.
— আমার দ্বারা কি জীবনেও সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা হবে না? প্রতিদিন ভার্সিটিতে লেট করে পৌঁছানোটা যেন আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ধুর বাবা কিছুই ভালো লাগে না। আমার জামা কই? কি পরে যাব আজকে? ধ্যাত একটা পরলেই হইছে। বিয়ে বাড়িতে যাব নাকি যে এতো জামা জামা করতে হবে? ওহ্ নো ১০ টা বাজে। আআআআআ............ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
।
বলেই এক দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। মিসেস্ রায়জাদা মেয়ের চিৎকার শুনে ঘরে ঢুকলেন। কিন্তু উনি দেখলেন মেয়ে ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে। শুধু যে শাওয়ার নিচ্ছে তা নয়। তার সাথে বকবক তো ফ্রি আছেই।
।
মিসেস্ রায়জাদা: মিহু!!!
।
ওয়াশরুম থেকে মিহু উত্তর নিলো।
।
মিহু: কিতা মাম্মাম।
।
মাম্মাম: তাড়াতাড়ি এসে ব্রেকফাস্ট করে নাও। তোমার ভার্সিটির লেইট হয়ে যাচ্ছে।
।
মিহু: খাব নাআআআ।
।
মাম্মাম: খাব না মানে কি? চুপচাপ এসে খেয়ে যাও বলছি। নাহলে তোমার বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ।
।
মিহু: আরে মাম্মাম এমন করো কেন?
।
মাম্মাম: তুমি কি খেতে আসবে?
।
মিহু আর কোনো উপায় না পেয়ে 'হ্যা' বলে দিল। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো মিহু। এক দৌড়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে গেল ও।
।
মিহু: গুড মর্নিং বাপি।
।
বাপি: মর্নিং মামনি।
।
মিহু: মাম্মাম খাবার দাও তাড়াতাড়ি।
।
মিসেস্ রায়জাদা খাবার বেড়ে দিলেন মেয়েকে। বাপি তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিলেন মিহুকে। মিহু কোনো মতে খেয়েই গাড়ির চাবি নিয়ে দিল এক ভোঁ দৌড়।
।
মাম্মাম: মিহু দাঁড়াও।
।
মিহু: মাম্মাম দেরি হয়ে যাচ্ছে এখন কিছু শোনার সময় নেই।
।
মাম্মাম: না শুনে যাও আগে।
।
মিহু: বলো বলো তাড়াতাড়ি বলো।
।
মাম্মাম: তুমি ড্রাইভ করে যাবে না। তোমাকে ড্রাইভার দিয়ে আসবে।
।
মিহু: বাপিইইইইই
।
মাম্মাম: কোনো বাপি টাপি চলবে না। তুমি ড্রাইভার নিয়ে যাচ্ছো সাথে। আর এটাই ফাইনাল।
।
বাপি: মামনি তোমার মাম্মাম ঠিকই বলেছে।
।
মাম্মাম: তুমি তাড়াহুড়োর সময় অনেক ফাস্ট ড্রাইভ করো। তাই এখন তোমাকে ড্রাইভার দিয়ে আসতে যাবে।
।
মিহু আর কিছু না বলে ঠোঁট উল্টিয়ে বেরিয়ে গেল। মিসেস্ রায়জাদা বড় একটা শ্বাস ফেললেন মিহুর এমন চেহারা দেখে।
মিহু গাড়ির সামনে আসতেই ড্রাইভার ডোর খুলে দিল। মিহু ড্রাইভারের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েই গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়িতে বসে মিহু নীলকে ফোন দিল। নীল ফোন রিসিভ করতেই মিহু বলে উঠলো।
।
মিহু: ওই ফুপাতো ভাই কই তুই?
।
নীল: ভার্সিটিতে আছি। কিন্তু তোর আবহাওয়া গরম মনে হচ্ছে কেন?
।
মিহু: মাম্মাম ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়েছে।
।
নীল: এতে রাগার কি আছে?
।
মিহু: ওই মামদা ভূত তুই জানিস না আমি ড্রাইভ করতে কতটা লাইক করি?
।
নীল: তুই অনেক ফাস্ট ড্রাইভ করিস তাই তোর সেফটির জন্যই আন্টি ড্রাইভার দিয়েছে।
।
মিহু: একদম মাম্মামের সাইড নিয়ে কথা বলবি না বলে দিলাম। ঠোংগা জানি কোথাকার।
।
নীল: হুহ্ তাড়াতাড়ি আয়। আমি আর অনু তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
।
মিহু: হুমম এই তো পৌঁছে গেছি।
।
নীল: ওকে বাই।
।
মিহু: মিয়াসকো উতুবা।
।
নীল: মানযে্?
।
মিহু: তুই মারাঠি বলিস কেন?
।
নীল: তো তুই পর্তুগিজ বলিস কেন?
।
মিহু: কারন আমি পর্তুগিজ পারি তাই।
।
নীল: আর আমিও মারাঠি পারি তাই।
।
মিহু: হাহ্ মুরগী জানি কোথাকার ফোন রাখ।
।
মিহু নীলকে ফোন কাটতে বলে নিজেই ফোন কেটে দিল।
।
নীল: এই মেয়ে এ জীবনে আর ঠিক হবে না।
।
অনু: তোদের ঝগড়া গুলো আমার কাছে ভালোই লাগে। মিহুর সাথে কখনো তুই ঝগড়ায় পারিস না।
।
নীল: তোর সাথেও তো পারি না।
।
অনু: বুঝতে হবে।
।
নীল: তোরা যে ডায়নি, পেত্নী, ভূতনী, শাঁকচুন্নি, পিঁচাশিনি তা আমার খুব ভালো মতো জানা।
।
অনু: আমরাও জানি এগুলো। তোকে রিপিট করতে হবে না।
।
নীল: বজ্জাত মাইয়া।
।
অনু: তুই কি কান কাটা পেত্নু।
।
নীল: মিহু এতক্ষণ শুনিয়েছে এখন আবার তুই শুরু করিস না।
।
অনু: হুহ্।
।
একটু পরে মিহুর গাড়ি ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকলো। ড্রাইভার মিহুকে চাবি দিয়ে চলে গেল। মিহু ফোন টিপতে টিপতে সামনে এগোচ্ছিল। হঠাৎ গাড়ির হর্ন শুনে মিহু চমকে উঠলো। আর ওর হাত থেকে ফোনটা নিচে পরে গেল। ও প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়েছে। রেগে পেছন ফিরে তাকাতেই ওর রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। কারন ভার্সিটির ক্রাশ মিস্টার ডেভিল থুক্কু মিস্টার মেঘ রায়হানের গাড়ির সামনে পরেছে ও। ও তো এই ব্যক্তিকে দেখতেই পারে না। এক কথায় বলতে গেলে মেঘের থেকে ওর এলার্জি আছে বললেই চলে। ও নিচে থেকে ওর ফোনটা তুলে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল।
মেঘ গাড়ি ওভাবেই থামিয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। মেঘ ভাবছে, "এই মেয়ের নেশা আমায় দিন দিন মাতাল করে দিচ্ছে। মদ না খেয়েও মাতাল হওয়া যায় শুধু মাত্র এই মেয়েকে দেখে"। মেঘ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ওর দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে। ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পার্কিং-এ চলে গেল।
মিহু যেয়ে ওর ব্যাগ দিয়ে নীলের মাথায় ঠাস্ করে একটা বারি দিল। অনু ফিক করে হেসে দিল তা দেখে।
।
মিহু: আবে গাম্বাট এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
।
নীল: কি বললি তুই চুরায়েল? আমি গাম্বাট?
