ভালো মানুষ হলেই চলবে না, নামায, রোযা সবার ফরজ

0 4

ভালো মানুষ হলেই চলবে না, নামায, রোযা সবার ফরজ

আপনি একজন ভালো মানুষ – আত্মীয়স্বজনের উপকার করেন, গরিবকে দান-খয়রাত করেন, দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। সামাজিকতা এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু করেন না।

সুতরাং আপনার নামায না পড়লেও চলবে, রোযা না রাখলেও কোন সমস্যা নেই, কারণ এগুলো নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতা। একজন আদর্শ নাগরিক হয়ে মানুষের ভালো করাটাই আসল কথা। মানব ধর্মই আসল ধর্ম; জীবে দয়া করিছে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর। এই যদি আপনার ধারণা হয়, তাহলে আপনার অবস্থা নিচের তিনটির যে কোন একটি হতে পারেঃ

• আপনি মনে করেন যে আপনি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং উন্নত বিচার-বুদ্ধির কারণে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ এটা নিজেই যথেষ্ট বুঝতে পারেন এবং আল্লাহ্‌কে এবং তাঁর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে আপনি যথেষ্ট গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন, যেটা অন্যেরা পারে না।

নামায, রোজা শুধু ওই সব অর্ধ-শিক্ষিত, অল্প-জ্ঞানী মানুষদের জন্য দরকার যারা এখনও আপনার মত চিন্তার গভীরতা এবং উপলব্ধির উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। |

• আপনি মনে করেন যে আপনার নীতিগত মূল্যবোধ থেকে যা কিছু ভালো মনে হয়, সেটাই ইসলামের চোখে ভালো।

মানুষ তার নীতিবোধ থেকে যা কিছু ভালো এবং যা কিছু খারাপ মনে করে, তার বাইরে ইসলামের মূল্যবোধের কোন দরকার নেই। মানুষ নিজে থেকেই কি ভালো, কি মন্দ তা যথেষ্ট বোঝে; আল্লাহর মানুষকে এর বেশি কিছু শেখানোর নেই।

• আপনি মনে করেন নামায, রোযা না করে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না, আপনি এমনিতেই যথেষ্ট ভালো আছেন। যেহেতু আপনার মতে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না, সুতরাং আপনার আল্লাহর বাণী শোনার কোন প্রয়োজন নেই। নামায, রোজা না করাটা যদি এতো খারাপ কাজ হতোই, তাহলে এতদিনে আপনার অনেক ক্ষতি হতে থাকতো। কিন্তু সেরকম কিছু তো হতে দেখা যাচ্ছে না।

আপনার যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আপনাকে অভিনন্দন! আপনি শয়তানের মানুষকে ডোবানোর তিনটি মুল পদ্ধতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন। শয়তান গত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একদম প্রথম মানুষ আদম (আ) থেকে শুরু করে আপনি-আমি পর্যন্ত বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে ডোবানোর জন্য যতগুলো পদ্ধতি সফল ভাবে প্রয়োগ করে এসেছে, তার মধ্যে তিনটি মুল পদ্ধতি হলঃ

• শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায় যে – সে আসলে একজন ভালো মানুষ, তার থেকে কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে! একজন ট্রাফিক পুলিশ রিকশাওয়ালার কাছ থেকে দশ-বিশ টাকা ঘুস নেবার সময় মনে করে যে, সে একজন যথেষ্ট ভালো মানুষ, কারণ সে তো সার্জেন্টের মত ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ খাচ্ছেনা। একজন সার্জেন্ট মনে করে যে, সে যথেষ্ট ভালো মানুষ কারণ সে তো ডিসির মত লক্ষ লক্ষ টাকার পুলিশের বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্র বিক্রি করে গুলশান বনানীতে বাড়ি-গাড়ি করে ফেলছে না। একজন ডিসি মনে করে যে, সে মন্ত্রীদের থেকে অনেক ভালো মানুষ, কারণ সে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হক মেরে দেশের কোটি টাকার ক্ষতি করছে না। এদের প্রত্যেকে শয়তান অত্যন্ত সফলভাবে বুঝাতে পেরেছে যে, সে যা করছে তা এতো খারাপ কিছু না, তার থেকে কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে। আর সে অন্যায় না করলে কি হবে, তার পরে যে আসবে, সে তো ঠিকই একই কাজ করবে।

• শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায় যে – ধর্ম শেখার কিছু না, এটি তার নিজের এবং আল্লাহর ব্যাপার। ধর্মের মত একটা সাধারণ ব্যাপারে আবার পড়াশুনা করতে হবে নাকি? নিজের কাছে যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই আল্লাহর কাছে ভালো, আর নিজের কাছে যেটা খারাপ মনে হয়, সেটাই আল্লাহর কাছে খারাপ। তাছাড়া ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য যেই বই পুস্তকগুলো পড়ব, সেগুলো যে নির্ভেজাল তার প্রমাণ কি? ওই বইগুলো তো যত সব কাঠমোল্লাদের লেখা। এর চেয়ে নিজে যা ভাল-মন্দ মনে করি সেটা মেনে চললেই হল। একারনেই অনেককে দেখবেন ধুম-ধারাক্কা করে খ্রিস্টানদের মত ছেলে মেয়েদের জন্মদিন, আকিকা করে; হিন্দুদের প্রথা অনুসারে গায়ে-হলুদ, বউ-ভাত করে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়। কিন্তু যখন নিজের বাবা-মা মারা যায়, তখন তাদের জন্য কু’রআন খতমের ব্যবস্থা করে, চল্লিশা করে, প্রতিবছর মৃত্যু বার্ষিকীতে মিলাদের আয়োজন করে। শয়তান এদেরকে সফলভাবে বুঝাতে পেরেছে যে – এগুলো সবই ভালো কাজ, ইসলাম সম্মত কাজ, চালিয়ে যাও, আল্লাহ তোমার উপর অনেক খুশি।

• শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায় যে – তোমার মত খারাপ মানুষ নামায পড়বে? রোযা রাখবে? তুমি নামাযে আল্লাহর কাছে মুখ দেখাবে কি করে? তোমার নামায পড়ার কথা ভাবতে লজ্জা লাগে না? এধরনের মানুষকে দেখবেন তারা কোন মতে চক্ষু লজ্জায় পরে হয়তো সপ্তাহে একদিন জুম্মার নামাযটা পড়তে মসজিদে যায় এবং রাস্তায় ফকির দেখলে মানিব্যাগ খুলে সবচেয়ে ছোট নোটটা বের করে দেয়। কিন্তু তাদের দৌড় এই পর্যন্তই। শয়তান এদেরকে সফল ভাবে বোঝাতে পেরেছে যে – তাদের আর কোন আশা নেই, আল্লাহর পক্ষেও তাদেরকে মাফ করা সম্ভব না। সুতরাং নামায পড়ে, রোযা রেখে কোন লাভ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট, অযথা না খেয়ে থাকার কষ্ট। এরচেয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে সেখান থেকে লাখ খানেক টাকা গরিব আত্মীয়স্বজনকে দাও, কোটি টাকার লোণ নিয়ে বাড়ি কিনে হাজার খানেক টাকা গ্রামের বাড়িতে স্কুল কলেজে দান করো। বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকার যাকাত না দিয়ে কালে ভদ্রে গরিব মানুষদেরকে কম্বল, জামা কাপড় কিনে দাও। এতেই আল্লাহ তোমাকে অল্প কয়েকদিন জাহান্নামে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিবে।

আপনার অবস্থা যদি এই তিনটির যে কোন একটি হয়, তবে দুঃখ পাবেন না। শয়তান লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষের সাইকোলজি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছে। মানুষের সাইকোলজিতে তার মত অভিজ্ঞ কোন সত্তা পৃথিবীতে আর কেউ আছে বলে জানা নেই। লক্ষ লক্ষ বছর আগে প্রথম মানুষ আদমকে বানানোর পর শয়তানের সাথে আল্লাহর যে কথোপকথনগুলো কু’রআনে রেকর্ড করা আছে, তা থেকে শয়তানের বিশাল জ্ঞানের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। তখনি সে জানত মানুষকে কিভাবে বোকা বানানো যায়, একদিন কিয়ামতে যে মানুষের বিচার হবে, সে যে মানব জাতির একটা বিরাট অংশকে বোকা বানাতে পারবে ইত্যাদি। আর লক্ষ লক্ষ বছর পরে তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কোথায় পৌঁছেছে সেটা চিন্তাও করা যায় না। মানুষকে সঠিক সময়ে সবচেয়ে মোক্ষম কুবুদ্ধি দিতে সে এতটাই অভিজ্ঞ হয়ে গেছে যে বিংশ

1
$ 0.00

Comments