শীর্ষ দশের অর্ধেকই বাংলাদেশের

0 9
Avatar for Alsha
Written by
4 years ago

পরিবেশবান্ধব শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া বিশ্বের ২৭টি শিল্প স্থাপনার মধ্যে ১৪টিই বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র কারখানা। এ ছাড়া ভারতের ৩টি ও তাইওয়ানের ২টি কারখানা রয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, ইউএই, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া ও আয়ারল্যান্ডের একটি করে কারখানা আছে শীর্ষ দশে।

পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র খাত। সেই সাফল্যে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন পালক। তার মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন—পরিবেশবান্ধব শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া বিশ্বের ২৭টি শিল্প স্থাপনার মধ্যে ১৪টিই বাংলাদেশের কারখানা। এ ছাড়া ভারতের ৩টি ও তাইওয়ানের ২টি কারখানা রয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, ইউএই, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া ও আয়ারল্যান্ডের একটি করে কারখানা আছে শীর্ষ দশে।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরে ইতিমধ্যে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকলের সেঞ্চুরি হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বললে, ১২৫টি।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরে ইতিমধ্যে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকলের সেঞ্চুরি হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বললে, ১২৫টি। তার বাইরে শিপইয়ার্ড, জুতা, ও ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাণেও আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে। তবে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল। সেগুলো যে আবার যেনতেন মানের নয়, সেটি আগেই বলা হয়েছে।

সারা বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। প্রতিষ্ঠানটি ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।

[bad iframe src]

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। গত বছরের নভেম্বরে লিড সনদ পাওয়া বাণিজ্যিক স্থাপনার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গ্লোড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।

পরিবেশবান্ধব শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া ২৭টি শিল্প স্থাপনার মধ্যে ১৪টিই বাংলাদেশের কারখানা। ২০১৮ সালের ২৮ মের আগে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা ছিল রেমি হোল্ডিংস।

বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলো ইউএসজিবিসির অধীনে সনদ পেয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৪৪টি স্থাপনা লিড সনদ পেয়েছে। তার মধ্যে লিড প্লাটিনাম ৪১টি, গ্লোড ৮৭টি, সিলভার ১৪টি ও ২টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। সনদ পাওয়া ১৪৪টি স্থাপনার মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা হচ্ছে ১২৫টি।
ইউএসজিবির বরাত দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ইনফরমেশন (আরডিটিআই) সেল জানায়, পরিবেশবান্ধব শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া ২৭টি শিল্প স্থাপনার মধ্যে ১৪টিই বাংলাদেশের কারখানা। ২০১৮ সালের ২৮ মের আগে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা ছিল রেমি হোল্ডিংস।

বর্তমানে ১১০ পয়েন্টের মধ্যে ১০১ নিয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইউএনগ্রান সারি গার্মেন্টস প্রিনগাপাস ৬ অ্যান্ড ৭। আর ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের বিটপী গ্রুপের রেমি হোল্ডিংস। কর্মক্ষেত্রে সূর্যের আলো ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়, ভেতরে-বাইরে গাছ এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে শ্রমিকদের কায়িক পরিশ্রম কমিয়ে আনায় সর্বোচ্চ দক্ষতা—এসবই নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের এই কারখানাকে সবচেয়ে বেশি নম্বর এনে দিয়েছে। বিটপী গ্রুপের আরেকটি কারখানা তারাসিমা অ্যাপারেলস ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে।

বিশ্বে পরিবেশবান্ধব শীর্ষ ১০ শিল্প স্থাপনায় বাংলাদেশের ১৪টি কারখানা জায়গা করে নেওয়াটা বিশাল ব্যাপার। তবে যতক্ষণ না দেশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব কারখানার ব্র্যান্ডিং হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটির পোশাকশিল্প সুফল পাবে না।

প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক

চতুর্থ বাংলাদেশের প্লামি ফ্যাশনস ও শ্রীলঙ্কার ব্র্যান্ডডিক্স অ্যাপারেল। তাদের উভয়ের পয়েন্ট ৯২। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংহপুরে প্লামি ফ্যাশনস ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে। ২১ বিঘা জমির ৬২ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রেখে প্লামির মূল কারখানাটি করা হয়েছে। দুই তলাবিশিষ্ট কারখানার চারপাশে স্বচ্ছ কাচের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো ভেতরে আসে। সে জন্য বৈদ্যুতিক বাতির প্রয়োজন কম হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ভূগর্ভে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক জলাধার। সেই পানি ব্যবহারের পাশাপাশি বাথরুমে পানিসাশ্রয়ী কল লাগানো হয়েছে। এসব কারণে কারখানাটিতে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহার ৪০ শতাংশের কম। প্লামি ফ্যাশনস নিট পোশাক তৈরি করা বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা।

