আত্মীয়তা আত্তীকরণ দুটোকেই না বলুন

10 33
Avatar for Badhon88
4 years ago

প্রথম অপশনটা বেছে নিলে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে এই আপদমুক্ত থাকতে পারত। সৎ অসৎ যাই হোক, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী তো বটে। তারা তাদের নাগরিকদের সঠিকভাবে হোক আর বেঠিকভাবে হোক কথিত ‘দুষ্টুমির’ জন্য দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ওই সব শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে খামোখা তাদের বিরাগভাজন হব কেন? আর তাদের বড় মুরব্বি চীন, মেজো মুরব্বি রাশিয়া, সেজো মুরব্বি ভারতই বা কী মনে করবে। থাক্ বাবা, ওই সব ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই। রোহিঙ্গারা নাফ নদের তীরে অথবা অন্য কোথাও মরে পড়ে থাকুক, শিয়াল-কুকুর-শকুন তাদের ছিঁড়েখুঁড়ে খাক, আমার কী। আমি তো ঝামেলামুক্ত থাকব।

আর দ্বিতীয় অপশনের মূল কথা হচ্ছে জাতীয় কবির সেই অমর বাণী : ‘...ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র’। ওরা হিন্দু না মুসলমান, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান, বার্মিজ না রোহিঙ্গা, ধনী না গরিব, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, তারা মানুষ। সেটাই তাদের আদি ও অকৃত্রিম পরিচয়। রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে যখন কেউ পানি পানি বা জল জল বা ওয়াটার ওয়াটার বলে কাতরায় তখন সেই মানুষটা কোন ধর্মের লোক তা তো আমরা বিচার করি না। আমরা নিজের ব্যাগ থেকে দ্রুত পানির বোতল বের করে সেই আহত মানুষটিকে পানি পান করাই, তাকে কালক্ষেপণ না করে যে করে হোক নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হয়তো জানতে পারি সে মুসলমান, না হিন্দু, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান। আর সে যেই হোক, চিকিৎসা লাভ করে সে যখন সুস্থ হয়ে ওঠে, বেঁচে যায় তার জীবন, তখন পরিবার-পরিজনের মতো আমরাও আনন্দিত হই, ধন্যবাদ দিই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনকে। আর সে মারা গেলে মন খারাপ হয় আমাদেরও। এটাই মানবতা।

আর সেই মানবতার ডাকে মুহৃর্তমাত্র বিলম্ব না করে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা ৭ লাখ ২৩ হাজার মানুষের জন্য বাংলাদেশের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে। তাদের জন্য সাধ্যমতো আহার-বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে, তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে। সারা বিশ্ব করতালি দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাল, তাঁকে উপাধি দিল ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। তবে আমার বিশ্বাস, কোনো উপাধি বা প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজটি করেননি; এটা তিনি করেছেন তাঁর অন্তরের তাগিদে। আর এতে দল-মত-নির্বিশেষে তিনি পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। এ ব্যাপারে তাঁদের স্মৃতিতে এখনো ভাস্বর হয়ে আছে ১৯৭১-এ প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যের আতিথেয়তার কথা। সেদিন বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি বাস্তুহারা মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারতের সরকার ও জনগণ। সেই ঋণের কিছুটা হলেও পরোক্ষভাবে শোধ করছি আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের মাধ্যমে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একাত্তরে আমরা শত্রু সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। দীর্ঘ নয় মাসের সেই অসম যুদ্ধে আমরা একটি দানবীয় দখলদার বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করে দেশ স্বাধীন করি। রোহিঙ্গাদের তো ওই ধরনের কোনো যুদ্ধ-টুদ্ধ করতে হচ্ছে না। তাদের অশন-বসন ও নিরাপত্তার পুরোপরি দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে এ দেশের সরকার ও জনগণ। আর এ জন্য বাংলাদেশ নামের সমস্যাসংকুল উন্নয়নশীল দেশটিকে বড় রকমের মাসুল দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। টেকনাফ-উখিয়া-কক্সবাজারের মানুষের জীবন ইতিমধ্যেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাদীক্ষা, আচার-ব্যবহার, কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে অনগ্রসর, আর্থিকভাবে মিসকিন শ্রেণির এই মানুষগুলোর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা নাকি যথেষ্ট বেশি। বিশেষ করে মাদকদ্রব্যের চোরা কারবারে এদের ব্যুৎপত্তি রীতিমতো চমকপ্রদ। এরা নাকি এদের মিয়ানমারের লিংক কাজে লাগিয়ে এদেশীয় স্যাঙাতদের সঙ্গে জয়েন্ট কোলাবরেশনে মাদক ব্যবসা, ভুয়া পাসপোর্ট বানানো, আদমপাচার ইত্যাদি কাজ বেশ জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে।

৩.

