আতঙ্ক (তিন)

0 7
Avatar for Bijoy11
4 years ago

শাহরিয়ার হাসানের সাথে দোতলার বারান্দায় বসে আছেন সমির আলি। তার হাতে চায়ের কাপ। সন্ধ্যা থেকে একটানা চা খেয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার মতে নদীর ধারে বসে চা খাওয়ার ভেতরে আলাদা একটা অনুভূতি আছে।

শাহরিয়ার হাসান নিরবতা ভেঙে বললেন, "স্যার ছেলেটি সম্পর্কে কিছু ভাবলেন? আপনার কি মনেহয়, সে কি স্কিজোফ্রেনিয়া রোগেই আক্রান্ত?"

সমির আলি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, সে স্কিজোফ্রেনিয়া রোগেই আক্রান্ত।"

"স্যার, সে যদি এখানে আরো কয়েকদিন থাকে তাহলে তার অবস্থা আরো খাড়াপ হয়ে যাবে৷ আমরা কি তাকে মানসিক আশ্রয়স্থলে রাখতে পারি?"

"না। সে ওই পরিবেশটায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে না৷ তার কথাগুলো খেয়াল করার চেষ্টা করো। বুঝতে পারবে, সে নিরিবিলি পরিবেশ চায়। আমাদের উচিৎ তার এই পরিবেশটা দেওয়া। তা ছাড়া, তার নিজের প্রতিই অনিহা চলে আসবে। যার ফলাফল আরো খারাপ হতে পারে।"

"কিন্তু তা ছাড়া আমরা কী করতে পারি?"

"দেখো শাহরিয়ার, সাধারণত স্কিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মনে একটি ভয় থাকে। মাঝে মাঝে ভয়টি হয় অজানা কোনো কিছুর। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মনের ভয়টি কোন বিষয়ে তা জানে। আবিরের মনেও সেই ভয়টি আছে। ভয়ের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত না। তবে আন্দাজ করতে পারি তার ভয় সেই খালটি নিয়ে, যেখানে তার বাবা মারা গিয়েছিলো।"

"স্যার, এখন আমরা কী করতে পারি ছেলেটাকে নিয়ে?"

"ছেলেটির মনে জমে থাকা ভয় সড়িতে দেওয়াটাই আমাদের মূল কাজ। তবেই সে তার সাধারণ জীবনে ফিরে আসতে পারবে।"

ডাক্তার শাহরিয়ার চুপ করে গেলেন। সমির আলি আবার বললেন, "তুমি কি একটি বিষয় খেয়াল করেছো?"

"কোন বিষয়টি?"

"শরিফা বেগমের মতে আবিরের বাবা খালের ধারে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে।"

"জ্বী।"

"তার সাথে আরো কয়েকজন গিয়েছিলো, কিন্তু তাদের মারা যাওয়া নিয়ে শরিফা বেগম বা জহির মিয়া কেও কোনো কথা বলেনি। তারা কি আদেও মারা গিয়েছে নাকি সেই বিষয়টিও আমরা জানিনা। এই বিষয়টি আমার কাছে কিছুটা খটকা লেগেছে।"

"স্যার, শরিফা বেগম তো বলেছেন দুইজন মারা গিয়েছিলো।"

"হ্যাঁ। দুইজন মারা গিয়েছিলো। কিন্তু কথাটা ভালো করে খেয়াল করো। কথাটি ছিলো, পরে আরো দুইজন সেখানে মাছ ধরতে যায়৷ তারাও মারা যায়।"

"তারা দুজন যদি বেঁচে থাকে, আমরা কি এখন তাদের সাথে কথা বলবো?"

"হ্যাঁ। শুধু ওই দুজনই না। আমাদের সেই বৃদ্ধ লোকটির পরিবারের সাথেও কথা বলতে হবে।"

ডাক্তার শাহরিয়ার হঠাৎ তার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো, "কিন্তু স্যার, আমরা আবিরের মন থেকে তার বাবাকে কীভাবে দুর করতে পারি?"