জানতে চাইলে প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বে পরিবেশবান্ধব শীর্ষ ১০ শিল্প স্থাপনায় বাংলাদেশের ১৪টি কারখানা জায়গা করে নেওয়াটা বিশাল ব্যাপার। তবে যতক্ষণ না দেশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব কারখানার ব্র্যান্ডিং হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটির পোশাকশিল্প সুফল পাবে না। সে জন্য শুরুতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে যে আগ্রহ ছিল, বর্তমানে তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে পরিবেশবান্ধব কারখানা যত বেশি, তত বেশি দেশের উপকার হবে।

পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার পঞ্চম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ। লিড প্লাটিনাম সনদ পাওয়া এই কারখানার পয়েন্ট ৯১। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে চার দেশের ছয়টি কারখানা। সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, আয়ারল্যান্ডের একটি কারখানা (নামটি প্রকাশ করা হয়নি), মেক্সিকোর কালোস কেএএস ফোর, ভারতের অ্যাকুয়ারলি সমুদ্র, বাংলাদেশের এআর জিনস প্রডিউসার ও কারনি নিট কম্পোজিট। ৮৯ পয়েন্ট নিয়ে ৭ নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের ডিজাইনার ফ্যাশনস ও পাকিস্তানের তাইগা অ্যাপারেল। আর অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশের দুই কারখানা গ্রিন টেক্সটাইলের ইউনিট-৩ ও কেনপার্ক ২। তাদের পয়েন্ট ৮৮।

৪ দেশের ৬টি কারখানা ৮৭ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থান দখল করে নিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট, তোসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের ফেব্রিক ডিভিশন, কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রিজ, তাইওয়ানের টিএসএমসি এফ ১২ পি৩ এফএবি বিল্ডিং, ভারতের অর্গানিক ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের প্রজেক্ট সানশাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিএসওএ—হাই বে বিল্ডিং। আর দশম স্থানে রয়েছে ইতালির বত্তেগা ভেনতা আর্টিলার, তাইওয়ানের টিএসএমসি এফ ১২ পি১ পি ২ এফএবি বিল্ডিং, পোল্যান্ডের এমএআরসি চকলেট ফ্যাক্টরি এক্সটেনশন, বাংলাদেশের ইকোটেক্স লিমিটেড এবং ভারতের এসএজিএস অ্যাপারেলস।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের উদ্যোক্তাদের চাপ দিয়ে অনেক বিষয়ে কাজ করাতে হয়েছে। তবে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার মধ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি কারখানা স্থান করে নেওয়াটা খুবই গর্বের বিষয়।’

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্র কারখানা স্থাপনে আমরা অন্য যেকোনো প্রতিযোগী দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ফলে বিশ্ববাসীর সামনে পরিবেশবান্ধব কারখানার ব্র্যান্ডিং করে আমাদের শিল্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা সম্ভব। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, ব্র্যান্ডিংয়ে আমাদের দুর্বলতা আছে। যদিও আমরা ব্যক্তিগতভাবে দেশ-বিদেশে ব্র্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করি। সম্মিলিতভাবে কাজটি করা গেলে খুবই ভালো হয়।

সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি শর্ত পরিপালনে স্থাপনায় এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি শর্ত পরিপালনে স্থাপনায় এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানিসাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করতে হয়। এ ছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার নিয়ম রয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব।

পরিবেশবান্ধব কারখানায় সাফল্যের বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের বিষয়টি ক্রেতারা আমাদের চাপিয়ে দেননি। উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগেই কাজটি করেছেন। ফলে এটি আমাদের জন্য অন্তত গর্বের। তবে পরিবেশবান্ধব কারখানা থাকলেও সে অনুযায়ী ক্রেতারা পোশাকের মূল্য দিচ্ছেন না।’

1
$ 0.19
$ 0.19 from @TheRandomRewarder
Avatar for Alsha
Written by
4 years ago

Comments