এদের একটি বড় অংশকে কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা কিছুদিন যাবৎ শোনা যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণের কাজও নাকি সমাপ্তির পথে। আইডিয়াটা মন্দ না। এতে কক্সবাজার-টেকনাফের অধিবাসী যাঁরা ইতিমধ্যে স্বভূমে পরবাসী হতে চলেছেন তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচবেন। রোহিঙ্গা মেহমানরাও আশ্রয়শিবিরের পাহারাবেষ্টিত জীবন থেকে বের হয়ে খোলা হাওয়ায় উন্মুক্ত পরিবেশে বাঁচার স্বাদ পাবেন, যে স্বাদ গত তিন বছরে নিশ্চয়ই তাঁরা অন্তত ভুলতে বসেছেন।

আবার এই স্থান পরিবর্তনের একটা উল্টো দিকও আছে। ভাসানচরের উন্নত জীবনে (!) মন বসে গেলে, ওখানকার খোলামেলা পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, বিশেষ করে ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য ও কমবেশি নিয়মিত রোজগারের সুরাহা হয়ে গেলে মেহমানরা যদি বলে বসেন আমরা আর ওই মিয়ানমার নামের নরককুণ্ডে ফিরে যেতে চাই না। এত বছর ধরে এ দেশে আছি, এখন আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে দিন। এখন আমাদের পোলাপান-মাইয়াপান মাশাল্লাহ বড় হয়েছে, ডাগর-ডোগর হয়েছে, গায়ে-গতরে, দেখতে-শুনতে আপনাদের সন্তানদের চেয়ে কোনো অংশে তারা কম না; এখন আসুন, তাদের জন্য আপনাদের গাঁও-গেরামে, শহরে-বন্দরে পাত্র-পাত্রী খুঁজে বিয়েশাদি দিই। আর ইতিমধ্যে তো তলে তলে অনেক উদ্বাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েও গেছে, বাচ্চাকাচ্চাও আল্লাহর ফজলে পয়দা হয়েছে ম্যালা। তখন দেখা যাবে অনেক দরদি এনজিও এবং মানবাধিকার কর্মী তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে গলাবাজি করতে শুরু করেছেন : এদের দাবি মানতে অসুবিধা কী? এরা কি মানুষ না? এরাও তো আপনার আমার মতো আহলে কিতাব। শুধু তাই না। এই ভাসানচরে যেখানে আপনারা সরকারি টাকায় মাত্র একটি মসজিদ বানিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে গত তিন বছরে তারা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো পয়সায় আলহামদুলিল্লাহ আরো তিনটি আলিশান মসজিদ, একটি এতিমখানা, একটি লিল্লাহ বোর্ডিং বানিয়েছে। অবশ্য দুষ্ট লোকে বলে এসবই নাকি ইয়াবা ব্যবসার পয়সা। তাদের জবাব : হোকগে ইয়াবার পয়সা। ওই পয়সা তো আর জুয়া খেলে উড়িয়ে দিইনি, ভালো কাজে লাগিয়েছি। আপনাদের ঘুষ খাওয়ার টাকা, ব্ল্যাক মার্কেটিংয়ের টাকায় যদি আপনারা মসজিদ বানাতে পারেন, হজ্ব করতে পারেন, তা হলে আমাদের ‘হক-হালালি ইয়াবা ব্যবসা’ কী দোষ করল? হক-হালালি কেন বলছি? কারণ ইয়াবাতে কোনো ব্যবসায়ী ভেজাল মিশিয়েছে বা কারো ইয়াবা জিনজিরা মেইড এমন অভিযোগ কাউকে করতে দেখেছেন কখনো? সোজা কথা, এদের সঙ্গে তর্ক করে পেরে উঠবেন না। এদের তর্কের পালে বাতাস দেওয়ার মানুষেরও অভাব নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পোদ্দাররা তো রোহিঙ্গা সমস্যার একটি যেন তেন প্রকারেণ সমাধানই চায়। বাংলাদেশের ঘাড়ে যে সিন্দবাদের দৈত্য চেপে বসে আছে সেটা যদি বাংলাদেশেই থিতু হয়ে যায় তা হলে তো ওটাকে নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানি প্যানপ্যানানি শুনতে হবে না আর। ওটা হবে বাংলাদেশেই সেই দৈত্যের আত্তীকরণ। কিন্তু আমি মনে করি, এটা হবে সমস্যাটির অত্যন্ত অন্যায্য একটা সমাধান। যেন বাংলাদেশকে মানতে বলা হলো : হোয়াট ক্যানট বি কিওর্ড, মাস্ট বি এনডিওর্ড, যার প্রতিকার নেই তা তো মানতেই হবে। আর মাস্তান মিয়ানমার তখন উরুতে থাপ্পড় দিতে দিতে দাঁত কেলিয়ে বলবে : কই, খুব তো নাচানাচি করছিলে, আমাদের একেবারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছাড়বে। হলো তো এবার। আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম। তোমাদের নিজেদের জিনিস এবার তোমরা নিজেরা সামলাও।

