"ডাকাত পড়েছে মোল্লা বাড়িতে। শিপার বিয়ে আজ। সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। কালো মেঘের মতোনই থমথমে মুখ নিয়ে সেজেগুজে বসে আছে মেয়েটা। মন ভালো নেই একদম। এই বিয়েতে তার মত নেই। পালাবে সে। কোনো পরিকল্পনা নেই এই নিয়ে। পছন্দের মানুষ সাদি হাজির হয়েছে বিয়ে বাড়িতে জানা গেছে এই খবর। শিপার সাথে যোগাযোগ করেনি এখনো ছেলেটা। তবে করবে। আর করলেই দুজন মিলে দেবে ছুট। বাবার তখন কী হবে? হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত!
শিপা, বসে বসে এইসব হাবিজাবি কথা ভাবলেও ডাকাতি হতে পারে এমন বিপদের কথা ভাবেনি একবারও। ভাবার কথাও না অবশ্য। ডাকাত কী বলে কয়ে আসে?"..
আর বিয়ে বাড়ি ডাকাত আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
শিপার থমথমে মুখ নিয়ে এতো কিছু ভাবার মাঝে বিকট এক শব্দ তাকে কড়া নাড়ে। শিপা চমকে উঠে থমথমে মুখ নিয়ে বারান্দায় এঁসে দাঁড়ায়,
নিচে চোখ যেতেই-
শিপা দেখলো- পাঁচ মুখোশধারী ব্যাক্তি পালিয়ে যাচ্ছে, একজন বাঁচার আকাঙ্ক্ষায় নিথর দেহ নিয়ে আক্ষেপে পরকালে পাড়ি জমাচ্ছে। মাথা বেয়ে রক্ত পড়ছে, হাত দু'টো কাটা, মুখটা থোবড়ে গেছে আঘাতে, চোখ দু'টো উপড়ে গেছে।
এতো নিসংশ মৃত্যু!
হয়তো এটাই হওয়ার ছিলো, নিজের পাপ খন্ডায় কে?
বোধহয়,৬ জন মুখোশধারী ব্যাক্তিগুলোই ডাকাত ছিলো।
কিন্ত আশ্চর্যের বিষয়-
ডাকাতেরা শিপার বাড়ির কোনো সদ্যসের কোনো ক্ষতি করেনি।
৬ জন ডাকাতের মধ্যে উনি একজন, যিনি নিজের পাপে নিজের মৃত্যু ডেকে আনলো,কিন্তু কারো হাতে তাকে আঘাত করার মতো কোনো যন্ত্র ছিলো না।
হঠাৎ কে জেনো চিৎকার করে উঠলো,
শিপা নিবিড় অস্থির কালো দু'টো চোখে শুধু চেয়ে রইলো,
পরক্ষণে, দেখতে পেলো- সাদি নিশ্চুপ সত্ত্বাহীন প্রানীর মতো দাঁড়িয়ে আছে নিচে।
শিপার সাথে সাদির সাত বছরের সর্স্পক,
তবুও,এই ক্ষণিকের সময় টুকুতে কথার পাহাড় জমেছে বিশাল, কড়া নাড়ছে সাত বছরের কত স্মৃতি! বকুল তলায় বসে কতো গল্প হয়েছে শিপা-সাদির, চিঠি দিয়ে তাদের কতো কথা আদানপ্রদান হয়েছে, এমনও দিন গেছে হাতে হাত রেখে সাদি-শিপা নদীর পাড় ধরে মাইলের পর মাইল হেটে গেছে সুখ-দুঃখের গল্প শুনাতে শুনাতে, বৃষ্টি হলেই দক্ষিনের মাঠে একসাথে কতো ভিজেছে, কতো খুন-সুটি।
তার থেকেও বড় কথা সাদি শিপার প্রেমিকের থেকেও ভালো একজন বন্ধু, জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু।
অথচ-
সাদি শিপাকে দেখছে কিন্তু সহস্র কিছু কথা বলতে পারছে না।
না বলার তৃষ্ণা সাদিকে ক্ষত-বিক্ষত কর দিচ্ছে অদৃশ্য কাঁটাতার।
স্নান চোখে শিপা শুধু পেছনে ফিরে যাচ্ছে,
মনে হচ্ছে - "প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে যাওয়ার যন্ত্রনা তাকে অভিশপ্ত করে তুলছে"।
হঠাৎ শিপার কানে এলো- ডাকাত চলে গেছে , ডাকাত চলে গেছে।
