উপবাস শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Fasting. শব্দের উৎপত্তি গত বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই ,উপ+বাস। উপ = নিকটে (near), এবং বাস = অবস্থান করা ( stay with).
এই বিশ্লেষণ থেকে সহজে উপলব্ধি করা যায় যে, Fasting means to keep the LORD close to your heart.
অর্থাৎ আত্মগতভাবে আপনার মন এবং হৃদয় কে ঈশ্বরের নিকটে অবস্থান করিয়ে নেবার একটি দর্শনগত উপায় হলো উপবাস।
সনাতন হিন্দু সমাজের উপবাস পালনের ক্ষেত্রে দুইটি বিশেষ পদ্ধতি গ্রহন করতে দেখা যায়।
১. They dont eat at all.
২. Limit themselves to special food.
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, Fasting is not a strict discipline in HINDUISM with rules that everyone must follow. আমরা বিশেষভাবে খেয়াল করে দেখতে পাই বৈদিকেরা উপবাস অনশনে খুব একটা গুরুত্ব দেন নাই। সেক্ষেত্রে আমরা পরবর্তীতে দেখতে পাই "মহাভাগবত পুরান " থেকেই উপবাসের ধারণা প্রচলিত হয়ে থাকে। আর এখান থেকে প্রতি একাদশীর দিনে উপবাস থাকার রীতি মেনে চলা হয়ে আসছে। এখানে মূল ধারণা ছিলো, প্রতি একাদশীতে উপবাস থাকলে ভগবান বিষ্ণু আমাদের আপদ, বিপদ হতে রক্ষা করবেন।পুরানে একাদশীর বেশ কিছু উদাহরন আমরা দেখতে পাই। আর এর থেকে বিষ্ণুভক্তরা উপবাস কে তাদের জীবনের একটি নিত্য ধর্মীয় আচার-আচরণ এর সাথে পালন করে আসছে। যদিও বিষ্ণুভক্তরা রীতিমতো এই উপবাস মেনে আসছে, তথাপি আমরা বলতে পারি এটা নিতান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
এখন ভেবে দেখা যাক , আমাদের এই উপবাস থাকা আধ্যাত্মিক ও শারীরিকভাবে কি গুরুত্ব বহন করতে পারে।
আমাদের বেচে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই খাদ্য গ্রহন করতে হয়। খাদ্য গ্রহন ছাড়া বেচে থাকাও সম্ভব নয়।কিন্তু হাজার বছরের আগের সভ্যতায় খাদ্যের প্রাচুর্য মোটামুটিভাবে আজকের দিনের মতো সহজলভ্য ছিলো না। শিকারী জনগোষ্ঠী শিকার পেলে খাদ্য গ্রহন করতো, না হলে অনশনে থাকতো। তাই আগামীকাল যদি আমি খাদ্য গ্রহন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই, তাহলে আমি কিভাবে বেচে থাকবো উপবাস থাকার অভ্যাস আমাদের সেই শিক্ষাকে উপলব্ধি করার সুযোগ করে দেয়। এটা একটা কারণ হতে পারে। অন্য আরেকটা কারণ হতে পারে, Denial of all physical needs of our body for the shake of spritual gains. শরীর এবং আত্মার মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক অর্জন আমাদের মাঝেমধ্যে এই অভ্যাসটা অনুশীলন করাটা গুরুত্বপূর্ণ বটে। উপবাস ধারণা টা একটা dedication ত্তত্ব কে অনুসরণ করে চলে। এই তত্ত্ব বলে শরীরের সমস্ত অঙ্গাদিকে বিশ্রাম দিয়ে একমনে ঈশ্বরের দিকে মন ও আত্মাকে নিবিষ্ট করে রাখার কথা। তাই একই সাথে এই তত্ত্বের দার্শনিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় আনা দরকার।
Fasting কে সমাজের আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। সনাজের যেকোন আনুষ্ঠানিক আচার-আচরণ কে সমষ্টিগতভাবে পালন করার মধ্য দিয়ে
সমাজব্যবস্থায় যেমন একতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, তেমনি সকলের মধ্যে সম্মিলিত জাগরণ ও বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব। Spiritual level থেকে উপবাস আমাদের জীবনে নিন্মলিখিত বিষয়গুলো কে ধারণ করে।
1. Purifies the mind.
2.Control the passion
3.Check the emotion
4.Control the sence.