সমির আলি বুঝতে পারলেন শাহরিয়ার তার কথাগুলোতে মনোযোগ দিতে পারছে না, সে নিজে থেকেই চিন্তা করতে চাচ্ছে। না হলে আগেকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা তার উচিৎ না৷ তিনি হাতে থাকা চায়ের কাপটি সামনের টেবিলে রেখে বললেন, "আবির তার বাবাকে দেখে, এটি কখনো বাস্তবে সম্ভব না। সে শুধু তার বাবাকে অনুভব বা কল্পনা করে যে সে তার পাশেই আছে। আর আমার মতে ছেলেটি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তাকে যদি বোঝানো যায়, বিষয়টি সম্পর্কে তার বোঝার কথা। তবে আমাদের অবশ্যই সাবধানে কথা বলতে হবে তার সাথে।"

শাহরিয়ার হাসান এবং সমির আলি পরদিন সকালের নাস্তা শেষে আবারও বেড়িয়ে পড়লেন আবিরের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেলেন সেখানে। গতকালের মত আজ ও দুটি চেয়ারে তাদের বসতে দেওয়া হয়েছে। তবে নাস্তার তালিকার কিছুটা বদল এসেছে। চানাচুর বিস্কিট এর বদলে দুজনকেই আজ চা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত গ্রামের মানুষ বাড়িতে চা খায় না, এর জন্য রাস্তার পাশে দোকান আছে। তবে এই বাড়িতে সেই ব্যাবস্থা আছে দেখে কিছুটা অবাক হলেন সমির আলি।

আজ জহির মিয়া বাড়িতে আছেন। সবার আগে তার সাথে কথা বলতে চান সমির আলি। তার কিছুটা চিন্তা হচ্ছিলো, তিনি কথা বলতে চাইবেন কী না! কিন্তু তিনি সবকিছু খুলে বলতে রাজি হয়েছেন, শুনে তার কিছুটা ভালো লাগলো।

সমির আলি খুব মনোযোগ দিয়ে জহির মিয়ার কথাগুলো শুনলেন। শরিফা বেগম আর তার কথাগুলোর সবটাই মিল আছে। তাই আর বেশি কথা বাড়ালেন না তিনি। সরাসরি প্রশ্ন করলেন, "জহির মিয়া, সেদিন আপনার ভাই কাদের সাথে সেই খালের ধারে গিয়েছিলো?"

"ওর এক বন্ধু আর তার ছোট ভাই এর সাথে গেছিলো। নাম জনি আর রনি।"

"আপনার ভাইয়ের সেই দুজন বন্ধু কি এখনো বেঁচে আছে?"

"জ্বী সাহেব। ওরা এখন বাড়িতেই আছে।"

"তাহলে তো সেই বৃদ্ধ লোকটির বলা কথাটি ভুল হয়ে গেলো।"

"আপনের কথাডা ঠিক বুঝলাম না সাহেব।"

সমির আলি একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, "সেই খালের ধার থেকে তো দুজন লোক ফিরে এসেছে। আবার সবচেয়ে বড় কথা, তারা এখন বেঁচেও আছে। আর সেই বৃদ্ধ লোকটি কে?"

"সাহেব, ওই লোকটাই তো জনি আর রনির আব্বা।"

"ওদের মা কি বেঁচে আছে?"

"জ্বী সাহেব, বাঁইচা আছে।"

"আমরা কি তাদের দুজনের সাথে কথা বলতে পারি?"

"জ্বী, সাহেব। চলেন আপনাদের ওই বাড়ি নিয়া যাই।"

সমির আলি এবং শাহরিয়ার হাসানকে বৃদ্ধ সেই লোকটির বাড়িতে নিয়ে গেলো জহির মিয়া। বাড়ির সামনে একটি বড় উঠান। বড় একটি আমগাছ ছেয়ে আছে পুরো বাড়িটি, যার কারনে ভরদুপুরেও উঠোনে রোদের দেখা নেই। জহির মিয়া বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে ডাক দিলেন তাদের, "রনি, ও জনি, বাড়ি আছো নাকি তোমরা?"

ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, "কে?"

"আমি জহির। শহর থাইকে দুইজন লোক আইছে তোমার দেহা করতে।"

একজন কমবয়সী মহিলা দরজা খুলে তাদের ভেতরে গিয়ে বসতে বললো। সমির আলি জহির মিয়াকে বললেন, "তুমি এখন যাও।"

ছোট একটি ঘরে তাদের নিয়ে যাওয়া হলো। দুটো চেয়ার, একটি টেবিল আর সাথে কয়েকটি কমদামি আসবাবপত্র। একটি অল্প পাওয়ারের লাইটে সবকিছু কেমন ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। প্রথমে একজন আসলো নীল শার্ট আর লুঙ্গি পরা অবস্থায়। তারপরে অন্যজন আসলো একটি সাদা গেঞ্জি আর প্যান্ট পরা অবস্থায়। সমির আলি বললেন, "তোমাদের মধ্যে জনি কে আর রনি কে, একটু বলবে? আমার চিনতে সুবিধা হতো তাহলে।"

