“Dear god, make me a bird so I can fly far,
far, far away from here…”
মনে হয় গল্প শুনতে সবারই ভাললাগে। হোক সেটা সুখের কিংবা কষ্টের গল্প। এক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত জীবনের গল্পটা বোধ হয় সবারই পছন্দের। আর যদি সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প হয়... যে গল্প বিমোহিত করে দেয়...
(স্পয়লার এলার্ট)
আজকের আলাপ এমনি এক গল্প নিয়ে। এক সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প নিয়ে রবার্ট জেমেকিস পরিচালিত 'ফরেস্ট গাম্প' (Forrest Gump) ১৯৯৪ সালে মুক্তি প্রাপ্ত একটি হলিউড সিনেমা।
সিনেমার শুরুতেই দেখা যায়, একটা পালক বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, ঠিক যেভাবে জীবন ভেসে বেড়ায় বাতাসের মতন। কিন্তু ঠিক কোথায় যাবে পালক টা, কার ছায়ার নিচে পড়বে অথবা পড়বে না, তা ঠিক করছে ভাগ্য। ঠিক যেভাবে ফরেস্ট গাম্পের মা বলতেন "সবারই ভাগ্যে আছে মৃত্য, আমি জানতাম না তোমার মা হওয়া আমার ভাগ্যে ছিল। আর আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি। আমি চাই তুমি তোমার ভাগ্য নিজেই বানাও।"
কিন্তু জেনি বলতো, জীবন টা বাতাসে সাতার কাটার মতন। তাই ফরেস্ট ভাবতো হয়তো বা দুটোই এক সাথে ঘটছে।
তাই হয়তো পরিচালক রবার্ট জেমেকিস বাতাসে পালক ওড়ার দৃশ্য দুটোই বোঝাতে চেয়েছেন...
সিনেমার মূল কাহিনী শুরু হয় ১৯৮১ সালের কোন এক সময়ে, কোন এক বাস ষ্টেশনে। বোকাসোকা ফরেস্ট গাম্প কিভাবে ঘটনাক্রমে তার জীবনকে আমেরিকার ইতিহাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে, তারই বর্ণনা ছিল গাম্পের কন্ঠে। কোন রকম চেষ্টা ছাড়াই সে ফুটবল তারকা হয়ে যায়, জন এফ কেনেডির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার সুযোগ পায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমিরিকার হয়ে যোগ দেয়, লাভজনক চিংড়ি ব্যবসায় জড়িয়ে পরে, বছরের পর বছর ধরে গ্রামান্তর দৌঁড়ে অংশ নেয়। শুধু তাই নয়, ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিও সে উন্মোচন করে। জন লেননের সাথেও সময় কাটিয়েছিল গাম্প।
নিজের সরল ব্যক্তিত্ব ও সাদামাটা জীবনে ফরেস্ট গাম সব সময়ই ছোট্ট বেলার বান্ধবী জেনীকে কাছে চেয়েছিলো। কিন্তু নিরীহ, সরল ফরেস্ট গাম আমেরিকার সব বড় বড় ঘটনার সাক্ষী হয়ে ওঠে। তবুও সে শেষ পর্যন্ত অসাধারণ হয়ে ও সাধারণ থেকে যায়...
