদ চেপে বসেছে তার ভিতর! জেদ থেকে ভালবাসার জন্ম হয় নাকি ভালবাসা থেকে জেদ এর জন্ম হয়? কি সব ভাবছে মিতু।

মিতুকে আবারো অবাক করে দিয়ে বাসার সামনে এসে হাজির সাহিল হাতে একটা কেক আর একগুচ্ছ ফুল। ।সাহিল কেক আর ফুল নিয়ে এগিয়ে যেতেই মিতু পুরোপুরি না চেনার ভান করল, আর মনে মনে ভাবল এই কয়দিন অপেক্ষায় রাখার শিক্ষাটা আজ দিবে।

-কে আপনি কি চান? 
-পুরো ২ ঘণ্টা দাড় করিয়ে রেখেছেন ভার্সিটিতে, কি করেন এতক্ষণ? তাড়াতাড়ি এগুলো হাতে নিয়ে বাইক এর পিছনে বসেন কোন একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে এটা কেটে চলে যাই আপনাকে বার্থ ডে উইশ করা ছাড়াও আমার দুনিয়া তে আরও কাজ আছে।

মিতু তার অভিনয় টা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারল না সুবোধ মেয়ের মত বাইক এর পিছনে বসে পরল। সাহিল আগেই রেস্টুরেন্ট বুক করে রেখেছিল। পুরো রেস্টুরেন্ট সাজানো মিতু কে সারপ্রাইজ দেয়ার সব ব্যাবস্থাই করা ছিল ।

-শুভ জন্মদিন মিতু।

মিতুর মনে অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু সে এতটা ই অবাক হয়েছে যে কোন প্রশ্ন করা ই হল না শুধু উত্তরে বলল থ্যাঙ্কস। কেক কাটা শেষ করে মিতুকে বাসায় পৌঁছে দিল সাহিল।

আপনি কিন্তু এখনো বললেন না কিভাবে আমার সব ইনফরমেশন পেয়েছেন। আপনি যদি এখনি ক্লিয়ার না করেন তাহলে এরপর আপনার সাথে আমি কথা বলব না, চিৎকার করে মানুষ জড়ো করব। আর ভুলেও আমার বাসার সামনে আসবেন না আমার বড় ভাই কে তো চেনেন না, আজকে বার্থ ডে ছিল তাই কিছু বললাম না।

বলার আর বাকি রেখেছেন কই! আপনার একটা বিশেষ দিন আজকে হাসি মুখে কথা বলবেন, এত কিছু করার জন্য ধন্যবাদ জানাবেন, তা না করে রিতিমত হুমকি দিচ্ছেন। যা ই হোক আপনার এইসব ভাই এর হুমকি দিয়ে আমাকে লাভ নাই আমি কাওকে ভয় পাই না, আপনার বাসার সামনে আসলে সমস্যা হলে আসব না বাট মনে রাখবেন আমি যখন চাইব আপনাকে ঠিক ই খুঁজে নিব বলেই চলে গেল সাহিল।

মিতু আবারো আস্তে আস্তে দূরে চলে যাওয়া বাইকটার দিকে তাকিয়ে রইল আর ভাবতে থাকল সাহিল কে ভয় দেখনোর জন্য সে একটু আগে কি হাস্যকর একটা মিথ্যা বলেছে, বানিয়ে বানিয়ে তার ছোট ভাইকে বড় ভাই বানিয়ে দিয়েছে।

আবারো বেশ কয়দিন খোঁজ নেই সাহিলের, এবার মিতুর সত্যি খুব রাগ হচ্ছে। কি অদ্ভুত তার সব কিছুই জানে ইচ্ছা করলেই দেখা করতে পারে অথচ মিতুর অপেক্ষা করতে হয় কবে সে আসবে। যেই মিতুর পিছনে এতো ছেলে ঘোরে, তার আজকে একটা ছেলের কথা ভাবতে হচ্ছে এটা ভেবেই খুব রাগ হচ্ছিল মিতুর। হঠাৎ একটা মেসেজ এ ঘোর কাটল।

কি আমার কথা ভাবছ তো? শুধু আমার কথা ভাবলেই হবে ক্লাস এ কি করাইছে একটু খুলে দেখ। পড়ালেখার তো কোন নাম গন্ধ নাই তোমার, এমন হলে হবে?

