Join 54,621 users and earn money for participation
read.cash is a platform where you could earn money (total earned by users so far: $ 239,813.35).
You could get tips for writing articles and comments, which are paid in Bitcoin Cash (BCH) cryptocurrency,
which can be spent on the Internet or converted to your local money.
ভারতের লুংলেই জেলার ট্লাবুং (দেমাগ্রী) থানা থেকে বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ঠেগামুখ এলাকায় প্রবেশ করেছে কর্ণফুলী নদী। ঠেগামুখ থেকে বড় হরিণার মুখ পর্যন্ত এই ৬ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর ডান পাশে ভারত এবং বাম পাশে বাংলাদেশ অংশ।
এরপর হরিণার মুখে কর্ণফুলী নদীর ভারতের অংশ শেষ হলেও কর্ণফুলী নদীর হরিণা ঘাট থেকে একটি খাল পূর্বদিকে সাজেক ও সীমানা খাল হয়ে ভারতে ঢুকে গেছে। খালের একপাশে ভারত অন্যপাশে বাংলাদেশ। হরিণা মুখের পর থেকে নদীটি পুরোপুরি বাংলাদেশের।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নদী ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে ১৮০ কি.মি. পার্বত্য পথ অতিক্রম করে রাঙামাটিতে একটি দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শাখা বিস্তার করে পরবর্তী সময়ে আঁকাবাঁকা গতিপথে ধুলিয়াছড়ি ও কাপ্তাইয়ে অপর দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়েছে। রাঙামাটি ও ধুলিয়াছড়ি শাখা দুটি বর্তমানে কাপ্তাই লেক-এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জলবিদুৎ বাঁধটি কাপ্তাই শাখার ভেতরে নদী প্রবেশের ঠিক আগে অবস্থিত। কাপ্তাই শাখা থেকে বেরিয়ে কর্ণফুলী নদী সীতাপাহাড় পর্বতমালার ভেতর দিয়ে আরেকটি আঁকাবাঁকা গতিপথ পাড়ি দিয়ে চন্দ্রঘোনার কাছে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রামের সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বরকল, গোবামুড়া, চিলার ডাক, সীতাপাহাড় ও বোয়ালখালীর পর্বতমালা অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে এসে পড়েছে।
কর্ণফুলী নদী উত্তরে রাউজান উপজেলা ও দক্ষিণে বোয়ালখালী উপজেলাকে রেখে রাঙ্গুনীয়া উপজেলার ভেতর দিয়ে পশ্চিমমুখী প্রবাহিত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে পূর্ব-পশ্চিমমুখী বাঁধ দেয়ার ফলে কাপ্তাইয়ে নদীর মূল গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়। যদিও এখনও নদীর সেই অংশের অস্তিত্ব রয়েছে। যেটিকে স্থানীয়রা কাপ্তাই খাল বলে থাকেন। এ খালও নতুন গতিপথের সাথে মিশেছে। বাঁধের উপর পিচঢালা রাস্তা। এর উত্তর পাশে কাপ্তাই লেক আর দক্ষিণ পাশে নদী। বাঁধের উত্তর পাশের লেকের অংশ থেকে স্পিলওয়ে দিয়ে পানি ছাড়ার কারণে কিছুটা পূর্বদিকে নতুন করে গতিপথ সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে নদীটি কাপ্তাইর ব্রিকফিল্ডের পাশ দিয়ে সেগুন বাগান হয়ে নতুন বাজার, চিৎমরম, শিলছড়ি, রামপাহাড়, সীতারপাহাড়, বড়ইছড়ি, ডলুছড়ি, নারাণগিরি ও চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার গতি পথে ৭ ধাপে আঁকাবাঁকাভাবে নদীর গতি পরিবর্তন হয়েছে।