তারা নিজেদের পরিচয় দিলো। নীল শার্ট পরিহিত জনি এবং সাদা গেঞ্জি পরা জন রনি। সমির আলি এবং শাহরিয়ার হাসানও তাদের পরিচয় দিলেন। কিছুক্ষণ পরে সেই কমবয়সী মেয়েটি এসে নাস্তা দিয়ে গেলো। সমির আলি বুঝলেন এটি তাদের মধ্যে বড় ভাই জনির বউ। সমির আলি জিজ্ঞাসা করলেন, "কেমন আছো তোমরা?"

"জ্বী আমরা ভালো আছি৷ আপনারা কেমন আছেন?"

"আমরাও ভালো আছি। আমরা এখানে এসেছি তোমাদের সম্পর্কে জানতে। তোমরাও তো সেদিন খালের ধারে গিয়েছিলে। কিন্তু তোমাদের তো কিছুই হয়নি। অথচ তোমাদের বাবা মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছেন, ওই খালের ধারে যাতে কেও না যায়!"

"এটি তো অনেক আগের বিষয়, এখন আপনারা এই কথাগুলো তুলছেন কেনো?"

সমির আলি কথার জবাব দিলেন না। তিনি আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমাদের বাবার লাশের কি পোষ্টমর্টেম করা হয়েছিলো?"

"নাহ, হয়নি।"

"এমন একটি ঘটনার পরেও পোষ্টমর্টেম করানো হলো না কেনো?"

"সেই কথা আমাদের কেনো জিজ্ঞাসা করছেন? থানায় গিয়ে তখনকার ওসি সাহেবকে জিগান।"

সমির আলি খেয়াল করলেন, জনি বা রনি কেও'ই এখন মুহূর্তে তাদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা, কিন্তু সেটিও পারছে না। তাদের মুখের উপরে সরাসরি না বলার অভ্যাস নেই। তবে তিনি নাছোড়বান্দা। সামনে কিছুটা ঝুলে গিয়ে নিরস গলায় বললেন, "তোমরা নিজেরাই তো তোমাদের বাবাকে মেরেছো, তাই না?"

সমির আলির কথা শুনে দুজনেই কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে গেলো। দুজনে একবার চোখাচোখি করে একিসাথে বলে উঠলো, "কী সব আবোল তাবোল বলছেন আপনি? আমরা আমাদের বাবাকে কেনো মারতে যাবো? তা ছাড়া তিনি মারা গিয়েছেন হার্ট এটাকে। এখানে আমাদের কোনো হাত থাকবে কীভাবে?"

সমির আলি তার আগের অবস্থানে ফিরে এসে বললেন, "দেখো জনি, আমি সবটাই জানি। আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করবে না কিছু। আর আমি এটাও জানি, তুমি শুধুই তোমার বাবাকে মারো নি। তুমি আবিরের বাবাকেও মেরেছো। সাথে আরো দুইজনকে, আর তাতে সাহায্য করেছে তোমারই ছোট ভাই রনি৷ আমাদের সাথে আবিরের চাচা এসেছিলো তোমাদের ডেকে দিতে। সে নিজেও সবটা জানে। নিজে থেকে কিছু বলেনি তোমাকে। তাই বলে এটা ভেবোনা, কখনো কিছুই বলবে না। আজ না হয় কাল পুরো গ্রামবাসী বিষয়টি জানবে। তখন তোমরা কী করবে। তোমাদের এখন বাঁচার একটাই উপায় আছে। তা হলো থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করা।"

কথাগুলো বলে আর দুই ভাই এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য সময় নষ্ট করলেন না সমির আলি। বেড়িয়ে আসলেন সেই বাড়ি থেকে। শাহরিয়ার হাসানও কোনো কিছু বুঝতে পারছেন না সমির আলির কথা বা কর্মকান্ড। সেও বেড়িয়ে আসলো তার পিছে পিছে। দুজনে গাড়িতে উঠে বসলেন। সমির আলি বললেন, "বাসায় যাওয়ার আগে একটু আবিরের বাড়ির সামনে দাঁড়াও।"

ডাক্তার শাহরিয়ার আবিরদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালেন। সমির আলি গাড়ি থেকে একটি কাগজ আর কলম নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেলেন। তাকে দেখাদেখি শাহরিয়ারও ভেতরে গেলো।

সমির আলি জহির মিয়াকে ডাকলে তিনি বেড়িয়ে আসেন ঘর থেকে। সমির আলি বললেন, "আবিরের সাথে তার বাবার দেখা বা কথা হওয়ার বিষয়টি কি আপনি কি বিশ্বাস করেন?"

