বিয়ের দু-বছর পর যখন কোনো সন্তান হয় নি,তখন শ্বশুর বাড়ির শাশুড়ি ননদ ভাবিদের কাছে থেকে শুনতে হয়েছে নানান কথা। যাদের এক সময় মা-বোন ভাবতাম তারাই নাম দিয়েছিলো বন্ধ্যা।
তবুও পাশ থেকে হাত ছাড়েনি রাকিব,মায়ের বিপক্ষে গিয়ে সব সময় আমার সাপোর্ট করতো,নতুন করে বাঁচতে অনুপ্ররেণা দিতো।
তখন ভাবতাম ভালোবেসে ভুল করেনি। বাবা-মা কে ছেড়ে যার হাতটা ধরে পালিয়ে এসেছি সে মানুষটা ভুল ছিলো না।
মধ্যবিও পরিবারের মেয়ে হলেও বাবা কখনো অভাব বুঝতে দেয় নাই। যখন যা চেয়েছি তাই দিয়েছে। যখন রাকিবের কথা তাদের বলেছিলাম তখন তারা কোনো বেকার ছেলের কাছে আমাকে দিতে চাইনি। কে বা চাইবে তার একমাত্র আদরের মেয়েকে বেকার ছেলের কাছে দিতে?
পারেনি পাঁচ বছরের ভালোবাসাকে ভুলে যেতে। তাই চলে এসেছিলাম রাকিবের হাত ধরে এই ছোট্ট কুঁড়েঘরে।
আজ রাকিবের সব আছে। বেকার ছেলেটিও আজ বেকার নেই। কুঁড়েঘরটিও আজ বড় অট্টালিকা। আমার কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি।
তবুও আমি দিতে পারেনি বাবা হওয়ার অনন্দ।
সব সময় ভাবতাম মা-বাবা ছেড়ে আসায় তাদের কষ্ট দেওয়ায় এটাই বুঝি সৃষ্টার অভিশাপ।
,
,
,
সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে রাকিবের ব্যস্ততা। সব সময় পাশে থাকলেও আগের মতো গুরুত্বটা ছিলো না, ভালোবাসাটাও হয়তো ব্যস্ততায় হারিয়ে গেছে।
যা ছিলো সবই কর্তব্য। বিরক্তের স্বরে মাঝে মাঝে হাতটা ধরে বলতো "মা যাই বলুক সবই সহ্য করো তাদের কিছু বলোনা। তার ও তো ইচ্ছা হয় নাতি নাতনির মুখ দেখার"
তখন ওর হাতের উপর হাত রেখে করুণার সুরে বলতাম- "তুমি শুধু পাশে থেকো আমি সব সামলে নিবো"
রাকিবের ব্যস্ততার কারনে আমাকে নিয়ে কখনো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় হয়নি, বেশি আবদারও করতাম না কারন আমি তে ছিলাম বন্ধ্যা।
মা-বাবাকে ছেড়ে যাদের আপন করে নিয়েছি, ভাত মেখে নিজে না খেয়ে প্রথম লোকমা যাদের মুখে দিতাম,যাদের নিজের মা-বোন ভাবতাম তাদের থেকে বন্ধ্যা উপনাম নিতে কম কষ্ট হয় নাই, তবুও মানিয়ে ছিলাম।
,
,
,
বিয়ের প্রায় ৩ বছরের মাথায় একদিন হঠাৎ করেই শাশুড়ি অসুস্থ হয়। তখন তা একটাই চাওয়া ছিলো নাতি-নাতনিদের মুখ দেখা। তখনও বুঝতে পারেনি এ যে সবই শ্বাসুরি মায়ের অভিনয়।
রাকিবও তখন সহ্যসায়ি মাকে কথা দিয়েছিলো, মায়ের পছন্দ মতো আবার বিয়ে করবে।
সেদিন আমি রাকিবের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম, সেদিন হয়তো ও ভুলে গেছিলো আমাকে, ভুলে গেছিলো আমাকে দেওয়া সুখে দুঃখে এক সাথে থাকার কথা।
সেদিন রাতে দুজন এক বিছানায় শুলেও কারো চোখেয় ঘুমা ছিলো না, আমার চোখে ছিলো সংসার ভাঙ্গার কষ্ট। আর রাকিবের চোখে ছিলো নতুন সংসারের স্বপ্ন।
,
,
তার ঠিক দুদিন পরই রাকিবের বিয়ে হয় ওর খালাতো বোনের সাথে।
তখন ওর মুখে ছিলো হাসির ঝলক আর চোখে ছিলো বাবা হওয়ার প্রত্যাশা, ওর চোখ যেনো আমায় বলেছিলো মায়ের অভিনয় শুধুমাএ বাহানা।
সেদিন এ চোখ চিনতে আমি ভুল করেনি নি,এ চোখে যে ছিলো ৮ বছর আমার আনাগোনা সে চোখ চিনতে কি করে ভুল করি
,
,
,
কোনো মেয়েই নিজের ভালোবাসার মানুষটির ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারবে না, কিন্তু আমি দিতে বাথ্য ছিলাম। চাইলেই আমিও এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারতাম কিন্তু যাই নি রাকিব কে নিজের করে না পাই, চোখের সামনে তো দেখতে পারতাম তাই থেকে গিয়েছিলাম এ বাড়ি।
