হঠাৎই একটি ছেলে এসে মেহেরের হাত ধরে টান দেয়। আচমকা এমন কান্ডে হতভম্ভ মেহের। বিস্ফোরিত চোখে তাকায় ছেলেটির দিকে। ছেলেটি দুলতে দুলতে বলে, 'একা একা দাঁড়িয়ে না থেকে আসো আমরা সবার মতো একটু ডেন্স করি।'
'কী করছেন? ছাড়ুন আমার হাত।'
কিন্তু ছেলেটি শুনল না। টানতে লাগল হাত ধরে। ছেলেটা ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। বিশ্রি একটা গন্ধ আসছে মুখ থেকে। অসহ্য লাগছে মেহেরের। ছাড়া পাওয়ার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে গেছে। কেন যে আসফির সাথে ক্লাবে আসতে গিয়েছিল কে জানে? নিজের এই কান্ডে নিজের গালেই থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে—ওই রকম ইররেসপন্সসিবল কারও সাথে এরকম একটা জায়গায় আসার জন্য। বিয়ের করার কথায় ছেলেটার ভীমরতি হয়েছে। নাইলে হবু বউকে নিয়ে কেউ ক্লাবে আসে। তাও বিয়ের আগের দিন।
'প্লিজ ছাড়ুন। দেখুন আমি এসব পারিনা। আপনি অন্য কারও সাথে নাচ-গান যা ইচ্ছে হয় করুন।'
কান্না গলায় বলল মেহের। কিন্তু শুনল না ছেলেটি। ডান্স ফ্লোরে নিয়ে জোরপূর্বক মেহেরের কোমরে হাত দিতে নেয়। বলে, 'একটু নাচলে কিছু হবে না জান।'
তখনি পিছন থেকে খুব জোরে কারও টান অনুভব করে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটার হাত থেকে ছুটে পিছনে ঘুরে যায়। প্রচন্ড বেগে ধাক্কা খায় টানদাতার বুকের সাথে। মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রচন্ড ব্যথা পায় নাকে। তখনি কান্না গলায় বলে ওঠে, 'আল্লাহ কোন দুনিয়ার আইলাম? মাইয়া দেখলেই কী টানাটানি করে নাকি?'
তখনি মেহেরকে নিজের বুকে ঠাই দেওয়া ব্যক্তিটি মাতাল ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, 'একটু কেন? অনেকটা নাচলেও কিছু হবে না ওর। কিন্তু তা শুধু আমার সাথে। যার জান তার সাথে।'
বলেই শক্ত করে মেহেরের কোমর জড়িয়ে নিজের মাঝে মিশিয়ে নেয় সে। মেহের কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে, না হচ্ছে জানা নেই। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন কে এই ছেলেটা? মুখে মাক্স থাকার কারণে চিনতে পারছে না।
অতর্কিতে মেহের কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটি মেহেরকে ঘুরিয়ে নেয়। মেহেরের পিঠের সাথে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে কাঁধে থুতনি রাখে। দু'হাতে ওর পেট জড়িয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায় গালে। শিহরিত হয় মেহের। অনুভূতির গভীরে ডুব দিতে চায় ওকে নিয়ে। বার বার স্পর্শ করতে থাকে ওর শরীরে। আর সহ্য করতে পারল না মেহের—এই অযাচিত স্পর্শকে। কেমন লাগছে তা হয়তো বলতেও পারবে না—খারাপ নাকি ভালো। অন্যরকম নেশায় ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু তা তো অন্যায়। ভাবতেই মানুষটির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় নিজেকে।
কিন্তু তখনি ছেলেটি মেহেরের দু'হাত আঁকড়ে ধরে। একহাতে টান দেয়। মেহের ছিটকে আবার ছেলেটার ঠোঁটের কাছে চলে আসে।
ঠিক যখন দু'জনের ঠোঁট ছুইছুই ঠিক তখনি ছেলেটা দু'জনের ঠোঁটের মাঝে নিজের ডান হাতটা রাখে। মেহেরের ঠোঁটের পরশ ছেলেটার ঠোঁটের বদলে হাতের তালুতে লাগে। বাঁকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে ছেলেটির ঠোঁটে। মেহের এমন কাজে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চোখে এক রাশ প্রশ্ন। ছেলেটি তা উপেক্ষা করে নিজের হাতের উল্টো দিকে চুমো খায়। মেহের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নেয় ওর হাত থেকে। ছেলেটা এবার সেখানেও চুমো খায় সেখানে মেহেরের পরশ ছিল। এবং হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত করে দেয় ওকে।
মেহের ওর দিকে তাকিয়ে তাকে চেনার চেষ্টা করছে। আলো-আধারের খেলার মাঝে অস্ফুটভাবে তার চেহারা চোখের কোণে ফুটে উঠছে। খুব চেনা দু'টি আঁখিযুগলের সন্ধান পায়। তার মাঝে রাগের রক্তিম আভা ফুটে উঠলেও অদ্ভুত হাসি দেখতে পাচ্ছে। যা মেহেরের সহ্যাতীত। ও কুত করে উঠে দু'চোখের পানি ছেড়ে দেয়। তৎক্ষনাৎ ছেলেটা ওকে নিজের মাঝে টেনে নেয়। ছেলেটার বুকে হাত দিয়ে নিজেকে সামলায় ও।
এবার এই স্পর্শ আর স্পর্শদাতা দুই মেহেরের কাছে স্পষ্ট। ছেলেটার বুক থেকে হাত সরিয়ে নেওয়ার সময় আনমনেই বলে ওঠে, 'রেদ...'