।
মিহু: ইয়ো ইয়ো ইয়ো।
।
নীল: এটা আবার কি?
।
মিহু: তোর নাকের ঘি।
।
নীল: ছিইইইইইই।
।
মিহু: হিহিহিহি।
।
অনু: মিহু বাবুনি চল তো লাইব্রেরীতে যাই।
।
মিহু: কিহ্? আমার সাথে লাইব্রেরীর জন্ম-জন্মান্তরের শত্রুতা আছে জানিস না?
।
অনু: কিন্তু নিউ গল্পের বই এসেছে শুনলাম।
।
মিহু: আগে বলবি না এই কথা তুই? লাইব্রেরী তো আমার জানে-জিগার লাগে। চল চল তাড়াতাড়ি চল।
।
নীল: তুই একটা নির্জীব জিনিসকেও পাম মারা থেকে বিরত থাকলি না?
।
মিহু: হিহিহিহি ডোন্ট ফরগেট আ'ম মিহু।
।
নীল: মিহু দা গ্রেট নটাংকিবাজ।
।
মিহু: নীলের বাচ্চা কিল, বিল, ঝিল তোর চৌদ্দ গুষ্টির আমি তুষ্টি করব বলে দিলাম।
।
অনু: তুই নীলের তুষ্টি তো করিস'ই এখন আবার ওর চৌদ্দ গুষ্টিরও তুষ্টি করবি?
।
মিহু: বেশি পকপক করলে তাই'ই করব।
।
অনু: নীল জানু শুনেছো তো?
।
মিহু: ওই অনু চল লাইব্রেরীতে যাব।
।
অনু: লেট'স গো বেব।
।
নীল ওখানেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
।
নীল: এতদিন কি আমি কম টর্চার সহ্য করছি যে এখন আমার চৌদ্দ গুষ্টিকে টর্চার করবে বলে গেল? এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম? আমার কপালেই কেন সব পাগল জুটে? বেস্টফ্রেন্ডও জুটছে একটা হাফ মেন্টাল। আর বোন জুটছে একটা ফুল মেন্টাল। কবে জানি দেখি গার্লফ্রেন্ডও জুটবে একটা তাঁর ছিঁড়া। আল্লাহ্ গো আল্লাহ্ রক্ষা করো।
।
মিহু আর অনু লাইব্রেরীতে যেয়ে বই নিয়ে ক্যান্টিনে গেল। নীল ক্যান্টিনে বসে আছে হাতে পেস্ট্রি নিয়ে। মিহু আর অনু ওর কাছে গেল। নীল যেই পেস্ট্রিতে কামড় বসাতে যাবে তখনি মিহু নীলের মাথায় যেয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিল। পেস্ট্রিটা দিয়ে নীলের মুখ জড়িয়ে গেল। অনু আর মিহু নীলের দিকে তাকিয়ে তারপর একে অপরের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই ওরা দু'জন জোরে জোরে হেসে উঠলো। নীল রাগী চোখে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে। মিহু দিল এক চোখ টিপ। নীল রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
।
অনু: মিহু আই হ্যাভ এ প্ল্যান।
।
মিহু: কি?
।
অনু মিহুকে প্ল্যান বলার সাথে সাথেই মিহু রাজি হয়ে গেল। ও লাফাতে লাফাতে ক্যান্টিন থেকে একটা কলা নিলো। মিহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কলা খেয়ে খোসাটা অনুর কাছে দিল। অনু যেয়ে কলার খোসাটা ওয়াশরুমের সামনে নামিয়ে রাখলো। তখনি নীল ওয়াশরুম থেকে বের হলো রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে। ও খেয়াল'ই করে নি যে ওর পায়ের নিচে কলার খোসা। খোসার উপর পা দেওয়ার সাথে সাথেই ও ধপাস্ করে নিচে পরে গেল। মিহু আর অনুর হাসি দেখে কে। নীল করুন চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। অনু হাসতে হাসতে নীলের সামনে যেয়ে হাত বাড়িয়ে দিল ওঠার জন্য। নীল বেচারাও বা কি করবে! অনুর হাত ধরে উঠতে গেলে অনু নীলকে একটু উঠিয়ে আবার হাত ছেড়ে দেয়। নীল আবার ধপাস্ করে নিচে পরে গেল। মিহু হাসতে হাসতে চেয়ারে বসে পরলো। হাসতে হাসতে ওর পেট ব্যাথা করছে ভিষণ। অনুও নীলের সামনে বসে পরলো।
।
নীল: আল্লাহ্ গো..... আজকে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠছিলাম সকালে? তোগো উপরে টাটকা ঠাডা পরব বজ্জাত মাইয়া কোনহানকার। আমার মতো একটা ভোলা ভালা পোলারে এমনে কইরা টর্চার করতাসোস। এর বিচার আল্লাহ্ করব। দেখিস তোগো দুইটার কপালে জল্লাদ জুটব। মিহুর কপালে জুটব ডেভিল আর তোর কপালে জুটব খাটাশ।
।
অনু: শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।
।
নীল: ভালো মানুষের দোয়ায় তো মরব তাই না?
।
মিহু: কিতা কইলা তুমি?
।
অনু: দোস্ত কি কয় ওয় এডি? ওয় ভালো মানুষ? তাইলে আমরা কি?
