গল্পঃ #দ্যা_মিস্ট্রি
পর্বঃ০২
লেখকঃ #Khan_Bahadur
আমিঃ আয়েশা!
আকরামঃ আয়েশা কে?
আমিঃ আয়েশাাাশাশাশা
বলে চিৎকার করে বেহুশ হয়ে গেলাম। হুঁশ ফিরতেই নিজেকে একটি হাসপাতালে আবিষ্কার গল্পঃ #দ্যা_মিস্ট্রি
পর্বঃ০২
লেখকঃ #Khan_Bahadur
আমিঃ আয়েশা!
আকরামঃ আয়েশা কে?
আমিঃ আয়েশাাাশাশাশা
বলে চিৎকার করে বেহুশ হয়ে গেলাম। হুঁশ ফিরতেই নিজেকে একটি হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম আর পাশেই মিজান বসে আছে।
মিজানঃ অনেকক্ষণ পর তোর হুঁশ ফিরলো।
আমিঃ আমার আয়েশা কোথায়?
মিজানঃ দেখ বাহাদুর আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব কিন্তু তার আগে তুই একটু সুস্থ হয়ে যা।
আমিঃ না আমি নিজেই আয়েশাকে মেরেছি। আমি যদি আয়েশাকে পার্কে একা রেখে না আসতাম তাহলে হয়তো আজকে এত বড় ঘটনা ঘটতো না।
মিজানঃ দেখ এখানে তোর কোন দোষ নেই এটা একটা খুন।
আমিঃ কিন্তু আমি যদি আয়েশাকে একা পার্কে রেখে না আসতাম তাহলে হয়তো এটা হতো না।
মিজানঃ দেখ তুই ইমোশনালি বিষয়টাকে চিন্তা করছিস কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে যদি বিষয়টাকে চিন্তা করিস তাহলে এটা তোর কাছে একটা মিস্ট্রি খুন।
আমিঃ মিজান তোর কি মাথা ঠিক আছে, আয়েশা আমার বউ।
মিজানঃ আমি জানি যে আয়েশা তোর বউ কিন্তু এখন আমাদের কিছুই করার নেই। অলরেডি লাশটাকে ময়নাতদন্ত করার জন্য ডাক্তার মিসবাহ এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমিঃ আমি বুঝতে পারছি না এগুলো কি হচ্ছে। এক রাতের ভিতরে আমার জীবনে এতো কিছু হয়ে যাবে আমি কখনও কল্পনাও করিনি।
মিজানঃ আগে তুই শান্ত হও।
আমিঃ আমি কেমনে শান্ত হব বল। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আয়েশার পরিবারকে কি বলবো এবং আম্মুকে কি বলবো।
মিজানঃ দেখ এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই আর তুই যে চট্টগ্রাম এসেছিস সেটা আমি আর আকরাম স্যার ছাড়া এখনো কেউ জানে না। আগে আমরা এই কেস সম্পর্কে কিছু জেনে যায় তারপর না হয় সবাইকে বলব।
আমিঃ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কোনোদিন ভাবি নি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমি এভাবে হারিয়ে ফেলবো।
মিজানঃ আমি জানি আমি এখন যাই বলব না কেন কোনো ভাবেই ভাবিকে আর ফিরে পাবো না কিন্তু সবকিছুর আগে আমাদের থেকে জানতে হবে ভাবিক কে খুন করেছে এবং কেন করেছে। কিন্তু তার আগে আমাকে বল তুই একদিন আগে কেন এসেছিস।তোর তো আগামীকাল আসার কথা ছিল।
আমিঃ সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য একদিন আগপ চট্টগ্রামে এসেছি কিন্তু চট্টগ্রামে এসে যে নিজেই এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাব সেটা জানতাম না।
মিজানঃ কিসের সারপ্রাইজ?