কথাটা শুনেই ছেলেটা বাঁকা ঠোঁটে হেসে নাচের ভঙ্গিতে মেহেরের হাত ধরে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে মেহেরের চুলে নাক ডোবায়। মেহের ছুটতে চাইলে রেদ আরও শক্ত করে মেহেরের দু'হাত ধরে ওর ঘাড়ে আলত করে চুমো খায়। তারপর বলে, 'এখনো এতটাই ভালোবাসো শুধুমাত্র ছোঁয়াতেই চিনে নিয়েছ।'
'সেটা তোমার ভুল ধারণা। ছাড়ো আমাকে।'
কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে রেদ। বলে, 'এখানে আমাদের দেখার জন্য কেউ নেই। যে যার মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।'
'দেখো, আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ ছাড়ো। যেতে দেও আমাকে।'
'কাল তো একবারের জন্য চলে যাবে। অন্য কারও হয়ে যাবে। তাই আজকেটা না হয় আমাকেই দিলে। আমার সাথেই কাটালে।'
এ-কথায় বিস্মিত চোখে তাকায় মেহের।
রেদ বলে, 'তাই মেহের। আজকে রাতের জন্য নাহয় আমার সঙ্গী হলে। আমাকে একটু ভালোবাসলে। কাল নাহয় অন্য কারও হয়ে যেও। অচেনা করে দিও আমাকে। ঘৃনা করো। সারাজীবন তো তার জন্য পড়ে আছে। তাই বলছি আজকেটা আমাকে দেও।'
কথাটা শোনা মাত্রই মেহের হু হু করে কান্না করে দেয়। চোখ হতে নোনা জল পড়তে থাকে। তা দেখে রেদ ওর চোখের পাতায় চুমো আঁকে। মেহেরের গালে দু'হাত দিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। বলে, '
একটা বার শুধু বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেও কথা দিচ্ছে—কোনোদিন হাত ছাড়ব না।
শেষ বার সব ভুলে আপন করে নেও—কথা দিচ্ছি সারাজিবন বুকে আগলে রাখব।
এইবার শুধু ভালোবেসে দেখো—আমৃত্যু ভালোরাখার দায়িত্ব নেব।'
রেদের মুখে এই কথা শোনা মাত্রই মেহের নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু রেদ পিছন থেকে মেহেরের দু'হাত টেনে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আবার বলে, 'শুধু দূরে যাওয়ার বায়না কোরো না। যেতে পারবে না। শুধু নিজেকে কষ্ট দেবে আর আমাকে পোড়াবে। তোমাকে ছাড়া রেদ থাকতে পারবে না।'
'কী চাইছ তুমি? আমি আবার সেই যন্ত্রণা সহ্য করি যা তুমি আমাকে দিয়েছ।'
'তা আমি জানিনা। আমি শুধু তোমাকে চাই। আমাকে হ্যাঁ বলতে হবে না তোমার। কিন্তু প্লিজ না শব্দটা বোলো না। আমার পক্ষে আমার মেহেরকে ছাড়া সম্ভব নয়।'
'নিজে হাতে যা শেষ করেছ তা কোন মুখে ফেরত চাইছ?'