।
মিহু: ওরে কেউ অনুরে একটা পিংক কালারের বিষ আইনা দে রে। ওয় খাইয়ে আমারে মাইরা ফালাক।
।
নীল চোখ দু'টো ছোট ছোট করে ফেলল। অনু আর মিহু সমানে হেসেই যাচ্ছে। নীল ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় ওরও হাসি পেয়ে যায়। না চাইতেও নীল ওদের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে দেয়। ক্যান্টিনের সবাই ওদের তিনজনের কাহিনি দেখে হেসে দেয়।
ওদের তিনজনকে কম বেশি প্রায় সবাই চিনে। কারন অনু, মিহু আর নীল বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সাথে সাথে ওদের আরও একটা পরিচয় আছে। ওরা তিনজন'ই কাজিন। মিহুর বাপির আপন বোনের ছেলে নীল। আর মিহুর বাপির আপন ভাইয়ের মেয়ে অনু। এছাড়াও এই ভার্সিটির ওউনারদের মধ্যে মিহুর বাবা, নীলের বাবা আর অনুর বাবাও আছে। বিধায় ওদের সবাই চিনে। আর ওদের ফাজলামোও আনলিমিটেড চলতেই থাকে।
এদিকে মেঘ পার্কিং-এ গাড়ির বোনাটের উপর শুয়ে আছে। আর সিগারেটের ধোঁয়া গুলো আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে ও। পাশের গাড়ির বোনাটের উপর হাতে সিগারেট নিয়ে বসে আছে মানিক। মেঘের আরেক পাশের গাড়ির বোনাটের উপর বসে নীলা আইসক্রিম খাচ্ছে। মানিক মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ সিগারেটের দিকে এক ধেনে তাকিয়ে আছে।
।
মানিক: হোয়াট'স আপ ইয়ার? এভাবে সন্নাসীর মতো মুখ করে রেখেছিস কেন?
।
মেঘ: নাথিং ইয়ার।
।
নীলা: আই থিংক মিহুকে নিয়ে ভাবছে।
।
মানিক: তুই মিহুকে নিয়ে এতো কি ভাবিস?
।
নীলা: ইউ লাভ হার মেঘ?
।
মেঘ: নোপ, নেভার, ইম্পসিবল। আর ইউ ম্যাড অর হোয়াট নীলা? ইউ থিংক আই লাভ হার? ইট'স জাস্ট ইম্পসিবল।
।
নীলা: কেন?
।
মেঘ: ওর সাথে আমার যায় না। আমি কোথায় আর ও কোথায়। ওর স্ট্যাটাসের সাথে আমার স্ট্যাটাস আকাশ পাতাল তফাৎ।
।
আসলে মেঘ জানে না যে এই ভার্সিটির ওউনার মিস্টার রায়জাদার মেয়ে মিহু। আর তাছাড়া মিহুর চালচলন দেখেও বোঝার উপায় নেই যে ওর বাবা এই কলেজের ওউনারদের মধ্যে একজন। কারন মিহুর মধ্যে কোনো অহংকার'ই নেই। মেঘ ভাবে মিহু মিডেল ক্লাস কোনো ফ্যামিলি থেকে বিলং করে। তাই মিহুকে সেভাবে পাত্তা দেয় না। কিন্তু মিহুকে দেখলেই ও কেমন যেন হয়ে যায়। ওর হার্ট মনে হয় ওর কাছে থাকে না তখন। মানিকের কথায় ঘোর কাটলো ওর।
।
মানিক: ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস না তো আবার?
।
মেঘ: সাট আপ ইয়ার। আই জাস্ট লাইক হার নাথিং এলস্।
।
নীলা: কুছ্ তো হে তুঝছে্ রাবতা, কুছ্ তো হে তুঝছে্ রাবতা্.......
।
মেঘ: সাট আপ নীলা ডোন্ট পুল মাই লেগ।
।
মানিক: ও আবার তোর পা ধরে কখন টানলো?
।
নীলা: মাথা-টাথা গেছে নাকি?
।
মেঘ: মানিক তুই এই ডান্সিং ডাইনীর দলে যোগ দিস না যেয়ে।
।
নীলা: কি বললি তুই ভিতুরাম? তোর হচ্ছে আজকে।
।
নীলা এক লাফ দিয়ে গাড়ির বোনাটের উপর থেকে নেমে মেঘের পা ধরে টান দিয়ে গাড়ির বোনাটের উপর থেকে নিচে ফেলে দিল।
।
মেঘ: আউচ্ নীলা!!!
।
নীলা: হুহ্।
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_2
.
নীলা এক লাফ দিয়ে গাড়ির বোনাটের উপর থেকে নেমে মেঘের পা ধরে টান দিয়ে গাড়ির বোনাটের উপর থেকে নিচে ফেলে দিল।
।
মেঘ: আউচ্ নীলা!!!
।
নীলা: হুহ্।
।
মেঘ: হোয়াট ইজ দিজ্? এরকম কেউ করে?
।
নীলা: নীলা করে হাহ্।
।
মানিক: ভাই তুই জানিস না এই মেয়ে কেমন? তাহলে শুধু শুধু কথা প্যাঁচাতে যাস কেন?
।
মেঘ: আসলেই আমার ভুল হয়েছে।
।
নীলা: ওটা মিহু না?
।
ওরা তিনজন'ই সামনে তাকিয়ে দেখে মিহু, নীল আর অনু এদিকেই আসছে। মিহু উল্টো দিক হয়ে লাফাতে লাফাতে আসছে আর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেন বলছে। মেঘ একটু সামনে এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই মিহু পায়ের নিচে থাকা পাথরের সাথে উস্টা খেল। উস্টা খেয়ে পরতে গেলেই মেঘের বুকের সাথে আটকে গেল। মিহু জোরে একটা শ্বাস ফেলল। আর থ্যাংক ইউ বলার জন্য মাথা উঠাতেই দেখলো ও মেঘের বুকের সাথে মিশে আছে। মুহূর্তেই মিহুর মুখটা বাংলার পাঁচ হয়ে গেল। সাথে ওর থ্যাংক ইউ দেওয়ার মুড'টাও চলে গেল।
।
মিহু: এলার্জিইইইই
।
মেঘ: চুপ [ধমক দিয়ে]
।
মিহু: আপনার কথায়?
।
মেঘ: অবশ্যই,,,আর কিসের এলার্জির কথা বলছো তুমি?
।
মিহু: আপনিই তো আমার এলার্জি। আপনাকে টাচ করা মানেই শরীরে এলার্জি হওয়া।
।
মেঘ: হোয়াট? তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো সেটা কি তুমি জানো?
।
মিহু: একদম জানি না। কারন আমি আপনাকে একটুও ইনসাল্ট করি নি।
।
মেঘ: এই মেয়ে এই তোমার সমস্যা কি বলো তো?
