আমার প্রাক্তন

0 18

সিনথিয়াঃ তোমার কি মনে আছে একসময় তোমার চ্যাট লিস্টে সবার উপরের স্থানটা আমারই ছিল। শুধু চ্যাট লিস্টই না বরং তোমার জীবনের সব সিদ্ধান্তে প্রথম অধিকারটা আমারই ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে গেল। তোমার কি মনে আছে একবার একটি ফেক আইডি দিয়ে আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি বুঝে গিয়েছিলে যে ওই ফেক আইডিটা আমারই। আচ্ছা আমি যে তোমাকে এতগুলো কথা বললাম তোমার কি এখানের মধ্যে একটাও মনে আছে?

আমিঃ হুম।

সিনথিয়াঃ আজব আমি এতগুলো কথা বললাম আর তোমার উত্তর শুধু হুম।

আমিঃ তো আর কি বলব?

সিনথিয়াঃ আচ্ছা থাক তোমার থেকে কিছুই বলতে হবে না। তুমি জানো আমি ওই পাশের হাসপাতাল থেকে চুরি করে এখানে এসেছি শুধুমাত্র ফুচকা খাওয়ার জন্য। এখানে এসে যে তোমার সাথে দেখা হবে আমি কল্পনাও করিনি। তুমি কি এখানে সব সময় ফুচকা খেতে আসো?

আমিঃ না।

সিনথিয়াঃ বাহাদুর তুমি এখনও আগের মতই সেই বোকাই রয়ে গেলে. একটা মেয়ে এতক্ষণ ধরে তোমার সাথে গল্প করছে আর তুমি তাকে ফুচকা খাওয়ার কথা এক্টু জিজ্ঞেস ও করছো না।

আমিঃ ওহ সরি ভুলে গিয়েছিলাম, মামা এক প্লেট ফুচকা দাও।

সিনথিয়াঃ এক প্লেট কেন দুই প্লেট দেন।

আমিঃ না না দুই প্লেট না, এক প্লেটই দেন।

সিনথিয়াঃ আজব আগে তো তুমি আর আমি একসঙ্গে ভার্সিটির শেষ হলে ফুচকা খেতাম এখন কি তাহলে আর ফুচকা খাও না?

আমিঃ কিছু মানুষ আমাদের জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের মাধ্যমে পাওয়া অভ্যাস গুলোও আমাদের জীবন থেকে চলে যায়।

আমার কথা শুনে সিনথিয়া মন খারাপ করে ফেললো। আমি স্পষ্ট সিনথিয়ার চোখে জল দেখতে পেলাম। হয়তো চোখের পলক নাড়ালেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরবে।

সিনথিয়াঃ বিশ্বাস করো সেদিন যদি আব্বু......

সিনথিয়ার কথার মাঝে তাকে থামিয়ে দিলাম।

আমিঃ আচ্ছা ওসব পুরনো কথা বাদ দাও এই নাও ফুচকা খাও।

সিমথিয়া মেয়েটা বড্ড ফুচকা পাগলী। সিনথিয়া যেই ফুচকা মুখে দিতে যাবে তার আগেই একটি ছেলে তার হাত ধরে ফেললো।

সিনথিয়াঃ রাজিব প্লিজ আমার হাত ছাড়ো। আজ প্রায় ৬-৭ মাস পর আমি এই জায়গার ফুচকা খাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। প্লিজ আমার হাত ছাড়ো।

রাজিবঃ সিনথিয়ার আমি তোমাকে অনেকবার মানা করছি এসব জায়গার খাবার খাবে না। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর জানো ডাক্তার কি বলেছে, ডাক্তার বলেছে তুমি প্রেগনেন্ট।

এতোটুকু বলে রাজিব নামের ছেলেটি সিনথিয়াকে জড়িয়ে ধরল। একটু পরে সিনথিয়া আমার দিকে তাকালো।

সিনথিয়াঃ আরে আমি তো ভুলেই গেছি, তোমাকে তো আমার হাজবেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো না। বাহাদুর এই হল আমার হাসবেন্ড রাজিব আর এই হল আমার বন্ধু বাহাদুর।

রাজিবঃ তাহলে অবশেষে বাহাদুরের সাথে দেখা হল। বাহাদুর তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না সিনথিয়ার মুখে এই ৬-৭ মাসে আমি শুধু তোমার নামেই সুনাম শুনেছি।

আমি রাজিবের কথা শুনছি আর হাসছি।

রাজিবঃ বাহাদুর আমি তোমার থেকে একটা সাহায্য চাই?

আমিঃ কি রকম সাহায্য?

রাজিবঃ তুমি সিনথিয়াকে বোঝাও এসব জায়গা থেকে ফুচকা না খাওয়ার জন্য। এই যেমন আজকে আমি পাশের হাসপাতালে সিনথিয়াকে ডাক্তার দেখাতে আসলাম। তখন সিনথিয়া বলল সে ওয়াশ রুমে যাবে কিন্তু সে মিথ্যা বলে এখানে চলে আসলো। কিছুক্ষণ আগেই ডাক্তার বলল সিনথিয়া প্রেগনেন্ট। তুমিই বলো সিনথিয়ার থেকে কি এখন একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিত না?