'তাইত নিজে এসেছি মেহের তোমার কাছে। আর যাই করো ফিরিয়ে দিয়ো না। এটাই আমার শেষ সুযোগ। এরপর আর হয়তো তোমাকে এসব বলার সুযোগ পাবো না।'
'আমি আর পারব না।'
মেহেরের মুখে এ-কথা শোনা মাত্র রেদ ওকে ছেড়ে দেয়। রেদের থেকে ছাড়া পেয়ে মেহের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। পরক্ষণেই ভাবে ও থাকবে না রেদের সাথে। ভেবেই চলে যেতে নেয় মেহের। বাধা দেয় রেদ। তৎক্ষনাৎ আসফিকে আসতে দেখে। রেদ আর অপেক্ষা করে না। মেহেরের হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে লক করে দেয়।
রেদের এমন কান্ডে বিস্মিত মেহের জিজ্ঞেস করে, 'কী হয়েছে তোমার? কেন এমন করছো? কী করতে চাইছ তুমি?'
'ভালোবাসি তাই করছি। তোমাকে ভালোবাসতে চাই বলে এমন করছি।'
'অনেক দেরি করে ফেলেছ রেদ। কাল আমার বিয়ে আসফির সাথে। এখন আর আমার হাতে কিছু নেই।'
বলেই মেহের চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু রেদ ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। নিজের সম্পূর্ণ ভর মেহের ওপর ছাড়ে। ওর হাত দু'টো শক্ত করে বিছানার সাথে ধরে মেহেরের ঠোঁটের দিকে আগায়।
'প্লিজ, রেদ না। আমি অন্য কারো বউ হতে যাচ্ছি। তোমার কোনো রাইট নেই এখন আমার উপর। প্লিজ, ছাড়ো আমাকে। যেতে দেও। আসফি আমাকে খুঁজছে।'
অঝোরে কেঁদে দেয়। কিন্তু তা দেখার জ্ঞান রেদের হলো না। ওর মুখে আসফির কাছে যাওয়ার কথা শুনে নিজের বোধশক্তি হারিয়েছে। রাগে জ্বলছে কাঁপছে। তৎক্ষনাৎ মেহেরের ঠোঁট আঁকড়ে ধরে। মেহের নিজের সমস্ত শক্তি দিয়েও নড়তে পারে না। আজ রেদ নিজের সবটা দিয়ে ওকে কাছে পেতে চাইছে। তাই মেহের নড়াচড়া বন্ধ করে শান্ত হয়ে পড়ে।
মেহেরের রেসপন্স না পেয়ে রেদ ওর দিকে তাকায়। মেহের নীরবে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। কিন্তু এতটুকু শব্দ হচ্ছে না। রেদের চোখে দৃষ্টি পড়তে মেহের হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে, 'তুমি এমনটা করতে পারো না রেদ। কাল আমার বিয়ে। অন্য একজনের সাথে। যেতে দেও আমাকে।'
'কেন বলছ এমন মেহের? তুমি ভালো করেই জানো—আমার পক্ষে তোমার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করা পসিবল না।'
'আমি কিছু শুনতে চাই না। যেতে দেও আমাকে।'
'শুনতে হবে তোমাকে মেহের। শুধু আজকের জন্য হলেও তোমাকে শুনতে হবে। আমার জন্য না হলেও আমার ভালোবাসার জন্য আজ তোমাকে শুনতে হবে।'
'নাঃ।' কান্না গলায় বলল।'
মেহেরের মুখে 'নাঃ' শব্দটা সহ্য হলো না রেদের। কাঠ গলায় বলল, 'আমি কখনো তোমাকে জোর করতে চাই না। তুমি আমাকে বারবার বাধ্য করো এমনটা করতে। কেন বুঝতে পারছ না—যা করেছি সব তোমার জন্য।'
'মিথ্যে বলছ তুমি। আমি বিশ্বাস করিনা। বার বার তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছ। ধোকা দিয়েছ। আর পারব না আমি।'
'প্লিজ মেহের, এমন কথা বোলো না। তোমার থেকে দূরে গিয়ে আমি বাঁচতে পারব না। একবার আমাকে ক্ষমা করে আপন করে নেও। কথা দিচ্ছি— আর কোনোদিন তোমাকে কষ্ট পেতে দেব না।'
'কখনো না। আমার সাথে আসফির বিয়ে হবে কাল। তারপর থেকে আমি শুধু ওকেই ভালোবাসব। আমার উপর শুধু আসফির অধিকার থাকবে।'
'আরেকবার আসফি আসফি করলে এখানেই শেষ করে দিয়ে যাব। আর এমনিতেই কাল দিনটা এখনো অনেক দূরে। আজ কী হয় তাই দেখো। তাতে তোমার বলার কিছু না থাকলেও জানার অনেক কিছু থাকবে। আর অধিকারের কথা বলছ—তোমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার রয়েছে আমার। ভালোবেসে তোমাকে চেয়েছিলাম তোমায় তা তুমি দিলে না। এখন অধিকার দিয়েই কেড়ে নেব আমার ভালোবাসা।
'মানে...'