।
মিহু: আপনি আমার সমস্যা।
।
মেঘ: মানে?
।
মিহু: আপনাকে আমার সহ্য হয় না। সো সাইড চাপেন।
।
মেঘ: ডু ইউ নোউ হু আই এ্যাম?
।
মিহু: নোহ্ আই ডোন্ট নোউ হু আর ইউ। এন্ড আ'ম নট ইন্টারেস্টেড এবাউট টু নোউ হু আর ইউ। সো ইউ মে গো নাউ।
।
মেঘ: ইউ আর টকিং ঠু মাচ।
।
মিহু: আই নোউ দ্যাট মিস্টার ডেভিল হাহ্।
।
মেঘ: হাউ ডেয়ার ইউ?
।
মিহু: আমার ডেয়ার জন্মের পর থেকেই একটু বেশি।
।
নীলা: হেই গাইস স্টপ ফাইটিং।
।
অনু: লিসেন ডেভিল গ্রুপ! সব সময় দূরত্ব বজায় রেখে চলবে তোমরা আমাদের থেকে অকেহ্?
।
মানিক: লিসেন নটাঙ্কি গ্রুপ! আমরা তোমাদের ভয় পাই না যে দূরত্ব বজায় রেখে চলব অকেহ্?
।
অনু: মিস্টার লুচু তোমার ভালোর জন্যই বললাম কথা গুলো। কারন পরে আমাদের আবার ব্লেম দিতে পারবে না কিন্তু।
।
মানিক: মিস এংরি বার্ড আমাকে যখন লুচু উপাধিটা দিল! তখন একটু লুচুগিরি করে দেখাই তোমার সাথে কি বলো?
।
অনু: রিয়েলি? অকে লেট'স ট্রাই।
।
মানিক অনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে অনুর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। অনু দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। মানিক অনুর ঠোঁটের দিকে আগাতে গেলেই অনু স্বজোরে নিজের হিল দিয়ে মানিকের পায়ে পাড়া দেয়। মানিক চেঁচিয়ে উঠে ওখানেই পা ধরে বসে পরলো।
।
অনু: অওওওও বাবু কি বেশি ব্যাথা পেয়েছো?
।
মানিক: আই উইল সি ইউ লেটার ডেম ইট!!!
।
মানিক ব্যাথার চোটে কথা বলতে পারছে না। মেঘ আর নীলা হতভম্ব হয়ে গেল অনুর কাজ দেখে।
।
মিহু হাতের উপর হাত মুড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে। নীল প্যান্টের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। মানিক বসে আছে দেখে নীল মানিকের সামনে মাথা ঝুকিয়ে হালকা হেসে বলল।
।
নীল: ভালো মানুষের সাথে চ্যালেঞ্জ নিতে এসেছিলে। এরা দু'জন মেয়ে যে কি লেভেলের ডেঞ্জারাস তোমরা এখনো জানো না। আমি ওদের সাথে থাকি তো সারাদিন তাই আমি জানি ওরা কি বা কেমন। সারাদিন আমার উপর অত্যাচার করে এই দু'জন মিলে। তাই ভাই তোমাকে ভালোর জন্য বলছি এদের থেকে, আই মিন আমাদের থেকে দূরে থাকো। সেটাই তোমাদের জন্য বেটার।
।
কথা গুলো বলে নীল সোজা হয়ে দাঁড়াতেই ওর বুকে কে যেন জোরে ধাক্কা দিল। নীল কোনোমতে ব্যালেন্স ঠিক রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে নীলা রাগী চেহারা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে নীলের কথা গুলো নীলার একটুও পছন্দ হয় নি। কিন্তু এই নীলাকে দেখলেই ওর হার্ট জোরে জোরে বিট করতে শুরু করে।
।
নীলা: ওই মিস্টার কি বললে তুমি? আমাদেরকে দূরে থাকতে বললে? তোমরা কোন নবাবজাদা যে আমরা তোমাদের সামনে আসতে পারব না? তোমাদের যদি এতটাই এলার্জি থাকে আমাদের থেকে তো তোমরা দূরে থাকলেই তো পারো যত্তসব।
।
নীল: তোমাকে কিছু বলা হয়েছে? তাহলে তুমি আগ বাড়িয়ে কেন ঝগড়া করছো?
।
নীলা: বাহ্ আমার বন্ধুদের তুমি থ্রেট করবে আর আমি বসে বসে দেখব ভেবেছো? কখনো না।
।
নীল: কিছু মেয়েদের সাথে থাকলেও তো পারো। সব সময় এই দু'জন ছেলের সাথে কেন থাকো বলোতো?
।
মেঘ: ইট'স নান অফ ইয়র বিজনেস মিস্টার নীল।
।
মিহু: ওদের কথার মাঝখানে তোমার বাম হাত না ঢুকালেই চলছিল না নাকি?
।
মেঘ: আমার সাথে লাগতে এসো না। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
।
মিহু: অহ্ রিয়েলি? লিসেন মিস্টার চৌধুরী আপনি আমার কিচ্ছু করতে পারবেন না বুঝলেন?
।
মেঘ: ইউ নোউ হোয়াট? আমার বাবা এই কলেজের ওউনারদের মধ্যে একজন। আর আমি চাইলেই তোমাকে এই কলেজ থেকে এই মুহূর্তে বের করে দিতে পারি।
।
মিহু: সিরিয়াসলি? আর বোর্ড মেম্বারস'দের কি বলবেন? তাদেরও তো কৈফিয়ত দিতে হবে তাই না? তারা যখন জিজ্ঞেস করবে যে একজন স্টুডেন্টকে কেন বের করা হলো? তখন কি জবাব দিবে আপনার বাবা? তাই ফালতু পাওয়ার না দেখিয়ে নিজ যোগ্যতায় কিছু করে দেখান পারলে।
।
মেঘ: তোমার আমি কি হাল করব তুমি বুঝতেও পারছো না মিহু।
।
মিহু: মিহু কাউকে ভয় পায় না। সব রকম পরিস্থিতির সাথে লড়াই করার ক্ষমতা আমার আছে। তাই আমি সর্বদা প্রস্তুত আছি আমার জন্য তোমার রেডি করা প্ল্যান ফ্লপ করার জন্য।
।
বলেই মিহু মেঘকে এক চোখ টিপ দিল। মেঘ অবাক মিহুর সাহস দেখে। আজ পর্যন্ত কেউ ওর সাথে এভাবে কথা বলার সাহস দেখায় নি। আর আজ সেই সাহসটা মিহু দেখালো। ভাবতেই মেঘের প্রচুর রাগ লাগছে মিহুর প্রতি।
।
মিহু: গাইস লেট'স গো। দিস ইজ ইনাফ ফর টুডে।
।
মিহু, অনু আর নীল পেছনে ঘুরতেই একজন কুরিয়ার সার্ভিসার এলো মিহুর কাছে।
।
সার্ভিসার: মিহু রায়জাদা কি আপনি?