মিতু বাসায় এসে এখনও ব্যগ খুলেনি, কিভাবে জানল সাহিল! এক দৌড়এ যেয়ে ব্যগ টা খুলল। মিতু যখন ওয়াশ রুম এ গিয়েছিল তখন নিশ্চয় ব্যগ এ গিফট এর প্যকেট টা  রেখছিল সাহিল।

মিতু স্বপ্নেও ভাবেনি তাকে কেও বার্থ ডে তে ডায়মণ্ড রিং দিবে, মিতু খুশি ও হল আবার রাগ ও হল কি হতো নিজের হাতে পরিয়ে দিলে, সারপ্রাইস এর তো একটা সীমা আছে, প্যকেট এ একটা নাম্বার সাথে সাথেই ফোন দিল মিতু।
-হ্যালো 
-কে বলছেন?
-আমি কে আপনি জানেন না! ফাইজলামি করেন?
কি দরকার ছিল দামি গিফট দেয়ার! আর আপনার কাছ থেকে আমি এইটা নিবোই বা কেন? কালকে এটা ফেরত নিয়ে যাবেন।

-আপনি ভুল করছেন আপু আমি সাহিল না আমি সাহিল এর বন্ধু। ও আমাকে বলেছিল আপনি ফোন দিবেন। আপনি ফোন দিচ্ছেন না পরে, আপানাকে ও এসএমএস করেছে। ওইটা ই সাহিল এর নাম্বার।
-ও ঠিক আছে ভাইয়া, আমি ফোন দিচ্ছি।

দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইলে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই লাইন টা এর আগে এত খারাপ লাগে নি কখনও মিতুর কানে, সাথে সাথে সাহিল এর বন্ধুর নাম্বার এ ফোন দিল সেইটা ও বন্ধ। রাগে সেই রাত এ ঘুম হইনি মিতুর।

-হ্যালো 
-এখনও ঘুম থেকে উঠো নি? তোমার তো ৩০ মিনিট পর ক্লাস, কখন রেডি হবে, কখন যাবে? যাকগে, দেরি যখন হয়েই গেছে আজকে আর ক্লাস এ যেয়ে কাজ নাই। ধানমণ্ডি লেক এ চলে আসো। বাইক নষ্ট তুমি একটু কষ্ট করে রিক্সা দিয়ে চলে আসো।

-আপনি বললেই আমার যেতে হবে? আমার ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে আমি আসব না।
-মিতু ছেলেমানুষি কথা বল না তো, তোমার আজকে একটা ই ক্লাস সেটাও অলরেডি লেট। সো ক্লাস এর কথা ভুলে যাও সুন্দর করে সাজুগুজু করে কপালে একটা কাল টিপ পরে চলে আসো। আর আমার গিফট টা ফেরত দিতে হবে না?

মিতু আসলেই টিপ পরল, একটু সাজুগুজু ও করল কিন্তু আবারো শুনতে হল দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। লেক এ কপোত কপোতীদের মাঝে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল মিতুর। মিতু একবার ভেবছিল রিংটা লেকের পানিতে ফেলে দিয়ে রাগ কমাবে, কিন্তু পারল না। এই ছেলের সাথে আর কথা বলবে না ঠিক করে বাসায় চলে আসল। বাসায় এসে কাল টিপের পাতাটা কুচি কুচি করে কাটল। রাগে চোখে পানি চলে আসছিল প্রায়।