"নাহ সাহেব, এইসব ভাউতা। তয় ছেলেডা আস্তে আস্তে আরো বেশি অসুস্থ হইয়ে যাইতেছে।"

"আপনি আজ সন্ধ্যার দিকে আবিরকে নিয়ে সেই খালের ধারে যাবেন। সেখানে কোনো ভুত বা পেত্নি কিছুই নেই। আমি নিজে আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনাদের কিছু হবেনা। সেখান থেকে ঘুরে আসার পর থেকে আবির সুস্থ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।"

জহির মিয়াকে চুপ থাকতে দেখে তিনি আবার বললেন, "কী? যাবেন না সেখানে?"

"জ্বী সাহেব, আমি আবিররে নিয়া আইজ যাবো ওই যায়গা।"

সমির আলি কাগজটিতে তার ঢাকার বাসার ঠিকানা জহির মিয়াকে দিয়ে বললেন, "এই ঠিকানায় আমাকে চিঠি দিবেন আগামী পড়শুদিন। সেখানে আবিরের সম্পর্কে সব জানাবেন আমাকে।"

সমির আলি কথাগুলো বলে চলে আসলেন। আবিরকে একবার দেখার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু তার ভালোর কথা ভেবেই আর দেখা করলেন না তিনি।

চার

মাঝরাতে সমির আলি এবং শাহরিয়ার হাসান বারান্দায় বসে আছে। আকাশে একটু আগে পূর্নিমার চাঁদ দেখা যাচ্ছিলো। এখন হয়তো মেঘের আড়ালে চলে গিয়েছে। তারাগুলোও আর দেখা যাচ্ছে না। যখন তখন বৃষ্টি নেমে যাবে। নদীর স্রোত গত দুইদিনের তুলনায় একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে। নিজেদের মধ্যকার নিরবতা ভেঙে কথা বললেন শাহরিয়ার হাসান, "স্যার, আপনি জেনেশুনে আবির আর তার চাচাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন কেনো?"

"একটু চিন্তা করে দেখো, খালের ধারে আর কোনো বিপদ নেই শাহরিয়ার। সেখানে আগেও কোনো রহস্যময় কিছু ছিলো না। বিপদ মানুষই তৈরি করে রেখেছিলো। আর তারা হলো জনি এবং রনি। তার বাবা নিজেও হয়তো এর সাথে যুক্ত ছিলো। সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত না।"

"কিন্তু আপনি কীভাবে বুঝলেন, এই কাজ জনি আর রনিই করেছে?"

"তাদের প্রতি আমার প্রথম সন্দেহ হয়েছিলো, খালের ধারে যারা যাচ্ছিলো তারা সবাই মারা যাচ্ছিলো। কিন্তু তারা দুইজন এখনো বেঁচে আছে। আর তাদের বাবার খুনের বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে আমার কিছুটা হাইপোথিসিস এর সাহায্য নিতে হয়েছে। যখন জানলাম লোকটির লাশের কোনো পোষ্টমর্টেম করা হয়নি, তখন শুধু একটি ফাদ পাতলাম তারা নিজেরাই মেরেছে এই কথা বলে। তারপরে তো ওদের দুজনের প্রতিক্রিয়া দেখে সহজেই বোঝা যায় বিষয়টি।"

"সেখানে আপনি তো একটি মিথ্যা কথা বলেছেন সবাইকে মারার খবর জহির মিয়ার জেনে যাওয়ার কথাটি।"

"দেখো শাহরিয়ার, মাঝে মাঝে সত্যি বের করতে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। আমি শুধু এই আশ্রয়টুকুই নিয়েছি। এটাকে অনবরত চালিয়ে নিয়ে যাইনি। আর কথাটি বলেছি, যাতে তারা গ্রামবাসীর হাত থেকে বাঁচতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।"

"আর তাহলে মৃত ব্যাক্তির পিঠে লেখা হলো কীভাবে?"

