মেয়েটিঃ আমি প্রেগনেন্ট কিন্তু আমি ভার্জিন।
আমিঃ কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন, আপনার মাথা কি ঠিক আছে?
মেয়েটিঃ আমি একদম ঠিক আছি। এই দেখুন আমার রিপোর্ট এখানে লেখা হয়েছে আমি প্রেগনেন্ট কিন্তু বিশ্বাস করুন এ পর্যন্ত আমি কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করি নি।
আমিঃ আমার মনে হচ্ছে আপনি এখন মানসিকভাবে ঠিক নয় এই নিন পানি পান করুন।
মেয়েটিঃ আমি এখানে পানি পান করতে আসিনি আমি এখানে,,,,
আমিঃ কি হলো থেমে গেলেন কেন? কি জন্য এসেছেন সেটা বলুন?
মেয়েটিঃ এবরশন করার জন্য।
আমিঃ এতক্ষণে আমি পুরো ড্রামা বুঝতে পেরেছি। নিজেই প্রথমে বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুমডেট করতে গিয়েছো আর এখন যখন প্রেগনেন্ট হয়ে গিয়েছে তখন এবরশন করাতে এখানে এসেছো।তোমার কি মনে হয় আমি এত জঘন্য ও নিম্নমানের কাজ করার জন্য এখানে বসে আছি। এখনই চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাও। মামুন, এই মামুন, মামুন।
মামুন আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট। এমনি সময় তো তাকে ডাক দিলেই চলে আসে কিন্তু আজকে কি হলো আসছে না কেন? মেয়েটিকে চেম্বারে রেখে আমি মামুনকে খুঁজতে গেলাম। চেম্বার থেকে বেরিয়ে দেখলাম মামুন আশেপাশে কোথাও নেই। একটু সামনে গিয়েও খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। অবশেষে মামুনকে না পেয়ে আমি আবার নিজের চেম্বারে ঢুকতেই দেখলাম মেয়েটি সেখানে নেই। কি আজব মেয়েরে বাবা। এসব মেয়েদের কারণেই আজ অন্য মেয়েরা সমাজে কলঙ্কিত হচ্ছে। চেয়ারে বসে মেয়েটির কথাগুলো চিন্তা করছিলাম ঠিক এমন সময় চেম্বারে মামুন ঢুকলো।
মামুনঃ স্যার আপনি নাকি আমাকে খুঁজছিলেন। সরি স্যার আমি একটু ওয়াশরুমে গেছিলাম।
আমিঃ মামুন তুমি ভালো করেই জানো আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রোগী দেখিনা।যখন যে আসে তারই চিকিৎসা করি। তারমানে এই না যে তুমি আজেবাজে মানুষদেরকে চেম্বারে ঢুকতে দিবে।
মামুনঃ কেন স্যার কি হইছে?
আমিঃ কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়ে ঢুকলো মেয়েটা কি সব আজেবাজে কথা বলতেছে। মেয়েটা নাকি প্রেগন্যান্ট।
মামুনঃ স্যার কালো কাপড় পরা মেয়েটা নাকি?
আমিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ কালো কাপড় পরা মেয়েটা।
মামুনঃ স্যার আর বইলেন না আজকে পুরা একদিন মেয়েটা আমারে পাগল বানাইছে আপনার সাথে দেখা করার জন্য। মেয়েটার কথা অনেক অদ্ভুত।
আমিঃ বুঝতে পারছি। আচ্ছা মামুন এক কাজ করো আজকে আর রোগী দেখবো না এমনিতেও রাত এগারোটার বেশি হইছে। তুমি আজকের রোগীদেরকে বলে দাও আমি তাদেরকে কালকে দেখব।
মামুনঃ আচ্ছা স্যার আমি বলে দিচ্ছি।
ব্যাগ হাতে নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে রিকশায় উঠলাম বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমি বাহাদুর চৌধুরী। মা ও ছোট ভাই রাফি কে নিয়েই আমার পরিবার। ছোটবেলায় বাবা মারা যায়। তার পর থেকে খুব সংগ্রাম করে আমি আজ এতদূর একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হয়েছি। তাই চেষ্টা করি সর্বোচ্চ দিয়ে রোগীদের দুঃখ লাঘব করার এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা করার। যদি আমাকে বলা হয় এই পৃথিবীতে মায়ের পরে কাকে বেশি ভালোবাসো? তখন আমি বলব আমার ছোট ভাই রাফি কে। রাফি আমার আপন ভাই না।রাফি আব্বুর বন্ধুর ছেলে।আব্বুর বন্ধু যখন মারা যায় তখন রাফির দায়িত্ব আব্বু নেই।কিন্তু হঠাৎ করে একদিন আব্বু ও মারা যায়।তারপর থেকে রাফিকে আমি ভাইয়ের মতো না বরং একজন অভিভাবকের মতো বড় করেছি। প্রায় সময় রোগী দেখতে দেখতে রাত এগারোটা বারোটা হয় আর বাসায় গেলে আম্মু বকাবকি করে। আমি নিশ্চিত আজকেও বকা দিবে। কিছুক্ষণ আগে যে মেয়েটি আমার চেম্বারে আসলো মেয়েটি ব্যাপারে আমার মাথা এখনো চিন্তা ঘুরছে।আজব মেয়ে প্রথমে বলে প্রেগনেন্ট তারপর আবার ভার্জিন। এইসব মেয়েদের যে কি হবে সেটা চিন্তার বিষয়। মেয়েটির মা-বাবা কি এগুলো জানে? জানলে তাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে? অল্প সুখের জন্য কেন এসব মেয়েরা তাদের জীবন নষ্ট করে।এসব চিন্তা করতে করতে ঘরে পৌঁছে গেলাম। আমি শিওর যে ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই আম্মুর বকাবকি শুরু হবে। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। আম্মু আর ছোট ভাই রাফি খুব সুন্দর করে খাবার টেবিলে হরেক রকমের খাবার সাজিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। আরও অবাক করার বিষয় হলো আম্মু বকাও দিচ্ছেন। আমি কাউকে কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে খেতে বসলাম।
আমিঃ কি হল আজকে এতগুলো রান্না করেছেন কেন?
আম্মুঃ ওমা আমার ছেলের জন্য কি আমি রান্না করতে পারি না?
আমিঃ না মানে তা না।
আম্মুঃ এত কথা বলতে হবে না তুই আগে খেয়ে নে।
খুব মজা করেই খাচ্ছিলাম ঠিক এমন সময় আম্মু যা বলল তা শুনে বিরক্ত হয়ে গেলাম।
আম্মুঃ দেখ তোর বয়সটা তো ত্রিশের কাছাকাছি হয়েছে এখন একটা বিয়ে করে নে।আর তুই তো একজন ভালো ডাক্তার কোন মেয়ে কি তোকে না করবে বরং সে মেয়েটাই সৌভাগ্যবান হবে যে তোর মত একজন ছেলেকে বিয়ে করবে।
আমিঃ আম্মু এটা ভালো লাগেনা। এই কথাটা এ পর্যন্ত আপনি কয়বার বলেছে জানেন?