আমিঃ চট্টগ্রামে আসার একদিন আগে নাফিস আমাকে কল দিয়েছিল এবং সে বলল আয়েশাকে নাকি সে পতিতালয়ে দেখেছে কিন্তু আমি তখন তার কথা বিশ্বাস করিনি। চট্টগ্রামের আসার পর আমি নিজেই আয়েশাকে পতিতালয়ের সামনে দেখেছি। তারপর আমি আয়েশাকে সদর পার্কে ডাকলাম এবং বললাম যে আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব।
মিজানঃ তারপর,
আমিঃ তারপর আমি সেখান থেকে সরাসরি তোর বাসায় চলে আসলাম।
মিজানঃ কিন্তু যখন তুই আয়েশাকে পতিতালয়ের সামনে দেখলি তখন তুই সরাসরি তাকে সব কথা বলি না কেন আর তাকে পার্কে ডাকার কি দরকার ছিল?
আমিঃ কারণ সেখানে শুধু আয়েশা ছিল না বরং আয়েশার সাথে আরেকটা ছেলেও ছিল।
মিজানঃ তার মানে হয়তো আয়েশাকে সেই ছেলেটাই খুন করেছে।
আমিঃ তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস আয়েশার সাথে যে ছেলেটাকে আমি দেখেছি সেই আয়েশার খুনি।
মিজানঃ হুম আমি সেটাই বলতে চাচ্ছি।
আমিঃ তোর কথায় যুক্তি আছে।
মিজানঃ আচ্ছা তুই কি ছেলেটাকে ভালোভাবে দেখেছিস মানে ছেলেটা চেহারা সম্পর্কে কি তোর ধারণা আছে?
আমিঃ না ছেলেটা চেহারায় মাস্ক লাগানো ছিল।
মিজানঃ তাহলে এক কাজ করতে হবে, ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে হবে।
আমিঃ তোর কি মনে হয় এসব এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
মিজানঃ তাও ঠিক।
এমন সময় আকরাম স্যার কেবিনে ঢুকলো।
আকরামঃ মিজান আমার সাথে এসো। ডাক্তার মিসবাহ এই কেস সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার জন্য ডাকছে।
মিজানঃ আচ্ছা স্যার চলুন।
আমিঃ স্যার আমিও আপনাদের সাথে যাব।
আকরামঃ দেখো বাহাদুর এখন তোমার সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না। মিজান আমাকে আয়েশা সম্পর্কে সব কিছু বলছে। আর আমি জানি এই মৃত্যু টা তোমার পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া অনেক কঠিন হবে কিন্তু বাস্তবতা তো বাস্তবতাই।
আমিঃ স্যার আমি জানি আমি আয়েশার জীবনসঙ্গী কিন্তু তার আগে আমি একজন পুলিশ অফিসার। আমার কাছে দায়িত্ব সবার আগে।
আকরামঃ তুমি যদি নিজের ইচ্ছায় আসতে চাও তাহলে তোমাকে বাধা দেওয়া হবে না।
অতঃপর আমরা তিনজন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসলাম।
আমিঃ স্যার এই কেস সম্পর্কে কিছু ডিটেইলস আছে আমার কাছে।
আকরাম কিরকম ডিটেলস?
আমিঃ আয়েশা খুন হওয়ার 2-1 ঘন্টা আগে তার সাথে আমি দেখা করেছি।
আকরামঃ কি বল কোথায়?
আমিঃ স্যার আমরা দুজন সদর পার্কে দেখা করেছিলাম কিন্তু তার আগে আয়েশাকে আমি পতিতালয়ের সামনে একজন ছেলের সাথে দেখেছিলাম।
মিজানঃ স্যার আমার ধারণামতে বাহাদুর আয়েশাকে যে ছেলেটার সাথে দেখেছে সেটাই হয়তো আয়েশার খুনি।
আকরামঃ কিন্তু আয়েশা পতিতালয়ের সামনে কি করছিল?