আমি কি বলব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ইচ্ছে হচ্ছিল জোরে জোরে কান্না করি।সিনথিয়াকে আমার কাছে ফিরে আসতে বলি।কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায়। রাজিবের কথা শুনে সিনথিয়াও ও আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো। নিজেকে শান্ত করে কিছু বলতে যাব ঠিক এমন সময় একটি দামি গাড়ি আমাদের সামনে এসে থামল।

রাজিবঃ সরি বাহাদুর তাহলে আজকে আর কথা বলতে পারবোনা।সিনথিয়াকে নিয়ে এখন বাসায় গিয়ে আব্বু আম্মুকে এই সুসংবাদটি দিতে হবে।সময় করে একদিন বাসায় আসিয়ো সবাই মিলে আড্ডা দেব।

সিনথিয়া ও রাজিব দুজনে গাড়িতে উঠে গেল। হঠাৎ সিনথিয়া গাড়ির জানালা থেকে মুখ বের করে আমার দিকে তাকালো এবং একটি মুচকি হাসি দিলো। খানিক পরে গাড়িটি চলা শুরু হল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটি চোখের আড়ালে চলে গেল।

ফুচকাওয়ালা মামাঃ ভাইজান টাকা দিবেন না?

আমিঃ এই নেন।

ফুচকাওয়ালা মামাকে 30 টাকা দিয়ে দেওয়ার পর পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার কাছে আর কোন টাকা নেই কিন্তু এখনো আরো দুটো টিউশনি বাকি তাই আর উপায় না পেয়ে হাঁটা শুরু করলাম। যতই হাঁটছি পুরনো স্মৃতিগুলো ততই মনে পরছে। কিছুক্ষণ আগে যে মেয়েটার সাথে কথা হলো সে হলো সিনথিয়া আমার প্রাক্তন। আজ থেকে প্রায় ৬-৭ মাস আগে সেদিন হঠাৎ সিনথিয়া আমাকে কল দিয়ে বলল তার বাবা নাকি তাকে জোর করে রাজিব নামের একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে কিন্তু সিনথিয়া তাও আমার কাছে ফিরে আসতে চাই। কিন্তু আমি সেদিন স্পষ্ট সিনথিয়াকে জানিয়ে দিয়েছিলাম আমার তাকে আর দরকার নেই এবং কখনোই আমার জীবনে না আসতে। সিনথিয়া হয়তো মনে করেছিল আমি সিনথিয়াকে ছাড়াই সুখে থাকতে পারবো অথবা সিনথিয়াকে আমি কোনদিনই ভালোবাসিনি তাই তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু আসলে সিনথিয়াকে বিয়ে দেওয়ার আগের দিন সিনথিয়ার বাবা আমার কাছে এসে তার মেয়েকে ভিক্ষা চাইল। অবশ্য সিনথিয়ার বাবা সেদিন যা বলল তা সবগুলো সঠিক। একেতো আমি এতিম আর দুই আমার কাছে কোনো ভালো চাকরি নাই।এতিমের যে চাকরি হবে তারও গ্যারেন্টি নেই। আমি চাইলেও সিনথিয়াকে কখনোই সুখী রাখতে পারব না। সিনথিয়াকে রাজিব নামের যে ছেলেটির সাথে বিয়ে দিতে চাই সেই ছেলেটার পরিবার খুব ভালো এবং রাজিব নিজেও একটি কোম্পানির মালিক। সিনথিয়ার বাবা সেদিন হাতজোড় করে আমাকে বলেছিল তার মেয়েকে যেন তার কাছে ফিরিয়ে দেই।তাই আমি আর না করিনি। সিনথিয়ার বাবাকে কথা দিয়েছিলাম আর কখনোই সিনথিয়ার কাছে যাব না আর সেই কথা রক্ষা করার জন্য আমি সিনথিয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম।কিন্তু একটা অভ্যাস আমি কোনো দিন পরিবর্তন করতে পারলাম না। আমাদের সম্পর্ক থাকাকালীন সবসময় সিনথিয়া এই ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা খেতো। তাই সিনথিয়ার বিয়ের পরও আমি সবসময়ই ফুচকার দোকানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম সিনথিয়াকে এক নজর দেখার জন্য কিন্তু কোনদিনও সিনথিয়ার দেখা পায়নি। কিন্তু আজ হঠাৎ সিনথিয়ার সাথে দেখা হয়ে যায়। সিনথিয়া যখন জিজ্ঞেস করল আমি কি সব সময় এখানে আসি? আমি তখন সিনথিয়াকে মিথ্যা বললাম বললাম। কিন্তু সত্যি বলতে আমি আজকেও সিনথিয়াকে দেখার জন্যই এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

এখন মনে হচ্ছে সিনথিয়ার বাবা সেদিন ঠিকই বলেছে রাজিবের সাথে সিনথিয়া ভালই আছে কিন্তু সুখে আছে কিনা সেটা জানিনা। চোখ ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে তাহলে কি আমি কান্না করছি! না কান্না করে কোন লাভ নেই। ছেলেদের কান্না করলে মানায় না আর বিশেষ করে আমাদের মত ছেলেদের যারা এতিম তারা সারা দিন কান্না করলেও সেটা দেখার কেউ নেই।

আচ্ছা আমাদের ভালোবাসার গল্পটাও কি তাহলে অন্য সব ভালবাসার গল্পের মত অসমাপ্তই থাকবে। হঠাৎ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল, যদি আমাদের ভালোবাসার গল্পটা অসমাপ্ত থাকার মাধ্যমে দুটি পরিবারের ভালো হয় তাহলে থাকুক না আমাদের ভালোবাসার গল্পটা অসমাপ্তই। আর সিনথিয়া যদি আমার প্রাক্তন হিসেবে সব সময় আমার বুকের বাম পাশে যায়গা দখল করে রাখে তাহলে থাকুক না সিনথিয়া সব সময় আমার প্রাক্তন হয়ে।

সমাপ্ত।

গল্পঃ #আমার_প্রাক্তন

লেখকঃ #Khan_Bahadur

/

1
$ 0.00

Comments