রাজীবের বাবা শিপার বাবাকে জানাচ্ছে,
(শিপার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার নাম রাজীব)
শিপার ছোটো চাচার বন্ধুর ছেলে রাজীব, রাজীবের বাবা বহুবার শিপাদের বাড়িতে এসেছে নানা কাজে। সেই সূত্রে শিপার বাবার সাথে রাজীবের বাবার একটা ভালো সর্ম্পক।তখনই শিপাকে সে দেখে। শিপাকে দেখেই তার ছেলের বউ হিসেবে শিপাকে তার পছন্দ হয়। শিপাকে দেখে পছন্দ না হওয়ার কোনো কারণ রাজীবের বাবা খুঁজে পায়নি। শিপা পছন্দ হবার মতোই একটা মেয়ে, নম্র-ভদ্র, শান্তশিষ্ট, বাবার বাধ্য একটা মেয়ে, দেখতেও মাশাল্লাহ্। তাই পছন্দ না হবার কোনো কারণ নেই। রাজীবের বাবাও অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। দু-একবার কাজের সূত্রে রাজীব তার বাবার সাথে শিপার বাড়ি এসেছিলো, তখন অবশ্য শিপা তার খালামনির বাসায় ছিলো, রাজীব শিপাদের বাড়িতে আসার কারনেই বিয়ের আগে শিপার বাবা রাজীবকে দেখেছে,রাজীব দেখতে সুদর্শন বটে।
তাই বিয়ের প্রস্তাব দিতেই, শিপার বাবা রাজী হয়ে যায়।
শিপা যখন বাবার বাধ্য মেয়ে, তাই বাবার কথা সে অমান্য করবে না।
রাজীবের বাবা বলছে -
-শুভ কাজ যতো তাড়াতাড়ি শেষ হয় ততোই মঙ্গল।
-কিন্তু! বিয়াইসাব বাড়ির এমন এক অবস্থা, সবাই থো হয়ে গেছে এর মধ্যে বিয়ে?
- আরে, বিয়াইসাব চিন্তা করছেন কেনো? ছেলেও আমাদের- মেয়েও আমাদের বিয়ে আজ হলেও হবে কাল হলেও হবে,
শুভকাজ যতো তাড়াতাড়ি করা যায়।
তবে, এখন বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা যাক, সব আয়োজন তো করাই আছে।
শিপা সব কিছু শোনার পর- শিপার অস্থির নিবিড় চোখে অগ্নিশিখা জ্বলজ্বল করছে, অথচ মুখে অদ্ভুত মৃদ্যু হাসি, পরক্ষণে,নিরবে অট্রহাসি।
তারপর,বিয়ে পড়ানোর জন্য সকল আয়োজন করা হলো। বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। কিছু রীতিনীতি বাকি রইলো,
পর্যায়ক্রমে শুরু হলো রীতিনীতির নিয়মমাফিক আয়োজন।
অদ্ভুত বিষয়- বাড়িতে কি একটা অবস্থা হয়ে গেলো ঘন্টাখানেক আগে, তবুও সকলের মুখে হাসি এই ভেবে যে, বিয়েটা হচ্ছে।
তারপর ,
মালা বদল করানো হলো, সাহ নজরের সময় শিপার বর মানে রাজীব শিপাকে প্রথম দেখে। এর আগে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি রাজীব। কারণ,বাবার পছন্দের পাত্রী বাবার পছন্দ ফেলে দেবার মতো নয়। তাই তার দেখার প্রয়োজন পড়েনি।
যখনই শিপার মুখ রাজীব প্রথম দেখলো তখন রাজীবের মুখে অদ্ভুত ভয়ের ছাপ ভেসে উঠেছে। রাজীব নিশ্চুপ হয়ে একদৃষ্টিতে শিপার দিকে তাকিয়ে থাকে,জেনো অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু তার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। দমবদ্ধ হয়ে মরে যাবার অবস্থা, নিঃশ্বাস নিতেও রাজীবের কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে - রাজীব আতঙ্কের মধ্যে আছে।