।
মিহু: জ্বি আপনি কে?
।
সার্ভিসার: আপনার জন্য একটা কুরিয়ার এসেছে।
।
মিহু: আমার জন্য কুরিয়ার এই কলেজে এসেছে?
।
সার্ভিসার: জ্বি ম্যাম এ্যাড্রেস তো কলেজের'ই।
।
মিহু: কে পাঠিয়েছেন?
।
সার্ভিসার: সেটা তো বলতে পারব না।
।
মিহু: আচ্ছা দিন আমাকে।
।
সার্ভিসার মিহুকে পার্সেলটা দিয়ে ওর সাইন নিয়ে চলে গেল। পার্সেলটার দিকে তাকিয়ে মিহুর চোখ দু'টো বড় বড় হয়ে গেল।
।
অনু: মিহু এটা পার্সেল নাকি আইফেল টাওয়ার?
।
নীল: এত বড় কেন পার্সেলটা?
।
ওদিকে মেঘ, মানিক আর নীলাও অধীর আগ্রহের সাথে পার্সেলটার দিকে তাকিয়ে আছে।
।
মিহু: এটা এখানেই খুলতে হবে। কারন এটা গাড়িতে ঢুকানোর ওয়ে নেই।
।
অনু: রাইট।
।
নীল: তো চল এটা খুলা যাক।
।
মিহু: আমার পার্সেল আমি খুলব সর তোরা।
।
মিহু এগিয়ে গিয়ে পার্সেলটা খুলতে লাগলো। পার্সেলটা খুলতেই মিহু মুখে হাত দিয়ে খুশিতে লাফাতে লাগলো। অনু আর নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পার্সেলের ভেতরের জিনিসটা দেখে।
।
মিহু: অহ্ মাই গড!!!! দিস ইজ মাই মোস্ট ফেভারিট টেডিবিয়ার😍😍😍😍
।
মিহু ভেতর থেকে টেডিটা কোলে নিয়ে লাফাতে লাগলো। মেঘ, মানিক আর নীলা চমকে উঠলো মিহুর অবস্থা দেখে। টেডিটা কম হলেও ৮ ফুট হবে। আর মিহু মাত্র ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। মিহু ঠিক মতো ধরতেও পারছে না টেডিটাকে বড় হওয়ার কারনে। মেঘ প্রথমে অবাক হলেও মিহুর এমন বাচ্চামো দেখে ও নেশাগ্রস্ত চাহনি মেলে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে।
।
অনু: মিহু আস্তে আস্তে পরে যাবি তো।
।
নীল: মিহু তুই কিন্তু পরে যাবি।
।
বলতে না বলতেই মিহু ধপাস করে নিচে পরে গেল। কিন্তু তাও টেডিটাকে ছাড়ছে না। নীল আর অনু মাথায় হাত দিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো।
।
নীল: টেডি পেলে এর কোনো দিকে হুঁশ থাকে না।
।
অনু: আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। টেডিটা পাঠালো কে?
।
মিহু ওদের কথা শুনে চেচিয়ে উঠলো।
।
মিহু: আবে ওই আমার বাবুকে ভুলে গেলি নাকি তোরা?
।
অনু আর নীল মিহুর দিকে তাকিয়ে তারপর মিহুর কথা বুঝতে পেরে হেসে দিল।
।
অনু: তার মানে.....
।
নীল: তার মানে জিজু দেশে এসেছে?
।
মিহু: ওই ছেমরা আমার বাবুকে জিজু বলতে মানা করছি না একবার।
।
নীল: তোর বাবু হলে আমার জিজু'ই হবে হাহ্।
।
অনু: আমার কলিজা আসছে। চল চল তাড়াতাড়ি বাসায় চল।
।
মিহু: অনু মাইন্ড ইয়র ল্যাঙ্গুয়েজ। ও তোর কলিজা নয়। শুধু আমার বাবু্।
।
অনু: না আমার কলিজা ও।
।
মিহু: তুমি কি ভুলে গিয়েছো আমার সাথে আমার বাবুর এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে?
।
মেঘ, মানিক আর নীলা মিহুর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল।মেঘ তো বিশ্বাসই করতে পারছে না যে মিহু এনগেজড। মেঘের কেন জানি না খুব রাগ লাগছে মিহুর উপর। ও রেগে গাড়িতে বসে জোরে গাড়ির ডোর লক করে চলে গেল ওখান থেকে।নীলা আর মানিক মেঘের এরূপ আচরণের মানে বুঝলো না।
।
মিহু: আমাকে উঠা কেউ তাড়াতাড়ি। আমি বাসায় যাব।
।
নীল এসে টেডিবিয়ারটা তুললো। আর অনু এসে মিহুকে তুললো। মিহু আবারও টেডিবিয়ারটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে গাড়ির কাছে গিয়ে টেডিটাকে অনেক সাবধানে গাড়িতে ঢুকালো। অনু আর নীলকে বাই বলে ও #Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_3_4
.
নীল এসে টেডিবিয়ারটা তুললো। আর অনু এসে মিহুকে তুললো। মিহু আবারও টেডিবিয়ারটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে গাড়ির কাছে গিয়ে টেডিটাকে অনেক সাবধানে গাড়িতে ঢুকালো। অনু আর নীলকে বাই বলে ও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
মানিক আর নীলা এখনো মিহুর এনগেজমেন্টের কথাটা মাথায় নিয়ে বসে আছে। মানিক আর থাকতে না পেরে নীলকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল।
।
মানিক: নীল!!!
।
নীল: আমাকে ডেকেছো?
।
মানিক: মিহু কি সত্যিই এনগেজড?
।
নীল: সেটা জেনে তুমি কি করবে ব্রো?
।
মানিক: না মানে এমনি আরকি....
।
নীল: জাস্ট ফরগেট ইট অকেহ্?
।
অনু: লেট'স গো নীল।
।
নীল: আ'ম কামিং।
।
অনু আর নীলও ওদের গাড়ি নিয়ে চলে গেল। নীলা আর মানিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
।
নীলা: মিহু এনগেজড!!!