ঠিক ১১ টার দিকে ভার্সিটির গেইট এর সামনে থাকব। রাত এ এসএমএস টা পড়া হইনি সকালে ঘুম ভেঙ্গে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অলরেডি ১১.২০, এখনও কি দাড়িয়ে আছে সাহিল! ভাবতে ভাবতে একলাফে বিছানা ছেড়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে রওনা দিল মিতু।

-তোমার সময় জ্ঞান কবে হবে মিতু! এখন ১২.৩০ বাজে, এই রোদ এর ভিতর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়? এতক্ষণ এমন কোন মেয়ে নাই যে আমি তাকাই নাই সবাই যে আমকে কি ভাবছে আল্লাহ জানে।
-আপনার উল্টা ঝারি অফ করেন, হেলমেট পরে আছেন কেন মানুষ আপানকে কিছুই ভাবে নাই, পাগল ভাবছে। 
-হেলমেট পরে আছি কারন আমার ধারনা তুমি আমাকে থাপ্পর দিতে পার। আর তোমার থাপ্পর না হয় খাইলাম বাট বাংলাদেশের পাবলিক এই টাইপ সিচুয়েসন এ সাত পাচ না ভেবে মেয়ের পক্ষ ধরে মাইর শুরু করে দেয় সকাল সকাল গণধোলাই খাওয়ার ইচ্ছা নাই।

মিতু মুচকি হাসি দিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল যেন সাহিল না দেখে, গম্ভীর মুখ করে বলল: মারব না আমি মশা মেরে হাত নষ্ট করি না এই নেন আপনার রিং।
-আরে এইটা নিতেই তো আসলাম, বাট এখানে না বাইক এ উঠো।
-লেক এ কেন নিয়া আসছেন! আমি কি আপনার সাথে প্রেম করতে আসছি? কালকে যেটা করছেন আপনার উপর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে এটা ফেরত নিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন।
-আজকে তোমার সব কেন’র উত্তর দিতেই আসছি, বল কি কি জানতে চাও। আচ্ছা আমি ই বলি, প্রথমে কালকের কাহিনী বলি কালকে আমি তোমার সাথে দেখা করার জন্য বের হলাম। এরপর পথে দেখি একজন লোক এক্সিডেন্ট করে গুরুতর আহত। রাস্তার কেউ এগিয়ে আসছে না। পুলিশ আসার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। ততক্ষণে লোকটা মারা যাইত। আমি সাথে সাথে মোবাইল টা অফ করে দিলাম আর উনাকে নিয়া হসপিটাল এ গেলাম।
এইবার বলি আমি তোমার সব ইনফরমেশন কই থেকে জানি।
এই সবি তোমার বান্ধবীর অবদান। মনে আছে তোমার প্রথম যেদিন আমি তোমাকে ভার্সিটির সামনে পিক করে দেই আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়া দাড়িয়ে ছিলাম, তুমি গেইট দিয়ে ঢোকার সময় একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলা। তুমি ক্যাম্পাস এ ঢোকার পর হাতে পায়ে ধরে অরে লাঞ্চ করাইয়া তোমার সব জানছি। তুমি প্লীজ ওর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিও না। ও আমাকে কিছু না বললেও আমি তোমাকে ঠিক ই খুঁজে নিতাম। তুমি কোন এলাকায় থাক জানি, কোন ভার্সিটি তে পড় জানি, একটু কষ্ট হতো বাট পেয়ে যেতাম স্বর্ণা জাস্ট আমার কষ্ট টা কমিয়ে দিয়েছে। আর তোমাকে ৭ দিন অপেক্ষা করানোর কারন হচ্ছে স্বর্ণার কাছ থেকে তোমার বার্থ ডেট জেনেছিলাম, তাই ভাবলাম একেবারে ঐদিন ই চমকে দেই।
-হুম বুজলাম সারপ্রাইজ এর ডিগ্রী নিয়ে রেখেছেন আপনি। এখন বলেন তো প্রথম পরিচয়ে ডাইমণ্ড এর রিং দেয়ার মানে কি! আপনি আমাকে কেন এত দামি গিফট দিবেন?
-আমি তোমাকে দিব না তো কাকে দিব! আমি কি আমার হবু বউ এর বার্থ ডে তে তাকে একটা রিং দিতে পারি না! কি আজিব। আর এখন থেকে দিয়ে রাখলাম যেন বিয়ের সময় একেবারে বেশি না দিতে হয়, আগে থেকে একটু একটু দিয়ে কমিয়ে রাখা আর কি।
-সরি বুজলাম না, কার কথা বলতেছেন! কে হবু বউ! 
-আমি স্পষ্টভাষী এবং বাস্তববাদী। তোমার যেই কোন উত্তর শোনার জন্য আমি প্রস্তু  ।এখন ২.৩০ বাজে, তুমি যদি আমার পাশে ২.৪০ পর্যন্ত বসে থাক, তাহলে সারাজীবন আমার পাশেই থাকতে হবে। আর এর আগে চলে গেলে আমি তোমাকে আটকাবনা। এই আমি চোখ বন্ধ করলাম, মোবাইল এ অ্যালার্ম দিয়ে রাখলাম। অ্যালার্ম বাজার পর চোখ খুলে যদি তোমাকে দেখি ভাবব তুমি রাজি। ও তার আগে একটা কথা কালকে আমি ইচ্ছা করেই আসি নি, রাস্তায় এক্সিডেন্ট হসপিটাল এ নিয়ে যাওয়ার কথা টা মিথ্যা ছিল। তুমি আসার পর সাথে সাথে ওইটা না বললে তোমার মাথা ঠাণ্ডা হতো না। আর এখন সত্য কথা টা বলে দিলাম। কারন যদি তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হয় তাহলে ওইটা ই তোমাকে বলা আমার শেষ মিথ্যা হবে। আর যদি না হয় তাহলে তোমার সাথে আমার এখন বলা কথা গুলো শেষ কথা হবে। আমি তোমাকে আর কখনও জ্বালাবো না।

