ইদানীং টুটালি বিরক্ত হয়ে গেছি। স্বামীর প্রতি আমার এতো অনিহা বাড়ছে যে, তা বলার বাইরে। পুরুষকে চেনা যায় অন্ধকারে, বন্ধ ঘরে। কিন্তু আমি তারে চিনতে পারি না, পারছি না। সে সবসময় কী একটা ভাব নিয়ে থাকে, মনে হয় যেন সে তামাম পুরুষ জাতির মনের বার্তাবাহক। কী জব করে না করে সে আজ পর্যন্ত বলেনি। অথচ আমাদের বিয়ের হয়েছে পাঁচ বছর। এটা ভাবা যায়? মানা যায়?
স্বামী নামক প্রাণীকে ভালোভাবে জানার জন্য আমার এক বান্ধবী একজন কবিরাজের শরণাপন্ন হতে বললো৷ তার কবিরাজিতে না কি কাজ হয়েছে। এখন সে মহাসুখী। স্বামীকে দিনরাত তিনবেলা কান ধরে উঠবস করাতে পারে!
বান্ধবীর পরামর্শে আজ বিশ্ববিখ্যাত পুংরোগ বিশেষজ্ঞ কবিরাজ রুবেলদ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম নিরাময় কেন্দ্রে এসেছি। এখন লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সিরিয়ালে প্রচুর ভুক্তভোগী নারী। কেন্দ্রের দেয়ালে দেয়ালে পুংরোগ বিশেষজ্ঞের জগৎ বিখ্যাত বাণীগুলো ঝলঝল করছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আমি সে বাণীগুলোকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলাম___
❑
বিয়ের আগে পুরুষের আকৃতি ও গর্জন থাকে বাঘের মতো। বিয়ের পরে আকৃতি বাঘের মতো থাকলেও গর্জন আর থাকে না, তখন গর্জন হয়ে যায় ম্যাও।
❑
বউরা স্বামীর লগে ঝগড়াঝাঁটি কইরা দুই-চারদিনের জন্য হইলেও বাপের বাড়ি নির্বাসনে যাইতে পারে কিন্তু স্বামীরা পারে না। আল্লার দুনিয়া জুড়ে তাদের যাইবার মতো দ্বিতীয় কোনো জায়গা নাই। নিজের ঘরে বেহায়ার মতো নির্বাসিত হইয়া পইড়া থাকতে হয়। ওই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে, বিশেষ কইরা রাতের বেলা বউয়ের হাঁটু আর কনুইর গুঁতা খাইয়া রাত পার করা কী যে বিভীষিকাময় তা কেবল বিবাহিতরাই ভালো জানেন।
❑
পুরুষেরা রাতেরবেলা নারীদেরকে যেসকল প্রতিশ্রুতি দেয়, তা অনেকটা মেওয়া ফলের মতো! সবুরই করবেন, জিন্দিগিতে মেওয়া ফলবে না।
❑
প্রত্যেক প্রেমিকের ঘরে একটা নিজস্ব বউ না'ও থাকতে পারে কিন্তু প্রত্যেক স্বামীর মনে একটা নিজস্ব প্রেমিকা থাকে।
❑
ভাগ্নে কুটুম জন্মগতভাবে হারামি হয়, আর বিয়ের পর হয় হারামি স্কয়ার।
❑
ইদানিং দেখছি পুরুষের লুঙ্গি নিয়েও নারীবাদী নারীরা বেশ টানাটানি শুরু করছে! বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও দেখছি নারীরা লুঙ্গি পরছে। নারীরা লুঙ্গি পরবে এই বিষয়টা রে আমি বরাবরই সাপোর্ট করি। গরম অথবা শীতল দুটোই হওয়া যায় খুব সহজে। এতে পুরুষের প্রতিবাদ করা বা মন খারাপ করার কোনো কারণ দেখছি না। আমাদের এই শেষ সম্বলটা রে যদি নারীরা সম অধিকারের মাপকাঠিতে ফেলে দেয়, তাহলে তো পুরুষজাতির খুশি হবার কথা! আর এই লুঙ্গি টানাটানির ফলে যদি আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হয় ৩০ কোটি! ব্যাপারটা তো ভালো, ভালো না?