বড়ইছড়ি ও নারাণগিরি খালের মুখ থেকে চন্দ্রাকৃতির বাঁক নিয়ে পশ্চিমের ভাটির দিকে সোজাসুজি ৫ কিলোমিটার গিয়ে কর্ণফুলী গড়িয়ে পড়ে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কদমতলীতে। পাহাড়-নদীর সম্মিলনে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা চন্দ্রাকৃতির এই বাঁককে কেন্দ্র করেই চন্দ্রঘোনার নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্র“তি রয়েছে। ডান তীরে চন্দ্রঘোনার মধ্যম কদমতলী ও বাম তীরে কোদালা চা বাগানের মধ্যখানে এসে জেগে ওঠা বিশাল চরে বাধাগ্রস্ত হয়ে কর্ণফুলী গতিপথ হারায়। গোচরা বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার পশ্চিমাংশে সরাসরি এসে আবার দক্ষিণে ৩ কিলোমিটার পর আবারও সরফভাটা ইউনিয়নের চিড়িঙ্গা এসে বাঁক নেয় সরাসরি পশ্চিমে। কর্ণফুলী জুট মিল থেকে চিরিঙ্গা পর্যন্ত বাঁক নেয়া কর্ণফুলীর কাউখালী অংশে ছিল এক বিশাল গোল। নদীর মাঝখানে প্রায় দেড়শত গজ জুড়ে ছিল পানির কুণ্ডলি। পানির কু লির তীব্র শব্দে ভয়ে আঁতকে উঠতো মাঝিসহ যাত্রীরা। ১০-১৫ বছর আগেও এই কুণ্ডলির দেখা মিলত নদী পথের যাত্রীদের। চিরিঙ্গা বাঁক থেকে ডান তীরে রাঙ্গুনীয়ার বেতাগী বাম তীরে বোয়ালখালীর কুশাইল্যা মুড়ার বুক ছিড়ে বয়ে চলা কর্ণফুলী গিয়ে ঠেকেছে বোয়ালখালীর সীমান্তবর্তী নাজির চরে। কাপ্তাই বাঁধ থেকে ২২ কিলোমিটার নিচে এসে নাজিরার চরে ধাক্কা লাগা কর্ণফুলী আবারো গতিপথ হারায়। বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা ও রাঙ্গুনীয়ার বেতাগী হয়ে বাঁক নিয়েছে। কুশাইল্যা মুড়ার পাশ দিয়ে বোয়ালখালী জেলেপাড়া ঘেঁষে বয়ে গেছে ভাণ্ডালজুড়ি খাল।
কর্ণফুলীর ঢেউ নাজির চর ফেলের আসার পর থেকে আবার পূর্বের চেহারায় রূপ নেয়। বোয়ালখালীর খুইশ্যাল ক্ষেত, ভারাম্বাঘাট, হরেশ চন্দ্রমুন্সির ঘাট, কেরানি বাজার, খেলা ঘাট ও ওপারের রাউজানের কোয়েপাড়া, পাঁচখাইন, লাম্বারহাট, বাগোয়ান, চৌধুরী হাট, সূর্যসেন পল্লী, নোয়াপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী ধনুকের মতো বেঁকে কচুখাইন এলাকায় এসে হালদায় মিশেছে। আর বোয়ালখালীর খরণদ্বীপ থেকে হেলে-দুলে বয়ে এসেছে চরণদ্বীপে। চরণদ্বীপ মসজিদ ঘাট থেকে ফফিরাখালী বাজার পেরুতেই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী হাট গিলে খেয়েছে কর্ণফুলী। চৌধুরী হাট থেকে ক্রমশঃ বেঁকে নিয়ে কধুরখীল হয়ে আবার বাঁক নিয়েছে কর্ণফুলী। অপর পাড়ে কর্ণফুলী বুক চিরে বয়ে গেছে হালদা নদী। রাউজানের হালদা মোহনা ও কধুরখীলের অংশ থেকে আড়াআড়িভাবে বয়ে চলেছে কর্ণফুলী। হালদার মোহনার পৌনে এক কিলোমিটার এগোলেই চোখে পড়ে কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু। ব্রিটিশ আমলের নির্মিত প্রাচীনতম নিদর্শন এটি। তবে বোয়ালখালী অংশে ভাঙন দেখা দিলেও দখল চলছে অপর অংশে। কালুরঘাট সেতুর পর থেকে আড়াআড়িভাবে চলেছে কর্ণফুলী। পটিয়ার কোলাগাঁও ও নগরীর বাকলিয়া মাঝামাঝি অংশে কর্ণফুলীর বুক ফুঁসে জেগে উঠেছে বিশাল এক চর। তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় এসে কর্ণফুলী বক্রাকার ধারণ করেছে। শাহ আমানত সেতু পার হয়ে দেখা মিলে অন্যরকম কর্ণফুলী। দুই পাড়েই নগরায়নের ছোঁয়া। সেতুর পেরুনোর পর চাক্তাই-রাজাখালী, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, মাঝির ঘাট এলাকায় শত শত নৌকা, জাহাজ, সাম্পান আর জন কোলাহলে মুখরিত। কর্ণফুলী তীরে গড়ে উঠেছে অন্যরকম রাজ্য।