তারপর আমি আকরাম স্যারকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
আকরামঃ জানিনা পুরো ঘটনা শুনে তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার নাকি যা হয়েছে ভালো হয়েছে সেটা বলা দরকার কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই কেস এত সহজে শেষ হবে না।
আমিঃ কেন স্যার হঠাৎ এমন কেন মনে হচ্ছে?
আকরামঃ মিস্ট্রি।
মিজানঃ কি মিস্ট্রি স্যার?
আকরামঃ আমার মনে হচ্ছে এই কেস সম্পূর্ণরূপে একটা মিস্ট্রি কেস। কারণ খুনি খুন করার পরে চেহারা একদম স্পষ্ট রেখেছে।আর শুধু তাই না বরং খুনি লাশটিকে যে যায়গায় রেখেছে সেটা ময়লা ফেলানোর স্তূপ হওয়ার স্বত্বেও খুনি সেই যায়গাটাকে পরিষ্কার করে তারপর সেখানে লাশটি রেখেছে। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আর,,,,,
আকরাম আরো কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় আকাম স্যারের মোবাইলে একটি কল আসলো। আকরাম স্যার প্রায় দু-তিন মিনিট মোবাইলে কথা বললেম তারপর একরাশ চিন্তা নিয়ে মোবাইলটি পকেটে ঢুকালেন।
আমিঃ স্যার কি হয়েছে আপনাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
আকরামঃ আমি বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে?
আমিঃ কেন স্যার আবার কি হয়েছে?
আকরামঃ ইনভেস্টিগেটর অফিসার রায়হান আহমেদ এর বড় ভাইয়ের মেয়ে জান্নাত অপহরণ হয়ে গেছে। আর অপহরণকারীরা নাকি এক কোটি টাকার ডিমান্ড করছে। আর তুমি তো রায়হান কে চিনোই তাই না। এইরকম অফিসার আমি জীবনে দেখিনি।
আমিঃ রায়হান স্যার আবার কি করলো?
আকরাম; রায়হান কোনমতেই ওই অপহরণকারী গুলোকে টাকা দিবে না।
আমিঃ তাহলে জান্নাতকে কিভাবে বাঁচাবে?
আকরামঃ রায়হান নাকি ইমিডিয়েটলি একটা পুলিশের টিম রেডি করবে আর তাদেরকে নিয়েই জান্নাত কে বাঁচাতে যাবে।
মিজানঃ সব বুঝলাম কিন্তু সেখানে আপনার চিন্তিত হওয়ার কি আছে?
আকরামঃআরে রায়হান যে টিম রেডি করার কথা বলছে সেখানে সে আমাকেও নিয়েছে, তোমাকেও নিয়েছে এবং বাহাদুরকেও নিয়েছে।
আমিঃ স্যার আমি এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুত না আর আপনি বলছেন একজন মেয়েকে বাঁচাতে যেতে হবে এটা কোনভাবেই আমার পক্ষে সম্ভব না।
আকরামঃ আমার কিছু করার নেই রায়হানের মত জেদি অফিসার আমি জীবনেও দেখিনি।
মিজানঃ ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট এর কাজ আমরা কেন করব?
আকরামঃ তোমার কি মনে নাই গত কয়েক মাস আগে ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট এর অফিসাররা আমাদেরকে একটি কেসে হেল্প করেছে তাই আজকে আমাদের থেকেও তাদেরকে হেল্প করতে হবে।
মিজানঃ কিন্তু অপহরণকারীরা কোথায় সেটা জানলো কেমনে?