।
মানিক: মেঘ জানতো না।
।
নীলা: মেঘ তো মিহুকে ভালোবাসে না।
।
মানিক: তাহলে রেগে চলে গেল কেন?
।
নীলা: সেম কুয়েশ্চন।
।
মানিক: চল দেখি কোথায় গেল এই ছেলে।
।
নীলা: যেখানেই যাক না কেন ওর মুড এখন বম হয়ে আছে।
।
মানিক: চল দেখা যাক।
।
নীল: অকেহ্।
।
নীলা আর মানিক মেঘকে খুঁজতে চলে গেল।
মেঘের কপালের রগ গুলো ফুলে আছে। চেহারাটা লাল হয়ে আছে। হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসটা এক ঢোকে শেষ করে ফেললো। চোখ দু'টো রাগে জ্বলজ্বল করছে। হাতে থাকা খালি গ্লাসটা নিচে ছুঁড়ে ফেললো রাগে। সাথে সাথে গ্লাসটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
মেঘের বাবা এতক্ষণ চুপচাপ নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন। কারন তিনি তার ছেলের রাগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। তার ছেলে এই মুহূর্তে কাউকে মেরে ফেলতেও একবার দ্বিধাবোধ করবে না তাও তিনি জানেন। মেঘের রাগ সম্পর্কে সবাই জানে। তাই তো বাসার কেউ ওর ধারের কাছে আসছে না। তখনি মানিক আর নীলা মেঘের বাসায় ঢুকলো। মেঘের এই অবস্থা দেখে ওরা দু'জন মুচকি হাসলো।
।
মানিক: মেঘ এসব কি করছিস?
।
নীলা: কি হাল বানিয়েছিস নিজের আর ঘরের?
।
মেঘ: তোরা কেন এসেছিস এখানে? [রেগে]
।
মানিক: বাসাটা তোর মানে আমাদেরও।
।
নীলা: সো আমরা আসতেই পারি।
।
মেঘ: দেখ এই মূহুর্তে মেজাজ অনেক খারাপ আছে। তাই চলে যা এখান থেকে। মাথা ঠান্ডা হলে আমি নিজেই তোদের সাথে দেখা করব। এখন চলে যা।
।
মানিক: কিন্তু তুই রেগে কেন আছিস?
।
নীলা: আর তুই ওভাবে কিছু না বলে চলে আসলি কেন ওখান থেকে?
।
মেঘ: কিছু না তোরা যা।
।
মানিক: কামন দোস্ত পেটের ভেতর কথা চেপে না রেখে বলে ফেল।
।
নীলা: তাড়াতাড়ি বল নাহলে কিন্তু তোরে চিমটি দিয়ে কথা বের করব।
।
মেঘ এবার সব রাগ ওদের উপরই ঝাড়া শুরু করলো।
।
মেঘ: মিহুর সাহস কত বড় যে ও আমার উঁচু গলায় কথা বলে? ও জানে না আমি কে? ও জানে না আমি ওকে কলেজ থেকে রাস্টিকেট করাতে পারি? তারপরও কেন আমার সাথে ঝগড়া করলো ও? ও সবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারে। অথচ আমার সাথে কেন এত রুডলি কথা বলে বল? আর ও এনগেজড আমাকে বলে নি কেন? কোন হারামি ওকে রিং পরিয়েছে? আই নিড টু নোউ এভরিথিং। এভরিথিং মিনস্ এভরিথিং। আমি ওই ছেলেকে ছাড়ব না। আর মিহু কল্পনাও করতে পারবে না আমি ওর সাথে ঠিক কি কি করব। ওর লাইফে জাস্ট আমি থাকব। আমি মানে জাস্ট আমি আর কেউ না। আর ও নিজেও শুধু আমার। অন্য কেউ ওর দিকে হাত বাড়ালে তার হাত আমি ভেঙ্গে দিব। সি ইজ অনলি মাই গার্ল। কলেজের সেই ফার্স্ট ডে থেকে ওকে লাইক করি। কিন্তু কখনো কাউকে বুঝতে দেই নি। ওকে দূর থেকে অলওয়েজ আগলে রেখেছি। কেউ ওকে কিছু বলার সাহস পেতো না। কজ অনলি ফর মি। ওর সবকিছুই আমার ভালো মতো জানা। ও নিজেও ওর ব্যাপারে এতটা জানে না, যতটা আমি জানি। ওকে যে আমি কতটা চাই ও জানে না। ও যে আমার জন্য কি সেটাও ও জানে না। আমার হোল লাইফ ও।
।
মানিক আর নীলা দু'জন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।
।
মানিক: দোস্ত তুই তো ফেঁসে গেছিস।
।
নীলা: আ'ম জাস্ট স্পিচলেস।
।
মানিক: তুই কি এগুলো স্বজ্ঞানে বললি ভাই?
।
মেঘ: আমাকে দেখে কি তোর মাতাল মনে হচ্ছে?
।
মানিক: না আসলে ঠিক....
।
মেঘ: মাতাল তো মনে হবেই। ওই মেয়েকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই আমি মাতাল হয়ে গেছি। মাতাল হওয়ার জন্য আমার এ্যালকোহলের প্রয়োজন হয় না। এই মেয়েকে দেখলেই এক রকম নেশা কাজ করে। মনে হয় আমি নিজের সেন্সে নেই। সি ইজ মাই এ্যাডিকশন। আই নিড হার লাভ।
।
নীলা: মেঘ!!!
।
মেঘ: হু...
।
নীলা: ইউ আর ফল ইন লাভ। ডু ইউ নোউ দ্যাট?
।
মেঘ: আই নোউ ইট বিফর ইউ। বাট এতদিন শুধু নিজেকে আটকে রেখেছিলাম ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের জন্য। কজ ইউ গাইস নোউ না! আমার কাছে ফ্যামিলি স্ট্যাটাসটা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট? দ্যান হুয়াই সুড আই চুজ হার ফর মাই লাভ?
।
মানিক: দোস্ত তুই বেশি খেয়ে ফেলেছিস। চল তোকে তোর রুমে দিয়ে আসি।
।
মেঘ: নো মানিক আ'ম অলরাইট। আই নিড হার ইয়ার। কজ আই...আ..আই লাভ.....
।
মেঘ আর কিছু বলতে পারলো না। মানিকের গায়ে ঢলে পরলো। নীলা আর মানিক জোরে একটা শ্বাস ফেললো। মানিক মেঘকে ধরে নিয়ে উপরে চলে গেল। নীলা ডাইনিং টেবিলের থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেতে লাগলো। তখনি মেঘের বাবার গলার আওয়াজ পেয়ে নীলা ঘুরে দাঁড়ালো।
।
ইরফান চৌধুরী: মেয়েটা কে যাকে আমার ছেলে এতো বেশি ভালোবাসে?