আম্মুঃ তুই যতদিন বিয়ের জন্য রাজি হবে না আমি ততদিন এই কথাটা বলতেই থাকবো।
রাফিঃ ভাইয়া প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ে করো তারপর আমিও বিয়ে করব।
আম্মুঃ তোর কি আমার জন্য একটুও কষ্ট হয়না এই বয়সে আমি তোর জন্য রান্না করি, কাজ করি।
আমিঃ আম্মু প্লিজ এসব কথা আর বলবেন না আর এক কাজ করেন রাফি বিয়ে করিয়ে দেন তাহলে সব সমস্যা সমাধান হবে।
আম্মুঃ একদম বেশি কথা বলবি না। রাফি কেন বিয়ে করবে? তুই বিয়ে করবি আর কালকে আমরা একটা মেয়েকে দেখতে যাব। মেয়েটার নাম আয়েশা আহমেদ। এই দেখ মেয়েটার ছবি।
আমি মেয়েটার ছবি হাতে নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম।
আমিঃ আমি কিছু শুনবো না এবং কোন মেয়ের ছবি দেখব না।
আম্মুঃ বুঝতে পারছি আমি বেঁচে থাকতে তোর বিয়ে কোনদিনও দেখতে পারবো না।
শুরু হয়ে গেল সেই বাংলা সিরিয়াল।ডিশওয়ালা মাামকে অনেকবার বলেছি যে আমাদের টিভি থেকে জি বাংলা, স্টার জলসা চ্যানেল গুলো কেটে দিতে কিন্তু এখনো কাটেনি।
রাফিঃ ভাইয়া প্লিজ তুৃমি বিয়ে করে নাও।তুমি বিয়ে করলে আম্মুরও অনেক সাহায্য হবে ভাবি আর আমিও একটা ভাবি পাবো।
অবশেষে দুজনের কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি কালকে মেয়ে দেখতে যাব।
দুজনের মুখে এক বিজয়ের হাসি। রুমে শুয়েছিলাম এমন সময় রাফি রুমে ঢুকলো।
আমিঃ রাখি কিছু বলবি?
রাফিঃ ভাইয়া আসলে ১৫ দিন পর আমাদের সিলেটে একটি ট্যাুর আছে।সেখানে সবাই যাচ্ছে তাই আমিও যেতে চাই।
আমিঃ এটা আমাকে বলার কি হলো তুই অবশ্যই যাবি।
রাফিঃ ভাইয়া আমার পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।
আমিঃ আরে এই কথাটা বলার জন্য এতক্ষণ।ধর আমার ক্রডিট কার্ডটা নে আর যা লাগে খরচ কর।
রাফিঃ আই লাভ ইউ ভাইয়া।
রাফি রুম থেকে বের হতেই দেখলাম আম্মু রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের দুজনের কথা শুনছিল।
আম্মুঃ কি হল এটা, রাফি ৫০০০ টাকা চাইলো আর তুই তাকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দিলি এটা কি ঠিক করেছিস?
আমিঃ আম্মু আপনি জানেন আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক অভাবে বড় হয়েছি।তাই আমি চাইনা আমি যত কষ্ট করে বড় হয়েছি রাফি তত কষ্ট করুক।আমি তার সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে চাই।
আম্মুঃ শুন অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। পরে সমস্যা হতে পারে।
আমিঃ আম্মু কিছুই হবে না আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া-দাওয়া করে চেম্বারে গেলাম। চেম্বারে বসতেই মামুন খবরেরকাগকটা এগিয়ে দিল।আমার একটা অভ্যাস আছে খবরেরকাগজ পড়ার সময় যেসব খবর আমার ভালো বা খারাপ লাগে সেগুলো আমি কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখি। আমি একমনে খবরেরকাগজ পড়ছিলাম হঠাৎ ১২ নাম্বার পৃষ্ঠায় একটি খবরে আমার চোখ আটকে গেল। খবরটি ছিল এইরকম --গতকাল রাতে নেবেল রোডে নিজ বাসায় আয়েশা আহমেদ নামের এই মেয়েটি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। মেয়েটির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশের কোন সুস্পষ্ট ধারণা করতে পারেনি। আয়েশা আহমেদ নামটা কেন জানি আগে কোথাও শুনেছি মনে হচ্ছে কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না। খবরের সাথে মেয়েটির ছবিও লাগানো আছে। ছবিটি দেখে অবাক হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো যে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে সেই মেয়েটিই গতকাল রাতে আমার চেম্বারে এসেছিল।