"যারা একজন ব্যাক্তিকে খুন করতে পারে, তারা খুব সহজেই সেই মৃত ব্যাক্তির লাশের পিঠে হোক বা যে কোনো যায়গায়ই হোক ট্যাটু একে দিতে পারে। আর বর্তমানে এমন কিছু কালি কিনতে পাওয়া যায় বাজারে, যা দিয়ে ট্যাটু করা হলে তা কম করে হলেও সপ্তাহখানেক দাগ থাকে। সেই দাগ উঠে যাওয়ার আগেই দাফন হয়ে যায়, তাই কেও কিছু বুঝতে পারেনা। আর অলৌকিক এবং রহস্য বলে চালিয়ে দেয়। আর তাদের বাবার ক্ষেত্রে সে আগে থেকেই হয়তো জনি এবং রনির সাথে যুক্ত ছিলো। তাই সে নিজের পিঠে লেখাটি নিয়ে ঘুরতো।"

শাহরিয়ার হাসানের মাথায় বিষয়টা ঢুকতে আরো কিছুটা সময় নেয়। তখন সমির আলি আবার বললেন, "আমি আর এখানে থাকতে চাচ্ছি না। আমার ঢাকায় ফিরে যেতে হবে। আগামীকাল সকালের ট্রেনেই আমি চলে যেতে চাচ্ছি।"

"সে কী! আপনি তো এখানে আসলেন আজ মাত্র দুইদিন হলো। শহরটি একটু ঘুরে দেখবেন। কাল আমি আপনাকে নিয়ে শহর ভ্রমনে যাবো।"

সমির আলি একটু হেসে বললেন, "শহর দেখার থেকে তোমার হাসপাতালের ডিউটিতে যাওয়াটা জরুরি। আজ দুইদিন তুমি হাসপাতালে যাওনি। তা ছাড়া আমার কাজের ছেলে মুন্না একা একা আছে। তাই আমি কালই চলে যাবো।"

সকালে সমির আলিকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে নাস্তার টেবিলে বসে খবর দেখছিলেন শাহরিয়ার হাসান। টিভিতে খবর দেখতে দেখতে ব্রেকিং নিউজে হঠাৎ চোখ যায় তার। একজন মহিলা খবর পড়ছেন, "দুই বছর আগে নিজেদের বাবাকে খুন করে গতকাল রাতে আত্মসমর্পণ করলো নেত্রকোনার দুই ভাই জনি এবং রনি। তাদের পিঠে কিছু অদ্ভুত লেখা দেখতে পাওয়া যায়। যা দুই বছর আগেও কয়েকজনের লাশের পিঠে দেখা গিয়েছিলো। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের বাবার দাফনের আগে তার পিঠেও একই ধরনের লেখা দেখা গিয়েছিলো। বাকি সবার রহস্যজনক মৃতুতেও এদেরই হাত আছে বলে ধারনা পুলিশের।"

শাহরিয়ার হাসান সেদিনের মত এবারও ভাবলেন, "একজন ব্যাক্তি কীভাবে এতটা বুদ্ধিমান হয়? সামান্য হাইপোথিসিস দিয়ে সে সবকিছুই সঠিকভাবে বলে দিতে পারেন!"

পাঁচ

নিজ বাসার বারান্দায় বসে আছেন সমির আলি। মুন্নার হাতে তৈরি চা খাচ্ছেন আর আর বিদ্যুতের তারের উপরে লাফালাফি করতে থাকা পাখিদের দিকে অবাক হয়ে দেখছেন। তাদের কিচির-মিচির শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে। হঠাৎ কলিংবেল এর শব্দে সম্বিৎ ফেরে তার। নিজেই গেলেন দরজা খুলতে। একটি চিঠি এসেছে তার নামে। বারান্দায় গিয়ে রকিং চেয়ারটায় বসলেন তিনি। চিঠিটা খুলে দেখলেন, প্রেরকের নাম জহির মিয়া। তিনি লিখেছেন,

"সাহেব, আমার সালাম নিবেন৷ আপনার কথামত আমি আবিরকে নিয়ে সেই রাতে খালের ধারে গিয়েছিলাম৷ সেখানে কিছুই ছিলোনা। সেই রাতে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো সে। কিন্তু পরদিন সকাল থেকে সে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে।

সাহেব, আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন এই চিঠিটাও আমি যা বলেছি, আবির নিজেই তা লিখে দিয়েছে। তার জন্য দোয়া করবেন।"

হাতের চিঠিটা রেখে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন তিনি।

(সমাপ্ত)

1
$ 0.00
Avatar for Bijoy11
4 years ago

Comments