নিউজপ্রিন্ট ছিল ৫ টাকা দিস্তা।
দূরের দোকান থেকে পায়ে হেঁটে ৪ টাকায় কিনতে যেতাম
। হোয়াইটপ্রিন্ট ছিল ৭/৮ টাকা দিস্তা। বাসায় নিউজপ্রিন্টে লেখা, স্কুলে হোয়াইটপ্রিন্ট।
খাকি ঠোংগা, শক্ত যেকোন কাগজ, ক্যালেন্ডারের পাতা কভার দিয়ে রঙ্গিন সূতায় বাঁধাই করতাম নিউজপ্রিন্ট।
দোকান থেকে বাঁধাই করা খাতা কেনাটা নব্বই দশকের মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিলাসিতা ছিল। কালে ভদ্রে কিনে দিতো মাতা পিতারা।
অল্প ক'টা খাতার কথা মনে আছে, তাতে ম্যাকগাইভার, মেরাডোনা, সিন্দবাদ, টিপু সুলতানের ফটো ছাপা ছিল। ক'দিন পর দিস্তা কাগজের জন্য টাকা চাইতে গেলেই, শুনতে হতো - এইত সেইদিন না কিনে দিলাম !
গ্লাসের পানি ফেলে কতবার নিউজপ্রিন্ট খাতা ফুলিয়ে ঢোল করে ফেলেছিলাম
! খুব অনুশোচনায় ভুগতাম ! কেন এমন করলাম ? এখন নতুন খাতার জন্য টাকা চাইবো কিভাবে ? নিজের কাছেই প্রচন্ড লজ্জা লাগতো ! ভেজা খাতা তারে ঝুলিয়ে চুলার উপর শুকিয়ে ব্যবহার করতেও হতো। ক'দিন পরপর খাতা কলম পেন্সিলের টাকা আব্বার কাছে চাইতে গেলে মুখটা মলিন হয়ে যেতো ! তখনকার পিতাদের উপার্জনের অংকটা এসময়ের সন্তানদের রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের নিয়ে উড়িয়ে দেয়া ভোজন বিলাসিতার সমান। গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের পেছনে দামী গিফট ক্রয়ের সমতূল্য। আরও ছোটবেলায় চলে যাই।
কাটায় কাটায় নব্বই কি একানব্বই। তখন নিউজপ্রিন্ট ছিল ৩ টাকা দিস্তা আর হোয়াইটপ্রিন্ট ৫ টাকা দিস্তা। বাংলা এবং ইংরেজী লেখা সোজা করে লেখার জন্য রঙ্গিন রুলটানা খাতা পাওয়া ছিল ; চাঁদ হাতে পাবার মত দু:সাধ্য ব্যাপার ! আব্বা রাতে অফিস থেকে ফিরে স্কেল দিয়ে রুলটানা খাতা বানাতো। ৯৪/৯৫ দিকে নিউজপ্রিন্ট এলো হোয়াইটপ্রিন্টের মত দেখতে, লিখতেও ছিল বেশ মসৃণ। এক দুই টাকার পার্থ্যক্যের জন্য দোকানে হাত দিয়ে দেখতাম শুধু। বেশ ক'বছর পরে কিনতে পেরেছিলাম। দোকান ঘুরে ঘুরে কমমূল্যের নিউজপ্রিন্ট দিস্তার ১টাকা বাচিয়ে এনে আম্মার হাতে তুলে দিতাম। মনে হতো যেন উপার্জনের টাকা হাতে তুলে দিচ্ছি ! বেশ খুশি হতেন। আব্বা আম্মারা বই খাতা বাঁধাই করা নিজের হাতে শিখিয়ে দিতেন। ক্যালেন্ডারের পাতা কভার হিসেবে ব্যবহার করতেন । লাল সাদা মোটা সূতায় খাতাগুলো আড়াআড়ি বা উপরনিচে সেলাই বাঁধাই হতো। নিজের সেলাই করা খাতা, বইয়ের মলাট জ্যামিতি বক্সের সাথে পাওয়া প্লাস্টিকের ছাঁচের অক্ষর দিয়ে নাম, ক্লাস আর রোল লিখতাম। বড় বড় হরফে নিজের নাম, শ্রেনী, বিভাগ, রোল নং এবং নীচে একপাশে সাইনের মতো অটোগ্রাফে নিজেদের সেলিব্রিটি মনে হতো।