বর্তমানে গ্যস্ট্রিকের ব্যথা সবচেয়ে কমন স্বাস্থ্যসমস্যার মধ্যে একটি। প্রতিনিয়ত আমরা সবাই কমবেশী এই ব্যথার মুখোমুখি হয়ে থাকি। চলুন আমরা তাহলে দেখি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কি, কি কারনে এইটা সৃষ্টি হয় এবং কিভাবে এটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গ্যস্ট্রিকের ব্যথা কি?
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় পেপটিক আলসার ডিজিজ ও বলা হয়। পেপটিক আলসার ডিজিজ বলতে বোঝায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক এসিড দ্বারা পাকস্থলীর মিউকোসার প্রদাহর ফলে সৃষ্ট গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার ও অন্যান্য আলসারকে বুঝানো হয়ে থাকে। যদিও মানুষ সাধারন ভাবে এটিকে গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস নামে অবিহিত করে , তবে পেটে গ্যাস সৃষ্টি বা অধিক গ্যাস নির্গমনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে এ রোগের রোগীর সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় বেশি। গরীবদের মধ্যে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে, তবে নারী পুরুষ প্রায় সমানভাবেই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
গ্যস্ট্রিক কোথায় হয়?
গ্যস্ট্রিক যে শুধু মাত্র পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বরং এটি পাকস্থলীর অন্ননালীর নিচের প্রান্ত, ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ, পৌষ্ঠিক তন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশ পাকস্থলীর সাথে জোড়া লাগানো হয় সে অংশে, এবং ম্যাকেলস ডাইভার্টিকুলামেও হতে পারে
গ্যস্ট্রিক কেন হয়?
পাকস্থলিতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ার জন্যই এ সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত অ্যাসিড পাকস্থলীর মিউকোসা নামক পর্দা নষ্ট করে । আর হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ারও মিউকোসা নষ্ট করে দেয় এবং পাকস্থলীর সংস্পর্শে এসে প্রদাহের সৃষ্টি করে।
কারও পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরিমাণে অ্যাসিড এবং প্রোটিন পরিপাককারী পেপসিন নামক এনজাইম নিঃসৃত হতে থাকে তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।
যে সব কারণে গ্যস্ট্রিক হতে পারেঃ
বংশগত: কারো নিকটতম আত্মীয় যদি এ রোগে ভুগে থাকেন তবে তাদের এটি হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।
রোগ-জীবাণু: হেলিকোবেক্টার পাইলোরি নামক এক প্রকার অণুজীব এ রোগের জন্য দায়ী বলা হয়।
ঔষধ: যে সমস্ত ঔষধ সেবনে গ্যস্ট্রিক হতে পারে তার মধ্যে এনেসাইডস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ধূমপান: ধূমপায়ীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
অ্যালকোহল: অতিরিক্ত মদ্যপান এটির অন্যতম কারণ।
রক্তের গ্রুপ: যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
অন্যান্য কারণ: ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার, অনিদ্রা, অতিরিক্ত টেনশন (দুশ্চিন্তা) ইত্যাদি।
৯০% ক্ষেত্রে এ রোগ ব্যথানাশক ঔষধ বা এনেসাইডস সেবন বা হেলিকোবেক্টার পাইলোরি’র কারণে হয়। যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না তাদের এ রোগ দেখা দিতে পারে।
যে কাজটি করলে কখনোই আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকবে না !!
অনেকেরই এ সব খাবার খাওয়ার পরে পেট ব্যথা বা বুকে ব্যথা কিংবা বদ হজম
হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য ওষুধ না খেয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিচের
যেকোন একটি নিয়ম মানলেই হবে।
১। আধা ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা আদা নিন এরপর অল্প একটু লবন মাখিয়ে খেয়ে
ফেলুন। আদা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর এক কাপ কুসুম গরম জল খান।দেখবেন গভীর রাতে আর
গ্যস্ট্রিকের সমস্যা হবে না।
২। এক গ্লাস জল একটি হাড়িতে নিয়ে চুলায় বসান। এবং এক ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা
হলুদ জলে দিন। জল অন্তত পাঁচ মিনিট ফুটতে দিন। তারপর নামিয়ে আনুন। জল
ঠাণ্ডা হলে হলুদসহ খেয়ে ফেলুন। গ্যাস্ট্রিক দৌঁড়ে পালাবে।
৩। উপরের সমস্ত পদ্ধতি ঝামেলার মনে হলে শুধুমাত্র এক গ্লাস জলে এক চা চামচ মধু
মিশিয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন। কখনোই রাতে পেট বা বুক ব্যথা করবে না।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম-বেশি সবারই হয়।
লক্ষণগুলো হল পেটে জ্বালা-পোড়া
করা, বদহজম, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেটে ক্ষুধা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, খাওয়ার পর
উপরের পেট বেশি ভরে গিয়েছে
অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি। খাবার সময়মতো খাওয়া হয়না, বাইরের ভাজা-পোড়া বেশি
খাওয়া, জাঙ্কফুড খাওয়া, পরিমাণ মতো পানি না খাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্যাস্ট্রিক এর
সমস্যা দেখা দেয়।
আলুর রস
১. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করার অন্যতম উপায় হল আলুর রস। আলুর
অ্যালকালাইন উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করে থাকে।
২. একটি বা দুটো আলু নিয়ে গ্রেট করে নিন। এরপর গ্রেট করা আলু থেকে রস বের
করে নিন। এরপর আলুর রসের সাথে গরম জল মিশিয়ে নিন। এই পানীয় দিনে ৩ বার
পান করুন। প্রতি বেলায় খাবার ৩০ মিনিট আগে খেয়ে নিন আলুর রস। তবে অন্তত ২
সপ্তাহ পান করুন এই পানীয়।
আদা
১. আদাতে আছে এমন কিছু উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ
করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি সমস্যা, বদ হজম, গ্যাস হওয়া কমে যা
২. আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে এটি খেয়ে নিন।
৩. আদা কুচি করে জল দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ১০ মিনিট ডেকে রাখুন, এরপর সামান্য
মধু মিশিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করুন উপকারিতা পেতে।
৪. আপনি চাইলে আস্ত আদা ধুয়ে কেটে চিবিয়েও খেতে পারেন।
দই
১. প্রতিদিন ২/৩ চামচ দই খেয়ে নিন।
২. দই আমাদের পাকস্থলীকে এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া
থেকে রক্ষা করে যা গ্যাস্ট্রিক
হওয়ার অনতম কারণ। তাছাড়া দই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. আপনি চাইলে কলা, দই ও মধু একসাথে পেস্ট করে খেতে পারেন দ্রুত গ্যাস্ট্রিক
সমস্যা রোধ করার জন্য।
আশা করি এই নিয়ম গুলো মেনে চললে আপনার আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে না....
Thanks @TheRandomRewarder for your support