চেম্বারে প্রেগনেন্ট রোগী আসলে যখন আমি বাধ্যতামূলেক ৭ টা পরীক্ষা করতে দেই তখন রোগীদের ও তাদের অ্যাটেনডেন্টের চাহনী দেখে আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়! তাদের চাহনী তে স্পষ্ট দেখতে পাই তারা মনে মনে বলছে- ম্যাডাম,আপনারে ভাল ভেবেছিলাম..আপনিও এমন?খালি টেষ্ট দেন আর কমিশন খান..বুঝছি!! তাদের চোখের ভাষা পরে আমিও অতীব দু:খের সহিত মনে মনে গান গাই- “ কি করে বোঝাই...কতটা ....ভালবাসি থুক্কু কতটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো...”!! শুধু মনে মনেই না প্রকাশ্যেও তাদের বুঝানোর চেষ্টা করি কেন দরকার পরীক্ষাগুলো!যত যাই বুঝাই অধিকাংশ রোগীদের ধারণা- আমি তো সুস্থ্যই আছি..হুদাই এতগুলো পরীক্ষা কেন করব?খালি আল্ট্রা করলেই তো হয়!
হোক সেটা গ্রামে- গন্জে বা ঝকঝকে কর্পোরেট হাসপাতালে!শিক্ষিত..অর্ধশিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত .!টেস্টের কথা শুনলেই মনে করে কমিশন!!দু:খে মাঝে মধ্যে আমার মাটিতে ল্যাটা মেরে বসে কাঁদতে ইচ্ছে করে!! কেন দরকার এতগুলো পরীক্ষা একটু ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টায় আজকের এই লেখা- ১).Hb%(হিমোগ্লোবিন পারসেন্টেজ)- আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ কেমন মানে আপনার রক্তস্বল্পতা আছে কিনা সেটা জানার জন্য এই পরীক্ষার গুরত্ব অপরিসীম!এই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করেই ডাক্তার নির্ধারণ করবেন আপনাকে মুখে আয়রন ট্যাবলেট দিবে নাকি আয়রন ইন্জেকশন দিবে নাকি রক্ত দিতে হবে! প্রেগন্যান্সিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রক্তস্বল্পতা হবার ঝুঁকি বেশি!যদি সঠিক সময়ে ডায়াগনসিস না করে চিকিৎসা না দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে স্বল্প ওজনের বাচ্চা প্রসব বা সময়ের আগেই বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যাওয়া এবং প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ জটিলতায় মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!! ২).Blood grouping and Rh typing(ব্লাড গ্রুপিং অ্যান্ড আরএইচ টাইপিং)-আপনি জানেনই না আপনার রক্তের গ্রুপ কি?হঠাৎ যে কোন জরুরী প্রয়োজনে আপনাকে জরুরী ভিত্তিতে রক্ত দিতে হবে!তখন আপনার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করবে নাকি ডোনার রেডি করবে?আগে গ্রুপ পরীক্ষা তারপর ডোনার খুঁজতে খুঁজতে আপনি দুনিয়া কে টাটা বাই বাই দিয়ে ওপারেও চলে যেতে পারেন!আর প্রেগন্যান্সিতে যে কোন সময় যে কোন ইমারজেন্সি ঘটতেই পারে!আর যদি নেগেটিভ রক্ত হয় তাহলে তো কথাই নেই!সেরের উপর সোয়া সের!নেগেটিভ মায়ের সন্তানদের জন্মের পর আলাদা কিছু প্রক্রিয়া আছে..!যদি আগে থেকে না জানা থাকে সেক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখামুখি হতে হবে আপনাকেই...! ৩).RBS( রেন্ডম ব্লাড সুগার)-ধরে নিলাম আপনার আগে ডায়বেটিস ছিলো না!কিন্তু প্রেগন্যান্সিতে নতুন করে আপনার ডায়বেটিস হতে পারে!এজন্য এ পরীক্ষাটি অপরিহার্য !বার বার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া বা প্রসবের আগে পেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিসের কারণে! ডায়বেটিক মা দের বাচ্চা বড় সড় হয়!এজন্য বেবি নরমালে না সিজারিয়ানে হবে এজন্য ডক্টর কে আগে থেকে প্ল্যান নিতে হয়! তাছাড়া ডেলিভারির পর ডায়বেটিক মায়ের বাচ্চাদের জন্য আলাদা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যেমন- বাচ্চার ব্লাড সুগার চেক করা ..স্যালাইন দেয়া! বুঝলেন তো কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা টি..! ৪). HbsAg(এইচ বি এস এ জি)-এই পরীক্ষা দিয়ে গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস বি আছে কিনা বুঝা যায়!এই পরীক্ষাটি কিন্তু গর্ভবতী মা ও তার গর্ভের শিশুর জন্য যেমন জরুরী গর্ভবতী মাকে সেবা প্রদানকারীর মানুষটির জন্যও ঠিক তেমনভাবেই জরুরী!গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস বি পজিটিভ সেটা আগে জানা থাকলে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি নিজেকে নিরাপদ রাখতে একটু বাড়তি সাবধানী হতে পারেন!আর বাচ্চাকে প্রটেক্ট করার জন্য জন্মের সাথে সাথেই ভ্যাকসিনের ব্যবস্হা করতে হয়..! ৫).Urine R/M/E(ইউরিন আর/এম/ই)-গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়!এসময় প্রসাবে ইনফেকশন হওয়ার চান্স বেড়ে যায়!এই ইনফেকশনের কারণে মায়ের কিডনিতে ইনফেকশনের পাশাপাশি আক্রান্ত মা ডেলিভারীর সময়ের আগে প্রসব বেদনা উঠে কম দিনের, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান করতে পারেন!মাঝে মাঝে লক্ষণসহ প্রসাবের ইনফেকশন দেখা দিলেও কখনও কখনও কিন্তু কোন উপসর্গ ছাড়াই এই ইনফেকশন থাকতে পারে! তাই টেষ্ট ছাড়া বুঝা কি সম্ভব..? ৬).VDRL(ভিডিআরএল)-এই টেষ্টটি করা হয় রোগীর সিফিলিস আছে নাকি এটা দেখার জন্য! কারণ গর্ভবতী মায়ের সিফিলিস থাকলে গর্ভের সন্তানেরও কনজেনিটাল সিফিলিস হতে পারে! বুঝতে পারছেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটি..! ৭).Usg of pregnancy profile(আল্ট্রাসনোগ্রাফী অফ প্রেগন্যান্সি প্রোফাইল)- অধিকাংশ মানুষ প্রেগন্যান্সির পরীক্ষা বলতে শুধু আল্ট্রাসনোগ্রামই বুঝেন!সবচেয়ে বড় আগ্রহ বাচ্চা কি হবে?ছেলে না মেয়ে?অনেকেই শুধু বাচ্চার লিঙ্গ জানতেই আল্ট্রা করান!বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ ছাড়াও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে এই রিপোর্ট!যেমন-পানির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা..বাচ্চা কয়টা..গর্ভফুলের লোকেশন..বাচ্চার ওজন সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে কিনা..বাচ্চার হৃদস্পন্দন ঠিক আ
Story by Bipu