পৃষ্ঠা নাম্বার ১২ তে মেয়েটির আত্মহত্যার খবর ছাড়াও আরও ২টি খবরে দাগ দিয়ে রাখলাম। গতকালকে এ মেয়েটার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম আর আজকে মেয়েটা অতীত হয়ে গেল। মানুষ যে কেন খারাপ কাজ করে কি জানি আবার খারাপ কাজ করার পর আত্মহত্যা ও করে। খারাপ কাজের ফল সবসময় খারাপই হয়।হয়তো মেয়েটির সাথেও তাই হয়েছে।খবরের কাগজটি একপাশে রেখে রোগী দেখা শুরু করলাম। বিকেল তিনটা চেম্বারে বসে বসে রোগী দেখছিলাম ঠিক এমন সময় আম্মু কল দিলো।
আম্মুঃ এই শোন তোর মোবাইলে আমি একটি এড্রেস মেসেজ করে দিয়েছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে চলে আয়।
আমার বুঝতে আর বাকি রইল না যে আম্মু মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বলছে। মেয়ের বাড়িতে পৌঁছানোর পর বুঝতে পারলাম এরা আমাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আম্মু ডেকে আমাকে তার পাশে বসালেন। আমার পাশেই ছোট ভাই বসে আছে। আমার থেকে আমার ছোট ভাই বেশি এক্সাইটেড তার হবু ভাবীকে দেখার জন্য। ভাইটা আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে আর আমি আমার ভাইটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আম্মু আমার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে কথা বলছেন। আমাকে কোনো প্রশ্ন করা হলে আমিও হ্যাঁ অথবা না বলে উত্তর দিচ্ছি। একটু পরে আমার হবু বউকে আমার সামনে বসানো হলো। হবু বউকে দেখে আমার হাটু কাপা শুরু হলো। এটা তো সেই মেয়ে যে গতকাল রাতে আমার চেম্বারে এসেছিল আর আজকে যার আত্মহত্যার খবর পড়েছি। কিন্তু মেয়েটা যদি মারা যেয়ে থাকে তাহলে আমার সামনে এটা কে বসে আছে। আমি রাফির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম,
আমিঃ এই তোর হবু ভাবীর নাম কিরে?
রাফিঃ আয়েশা আহমেদ।
নামটি শুনে মাথা ঘুরতে লাগলো। ভয়ে আমার পুরো শরীর কাঁপা শুরু হয়ে গেল। কারণ যে মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে তার নামও আয়েশা আহমেদ।
আম্মুঃ কি হলো তুই এভাবে কাঁপছিস কেন?
আমি কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা আমার চেম্বারে গেলাম। চেম্বারে ঢুকেই তাড়াতাড়ি খবর কাগজটা হাতে নিলাম। পৃষ্ঠা নাম্বার ১২ খুললাম, পুরো পৃষ্ঠায় আমি আয়েশা আহমেদ নামক মেয়েটির আত্মহত্যার খবর খুঁজতে লাগলাম কিন্তু আজব ব্যাপার কোথাও খবরটি খুঁজে পেলাম না। খবরের কাগজটি আজকের কিনা দেখার জন্য আমি যেসব জায়গায় কলম দিয়ে দাগ দিয়েছি সেগুলো দেখতে লাগলাম। সবগুলো দাগ ঠিকই আছে, এমনকি পৃষ্ঠা নাম্বার ১২ তে যে তিনটি দাগ দিয়েছি সেগুলোও ঠিক আছে কিন্তু আয়েশা আহমেদ নামক মেয়েটির আত্মহত্যার খবরটি উধাও!
চলবে,,,
গল্পঃ #অদ্ভুত_রহস্য
পর্বঃ০১
লেখকঃ #Khan_Bahadur
আপনার গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে। নেক্সট পর্ব টা কবে দিচ্ছেন। আশা করি খুব দ্রুতই পেয়ে যাবো। আপনার গল্পটার নেক্সট পর্ব পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকবো ধন্যবাদ আপনাকে।