ফরেস্ট গাম্প এবং সমস্যা যেন প্রতিশব্দ। পায়ের সমস্যা, কম আইকিউ এবং বোকাসোকা প্রকৃতির ফরেস্ট গাম্পকে স্কুলে ভর্তি করতে চায়নি প্রিন্সিপাল। পায়ে সমস্যা থাকায় ফরেস্ট একটু খুঁড়িয়ে হাঁটত। আশপাশের সবাই তাকে উপহাস করত। তবে স্রোতের বিপরীতে কেউ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। স্কুলের প্রথম দিন পরিচিত হয় জেনির সঙ্গে। পরবর্তীতে ফরেস্টকে শুধু হাঁটা নয় রীতিমতো দৌড়াতে উৎসাহ দেয় সে। তার মুখ থেকে সিনেমার সব থেকে সেরা ডায়ালগটি শোনা যায়। গাম্পের হৃদয়ে জেনির জন্য একটা জায়গা সৃষ্টি হয় । কিন্তু জেনি তাকে ভাবত নিতান্তই একটা শিশু। হাই স্কুল থেকেই জেনি গাম্পকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। পরে নতুন একজনকে সঙ্গী করে তার পথ চলা শুরু হয়।
গাম্পকে এক সময় পাঠানো হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধে। বোলেট আর বারুদের গন্ধ নাকে নিয়েও সে চিঠি লিখত তার স্বপ্নের নায়িকাকে, যদিও কোন উত্তর সে পেত না। ভিয়েতনাম যুদ্ধে গিয়ে সে সহযোদ্ধা হিসেবে পায় বোবাকে, পরবর্তীতে যে নিজের ভাইয়ের মতো হয়ে ওঠে। বোবার আজন্ম স্বপ্ন ছিল চিংড়ির ব্যবসা করা। যুদ্ধে বোবা মারা যাওয়ার পর তার স্বপ্ন পূরণে যুদ্ধাহত লেফটেন্যান্ট ড্যানকে নিয়ে সে চিংড়ির জাহাজ কেনে। একপর্যায়ে কিছুক্ষণের জন্য জেনিকে পেয়েও হারিয়ে ফেলে সে। এক সময় ফরেস্টের মায়ের মৃত্যু হয়। এরই মধ্যে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়ানো, টেবিল টেনিস আয়ত্ত করা, এ্যাপলের শেয়ার কেনা এবং সেনাবাহিনীতে অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রেসিডেন্টের থেকে পুরস্কার পাওয়া সর্বোপরি আমেরিকার এক কেলেঙ্কারি উন্মোচন করা! ধীরে ধীরে ফরেস্ট ঘটনাচক্রে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে আমেরিকার ১৯ শতকের শেষ দিকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সঙ্গে। কম আইকিউ-এর ছেলেটা পুরো দেশ বাজিমাত করে। কিন্তু এতকিছুর পরেও যেন সে সাধারণ একজন মানুষ। সাদাসিধে তার জীবন। এত অসাধারণের পরও সে শেষ পর্যন্ত সে সাধারণই থেকে যায়।
ফরেস্ট গাম্প যেন একজন সাধারণ নাগরিকের চোখে দেখা আমেরিকার ১৯ শতকের শেষ দিকের ইতিহাসের সারমর্ম! পরিচালক রবার্ট জেমেকিস শুধু আমেরিকানদের জন্য নয়, বিশ্ববাসীর জন্যেই দারুণ অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। গাম্প তার জীবনের অনেকটা সময় ধরে জেনিকে পাবার চেষ্টা করে। এক সময় হয়ত পায়ও। ততদিনে অনেক দেরি হয়েছে। বার বার কাছে এসেও ফস্কে যাওয়া, জীবন দিয়ে কিছু চেয়েও না পাবার পরেও যেন কোন আফসোস থাকবে না। কারণ সাদামাটার প্রতিচ্ছবি ফরেস্ট গাম্পের বেশি কিছু পাওয়ার আকাক্সক্ষা নেই।
একজন অটিস্টিক ব্যাক্তিও যে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন মূলত পরিচালক এই সিনেমায় এটাই বোঝাতে চেয়েছেন। বেশিরভাগ দর্শকের সিনেমাটি দেখার পর অনভূতি প্রায় একই! ‘জীবনের একটি অতি সাধারণ কিন্তু সেরা গল্পটি শুনলাম!’
ফরেস্ট গাম্প এমন এক সিনেমা, যা যে কোনো সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার, বড় হওয়ার এবং সরল-সুন্দর হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। জীবনের রং যত খারাপ হোক, সে রং যেকোনো সময় রংধনু হয়ে জীবনকে পাল্টে দিতে পারে...
ফরেস্ট গাম্পের একটা উক্তি দিয়ে শেষ করছি...
“My mama always said, life was like a box of chocolates. You never know what you’re gonna get.”