❑
পুরুষজাতি বিয়েতে আর মৃত্যুতে করুণভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। না পারে সময়মতো বিয়ে করতে, না পারে বেশিদিন বাঁচতে।
❑
পুরুষের আপাদমস্তকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অঙ্গ হলো চোখ! মাইয়ালোক দেখলে যেকোনো ঘাটের মরারও ওই বদ অঙ্গটি এক পলকে সচল হয়ে যায়।
❑
পুরুষ আর ছাগল, এই দুই প্রাণীকে কখনো ঢালাওভাবে বিশ্বাস করতে নেই।
❑
পুরুষ হলো সেই প্রজাতের প্রাণি, যে ঘাটের মরা হলেও বিয়ের শখ কমে না।
❑
সুপুরুষ, কুপুরুষ, কাপুরুষ, বীরপুরুষ সব পুরুষই নারীর ওপর হাত চালায়! তা আদরেই হোক আর মারধরেই হোক।
❑
নামাজি ব্যতীত, বেশিরভাগ পুরুষ মানুষ কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফিরে এসে হাত মুখ ধুলেও পা ধুয় না। গোসলেও একী অবস্থা! অন্য সবকিছু ঘষামাজা করলেও পা ঘষতে ঠিকই ভুলে যায়।
❑
অবাধ্য ছাগলকে বাধ্য করতে রাখাল প্রয়োজন, আর পুরুষকে বাধ্য করতে প্রয়োজন ঠ্যাংগানি মার্কা বউ।
❑
যেসব পুরুষ বউয়ের কথামতো চলে,
সিলেটি ভাষায় তাদের 'মাউগা' বলে।
❑
অধিকাংশ প্রেমিক খেলোয়াড়ের আসল উদ্দেশ্য প্রেমিকা হাতানো। প্রেম প্রেম খেলা, সে তো এক পাতানো ম্যাচ।
❑
মানুষ কী থেকে সৃষ্টি সেই বিতর্কে যেতে চাই না। তবে পুরুষের চিরায়ত কর্ম স্বভাব দেখলে বোঝা যায়, তারা গাধা থেকে আগত।
❑
পুরুষের কোনো দিবস- টিবসের প্রয়োজন নাই, রাত্রি হলেই হলো!
❑
সর্প গর্তের চেয়ে সবচেয়ে ভয়ংকর কথা, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বচন__
'খেতে নাহি কেহ চায়, তবু ছ্যাকা খেতে হয়, তবু খেয়ে যায়।'
❑
পুরুষ মানুষ জীবদ্দশায় যে রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়, সে রোগের নাম বিয়ে। তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বারবার মরতে চায়। তবুও বিয়ের সাধ কমাতে চায় না।
❑
বোকা পুরুষরা দুইটা জিনিস করে__
গুজবে কান দেয় আর গু- যবে নাক দেয়।
❑
পুরুষ জাতির এক ফাডা কপাল! সুযোগ পাইলে নারীরাও শালা ডাকে।
❑
পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল,
পুরুষের তিন ভাগ নারী আর এক ভাগ কম্বল।
❑
প্রত্যেক পুরুষই নারীর রূপ দেইখা প্রেমে পড়ে। যে হালায় কয়, সে নারীর রূপ দেইখা প্রেমে পড়ে নাই! তার চোখ তুইলা নাগা মরিচ লাগাই দেয়া উচিৎ।
❑
বাংলাদেশে আবাল রাজনীতিবিদের সংখ্যা আপনার বালের সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ বেশি! এখন যদি ভাবেন কোথাকার বাল, তাহলে আপনি সাধারণ আবাল! যদি ভাবেন আপনার বালের সংখ্যা কত? তাহলে আপনি অসাধারণ আবাল। আর যদি আপনি গুণতে শুরু করেন, তাহলে আপনি অস্বাভাবিক আবাল! তাই এখনি আপনার মানসিক ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
❑
পাশ দিয়ে গাভী গেলে যে বলদ নাক উঁচিয়ে শিষ দেয়, সে বলদ আসলে বিগত দিনের বখাটে ষাঁড়।
বাণী গুলো পড়তে পড়তে কখন যে আমার সিরিয়াল চলে এলো, টেরই পেলাম না। একটা মেয়ে এসে বললো, 'ম্যাম, এবার আপনার সিরিয়াল।'
আমি কবিরাজ সাহেবের চেম্বারে ঢুকলাম। রুমের ভেতর কিঞ্চিৎ অন্ধকার। এমনভাবে লাইটিং করা, ভেতরে মানুষ নাকি জ্বিন বসে আছে তা বোঝার উপায় নেই। একটা চেয়ারের উপর হঠাৎ ১০০০ভোল্টেজের একটা লাইট জ্বলে উঠলো। টেবিলের কোনো এক পাশ থেকে অদৃশ্য একটা ভয়েস ভেসে আসলো___
'দয়া করে আলোকিত চেয়ারটায় বসুন।'
আমি মনে মনে বললাম___
'আসছি পরামর্শের জন্য, আর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে আমি একটা আসামী! যেন আমার রিমান্ডের জন্য চেয়ারটা প্রস্তুত।'
আমি চুপচাপ চেয়ারে বসলাম। বসার সঙ্গে সঙ্গে লাইটটা অফ করে দেয়া হলো। আমি কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে গেলাম। অনেকটা ভয়ার্ত কণ্ঠে বললাম__
'বাতি অফ করলেন কেন?'
