মুক্তিযুদ্ধ, চীন এবং ভাসানী

7 19
Avatar for Alidhasan
3 years ago

ভদ্রলোককে চিনতাম না। কোনোকালে তার নামও শুনিনি এবং সামনাসামনি দেখিওনি। তার সাথে আমার মাত্র একবার ফোনে কথা হয়েছে- তাও প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে। তার কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম যে, তিনি যথেষ্ট বয়স্ক এবং লেখাপড়া জানা আধুনিক মানুষ। পরিচয়ের প্রথমেই তিনি জানালেন, আমার ব্যাপারে তার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। সুদূর কানাডাতে বসে তিনি নিয়মিত আমার লেখা পড়েন, টকশো দেখেন এবং সাম্প্রতিককালে আমি যে ইউটিউব চ্যানেল করেছি সেখানে আপলোড করা ভিডিওগুলোও তিনি নিয়মিত দেখেন। ভদ্রলোক যেভাবে আমার ব্যাপারে তার আগ্রহের কথা বললেন তাতে আমার খুশি হওয়ার কথা ছিল। অন্য দিকে, আমার মতো যারা ‘হাভাতে লেখক কাম দুর্ভিক্ষকবলিত বুদ্ধিজীবী’ তারা যদি কদাচিত কারো প্রশংসা পান তবে হঠাৎ করে খুশির জোয়ারে ভাসতে শুরু করেন এবং গর্বের বাতাসে ব্যাঙের মতো নিজের পেট ফুলিয়ে ‘মহামানব’ সাজার ভান করেন।

ভদ্রলোকের প্রাথমিক কথা শোনার পর আমিও পেট ফোলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু তার একটি প্রশ্নে প্রথমে একটু ধাক্কা খেলাম এবং নিজের নির্বুদ্ধিতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা বুঝতে পেরে একেবারে ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলাম। আমার কাছে মনে হলো- ভদ্রলোকের সাথে কথা না বলে নীরবে তার কথাগুলো শুনলে উপকার হবে। তার যে প্রশ্ন শুনে ধাক্কা খেলাম সেটা হলো আওয়ামী লীগের ‘আওয়াম’ শব্দের অর্থ কী! আমি যখন বললাম- এটার অর্থ ‘জনগণ’. তখন তিনি কিছুটা ভর্ৎসনার স্বরে বললেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যদি মওলানা ভাসানী, আওয়াম শব্দের অর্থ ও ইতিহাস এবং ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাসমূহের বিচার বিশ্লেষণ করতে না জানেন তবে তারা কারো দালাল অথবা তাঁবেদার হয়ে ক্ষণেকের তরে কিছু মধু মেওয়া হাসিল করতে পারবেন বটে- কিন্তু রাজনীতিবিদ হতে পারবেন না
ভদ্রলোকের কথা শুনে আমি রীতিমতো খামোশ হয়ে গেলাম। তার আলোচনায় জানতে পারলাম যে, তিনি বাংলাদেশে থাকাকালে অধ্যাপনা করতেন এবং পুরো ষাটের দশক তো বটেই, মাওলানা ভাসানীর মৃত্যু অবধি তার সাথে ছায়ার মতো ছিলেন। গত ৩০ বছর ধরে তিনি কানাডাতে রয়েছেন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ওপর একাধিক গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের তুলনামূলক রাজনীতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির ভূতভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি যেসব কথাবার্তা বললেন তা শুনে আমি রীতিমতো তাজ্জব বনে গেলাম। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে চীনাদের যে ইদানীংকালের আগ্রহ তা চীনা বিপ্লবের পরপরই শুরু হয়েছিল। মাও সেতুং, চৌ এন লাই প্রমুখের মতো কিংবদন্তি চৈনিক নেতারা প্রথম থেকেই বাংলাদেশের ব্যাপারে অতিমাত্রায় আগ্রহী ছিলেন। তারা যেভাবে মাওলানা ভাসানীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন অমনটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশের রাজপথের রাজনৈতিক নেতার সাথে করেননি।

চীনের সাথে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল এ রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকেই। কিন্তু তার পরও চীন চাইত, পূর্ব বাংলা স্বাধীন হোক। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে চীন পাকিস্তানের জন্য দ্বৈত পররাষ্ট্র নীতি চালু করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য চীন একদিকে যেমন সর্বময় ঝুঁকি নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, ঠিক তেমনি পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববাংলা স্বাধীনতা লাভ করুক তার জন্য একটি মাস্টারপ্লান তৈরির পর পূর্ব বাংলায় মাওবাদী আন্দোলনে মদদ দিতে আরম্ভ করে। চীন আশঙ্কা করেছিল যে, পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত পূর্ব বাংলা ধরে রাখতে পারবে না এবং সে ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলায় যদি স্বাধীনতার আন্দোলন সুতীব্র না হয়, তাহলে পূর্ব বাংলাকে ভারত অনায়াসে দখল করে নেবে। এজন্য তারা ১৯৫৭ সালেই মওলানা ভাসানীকে দিয়ে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার ব্যাপারে ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমরা প্রায় সবাই কমবেশি জানি, ভাসানীর এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তদানীন্তন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং সিআইএ’র মদদে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ‘পূর্ববঙ্গের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে’ ভারত-আমেরিকার দোসররূপে সোহরাওয়ার্দীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া আওয়ামী লীগের বিরাট অংশ যেরূপ মানতে পারেনি তদ্রূপ মওলানা ভাসানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও তা মেনে নেননি।

7
$ 0.00
Avatar for Alidhasan
3 years ago

Comments

Good

$ 0.00
3 years ago

Wow

$ 0.00
3 years ago

Nice

$ 0.00
3 years ago

Good luck bro

$ 0.00
3 years ago