আকরামঃ রায়হান অত্যন্ত চতুর একজন অফিসার অপহরণকারীরা যখন তাকে কল দিলো তখন সে সাথে সাথেই তাদের নাম্বার ট্র্যাক করে নিল। আর অপহরণকারীরা যেই জায়গায় জান্নাত কে রেখেছে সে জায়গাটা আমাদের থানার আন্ডারে।
মিজানঃ যাক বাবা একটা কেস সলভ করার আগে আরেকটা কেস হাতপ চলে আসলো।
আকরামঃ আচ্ছা আমি আগে মিসবাহকে কল দিয়ে বলি আমাদের আসতে দেরি হবে।
অতঃপর আকরাম স্যার ডাক্তার মিসবাহকে বললো যে আমরা একটা নতুন কেস সলভ করতে যাচ্ছি তাই আমাদের দেরি হবে।একটু পরে আমরা সবাই থানায় গিয়ে রেডি হয়ে রায়হান স্যারের সাথে বেরিয়ে পড়লাম।
মোট ১০ জনের একটি টিম করা হলো। রায়হান সয়ারকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত। আমি কোনমতেই মিশনে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। সব মনোযোগ কিছুক্ষণ আগের ঘটনায় আটকে গেছে। আয়েশাকে কোনোভাবেই ভুলতে পারছিনা। চোখের সামনে বারবার আয়েশার লাশটি ভেসে উঠছে।
রায়হানঃ তোমরা সবাই কি রেডি?
সবাইঃ জি স্যার।
রায়হানঃ এই ঘরটিতে মোট পাঁচটি দরজা আছে আর আমার ধারণা মতে অপহরণকারীদের সংখ্যা 5 হতে 10 জন হবে। আমরা এখানে মোট 10 জন অফিসার আছি। সবাই যদি একটা একটা দরজা থেকে অ্যাটাক করি তাহলে আরো পাঁচজন থাকবে আর বাকি 5 জনের কাজ হবে জান্নাত কে সেখান থেকে বের করে আনা।
আমিঃ স্যার আপনার প্ল্যান টা সম্পূর্ণ ফেল হবে।
আকরামঃ আরে তুমি চুপ করো।
রায়হানঃ না ও চুপ করবে না তুমি ওকে বলতে দাও। বল কি বলছিলে।
আমিঃ স্যার আমাদের থেকে কে অপহরণকারীদের টাকার এমাউন্ট দেখেই ধারণা করতে হবে যে অপহরণকারী কয়জন। যেহেতু অপহরণকারীরা এক কোটি টাকা ডিমান্ড করেছে তাই খুব সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে যে অপহরণকারী 20 জনের অধিক হবে। আর এখানে যেহেতু পাঁচটা দরজা আছে সেহেতু জানালা দশটার অধিক হবে আর এই দশটা জানলার মধ্যে কি একটা জানালাও ভাঙ্গা হবে না। অবশ্যই হবে কারণ এই ঘরটি অনেক পুরাতন। আমরা পাঁচজন সেই জানালাটি দিয়ে ঢুকবো এবং বাকি পাঁচজন পাঁচটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।
রায়হানঃ তুমি কেমনে বুঝলে যে ওই অপহরণকারীরা ভাঙ্গা জানালার সামনে দাঁড়াবে না।
আমিঃ স্যার ভাঙ্গা জানালার সামনে যদি তারা দাঁড়াই তাহলে বাইরে থেকে মানুষ তাদের স্পষ্ট দেখতে পারবে তাই তারা কখনোই সেখানে দাঁড়াবে না।
আমিঃ দেখুন ঠিক আপনার মাথার উপরে সেই ভাঙ্গা জানালাটি আছে। আমরা ৫ জন ওখান থেকে মিশন শুরু করবো।কিন্তু
রায়হানঃ কিন্তু কি?
আমিঃ আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা কেউ গুলি ব্যবহার না করি।কারণ আমাদের গুলির আওয়াজে তারা সতর্ক হয়ে যাবে।
অবশেষে আমার প্ল্যান অনুসারে মিশনটি শুধু করা হলো এবং আমরা সাফল্যও পেলাম। আমাদের 10 জন অফিসারের মধ্যে কেউই ব্যাথা পায়নি আর আমরা সেই 23 জন অপহরণকারীকে ধরে ফেললাম কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো কোথাও জান্নাত কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ মিজান বলে উঠলো,
মিজানঃ স্যার এখানে একটা বন্ধ রুম আছে হয়তো এই রুমের ভিতরেই জান্নাত ম্যাডাম আছে।
তারপর মিজান রুমের ভিতরে ঢুকলো আর রুমের ভিতরে ঢুকতেই চিৎকার করে আমাকে ডাকলো। আমি রুমে ঢুকতেই যা দেখলাম তা দেখে আমি স্তব্ধ। কিছুক্ষণের জন্য মনে হল ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমিঃ আয়েশা আপনি,,,,
চলবে,, আর পাশেই মিজান বসে আছে।
মিজানঃ অনেকক্ষণ পর তোর হুঁশ ফিরলো।
আমিঃ আমার আয়েশা কোথায়?