কিন্তু মেডিকেল সাইন্স উপবাস কে ভিন্ন গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। আমাদের শারীরিক সচল অঙ্গাদি (Active organs) গুলির কার্যকারিতা দীর্ঘদিন পর্যন্ত সচল এবং শক্তিশালী করার জন্য, মাঝেমধ্যে এর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। সেটি হতে পারে, সপ্তাহে একদিন, অথবা ১৫ দিনে একদিন। এতে করে খাদ্য গ্রহন করার পর শরীরের জন্য ঝুকিপূর্ণ খাদ্যউপাদান, যেমন অতিরিক্ত চর্বি, ভারি ধাতু, ইত্যাদি সহজে জমা হয়ে শারীরিক ক্ষতি করতে না পারে। এতেকরে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর সাথে দীর্ঘদিন সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেচে থাকা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এর বিশেষ স্বাস্থ্যগত দিকগুলি হতে পারে,
1.To overhauls the respiratory and circulatory.
2.To remove the toxic and impurities from the body
3.Adequate rest for internal organs
4.Proper functioning of digestive system and strengthening the digestive system.
5.To enjoy better health.
হিন্দুধর্মের উপবাসের ধরনঃ
হিন্দুদের উপবাস পালন করার একাধিক ধরন পরিলক্ষিত হয়। কাউকে দেখা যায় প্রতিদিন নিত্য পূজা সম্পন্ন না হবার আগ পর্যন্ত উপবাস করতে, বিভিন্ন পূজা পার্বনে এবং সপ্তাহের বিশেষ দিনে বিভিন্ন দেবতা এবং দেবীকে প্রসন্ন করতে উপবাস পালন করতে। সেক্ষেত্রে উপবাসের ধরন ও ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়।
একদিকে দেখতে পাই, উপবাসের সময় কোন প্রকার খাদ্য ও পানিয় গ্রহন না করতে, অন্যদিকে দেখি, শুধু পানি গ্রহণ করতে। আবার কেউ কেউ উপবাস কালীন সময়ে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ করেন। একাদশী ( The eleventh day after full moon and eleventh day after new moon, once a Fortnite) এবং পূর্ণিমা তিথীতে যে উপবাস করা হয়, সেখানে কিছু কঠোর নিয়ম অনুসরণ করতে দেখি। এক্ষেত্রে একাদশী শুরু হওয়ার আগের দিন সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত থেকে একাদশীর পরের দিন সূর্যোদয়ের পর ৪৮ মিনিট পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহন করা হয় না। একে নির্জলা উপবাস বলা হয়।ভারতীয় চন্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী, পৃথিবী সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে ২৪ ঘন্টা সময় নেয়। এই ২৪ ঘন্টা কে স্থানীয় স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ই নির্ণয় করা হতো। এই ইউনিট হিসেবে" প্রহর " গনুনা বেশি প্রচলিত ছিলো। একাদশী ব্রত পালনের নির্ধারিত সময়ের থেকে আরো অতিরিক্ত ৪৮ মিনিট বেশি সময় পর খাদ্য গ্রহন করার নিয়ম প্রচলিত আছে। এর কারণ ছিলো, তারা উপবাস পালন কারি যেন নিশ্চিত থাকে, পৃথিবীর ঘূর্ণন একবার পরিসমাপ্ত হয়েছে।
আমার কাছে মনে হয় - This is the time, you can step back from your normal routine and take stoke of your spritual Life." হিন্দু ফিলোসোফি অনুযায়ী আমাদের ব্যক্তি জীবনে তিনটি মৌলিক গুন বিস্তর প্রভাব বিস্তার করে।
সেগুলি হলো,
1.সতো -(White) 2.রজঃ (Red) এবং 3.তমো ( Black)
এই তিনটি কার্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়, আমাদের সাদা গুন গুলি হচ্ছে, মানবিক গুনাবলী যার মাধ্যমে শরীর ও আত্মায় পরিশুদ্ধির বিকাশ ঘটে, মনের মধ্যে পবিত্রতা আসে।