।
নীলা: আঙ্কেল আপনি সব শুনেছেন?
।
ইরফান: আমি তো মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি নিজের ছেলের মুখ থেকে এত সুন্দর ভাবে প্রেমের বিস্তারিত শুনে।
।
নীলা হালকা হাসলো। কারন আঙ্কেল অনেক ফ্রি ওদের সাথে।
।
নীলা: আঙ্কেল আপনার ছেলে প্রেমে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে অথচ আমাদের জানায় নি। এটা কি ঠিক করেছে বলেন? এই নাকি ও আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড বলে?
।
ইরফান: হাহাহাহা ও তখন নিজেই কনফিউশানে ছিল তাই হয়তো তোমাদের কিছু জানায় নি।
।
নীলা: তাও আঙ্কেল ও কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করে নি।
।
ইরফান: আচ্ছা বুঝলাম মেঘ কাজটা ঠিক করে নি। কিন্তু মেয়েটা কে যাকে ও ভালোবাসে?
।
নীলা: আমাদের কলেজের একটা মেয়ে আছে নাম মিহু। ওর প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে আপনার ছেলে।
।
ইরফান: মিহু!!! মানে মিহু রায়জাদা?
।
নীলা: হ্যা আঙ্কেল মিহু রায়জাদা। কিন্তু আপনি ওকে চিনেন?
।
ইরফান: চিনি না কি বলছো? ওর বাবাও তো আমাদের কলেজের ওউনার। মিস্টার আরমান রায়জাদা আর মিসেস সামিয়া রায়জাদার একমাত্র মেয়ে মিহু রায়জাদা। মেয়েটা খুবই মিষ্টি। একটু বাচ্চা স্বভাবের বাট মনটা খুব নরম। আমি নিজেও কথা বলেছি ওর সাথে তাই জানি।
।
নীলা অনেক অবাক হলো ইরফান চৌধুরীর কথা শুনে। মানিক সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে বললো।
।
মানিক: কিন্তু আঙ্কেল ও তো এনগেজড। আর এটা ভেবেই আমি একটু টেন্সড্।
।
ইরফান: কিহ্? মিহু এনগেজড? আর এই কথা গুলো কে বলল তোমাদের?
।
মানিক: আজকে তো মিহু নিজেই বলল।
।
ইরফান: কি বলেছে মিহু?
।
মানিক আর নীলা কলেজের কথাগুলো বলতেই ইরফান চৌধুরী চিন্তায় পরে গেলেন। "ছেলে এই প্রথম কাউকে ভালোবেসেছে। তাকে কি পাবে না ও? নাহ্ কিছু তো একটা করতেই হবে। মিহুকেই আমার ঘরের বউ'মা করব আমি। আমার ছেলের ভালোবাসা বলে কথা।"
।
মানিক: কি ভাবছেন আঙ্কেল?
।
ইরফান: মিহুর বাবার সাথে কথা বলতে হবে।
।
মানিক: আঙ্কেল আপনি সিরিয়াস?
।
ইরফান: অবশ্যই কারন আমার ছেলের কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখিনি আমি কখনো। তবে আজ কি করে তার চাওয়া অপূর্ণ রাখি?
।
মানিক: সিরিয়াসলি আঙ্কেল মেঘ ঠিকই বলে। আপনি আসলেই ওর বেস্ট ফাদার।
।
ইরফান: বেস্ট ফাদার হতে পেরেছি কি না জানি না। কিন্তু কখনো ওকে খারাপ রাখি নি। সব সময় ওর সব চাওয়াই পূর্ণ করেছি। শুধু একটা চাওয়াই পূর্ণ করতে পারি নি। আর সেটা হলো ওর মা'কে আমি এনে দিতে পারি নি। যে মানুষটা আকাশের চাঁদ হয়ে গিয়েছে তাকে কি করে এনে দিব বলোতো? তাই এই চাওয়া এখনো ওর অপূর্ণ।
।
কথা গুলো মন খারাপ করে বললেন ইরফান চৌধুরী। মানিক আর নীলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে শুনছে। সত্যি ইরফান চৌধুরীর মতো বাবা খুব কম পাওয়া যায়। প্রায় সব বাবা'রাই কাজের অজুহাতে নিজের ছেলেমেয়েদের সময় দিতে পারে না। কিন্তু মেঘের বাবা মেঘকে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। নিজ হাতে ছেলেকে বড় করে তুলেছেন। ছেলের কোনো আবদার বাদ রাখে নি কখনো পূরণ করতে। শুধু মা এনে দেওয়ার আবদারটাই রাখতে পারেন নি। এটার জন্য এখনো তিনি কষ্ট পান। কারন একমাত্র কলিজার টুকরা ছেলের চাওয়া বলে কথা। এসব ভাবতেই বুকের ভেতর থেকে গভীর শ্বাস বেরিয়ে এলো ইরফান চৌধুরীর।
একটা সাদা রঙের গাউন পরে মেঘের দিকে এগিয়ে আসছে মিহু। মেঘ যেন চোখ সরাতে পারছে ওর মেঘপরীর থেকে। মিহু ওর দিকে এগিয়ে আসতেই ও মিহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একটা রিং পরিয়ে দিল মিহুর হাতে। সাথে সাথেই মিহুর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মিহুর হাতে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালো ও। মিহুর কোমড় জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল। মিহু চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ওর শরীর কাঁপছে। মেঘের চোখ গেল মিহুর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে। নেশা তো আগে থেকেই কাজ করছিল। কিন্তু এখন পুরো মাতাল হয়ে যাচ্ছে মিহুর ঠোঁট জোড়া দেখে। কোনো কিছু না ভেবেই মিহুর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের ভাঁজে নিতে যাবে তখনি মিহু ওর সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। ও মিহু বলে ডাকতে লাগলো বারবার। কিন্তু মিহু ওকে সরিয়ে দিয়েই দূরে সরে যেতে যেতে অদৃশ্য হয়ে গেল। তখনি ও জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো 'মিহু' বলে।
মেঘ লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ওর শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা পানি খেয়ে নিলো। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো বিকাল ৪ টা বাজে। "তার মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? ওহ্ গড। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_4
.