মিজানঃ দেখ বাহাদুর আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব কিন্তু তার আগে তুই একটু সুস্থ হয়ে যা।
আমিঃ না আমি নিজেই আয়েশাকে মেরেছি। আমি যদি আয়েশাকে পার্কে একা রেখে না আসতাম তাহলে হয়তো আজকে এত বড় ঘটনা ঘটতো না।
মিজানঃ দেখ এখানে তোর কোন দোষ নেই এটা একটা খুন।
আমিঃ কিন্তু আমি যদি আয়েশাকে একা পার্কে রেখে না আসতাম তাহলে হয়তো এটা হতো না।
মিজানঃ দেখ তুই ইমোশনালি বিষয়টাকে চিন্তা করছিস কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে যদি বিষয়টাকে চিন্তা করিস তাহলে এটা তোর কাছে একটা মিস্ট্রি খুন।
আমিঃ মিজান তোর কি মাথা ঠিক আছে, আয়েশা আমার বউ।
মিজানঃ আমি জানি যে আয়েশা তোর বউ কিন্তু এখন আমাদের কিছুই করার নেই। অলরেডি লাশটাকে ময়নাতদন্ত করার জন্য ডাক্তার মিসবাহ এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমিঃ আমি বুঝতে পারছি না এগুলো কি হচ্ছে। এক রাতের ভিতরে আমার জীবনে এতো কিছু হয়ে যাবে আমি কখনও কল্পনাও করিনি।
মিজানঃ আগে তুই শান্ত হও।
আমিঃ আমি কেমনে শান্ত হব বল। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আয়েশার পরিবারকে কি বলবো এবং আম্মুকে কি বলবো।
মিজানঃ দেখ এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই আর তুই যে চট্টগ্রাম এসেছিস সেটা আমি আর আকরাম স্যার ছাড়া এখনো কেউ জানে না। আগে আমরা এই কেস সম্পর্কে কিছু জেনে যায় তারপর না হয় সবাইকে বলব।
আমিঃ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কোনোদিন ভাবি নি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমি এভাবে হারিয়ে ফেলবো।
মিজানঃ আমি জানি আমি এখন যাই বলব না কেন কোনো ভাবেই ভাবিকে আর ফিরে পাবো না কিন্তু সবকিছুর আগে আমাদের থেকে জানতে হবে ভাবিক কে খুন করেছে এবং কেন করেছে। কিন্তু তার আগে আমাকে বল তুই একদিন আগে কেন এসেছিস।তোর তো আগামীকাল আসার কথা ছিল।
আমিঃ সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য একদিন আগপ চট্টগ্রামে এসেছি কিন্তু চট্টগ্রামে এসে যে নিজেই এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাব সেটা জানতাম না।
মিজানঃ কিসের সারপ্রাইজ?
আমিঃ চট্টগ্রামে আসার একদিন আগে নাফিস আমাকে কল দিয়েছিল এবং সে বলল আয়েশাকে নাকি সে পতিতালয়ে দেখেছে কিন্তু আমি তখন তার কথা বিশ্বাস করিনি। চট্টগ্রামের আসার পর আমি নিজেই আয়েশাকে পতিতালয়ের সামনে দেখেছি। তারপর আমি আয়েশাকে সদর পার্কে ডাকলাম এবং বললাম যে আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব।
মিজানঃ তারপর,
আমিঃ তারপর আমি সেখান থেকে সরাসরি তোর বাসায় চলে আসলাম।
মিজানঃ কিন্তু যখন তুই আয়েশাকে পতিতালয়ের সামনে দেখলি তখন তুই সরাসরি তাকে সব কথা বলি না কেন আর তাকে পার্কে ডাকার কি দরকার ছিল?