- গোপন কথা বলতে যে হয় গোপনে। তা আপনার সমস্যা কী? এইরকম কিছু___
❑
প্রথমবার ছ্যাকা খাইছেন। তাই অন্তরে একটা আকিজ বিড়ির ফ্লেভার আসছে। এখন ফোঁকতে ইচ্ছা করছে।
❑
দ্বিতীয়বার ছ্যাকা খাইছেন। তাই অন্তরে একটা গাঞ্জার ফ্লেভার আসছে৷ এখন টানতে ইচ্ছা করছে।
❑
তৃতীয়বার ছ্যাকা খাইছেন। তাই অন্তরে একটা মদের ফ্লেভার আসছে। এখন গিলতে ইচ্ছে করছে।
❑
চতুর্থবার ছ্যাকা খাইছেন। তাই অন্তরে একটা ইয়াবা ফ্লেভার আসছে। এখন খাইতে ইচ্ছে করছে।
❑
পঞ্চমবার ছ্যাকা খাইছেন। তাই অন্তরে একটা পাবনা ফ্লেভার আসছে। এখন যাইতে ইচ্ছে করছে।
আমি মহাবিরক্ত হয়ে বললাম___
'কবিরাজ সাহেব, আপনি দয়া করে এবার থামেন। আমার ছ্যাকা জাতীয় কোনো সমস্যা নেই।'
কবিরাজ সাহেব সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বললেন___
'সমস্যা কোনো সমস্যা না। কিন্তু সমস্যা না থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো সমস্যা।'
এ কথা উনি বলার পর আমি মনে মনে কিঞ্চিৎ আৎকে উঠলাম। কথাটা যেন এর আগে কার মুখে বহুবার শুনেছি। তাছাড়া উনার কণ্ঠটা এতোটাই পরিচিত যে, প্রশ্ন করার জন্য কৌতুহলী হতে বাধ্য হলাম। আমতা আমতা করে বললাম___
'আপনার ভয়েসটা কেন জানি আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। ঠিক আমার বজ্জাত স্বামীটার মতো। তাই নির্ভয়ে গোপন কথা বলতে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি।
- দেখুন, সব মেয়েদের এই এক অভিযোগ। আমার ভয়েস না কি তাদের স্বামীদের মতো। আসলে দোষটা তাদের নয়, দোষটা লাইটের। মনে রাখবেন, বাতি অফ করলে জগতের সব পুরুষই এক।
এরপর না না সমস্যার কথা বলে উনার কাছ থেকে কিছু সুপরামর্শ নিলাম। তারপর মনের মধ্যে স্বস্তির বীজ বপন করে বাসায় ফিরলাম। অতঃপর কবিরাজের টিপস গুলো গভীর রাতে স্বামীর উপর প্রয়োগ করলাম।
এর দুইদিন পর খুব সকালে সেই বান্ধবীকে ফোন দিলাম___
'বান্ধবী, আমার ভীষণ বিপদ রে!
- কী হইছে, আমারে খুলে বল?
- কবিরাজের কবিরাজিতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
- আমার তো কাজ হইছিল। তোর কাজ হয়নি?