বাঁকা হাসল রেদ। বলল, 'মানে কিছুই না মেহের। সময় হলেই দেখতে পাবে। কারণ তুমি আমার...'
ওর কথাস শেষ হওয়ার আগেই আসফি রুমে ঢুকে পড়ে। আসফি মেহেরকে এদিকে আসতে দেখেছিল বলে মনে করে। এদিকে আসে নিশ্চিত হতে সময় লেগে যায়। তার উপর রুমের চাবি আনতে আরও দেরি হয়ে যায়। আর রুমে এসে মেহেরকে রেদের সাথে এই অবস্থায় দেখে নির্বিকার ও। কর্কশ কণ্ঠে বলল, 'কী হচ্ছে এখানে?'
আসফিকে দেখা মাত্রই মেহের খুব জোরে রেদকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। আসফিকে দেখে রেদের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। পায়ের উপর পা তুলে মাথায় নিচে দু'হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মেহের বিছানা থেকে উঠে আসফির কাছে যায়।'
আসফি জিজ্ঞেস করে, 'এসব কী হচ্ছিল মেহের?'
মেহের কী বলবে বুঝতে পারছে না। আসফি যে পজিশনে রেদ আর ওকে দেখেছে তাতে এইরকম বিহেভ করাটাই নরমাল।
তা দেখে রেদ বাঁকা হেসে বলল, 'সালার আমার টাইমিং সেন্স একদম পার্রফেক্ট। একদম ক্লাইমেক্সে এন্ট্রি নিল।'
'কিরে কথা বলছিস না কেন?' জানতে চাইল আসফি।
'আসফি তুই যা ভাবছিস তা একদম না। আমি এখানে...'
রেদ ওকে বলতে না দিয়েই বলল, 'মেহের যাই বলো না কেন? এটা বোলো না আমি তোমাকে জোর করে নিয়ে এসেছি।' শোয়া থেকে ওঠে দাঁড়ায়।
আসফি এবার রাগী চোখে রেদের দিকে তাকায়। তাতে রেদ আমতা আমতা করে বলে, 'নাহ, মেহের এখন আমার দোষ দিতেই পারে। কিন্তু তোমার কী মনে হয় আস...ফি তোর বোন...(জিহবায় কামড় দেয়) না মানে তোর হবু বউকে আমি জোর করে নিয়ে আসব আর সে শান্ত ভাবে বসে আমার সাথে বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করবে। সেটা তো হতে পারে না তাইনা। কিন্তু তুই তো এটাই দেখেছিস।'
'আমি তোর সাথে কোনো কথা বলতে চাই না রেদ।কিরে মেহের কথা বলছিস না কেন?'
মেহের ভাবছে কি বলবে ও? রেদের এমন কথা বলার পরেও যে আসফি মেহেরের কোনো কথাই বিশ্বাস করতে পারবে না। সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে মেহের। তবুও বলল, 'তুই যা ভাবছিস তা একদম না। এখানে আমি...'
'কী আমি? সেটা বলবি তো। কী আমি আমি হুমম? তুই এখানে রেদের সাথে কী করছিস। তাও আবার এভাবে।
'তুই শান্ত হো...'
'এসবের পরেও আমাকে শান্ত হতে বলিস কীভাবে তুই?'
রেদ পাশে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন কিছুই জানে না। নিরীহ কণ্ঠে বলে, 'দেখ আসফি শান্ত হো। মেহেরের কথাটা তো তোর শোনা উচিত।
'একদম চুপ। আমি মেহেরের সাথে কথা বলছি।'
তা শুনে রেদ মনে মনে বলল, 'ধুর সালা কী কচু বলবি জানা আছে। হুড্ডাই ডং।'
মেহের বলল, 'আমি নিজে থাকে এখানে আসি...'