আমিঃ কারণ সেখানে শুধু আয়েশা ছিল না বরং আয়েশার সাথে আরেকটা ছেলেও ছিল।
মিজানঃ তার মানে হয়তো আয়েশাকে সেই ছেলেটাই খুন করেছে।
আমিঃ তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস আয়েশার সাথে যে ছেলেটাকে আমি দেখেছি সেই আয়েশার খুনি।
মিজানঃ হুম আমি সেটাই বলতে চাচ্ছি।
আমিঃ তোর কথায় যুক্তি আছে।
মিজানঃ আচ্ছা তুই কি ছেলেটাকে ভালোভাবে দেখেছিস মানে ছেলেটা চেহারা সম্পর্কে কি তোর ধারণা আছে?
আমিঃ না ছেলেটা চেহারায় মাস্ক লাগানো ছিল।
মিজানঃ তাহলে এক কাজ করতে হবে, ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে হবে।
আমিঃ তোর কি মনে হয় এসব এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
মিজানঃ তাও ঠিক।
এমন সময় আকরাম স্যার কেবিনে ঢুকলো।
আকরামঃ মিজান আমার সাথে এসো। ডাক্তার মিসবাহ এই কেস সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার জন্য ডাকছে।
মিজানঃ আচ্ছা স্যার চলুন।
আমিঃ স্যার আমিও আপনাদের সাথে যাব।
আকরামঃ দেখো বাহাদুর এখন তোমার সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না। মিজান আমাকে আয়েশা সম্পর্কে সব কিছু বলছে। আর আমি জানি এই মৃত্যু টা তোমার পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া অনেক কঠিন হবে কিন্তু বাস্তবতা তো বাস্তবতাই।
আমিঃ স্যার আমি জানি আমি আয়েশার জীবনসঙ্গী কিন্তু তার আগে আমি একজন পুলিশ অফিসার। আমার কাছে দায়িত্ব সবার আগে।
আকরামঃ তুমি যদি নিজের ইচ্ছায় আসতে চাও তাহলে তোমাকে বাধা দেওয়া হবে না।
অতঃপর আমরা তিনজন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসলাম।
আমিঃ স্যার এই কেস সম্পর্কে কিছু ডিটেইলস আছে আমার কাছে।
আকরাম কিরকম ডিটেলস?
আমিঃ আয়েশা খুন হওয়ার 2-1 ঘন্টা আগে তার সাথে আমি দেখা করেছি।
আকরামঃ কি বল কোথায়?
আমিঃ স্যার আমরা দুজন সদর পার্কে দেখা করেছিলাম কিন্তু তার আগে আয়েশাকে আমি পতিতালয়ের সামনে একজন ছেলের সাথে দেখেছিলাম।
মিজানঃ স্যার আমার ধারণামতে বাহাদুর আয়েশাকে যে ছেলেটার সাথে দেখেছে সেটাই হয়তো আয়েশার খুনি।
আকরামঃ কিন্তু আয়েশা পতিতালয়ের সামনে কি করছিল?
তারপর আমি আকরাম স্যারকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
আকরামঃ জানিনা পুরো ঘটনা শুনে তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার নাকি যা হয়েছে ভালো হয়েছে সেটা বলা দরকার কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই কেস এত সহজে শেষ হবে না।
আমিঃ কেন স্যার হঠাৎ এমন কেন মনে হচ্ছে?
আকরামঃ মিস্ট্রি।
মিজানঃ কি মিস্ট্রি স্যার?
