শিউলি ফোটা শরৎ হাসে, কাশবন ঝাড়ে আকাশে-আকাশে

0 22
Avatar for Athai
Written by
3 years ago

মফস্বলের চেনা গন্ডীতে বড় হওয়ার কারণে মেয়ে হয়েও অনেক স্বাধীনতায় বড় হয়েছি। যা খুশী করার স্বাধীনতায় নয়।কিন্তু ম্যাচবাক্সের ফ্ল্যাটবন্দী জীবনও ছিলো না সেটা।শরৎ এলেই দূর্গাপূজোর ধুমধাম।স্কুলে যাবার পথেই বকুল তলা মোড়ে দূর্গাবাড়ী। ফেরার পথে প্রায়ই দাঁড়িয়ে দেখতাম, খড়ের কাঠামোয় মাটির প্রলেপ।তারপর তাতে শারীরিক অবয়ব গড়া, চোখমুখ আঁকা। শুকিয়ে এলে রঙ সাজ।শাড়ির জড়িপাড়, ধুতির নিপাট কুচি, রেশমী প্রগাঢ় রাশি রাশি একঢাল চুল......পালপাড়ার শিল্পীর নিজহাতে গড়া সোনার প্রতিমা।

সময় ঘনিয়ে এলে ঢাকির মাথার ঝাকড়া চুলের রাশি বিপুল বেগে ঝাকিয়ে সে কি পাগলপারা ঢাকের বাদ্যি।আতপ চাল, কেশর আলু (শাকালু), নারকেল নাড়ু কর্পুর মেশানো ঘ্রাণে, চাঁপা কলা, সন্দেশ মেশানো পূজোর ভোগ।আমরা যারা হিন্দু নই, তাদের জন্য শুধুই সন্দেশ, নাড়ু, ফল।স্কুলের সিনিয়র দিদি দের লালপেড়ে গরদে প্রতিমার চেয়ে বেশী সুন্দরী মনে হতো।কি স্নিগ্ধ।আমাদের শিউলিতলায় বউঝি দের কাসার থালায় ফুল সাজানো নৈবদ্য।

রাতের বেলায় হিন্দু-মুসলিম সবাই তো যেতো আরতি দেখতে।সারাদিন পুরনো দিনের গান বাজতো মাইকে, হেমন্ত-লতা-কিশোর-চিত্রা।সেই যে মনে গেঁথে গিয়েছিলো, " চন্দন পালংকে শুয়ে একা একা কি হবে ? জীবনে তোমায় যদি পেলাম না।"...... এই তুমিটা বড্ড জ্বালায়। জীবনে মরণে পাওয়া হয়ে ওঠে না সহজে।আবছায়া হাসির ভঙ্গীমায় দূরে দাঁঁড়িয়ে কেবলই হারানো সুরের মতো হারিয়ে যায় দুরান্তে।

বিসর্জনের সিঁদুর কেবল দেবীর মুখেই আঁকা হতো না, এয়োতি মেয়েরাও লেপটে মাখতো সেই লালিমা সিঁথির প্রান্তে, ভরন্ত গালে।আর কাঁদতোও। ভেবে পেতাম না, কাঁদছে কেনো? এখন ভাবি, হয়তো পূজোর শেষে বাপের বাড়ি ছেড়ে ফের ভিনঘরে ফেরার পালা। তাই হয়তো।

শহরের সব পূজো জড়ো হতো দূর্গাবাড়ীর পূজোর প্রাঙ্গনে। তারপর বক্ষ্মপুত্রের বুকে বিসর্জন। তার আগে মালসায় নারকেল ছোবড়া আর ধুনোর আগুন হাতে তরুনদের ছন্দপারা নৃ্ত্য-মিছিল।আমরা বড় রাস্তার পাশের নিচু পাঁচিলে পা দুলিয়ে ফ্রক পরে চোখ আর মন ভরে দেখতাম সে আনন্দ যজ্ঞ।

বাড়ীতে প্রতি বিকালে আরবী পড়ানো জামিলা ফুফু, এই বলেই ডাকতাম উনাকে। উনার কাছে সুর করে কোরান পড়া শেষে উনার সাথেই মাগরিবের নামাজ পড়ে, চা খেয়ে বাবার কাছে স্কুলের পড়া। কই কখনো তো সাম্প্রদায়িকতা নামের কোনো দৈত্যের গল্প শুনিনি তখন।ঈদ-পূজো দুটোকেই তো ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে মজা করে পালন করেছি।

কারা সেই নেপথ্যের কালকূট, যাদের হিংস্র নখরে সাম্প্রদায়িকতার বীজ নাশকতার এ্যাটম বোমা হয়ে আমার দেশের বাতাস দূষিত করে তুলছে? যাদের মসনদ লাভের লোভের বলির পাঁঠা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার আমার দুরন্ত ছেলেরা ! চারছক্কা হৈ হৈ এর বদলে হাতে তুলে নিচ্ছে ঘৃণার গ্রেনেড বারুদ !!

2
$ 0.03
$ 0.03 from @TheRandomRewarder
Sponsors of Athai
empty
empty
empty
Avatar for Athai
Written by
3 years ago

Comments