লাল কার্ডটির মাধ্যমে আমরা সেই গুনাবলী কে বুঝিয়ে থাকবো যা আমাদের শরীর ও মনে অস্থিরতা, উত্তেজনা এবং রাগ হিংসা দ্বেষ কে প্রকাশ করে।
তমো বা Black কার্ডটি র মাধ্যমে শরীর ও মনের তন্দ্রাচ্ছন্নতা, অলসতা, ও চৌর্যবৃত্তির, প্রলভন কে প্রকাশ করতে চায়। আমরা জানি অলস মস্তিষ্ক শয়তানের সূতিকাগার। ফলে এই তমো গুনটি আমাদের বিরাট ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের শারিরীক ইন্দ্রিয় শক্তিকে (Scence organ) নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। একারনে হিন্দু ধর্ম তিন প্রকার খাদ্যাভ্যাস এর ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
১. সাত্যিক খাদ্যঃ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করা যায় এমন পুষ্টিকর খাবার। যেমন, ফল জাতীয় খাদ্য, মূল জাতিয় খাদ্য, শাক সবজি। এক্ষেত্রে সরাসরি রান্না না করে খাওয়া সম্ভব সবজি,ফল মুল কে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।যেকারনে শরীরে পবিত্র অনুভূতি আসে, দীর্ঘজীবীতা (longivity)বৃদ্ধিপায় , শক্তি সঞ্চিত হয়, স্বাস্থ্যবান হওয়া যায়। এগুলি অর্জনের মধ্যদিয়ে মনে সুখ আসে।
২.রাজসিক খাদ্যঃ এই জাতিয় খাদ্যগুলি হলো, প্রানীজ প্রোটিন, (দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য সামগ্রী বাদে), গরম খাবার ও গরম পানীয়, মসলা যুক্ত খাবার, টক জাতিয় খাবার এবং তিক্ত খাবার।
৩.তামসিক খাদ্যঃ পরিত্যক্ত খাবার (left over food), বাসি খাবার (stored food) এবং উগ্র গন্ধ যুক্ত পচা খাবার, এবং পচন ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উৎপন্ন খাদ্য, যেমন মদ, তাড়ি, সোমরস ইত্যাদি খাবার।
উপবাস কালীন সনয়ে এই রাজসিক এবং তামসিক খাদ্য গ্রহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
উপবাস পালন করার উদ্যেশ্য হলো ঈশ্বরের কাছা কাছি আসতে পারার সাধনা। আর ঈশ্বর প্রকৃত পক্ষে আমাদের ব্যক্তিত্ব ও গুনে প্রকাশিত হন। তাই ঈশ্বর সাধনার পূর্ব শর্ত হলো, আমাদের মধ্যে মানবীয় গুনাবলীর বিকাশ ঘটানো। এক্ষেত্রে- Fasting helps us to control over scene and keep the mind peaceful. প্রশান্ত মনই আমাদেরকে সুন্দর চিন্তাভাবনায় উৎসাহিত করে। মনকে প্রশান্ত রাখার মধ্যদিয়ে মানবিক গুনাবলী জাগিয়ে তুলতে তাই হিন্দুধর্মের সাধন তত্ত্ব তিনটি অতি প্রয়োজনীয় ব্রত সম্পন্ন করে থাকে। এই বিশেষ তিনটি ব্রত (Oath) হলো -
১.কায়িকা ব্রতঃ যেমন নির্ঘুম থাকা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা,, শুচি বজায় রাখা ইত্যাদি
২.বচিকা ব্রতঃ বচিকা থেকে বচন শব্দটা পাওয়া যায়। অর্থাৎএসময় বাক্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসময় নিথ্যে বাক্য পরিহার করতে হবে, শাস্ত্র পাঠ ও শ্রবন করতে হবে,প্রভৃতি।
৩.মানস ব্রতঃ মানস ব্রতের ক্ষেত্রে মন থেকে সকল আকাঙ্ক্ষা, হিংসা দ্বেষ , পরিহার করতে হবে।।
এবাবেই শাস্ত্র নির্ধারিত বিশেষ দিবস ও তিথীতে উপবাস পালনের মাধ্যমে শরীর ও মনের বিশেষ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে আত্মিক শুদ্ধতা পরিজাগরনের মধ্য দিয়ে মানবিক গুনাবলী অর্জন করার অভ্যাস বা অনুশীলন হলো উপবাস পালনের প্রধান উদ্দ্যেশ। এটা একই সাথে আপনার চিন্তাভাবনা, ধ্যান ধারনার পরিবর্তন ঘটিয়ে আপনাকেই ঈশ্বরের গুনগ্রাহী করে তুলবে,আমি মনে প্রানে সেটি বিশ্বাস করি।
Well writing carry on