আকরামঃ আমার মনে হচ্ছে এই কেস সম্পূর্ণরূপে একটা মিস্ট্রি কেস। কারণ খুনি খুন করার পরে চেহারা একদম স্পষ্ট রেখেছে।আর শুধু তাই না বরং খুনি লাশটিকে যে যায়গায় রেখেছে সেটা ময়লা ফেলানোর স্তূপ হওয়ার স্বত্বেও খুনি সেই যায়গাটাকে পরিষ্কার করে তারপর সেখানে লাশটি রেখেছে। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আর,,,,,
আকরাম আরো কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় আকাম স্যারের মোবাইলে একটি কল আসলো। আকরাম স্যার প্রায় দু-তিন মিনিট মোবাইলে কথা বললেম তারপর একরাশ চিন্তা নিয়ে মোবাইলটি পকেটে ঢুকালেন।
আমিঃ স্যার কি হয়েছে আপনাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
আকরামঃ আমি বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে?
আমিঃ কেন স্যার আবার কি হয়েছে?
আকরামঃ ইনভেস্টিগেটর অফিসার রায়হান আহমেদ এর বড় ভাইয়ের মেয়ে জান্নাত অপহরণ হয়ে গেছে। আর অপহরণকারীরা নাকি এক কোটি টাকার ডিমান্ড করছে। আর তুমি তো রায়হান কে চিনোই তাই না। এইরকম অফিসার আমি জীবনে দেখিনি।
আমিঃ রায়হান স্যার আবার কি করলো?
আকরাম; রায়হান কোনমতেই ওই অপহরণকারী গুলোকে টাকা দিবে না।
আমিঃ তাহলে জান্নাতকে কিভাবে বাঁচাবে?
আকরামঃ রায়হান নাকি ইমিডিয়েটলি একটা পুলিশের টিম রেডি করবে আর তাদেরকে নিয়েই জান্নাত কে বাঁচাতে যাবে।
মিজানঃ সব বুঝলাম কিন্তু সেখানে আপনার চিন্তিত হওয়ার কি আছে?
আকরামঃআরে রায়হান যে টিম রেডি করার কথা বলছে সেখানে সে আমাকেও নিয়েছে, তোমাকেও নিয়েছে এবং বাহাদুরকেও নিয়েছে।
আমিঃ স্যার আমি এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুত না আর আপনি বলছেন একজন মেয়েকে বাঁচাতে যেতে হবে এটা কোনভাবেই আমার পক্ষে সম্ভব না।
আকরামঃ আমার কিছু করার নেই রায়হানের মত জেদি অফিসার আমি জীবনেও দেখিনি।
মিজানঃ ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট এর কাজ আমরা কেন করব?
আকরামঃ তোমার কি মনে নাই গত কয়েক মাস আগে ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট এর অফিসাররা আমাদেরকে একটি কেসে হেল্প করেছে তাই আজকে আমাদের থেকেও তাদেরকে হেল্প করতে হবে।
মিজানঃ কিন্তু অপহরণকারীরা কোথায় সেটা জানলো কেমনে?
আকরামঃ রায়হান অত্যন্ত চতুর একজন অফিসার অপহরণকারীরা যখন তাকে কল দিলো তখন সে সাথে সাথেই তাদের নাম্বার ট্র্যাক করে নিল। আর অপহরণকারীরা যেই জায়গায় জান্নাত কে রেখেছে সে জায়গাটা আমাদের থানার আন্ডারে।
মিজানঃ যাক বাবা একটা কেস সলভ করার আগে আরেকটা কেস হাতপ চলে আসলো।
আকরামঃ আচ্ছা আমি আগে মিসবাহকে কল দিয়ে বলি আমাদের আসতে দেরি হবে।
অতঃপর আকরাম স্যার ডাক্তার মিসবাহকে বললো যে আমরা একটা নতুন কেস সলভ করতে যাচ্ছি তাই আমাদের দেরি হবে।একটু পরে আমরা সবাই থানায় গিয়ে রেডি হয়ে রায়হান স্যারের সাথে বেরিয়ে পড়লাম।
মোট ১০ জনের একটি টিম করা হলো। রায়হান সয়ারকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত। আমি কোনমতেই মিশনে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। সব মনোযোগ কিছুক্ষণ আগের ঘটনায় আটকে গেছে। আয়েশাকে কোনোভাবেই ভুলতে পারছিনা। চোখের সামনে বারবার আয়েশার লাশটি ভেসে উঠছে।
রায়হানঃ তোমরা সবাই কি রেডি?