'তাহলে কেন এসেছিস?'
'আমাকে ভালোবাসে বলে। আর এমনিতেও সবকিছুই তুই জানিস। কী লুকোবো। যা হয়েছে তোর সামনে হয়েছে। আর তুই নিজেই তো আজ...' বলতে চাইল রেদ।
কিন্তু আসফি প্রতিবাদ করে বলে, 'আমি এসব বিশ্বাস করিনা। মেহের তুই বল আসলে এখানে কি হয়েছে? রেদ মিথ্যে বলছে তাই না। কী হলো বলছিস না কেন?'
মেহের করবে বুঝতে পারছে না। রেদ আর আসফি ওকে কথা বলার সুযোগ টাই দিচ্ছে না। বলতে গেলেই কিছু না কিছু বলছে।
আসফি আবার বলল, 'চুপ করে আছিস কেন? তারমানে রেদ যা বলছে সব সত্যি..'
মেহের মাথা নাড়িয়ে না বলে কেঁদে দেয়। কিন্তু আসফি আর নিজেকে সামলাতে পারে না। মেহেরকে মারার জন্য হাত তুলতে নেয়। কিন্তু তার আগেই রেদ আসফির হাত ধরে ফেলে। বলে, 'যা বলার বল কিন্তু হাতটা যেন গায়ে না ওঠে।'
'ও আমার হবু বউ। ওকে শাসন করার অধিকার আমার আছে? ওকে মারার আর ছোঁয়ার অধিকারও আমার আছে।'
কথাটা শুনে রেদ মেহেরের দিকে তাকায়। মেহের করুণ চাহনিতে রেদের দিকে তাকিয়ে চোখটা আবার নামিয়ে নেয়। মেহেরের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আসফির হাতটা ছেড়ে দেয়। রেদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোলে আনে। আসফি আবার যখন মেহেরের কাছে যেতে নেয় তখন পিছন থেকে বলে ওঠে, 'এইটুকুতেই এই অবস্থা আসফি। তাহলে পিকনিকে যেদিন আমরা পাহাড় থেকে পরে গিয়েছিলাম সেই রাতের কথা জিজ্ঞেস কর মেহেরকে। তখন কী আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি?
'রেদদ...' চেঁচিয়ে বলল আসফি।
'আমি না হয় মিথ্যে বলছি। কিন্তু তুই মেহেরকে জিজ্ঞেস কর সত্যিটা নাহয় ওই বলবে। কী মেহের সত্যি করে বলত...'মেহেরের হাতটা মেহেরের বুকের ধরে জিজ্ঞেস করে, 'সেদিন কী কিছুই হয়নি?'
'মানে, কী বলতে চাইছ তুমি?'
'মানেটা তুমি জানো মেহের।
মেহেরের পা থেকে মাটি সরে গেছে। কারণ রেদ সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে তা ও বলতে পারবে না। সেদিন রাতে নিজের খুব কাছে রেদকে দেখেছিল ঠিকি। কিন্তু তারপরে কী হয়েছিল তার আগেই মেহের জ্ঞান হারায়। সকালে উঠে ও রেদকেই খুঁজার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। তাই নিজেকে দেখা হয়নি। পরে আবার জ্ঞান হারায়। যখন জ্ঞান ফেরে—নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে। এতটুকু ছাড়া সবটাই মেহেরের অজানা।
'মেহের কী বলছে রেদ?' জানতে চাইল আসফি।
'রেদ তুমি কী?'
রেদ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে, 'সেদিন আমি তোমার যতটা কাছে ছিলাম তারপরও তোমার মনে হয় সেদিন কিছুই হয়নি?
মেহের আর কিছু বলতে পারল না হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ল। মেহেরের পুরো দুনিয়া এক মুহূর্তে উল্টে গেল। টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।
আসফি আবার জানতে চাইল, 'কী রে কথা বলছিস না কেন? রেদ মিথ্যে বলছে তাই না?'
মেহের কোনো কথা বলতে পারল না। করুণ চোখে আসফির দিকে তাকিয়ে আটকে আসা কণ্ঠে বলল, 'আমি... সেদিন... রেদকে আমার কাছে দেখেছিলাম।