[bad iframe src]
ভালোবাসা নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, `ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনেরও মন্দিরে। তিনি এই ধরনের কথা বলেছিলেন কেননা আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয় এবং বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া হয়। যার নামটি মনের মন্দিরে লিখে রাখে মানুষ থাকেই ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসার জন্য আপনার কাছে মনে হতে পারে পৃথিবী অনেক সুন্দর।
কাউকে ভালোবাসা আর কারো প্রতি প্রেমে পড়া আসলে এক বিষয় নয়। কাউকে ভালবাসা এবং কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া একই রকম অনুভূতি কিন্তুতার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান পার্থক্য রয়েছে।
কারো প্রতি প্রেমে পড়া বলতে বোঝায়, কারো মায়ায় পড়া, কাউকে নিজের করে কাছে পাওয়ার অনুভূতি এবং তাকে নিজের কাছে পাওয়ার এক আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়া। আর কাউকে ভালোবাসা মানে শারীরিক সম্পর্ক উপেক্ষা করে কাছে পাওয়ার অনুভূতি। তাহলে জেনে নিন কাউকে ভালোবাসা এবং কারো প্রতি প্রেমে পড়া মধ্যে কয়েকটি পার্থক্যর কথা-
১. প্রেম তৈরি হয়:
প্রেম পুরোপুরি মানসিক বিষয়। এটি মানুষের মনে তৈরি হয়। আপনি ইচ্ছা করলেই কারো প্রেমে পড়তে পারবেন না যদি আপনার মন সেটিকে মেনে না নেয়। প্রেম এমন একটি শক্তি যা আপনার সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাবে। আর তখন আপনার মনের নির্দেশনা আপনি শুনতে বাধ্য হয়ে যাবেন। এটি আপনাকে বিষ্মিত করে দেবে। প্রেম কখন যে হয়ে যাবে আপনি তা বুঝতেও পারবেন না। কারণ এটি অনেক দ্রুত হয়। সবার অজান্তে হয়।
২. কারো প্রেমে পড়া বা কাউকে ভালোবাসা মানে তাকে প্রথম স্থানে রাখা:
আপনি যাকে ভালোবাসেন বা যার প্রেমে পড়েছেন তাকে অবশ্যই আপনাকে সবার আগে স্থান দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়ই একি রকম। আপনি যাদের ভালোবাসেন তাদের জন্য আপনি সব কিছুই করার চেষ্টা করবেন। তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সবার আগে আপনি এগিয়ে আসবেন এবং পূরণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আর আপনাকে যিনি ভালোবাসবেন তিনিও এরকমটাই পেতে চাইবেন। তবে আপনি যার প্রেমে পড়েছেন তিনি আপনাকে সাবার আগে প্রথম স্থানে নাও রাখতে পারে।
৩. অধিকার ও অংশীদারিত্বের মধ্যে পার্থক্য:
আপনার বাবা-মা আপনাকে ভালোবাসে কারণ তাদের আপনার প্রতি অধিকার রয়েছে। আপনিও আপনার ভাই-বোন এবং ভালো বন্ধুদের ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি যখন আপনার কোনো ভালো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান বা তার প্রেমে পড়ে যান তখন আপনার মনে হতে পারে অংশীদারিত্বের কথা। আপনি যখন কারো প্রেমে পড়বেন তখন তাকে বিশ্বাস করবেন। সেই সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে তার মতোই আপনার প্রতিক্রিয়াও সমান হবে। কারো সঙ্গে সম্পর্ক করার মানে হচ্ছে অধিকারের চেয়েও একটু বেশি।
ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানী ডা. জোশুয়া ক্লাপাও বলেন, আপনি সঙ্গীর যত্ন নিচ্ছেন কিন্তু সেগুলো কামনা করেন না, তার যত্ন নিচ্ছেন কিন্তু কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না, সঙ্গীর যত্ন নিচ্ছেন কিন্তু কোনো কিছুই তার সঙ্গে শেয়ার করতে চান না; তাহলে বুঝবেন আপনি আপনার সঙ্গীকে ভালোবাসেন কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি।
৪. কারো প্রেমে পড়া মানে তার সুখের জন্য সবকিছু করা:
আপনি যখন কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন বা প্রেমে পড়েন তখন আপনি তার জন্য সবকিছু করতে চেষ্টা করেন। আপনি তার সঙ্গে থাকতে চেষ্টা করেন। কখনো তার কাছ থেকে আলাদা হতে চান না। যাইহোক আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে অবশ্যই ব্যক্তগত স্বাধীনতা দেবেন। তার উচিত হবে না আপনার কাছে কোনো বিষয় নিয়ে আটকে থাকা। আবার তাকে সব সময়ই কাছে পাওয়ার আশাটুকুও বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং সুখি জীবনযাপন করার জন্য আপনার সঙ্গীকে অবশ্যই সুযোগ দিতে হবে। আর এই বিষয়টি আপনাকে মেনে নিতে হবে।
৫. কারো প্রেমে পড়া সব সময়ের:
কারো প্রেমে পড়া সব সময়ের জন্যই। আর কাউকে ভালোবাসা যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। আপনি যাকে ভালোবাসেন তিনি আপনার সঙ্গে যোকোনো বিষয় নিয়ে মারামারি শুরু করে দিতে পারে। এই সম্পর্কটি হতে পারে অস্থায়ী। কিন্তু কারো সঙ্গে সম্পর্কে গড়ে তুলা বা প্রেমে পড়াটা এতোটা অস্থায়ী নয়। এই ধরনের সম্পর্ক যেকোনো খারাপ সময় এবং মারামারির মধ্যে শেষ হয়ে যাবে না। যদি আপনি সত্যিকার অর্থে কারো প্রেমে পড়েন তাহলে আপনারা সুখি হতে চেষ্টা করবেন। এই সম্পর্কে আপনাকে কোনো সময়ই মেকিভাব নিয়ে থাকতে হবে না। কারণ এই সম্পর্কে আপনি সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন।
সবশেষে বলা যায়, ভালোবাসা হলো এমন একটি শর্ত যা অন্য একজন বা একাদিক ব্যক্তির সুখ আপনার নিজের জন্য দরকার। আর এর ফলেই আপনি কেবল সুখি হতে পারবেন।
💙👹