- শোন বান্ধবী, দুঃখের কথা কী আর বলবো! আমি কবিরাজের পরামর্শ মতো তার বুকেরপশম নাড়াচাড়া করে সেদিন তাকে না না আবদার করছিলাম। সে তখন আবদার শোনা দূরে থাক, বরং মহাবিরক্ত হইছিল। গতকাল রাতে দেখি সে বুকের পশম সেইভ করে এসেছে। বুঝতেছিস সে আমারে কী ইনসাল্ট করছে? জানিস, আমি তার বুকের পশমের জন্য কাল সারারাত কাঁদছি। কারণ তার বুকের পশম আমার অনেক পছন্দ ছিল। ভোর রাতে আমার কান্না থামানোর জন্য সে মহাবিরক্ত হয়ে তার বুকে আমায় টেনে নিয়েছিল। আহ্লাদ করতে করতে সে জিজ্ঞেস করছিল___
'বল তো বউ, তোমারে এসব কু পরামর্শ কে দিয়েছে?'
আমি আদর পেলে আর মিথ্যে বলতে পারি না। গদগদিয়ে তাকে নামটা বলেই দিলাম___
'বিশ্ববিখ্যাত পুংরোগ বিশেষজ্ঞ কবিরাজ রুবেলদ্রনাথা ঠাকুর।'
সে তখন তার বুকের উপর থেকে আমারে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো___
'সংসার কি আমার সঙ্গে করছো না কি কবিরাজের সঙ্গে? যদি কবিরাজের কথা মতো তোমাকে চলতেই হয়, তাহলে আমার ঘর করছো কেন? যাও, কবিরাজের কাছে চলে যাও। আমি বিয়ের সকল আয়োজন করি।'
- তারপর?
তারপর আর কী? আমি পুরা রাইত কান্না করছি। আজ সকালে কবিরাজের কাছে ফোন করছিলাম। উনি আমার ফোন পেয়ে বললেন___
'আপনার স্বামী যা বলছেন তা শোনা এখন আপনার কর্তব্য। এখন আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি স্বামীর কাছে থাকবেন না কি আমার কাছে আসবেন! যদি আসতে চান, ওয়েলকাম। আমি আবার কাউকে ফিরিয়ে দেই না।'
- এখন তুই কী করবি? কবিরাজের কাছে যাবি না কি স্বামীর ঘর করবি?
- যেতে তো চাই। কিন্তু বেটার কথাবার্তা তো একটু লুচ্চা লুচ্চা টাইপের?
- রিস্ক নিয়ে নে। শুনেছি বেটা বিপত্নীক। এমন গুণী মানুষ বিপত্নীক হোক আর সপত্নীক হোক, তাঁর নাম বেঁইচা বাকি জীবন আরামসে পার করে দিবি।
- যাবো?
- অবশ্যই।
বান্ধবীর কথায় ভরসার ঢেঁকুর তুলে হেঁটে যাচ্ছি কবিরাজের প্রেম নিরাময় কেন্দ্রের দিকে। সিরিয়াল মেন্টেইন করে অবশেষে ঢুকলাম কবিরাজের চেম্বারে। অন্ধকার রুমে কবিরাজের মুখোমুখি বসে আছি। কেবল আমার মাথার উপর ১০০০ ভোল্টেজের লাইট জ্বলছে। আশপাশে কে আছে, কী ঘটছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কবিরাজ হঠাৎ বলে উঠলেন___
'তারমানে ডিসিশান ফাইনাল?'
আমি কেঁদে কেঁদে বললাম___
'আপনি আমারে দয়া করেন। ওই হারামজাদার ঘর আমি আর করবো না। ওকে ডিভোর্স দেবো।'
- এখন আমাকে কী করতে হবে?
আমি এখন কী বলবো! কীভাবে বলবো এ কথাটা, ঠিক বুঝতে পারছি না। বোঝার আগেই লজ্জায় বারবার লাল হয়ে যাচ্ছি। একসময় লজ্জার খোলস ঝেড়ে ফেলে ঝটপট বলে ফেললাম___
'আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?'
কবিরাজ সাহেব তখন আমাকে পিছন থেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন___
'এক মোরগকে তুমি আর কতবার জবাই করবে, শুনি?'
কবিরাজের হাত থেকে আমার ইজ্জত বাঁচাতে দিলাম এমন জোরে চিৎকার, সঙ্গে সঙ্গে চেম্বারের সবকটা বাতি জ্বলে উঠলো। তখন কবিরাজ রুবেলদ্রনাথ ঠাকুরের মুখটা দেখে দিলাম আরও জোরে চিৎকার, সঙ্গে সঙ্গে আমার জ্ঞান হারিয়ে গেলো।
প্রেম নিরাময় কেন্দ্র