সবাইঃ জি স্যার।
রায়হানঃ এই ঘরটিতে মোট পাঁচটি দরজা আছে আর আমার ধারণা মতে অপহরণকারীদের সংখ্যা 5 হতে 10 জন হবে। আমরা এখানে মোট 10 জন অফিসার আছি। সবাই যদি একটা একটা দরজা থেকে অ্যাটাক করি তাহলে আরো পাঁচজন থাকবে আর বাকি 5 জনের কাজ হবে জান্নাত কে সেখান থেকে বের করে আনা।
আমিঃ স্যার আপনার প্ল্যান টা সম্পূর্ণ ফেল হবে।
আকরামঃ আরে তুমি চুপ করো।
রায়হানঃ না ও চুপ করবে না তুমি ওকে বলতে দাও। বল কি বলছিলে।
আমিঃ স্যার আমাদের থেকে কে অপহরণকারীদের টাকার এমাউন্ট দেখেই ধারণা করতে হবে যে অপহরণকারী কয়জন। যেহেতু অপহরণকারীরা এক কোটি টাকা ডিমান্ড করেছে তাই খুব সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে যে অপহরণকারী 20 জনের অধিক হবে। আর এখানে যেহেতু পাঁচটা দরজা আছে সেহেতু জানালা দশটার অধিক হবে আর এই দশটা জানলার মধ্যে কি একটা জানালাও ভাঙ্গা হবে না। অবশ্যই হবে কারণ এই ঘরটি অনেক পুরাতন। আমরা পাঁচজন সেই জানালাটি দিয়ে ঢুকবো এবং বাকি পাঁচজন পাঁচটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।
রায়হানঃ তুমি কেমনে বুঝলে যে ওই অপহরণকারীরা ভাঙ্গা জানালার সামনে দাঁড়াবে না।
আমিঃ স্যার ভাঙ্গা জানালার সামনে যদি তারা দাঁড়াই তাহলে বাইরে থেকে মানুষ তাদের স্পষ্ট দেখতে পারবে তাই তারা কখনোই সেখানে দাঁড়াবে না।
আমিঃ দেখুন ঠিক আপনার মাথার উপরে সেই ভাঙ্গা জানালাটি আছে। আমরা ৫ জন ওখান থেকে মিশন শুরু করবো।কিন্তু
রায়হানঃ কিন্তু কি?
আমিঃ আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা কেউ গুলি ব্যবহার না করি।কারণ আমাদের গুলির আওয়াজে তারা সতর্ক হয়ে যাবে।
অবশেষে আমার প্ল্যান অনুসারে মিশনটি শুধু করা হলো এবং আমরা সাফল্যও পেলাম। আমাদের 10 জন অফিসারের মধ্যে কেউই ব্যাথা পায়নি আর আমরা সেই 23 জন অপহরণকারীকে ধরে ফেললাম কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো কোথাও জান্নাত কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ মিজান বলে উঠলো,
মিজানঃ স্যার এখানে একটা বন্ধ রুম আছে হয়তো এই রুমের ভিতরেই জান্নাত ম্যাডাম আছে।
তারপর মিজান রুমের ভিতরে ঢুকলো আর রুমের ভিতরে ঢুকতেই চিৎকার করে আমাকে ডাকলো। আমি রুমে ঢুকতেই যা দেখলাম তা দেখে আমি স্তব্ধ। কিছুক্ষণের জন্য মনে হল ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমিঃ আয়েশা আপনি,,,,
চলবে,,
wow very fantastic