মিতু সাহিল কে কিছুই বলল না, বাসায় চলে আসল। সাহিল ও আর কোন যোগাযোগ করে নি, মিতু প্রায় প্রতিদিন ই স্বর্ণাকে জিজ্ঞেস করে সাহিল কোন যোগাযোগ করেছে কিনা।

৩ দিন পর মিতু নিজেই সাহিল কে এসএমএস দিলঃ রিং টা কোন টোকাই পাশ থেকে নিয়ে যায় নাই তো? ওইটা নিজের হাতে পরিয়ে দিবে না?

সাহিল আর মিতুর প্রেম বেশ ভাল ভাবে চলতে লাগলো, প্রায় প্রতিদিন ই দেখা করতো। ঢাকার এমন কোন রেস্টুরেন্ট নাই যেখানে তাদের পা পরে নি। মিতুর কাজ ছিল রাতে ফেইসবুক এর রিভিউ গ্রুপ গুলো থেকে রেস্টুরেন্ট এর এড্রেস বের করা আর প্রতিদিন প্ল্যান বানানো। মাঝে মাঝে সাহিল এর বন্ধুর বাসায় বা কোন রিসোর্ট এ চলে যেত দুইজনে। দুইজনের মধ্যে তেমন ঝগড়া হতো না বললেই চলে। শুধু সাহিল ঢাকা ভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে কেন চাকরি করে না সেটা নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হতো। সাহিল বাবার ব্যবসা দেখছে, নিজেও টুকটাক ব্যবসা করছে। মানুষ তো চাকরি করে টাকার জন্যই, ওইটা কোন সমস্যা না হলে আরেকজনের অধীনে কেন চাকরি করবে। সাহিল এর যুক্তির পেরে উঠ তো না মিতু। 
.
.
আজ মিতুর বিয়ে। জাফর সাহিল এর সাথে দীর্ঘ ৩ বছরের সম্পর্ক, ফিজিকেল রিলেশন সব কিছু জেনেও রাজি হয়েছে। একটা ছেলের পক্ষে এই ব্যপার গুলো মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু জাফর সব শুনে শুধু বলেছিল আমি তোমার বর্তমান টা কে ভালবাসতে চাই। অতীত তো আমারও ছিল, তুমি একটা মেয়ে বলে সেটা বয়ে নিয়ে বেড়াবে আর আমি ছেলে বলে পার পেয়ে যাব  তা কেন। আমরা দুইজন কেউ কারো অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করব না, তাহলেই হবে। মিতুর কথা গুলো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না, আসলে বিশ্বাস করবেই বা কি করে একটা মানুষের সাথে ৩ বছর থেকেও তাকে চেনা যাইনি। আর এক মুহূর্তের ভিতর কিভাবে চিনবে সে। মিতুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মেনে নিয়েছে সব কিছু! না জাফরের মনে অন্য কিছু ঘুরছিল! মিতুর এত কিছু ভাবার সময় ছিল না। বাবা অসুস্থ, কখন কি হয় বলা যায় না। মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে যেতে পারলে যে মরেও শান্তি পেত না। আর বিয়ে না করেই বা কি করবে! কার জন্য অপেক্ষা করবে!