৪.

কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে ভাসানচর বা ওই ধরনের আরো দু-এক জায়গায় এই মক্কেলদের চালান দেওয়া যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে নয়। আত্তীকরণের ফাঁদে একবার পা দিলে বিপদ আছে। রোহিঙ্গাদের যারা এখনো মিয়ানমারে মাটি কামড়ে পড়ে আছে, দুদিন পর যে তারা এবং আমাদের ঈশানকোণের প্রতিবেশী রাজ্যগুলো থেকেও মেহমানরা আসতে শুরু করবেন না তার নিশ্চয়তা কী। অতএব সাধু সাবধান! আমরা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’র ভূমিকায় প্রয়োজনে বারবার অবতীর্ণ হতে রাজি আছি, ‘বাট নট অ্যাট দ্য কস্ট অব জাস্টিস অ্যান্ড আওয়ার অউন রাইটস্’।

বরং যেভাবে আমাদের প্রচেষ্টা নিরন্তর চলছে সেভাবেই চলতে থাকুক। চীন, রাশিয়া, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের মতে, তাদের সঠিক ভূমিকা এখনো পালন করেনি। তাদেরকে ময়দানে নামানোর প্রচেষ্টা আরো জোরদার করুন। বলে না, একবার না পারিলে দেখ শত বার। একবার, দুবার ফেইল করেছ তো কী হয়েছে। ইংরেজিতে প্রবাদবাক্য আছে না : ফেইলিওর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস।

ভিড়ের মধ্য থেকে কে যেন বলল : কিন্তু স্যার, এ ক্ষেত্রে তো শুধু পিলারের পর পিলারই দেখছি, আর কোনো কনস্ট্রাকশন তো চোখে পড়ছে না। স্যার খেঁকিয়ে উঠলেন : এই চোখ থাকতেও কানা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির লোকটা কে হে দ্যাখ তো। ওর কি ক্রসফায়ারের ভয়ডর নেই? ওকে আপাতত সাইবার...।

4
$ 0.50
$ 0.50 from @ErdoganTalk
Avatar for Badhon88
4 years ago

Comments

Good Article

$ 0.00
4 years ago

Tnx

$ 0.00
4 years ago

ক্রসফায়ার আর সাইবার ক্রাইমে মামলার ভয়ে এখন মানুষ মুখ খুলতে দুইবার ভাবে৷

$ 0.00
4 years ago

Hmmm

$ 0.00
4 years ago

good article...

$ 0.00
4 years ago

Tnx dear

$ 0.00
4 years ago

Ohh.... Amazing information dear,,, thanks for Sharing❤❤👍

$ 0.00
4 years ago

Wlcm

$ 0.00
4 years ago

Okk dear👈❤❤

$ 0.00
4 years ago