হঠাৎ!শিপা রাজীবের হাত র্স্পশ করে, রাজীব চমকে উঠে।
আংক্টি বদলের জন্যই শিপা রাজীবের হাত র্স্পশ করে, র্স্পশে শিপার কোনো কুন্ঠা ছিলো না বরং চোখে ছিলো উজ্জ্বল অগ্নিশিখা।
হাত র্স্পশ করতেই রাজীব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, রাজীবের জ্ঞান হারানোর অবস্থা,
রাজীবের চোখ বন্ধ হয়ে আসে,তারপর আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছিলো-
বছর দু'য়েক আগে অসম্ভব সুন্দরি মেয়েকে জোরপূর্বক কাছে পেতে চেয়েছিলো, জঘন্য তৃষ্ণায় মেতে উঠেছিলো তার প্রাণ, মেয়েটা বাঁচার আশায় চিৎকার করছিলো,-
*আমার সম্মান কেড়ে নিয়ো না, আমাকে মুক্তি দাও
আমাকে বাঁচতে দাও, আমাকে মুক্তি দাও.....না........*
অথচ, সে আর তার গুপ্তচর নরপিশাচের মতো তাকে-----------
রাজীবের চোখে-মুখে পানি দিতেই
রাজীবের জ্ঞান ফিরে আসলো, শিপার নাম মুখে নিতেই মুখ বেঁকিয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায় রাজীবের, রাজীবের হাতে নিসংশ আঘাতের চিহ্ন।
সবাই শিপার নাম ধরে ডাকতে থাকে- শিপা এইদিকে আয় কিন্তু শিপাকে খুঁজে পায় না, সারাবাড়ি খুঁজে দেখে কোথাও শিপা নেই।
হনৈ হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হলো, অথচ শিপার হুদিস পায় না কেউ।
শিপাকে খুঁজতে খুঁজতে শিপার বাড়ির গৃহকর্মী কবরস্থানের দিকে চলে যায়, গৃহকর্মী হঠাৎ দূর থেকেই দেখতে পায় একটা কবরের পাশে শিপার পছন্দের ছেলে সাদি উম্মাদ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সাদিকে ডাকার জন্য সামনে এগুতে থাকে গৃহকর্মী, তাকে ডাকছে অথচ সে সাড়া দিচ্ছে না, কাছে এসে সাদিকে ছুঁতে গেলেই কোথায় জেনো হারিয়ে যায় সাদি , সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে গৃহকর্মী।
এদিকে,
শিপার বড় বোন সিনহা শিপাকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পিছনে চলে যায়, খুঁজতে খুঁজতে একটা পরিত্যক্ত বাক্স দেখতে পায় সিনহা, বাক্স হাতে নিতেই চোখে পড়ে বাক্সের উপরে কিছু লেখা -
~আমি এভাবে চলে যেতে চাইনি, আমাকে টেনে-হিচরে অতলে ফেলে দিয়েছে।
আমি হারিয়ে যেতে চাইনি, প্রতিরাতে স্বপ্নে আমাকে হত্যা করা হয়েছে।
কিন্তু, হাহাহাহাহহা! আমি ফিরে আসবো বার বার! আমি ফিরে আসবো বার বার----"
লেখাটা পড়ে বাক্সটি সিনহা খুলে
খুলে দেখে একটা চিরকুট!
সিনহা আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকে সেই চিরকুট,
পড়তে পড়তে সিনহার চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসে, অথৈই জলে চোখ ভেসে যাচ্ছে, অতল সমুদ্রে গভীর রহস্য
সিনহার চোখ বেয়ে শুধু ঝড়ে পড়ে অঝোর বৃষ্টি স্রোত।
সিনহা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে.................
Really nice story.... Onek vlo laglo...