জাফর আর মিতুর সংসার বেশ ভাল ভাবেই চলতে লাগল, জাফর কখনও তার অতীত নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। দুইজন হানিমুন এ নেপাল ইন্ডিয়া ভুটান ঘুরে এসেছে। কখন যে মিতু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল জাফরের সাথে নিজেও টের পায় নি। জাফর মাঝেই মাঝেই মিতুর জন্য ছোট খাট গিফট এনে চমকে দিত। নিজে চুলে বেনুনি করে দিত নেইল পালিশ লাগিয়ে দিত। মিতু শুধু ভাবতো, এতো ভাল কেন মানুষ টা! তাকে ঠকায়নি তো মিতু?

একটা বাচ্চার অভাব ছাড়া আর কোন অভাব ছিল না ঘরে, ভালবাসার অভাব না থাকলে অন্য কোন অভাব চোখে পরে না। ঠিক কবে কিভাবে ভালবাসার অভাব টা ঘরে এসে পরল মনে করতে পারছে না মিতু। আজকাল মাঝে মাঝে ছোট ছোট গিফট পাওয়া ভুলেই গেছে মিতু, এমন কি বার্থ ডে কিংবা মেরিজ ডে টাও কোন বিশেষ দিন না জাফরের কাছে। আজকাল চুলে বেনুনি বা আঙ্গুলে নেইল পালিশ আছে কিনা খেয়াল করে না জাফর। দুইজন অনেক্ষন একসাথে থাকেলও বোঝার উপায় নেই ঘরে দুইজন মানুষ আছে। মিতু কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারে না একটা বাচ্চার অভাবে জাফর বদলে গেছে! নাকি মিতুর প্রতি তার মোহ কেটে গেছে! নাকি জাফর জেনে গেছে মিতুর এই বন্ধত্তের জন্য মিতু নিজেই দায়ী যা এখনও জাফরকে বলা হইনি!

মিতু অনেকবার বলার চেষ্টা করেছে জাফরকে বলতে। মিতু জন্ম থেকে বন্ধ্যা ছিল না সাহিল আর মিতুর সন্তান এসেছিল পেট এ। অনাগত সন্তান কে নষ্ট করতে যেয়ে আজীবনের জন্য সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সে। সে খুনি, নিজের সন্তানের খুনি।