দক্ষিণে আনোয়ারার ঈছানগর ও নগরীর মাঝিরঘাট থেকে কিয়দাংশ বাঁক নিতে শুরু করে কর্ণফুলী। শহরাংশের মাঝিরঘাট থেকে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে নৌবাহিনী ঘাঁটি এলাকায় গিয়ে সোজাভাবে দাঁড়ায় কর্ণফুলী।আনোয়ারার রায়পুর অংশথেকে ক্রমশঃ চাঁদের মতো গতি পরিবর্তন করেছে কর্ণফুলী। ওই বাঁকটি প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত গিয়ে খাড়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর-এর প্রত্যন্ত পশ্চিম কোণ থেকে সরাসরি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে নদীটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৭ কি.মি. সম্মুখে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সমুদ্রগামী বড় বড় জাহাজ সারা বছর এ নদীর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে এবং কাপ্তাই পর্যন্ত বড় নৌকা, ট্রলার এবং সবধরনের ফ্রেইটার ও লঞ্চ আসা যাওয়া করতে পারে।
কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট থেকে নিম্নমুখে তার গতিপথের সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করেছে। এ পরিবর্তন এক শতকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। একসময় নদীটির গতিপথ ছিল কালুরঘাট থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী এবং এর দক্ষিণ তীর বরাবর ছিল সাম্পানঘাটা, শুলকবহর, কাপাসগোলা, চকবাজার, রুমঘাটা, ঘাট ফরহাদবেগ, বক্সিরহাট ও পাথরঘাটা প্রভৃতি স্থান। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি বাম দিকে পিছিয়ে আসে এবং ডান তীর বরাবর বিশাল ও বিস্তীর্ণ উর্বরভূমির সৃষ্টি করে যা এখন চর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চর চাক্তাই ইত্যাদি নামে পরিচিত। আলোচ্য ঘাট ও বাজারসমূহ এক সময় শহরের পূর্ব প্রান্ত বরাবর কর্ণফুলী নদীর ডান তীর জুড়ে অবস্থান করত, কিন্তু বর্তমানে সেগুলি নদীর গতিপথ থেকে অনেক দূরে। এর একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ও গুরুত্ব রয়েছে, কেননা এ নদীর মাধ্যমেই মুগল ও ব্রিটিশ রাজত্বের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব সীমানা চিহ্নিত করা সহজ হয়।
পর্বতমালার উচ্চতার সঙ্গে তাল রেখে কর্ণফুলী নদী তার পুরাতন গতিপথ অব্যাহত রেখেছে বলে এটিকে একটি ভূমিজপূর্ব বা প্রাচীন নদী বলা হয়ে থাকে। নদীটি কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা সড়ক বরাবর প্রাংকিয়াং থেকে ওয়া¹াছড়ি পর্যন্ত সংকীর্ণ ও সরল। এ ঋজুতা সম্ভবত একটি চ্যুতির কারণে যা প্রাংকিয়াং থেকে ওয়া¹া পর্যন্ত নদীখাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে।উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদী দৈর্ঘ্যে ৩২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ২৭৫ কিলোমিটার। পার্বত্য চট্টগ্রাম অংশেই কর্ণফুলী নদীর ১৮০ কি.মি. পড়েছে। বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে কর্ণফুলী নদী শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে আছে।
চট্টগ্রামের ইতিহাসের পথিকৃৎ পূর্ণচন্দ্র তত্ত্বনিধি তথ্য মতে, পূর্বে কর্ণফুলী নদীর এই অবস্থা ছিল না। পূর্বে কর্ণফুলী, বিপুল কায়া ও সুবিস্তীর্ণ ছিল এবং সমুদ্র ছিল শহরের অতি নিকটবর্তী। কর্ণফুলীর নিকটবর্তী ও অদূরবর্তী গ্রাম সকলের নাম ও প্রাকৃতিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এ সকল গ্রাম এক সময়ে নদী গর্ভস্থ ছিল, পরে চর পড়ে ক্রমে ক্রমে বর্তমানে অবস্থায় পরিণত হইয়াছে। যেমন: চর খিজিরপুর, ইমামল্লার চর, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, মনোহর খালী, পতেঙ্গা ইত্যাদি।’ বঙ্গোপসাগর সম্পর্কে তিনি (ঐতিহাসিক পূর্ণচন্দ্র তত্ত্বনিধি) বলেন, ‘বর্তমান কোর্টহিল ধৌত করিয়া সমুদ্রের লবণাম্বুরাশি আনোয়ারা পাহাড়ের পাদদেশে উছলিয়া পড়িত।’ (চট্ট- ইতিহাস পূর্ণচন্দ্র পৃ-১৮ প্রকাশকাল-১৯২০) কোর্ট বিল্ডিং উপর উঠে পূর্ব ও দক্ষিণে তাকালে সহজে এ উক্তির সত্যতা অনুমান করা যাবে।