তবুও শেষ ঠিকানা এ বাসায় হয় নাই,
শাশুড়ি, নতুন বউয়ের কাছে আমি ছিলাম বোঝা। বাড়ির প্রত্যেকটি জিনিস ছিলো আমার গড়া,আমার এ নিজের হাতের ছোয়া এ মায়া ছেড়ে আসতে বড্ড কষ্ট হয়েছিলো সেদিন।
আসার সময় রাকিবের চোখে চোখ রেখে বলেছিলাম "আমি চলে যাচ্ছি"
ভেবেছিলাম ও আমায় আটকাবে কিন্তু ওর শেষ বক্তব্য ছিলো- "দেখো সানজি আমি পরিস্থিতির শিকার, তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। বাবা মারা যাবার পর মা আমাকে নিজের হাতে একা কষ্টে করে বড় করেছে তাকে তো আর কষ্ট দিতে পারিনা। যেখানেই যাও ভালো থেকো"
সেদিন আর কিছু বলতে পারেনি, খুব বলতে ইচ্ছা করছিলো "তোমার মা তোমাকে কষ্ট করে বড় করেছে তাহলে আমার মা কি আমাকে আনাদরে বড় করেছিলো। তোমার হাত ধরে আসার সময় তো তাদের কষ্টের কথা ভাবেনি"
মনের কথা মনেই রেখে চলে এসেছিলাম।
,
,
,
জন্মদাতা বাবা-মায়ের কাছে শেষ বিদায় নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম দু-চোখ যেদিকে যায় সেদিক। কিন্তু আসার সময় বাবা আমার হাতটা ধরে বলেছিলো "মারে তোকে কাছে পাওয়ার আসায় তো এতো দিন অপেক্ষা করেছি, তোকে আর একা ছেড়ে দিবো কি করে। তুই তো আমাদের কাছে সেই ছোট্ট খুকিই আছিসরে, ভুল করেছিস আবার ফিরে এসেছিস এটাই তো আমাদের শান্তি"
আমাকে ফিরে পাওয়ায় তাদের চোখে মুখের হাসি দেখে মনে হয়েছিলো এটাই তো আমার জান্নাত।
,
,
,
বেশ কিছু বছর পর বাবা-মায়ের জোড়াজুড়িতে আবার বিয়ে হয়।
বাবাকে আর না করতে পারেনি, বাবা সব সুখ আমার জন্য বিসার্জন দিয়েছেন তাকে কি করে না বলি।
তবে শর্ত দিয়েছিলাম আমার সব সত্যিই বলে বিয়ে দেয়। বাবা আমায় সুযোগ দিয়েছিলো বিয়ের আগে মাহমুদ কে নিজের মুখেই বলেছিলাম "আমি বন্ধ্যা, বাবা হওয়ার আনন্দ আমি আপনাকে দিতে পারবো না।
মাহমুদ সেদিন মুচকি হেসে বলেছিলো- "সন্তানই যদি সব সুখের মূল হয় তবে এতো বৃদ্ধাশ্রম পৃথিবীতে থাকতো না"
বিয়ের পর জানতে পারি মাহমুদ এতিম খানায় বড় হয়েছে, নিজের প্রচেষ্টায় আজ সফল ব্যবসায়ী।
বাবা-মা আর মাহমুদকে নিয়ে শুরু হয়েছিলো আমার সংসার।
,
,
,
আজ পূর্নতর জন্মদিন, চার বছরের মেয়ের একহাত ধরে দাড়িয়ে আছি বৃদ্ধাশ্রমের সামনে আর এক হাত ধরে পাশে আছে মাহমুদ।
মেয়েটা পুরোই বাবার মতো, জন্মদিনে সবার মতো উৎসব না করে, নতুন নতুন জামা না চেয়ে, বায়না ধরে বৃদ্ধশ্রমের মানুষদের দুটো খাবার দেওয়ার।
,
,
,
মেয়ের জন্য বছরে প্রায়ই এ জায়গাটায় আসতে হয়। সবাইকে খাবার দেওয়ার সময় এককোনে জীর্ণশীর্ণ রুগ্ন এক বৃদ্ধা মহিলাকে দেখে থমকে দাঁড়িই।
এ মানুষটিকে চিনতে যে আমার একটুও কষ্ট হয় নি, এ যে আমার একসময়ের শাশুড়ি মা নামে সেই মহিলাটি।
সেবিকাদের থেকে জানতে পারি পরিবার থেকে কোনো অর্থ দেয় না বলে তার ঠাই হয়েছে বিছানা ছাড়া বৃদ্ধাশ্রমের এককোনে।
শাশুড়ি মা নামে সেই মহিলা টিকে নিজের পরিচয় দিলে চিনতে পারেন, হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন।
তখন ওনার থেকে জানতে পারি রাকিবের বিয়ের ৩ বছরেও যখন কোনো সন্তান হয়নি তখন ডাক্তার দেখিয়ে জানতে পারে সমস্যাটা ওর ছিলো আমার না।তার একবছর পর ব্যব
Subscribe me please