জাফরের ব্যবহার ও দিনকে দিন খারাপ হতে লাগল, এ যেন অন্য এক মানুষ। মিতু কিছুতেই মেলাতে পারে না, প্রতিবাদ করার সাহস নেই মিতুর। তার অতীত জেনে বিয়ে করেছে সে, বন্ধাত্বের পর ও ছাড়ে নি তাকে। মিতু কৃতজ্ঞ জাফরের কাছে। কিন্তু যখন জাফরের মুখ থেকে মিতু কথায় কথায় অতীত নিয়ে কথা শুনতে লাগল তখন ঘেন্না ধরে গেছে জীবনের প্রতি।

মিতুর জীবনে শোনা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কথা ছিল যখন সাহিল বলেছিল “মিতু যা হবার হয়ে গেছে, এখন আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। অ্যাবোর্শান করে নাও। আর বিয়ের কয়েকমাস পর ই তুমি মা হবা, সবাই হাসাহাসি করবে। আমি তোমাকে বিয়ে করব, কিন্তু কিছুদিন পর। আপাতত অ্যাবোর্শান টা করে ফেল।“

মিতু সেদিন এবরসন করেছিল ঠিক ই কিন্তু সাহিল এর সাথে আর কোন যোগাযোগ করে নি। ঐ একদিন এর কথা গুলো এখনও কানে বাজে, জাফর এখন প্রতিদিন ই সাহিল কে মনে করিয়ে দেয়। মিতুর প্রতিদিন ই মনে হয় সে খুনি।

কার অভিশাপ এ এমন হয়ে গেল মিতুর জীবনটা! অনাগত সন্তান হত্যা নাকি আবিরের? যাকে সে সাহিল এর জন্য প্রতরনা করেছিল। যার সাথে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ৪ বছরের সম্পর্ক একদিনে সাহিল এর বাইক, স্মার্টনেস আর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম শুনে ভুলে গিয়েছিল। সেদিন কেন বলতে পারে নি সাহিলকে “আমি আমার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য দাড়িয়ে আছি, সে রিক্সা নিয়ে আসবে। আমার বাইক দরকার নেই, আপনি আপনার রাস্তায় যান। বিরক্ত করবেন না।“

সাহিল এর সাথে সম্পর্ক থাকার সময় একদিনের জন্য আবিরের জন্য খারাপ লাগে নি মিতুর। আবির তো কখনও পারত না তাকে বার্থডেতে ডাইমণ্ড রিং দিতে। তার মত সুন্দরী একটা মেয়েকে আবির পাওয়ার যোগ্য না, শুধু এইটা ই মনে আসত। সাহিল কে হারাননোর ভয়ে তো কখনও আবিরের কথা বলাই হয়নি সাহিল কে। অবশ্য ৪ বছরের মধ্যে শুধু একবার হাত ধরেছিল আবির, লুকোনোর মত তেমন কিছু ছিলনা। অথচ পরিচয়ের কয়েকমাসের ভিতর সাহিল এর সাথে রুমডেট এ যাওয়াটাও পাপ মনে হইনি তখন। যখন আবিরকে খারাপ ভাবে না করে দিয়েছিল তখনও পাপবোধ হইনি।

পাপবোধ টা জেগে উঠার জন্য ই কি আজকের এই দিনটা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মিতুর? আবির বা সাহিল কেউই জীবনে না আসলে হয়ত জাফরের মত ভাল স্বামী আর দ্বিতীয়টি হতো না, অথবা তখনকার পাপকে পাপ মনে হলে হয়তবা নিজেকে সারাজীবন খুনি মনে হতো না মিতুর।

মিতুর নিজের জীবনের হিসেব মিলাতে গেলে কখনও মনে হয় পৃথিবী তার জন্য নয়। আবার মনে হয়ঃ না এর শেষ দেখা উচিৎ, মৃত্যু কি শেষ সমাধান হতে পারে নাকি নিজের তৈরি করা সমস্যা গুলোর সাথে বেঁচে থেকে!

5
$ 0.00
Avatar for Bipul55
3 years ago

Comments

nice

$ 0.00
3 years ago

nice story

$ 0.00
3 years ago

good

$ 0.00
3 years ago

Hmmm

$ 0.00
3 years ago