মেঘ লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ওর শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা পানি খেয়ে নিলো। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো বিকাল ৪ টা বাজে। "তার মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? ওহ্ গড। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"
মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে এসে বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো। ওর মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। ও রুমে আসলো কিভাবে তাও ওর মনে নেই। ওর শুধু এতটুকুই মনে আছে যে ও রেগে বাসায় এসে ওয়াইন খাচ্ছিলো। তারপর কি হয়েছে কিছুই মনে পরছে না ওর। তাই ও একজন সার্ভেন্টকে ডেকে ব্ল্যাক কফি আনতে বললো। বেড সাইড টেবিল থেকে ঘড়ি নিতে যেয়ে পাশে থাকা রিমোটে হাত লেগে সামনে থাকা টিভিতে বাসার সিসিটিভি ফুটেজ অন হয়ে গেল। মেঘ রিমোট দিয়ে ফুটেজ অফ করতে গিয়েও থেমে গেল একটু আগের ফুটেজ দেখে। ও মাতাল অবস্থা এসব কি বলছে? "ওহ্ নো শিট!!! এতদিন যেসব কথা লুকিয়ে রেখেছিলাম আজ তা এভাবে বলে দিলাম সবাইকে?"
মেঘ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। তারপর উঠে কালো শার্টটা গায়ে জরিয়ে নিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেল। মানিককে কল করে জানতে পারলো ওরা বসুন্ধরা শপিং মলে আছে। মেঘও গাড়ি নিয়ে সেখানে চলে গেল।
এদিকে মিহু বাসায় আসার পর খুশিতে গদগদ হয়ে গিয়েছে। ও যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। ও মনে মনে যাকে ভেবেছিল সেই এসেছে ওর বাসায়। শুধু তাই'ই না আরও দু'টো স্পেশাল গিফট নিয়ে এসেছে সাথে সে। মিহু দৌড়ে যেয়ে সে মানুষটির গলা ধরে ঝুলতে লাগলো।
।
মাম্মাম: মিহু কি হচ্ছে এসব? ছেলেটা মাত্র বাসায় আসলো আর তুই ওকে জ্বালানো শুরু করে দিলি?
।
মিহু: এত ভালোবাসা তো আমাকেও কখনো দেখাও নি মাম্মাম?
।
মাম্মাম: তুই চুপ থাক। আশফি বাবা তুমি ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও যাও।
।
মিহু: আশফি তুমি গেলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
।
আশফি: স্টপ!! তোমরা দু'জন কি শুরু করলে বলোতো?
।
মিহু: আশফি তুমি এখন আমার সাথে বের হবে চলো।
।
মাম্মাম: মিহু!!!
।
আশফি: আন্টি ইট'স অকে। মিহু চলো তোমার সাথে বের হবো আমি।
।
মিহু: ইপ্পিইইইই চলো চলো তাড়াতাড়ি চলো।
।
মিহু আশফিকে এক প্রকার টেনেই বের করলো বাসা থেকে। মিহু গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি আশফি মিহুর হাত ধরে ফেললো।
।
আশফি: কি করছো তুমি?
।
মিহু: কি করলাম?
।
আশফি: ড্রাইভিং সিটে কেন বসছো?
।
মিহু: আমি ড্রাইভিং করব তাই।
।
আশফি: নেভার! ড্রাইভিং আমি করব।
।
মিহু: কখনো না।
।
আশফি: তাহলে তুমি থাকো আমি গেলাম।
।
মিহু: আশফি!!!
।
আশফি: নো ন্যাকামি উইথ মি।
।
মিহু: আমি না তোমার এনগেজমেন্ট করা ফিয়ন্সে?
।
আশফি: হাহাহাহা অবশ্যই কিন্তু তোমাকে বিয়ে করলে নিশ্চিত বাঁশ খাব।
।
মিহু: তোমাকে আমি দেখে নিব। এখন ড্রাইভ করো। আর তোমার নামে আমি বিচার দিব।
।
আশফি: কার কাছে?
।
মিহু: যখন দিব তখন দেখে নিও।
।
আশফি: মিহু তুমি কিন্তু আমার......
।
মিহু: চুপ!!!
।
রেস্টুরেন্টের সামনে আশফিকে গাড়ি থামাতে বললো মিহু। ভেতরে ঢুকে মিহু আশফিকে বিভিন্ন রকম কথা বলছে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে। আশফি সেসব কথা শুনে হাসছে। মিহু ওর পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো। আশফি জাপানে এতদিন সে কিভাবে ছিল তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে মিহুকে। মিহু মনোযোগ সহকারে শুনছে। হঠাৎ আশফি মিহুকে পঁচাতে লাগলো। মিহু হাসতে হাসতেই আশফিকে মারতে লাগলো। আশেপাশের প্রায় সবাই ওদের দেখে হাসছে। কেউ কেউ তো বলছে, "হাউ কিউট কাপল।"
হঠাৎ কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে সবাই পেছনে তাকালো। মিহু মাথা বাঁকা করে পেছনে তাকিয়ে দেখে মেঘ, মানিক আর নীলা বসে আছে। মেঘ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মিহু এক ঢোক গিললো মেঘের এরূপ রাগী চেহারা দেখে। কিন্তু ও কেন ভয় পাচ্ছে? ভাবতেই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল মিহু। তখনি নীল আর অনু ঢুকলো রেস্টুরেন্টে। অনু আশফিকে দেখে দৌড়ে গেল ওর কাছে।
।
অনু: জানুউউউউউ।
।
আশফি: আরে জানু তুমি কখন আসলে?
।
অনু: এইতো জানু মাত্রই আসলাম।
।
আশফি আর অনুর কথা শুনে মানিক চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওদের দিকে।
।
মিহু: বাবু তুমি কিন্তু আমাকে চিট করছো!
।
আশফি: আহালে বাবুতা লাগ কলে না।
।
মিহু: হুহ্ যাও কথা নেই তোমার সাথে।
।
আশফি: ওলেলে বাবুতা আমার উপর রাগ করেছে?
।
মিহু: হুহ্।
।
আশফি: আচ্ছা আচ্ছা আমি তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য সদা প্রস্তুত।
।
মিহু গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেল। আশফি টুপ করে মিহুর গালে একটা চুমু খেয়ে বসলো। উপস্থিত সবাই হা আশফির কর্মকাণ্ডে। শুধু মিহু, অনু আর নীল হেসে দিল। মেঘ আগে থেকেই রেগে ছিল। এখন রাগ আউট অফ কনট্রোল হয়ে গেল। ও নিজের জায়গা থেকে উঠে আশফির কাছে যেয়ে আশফির কলার ধরে টান দিয়ে উঠিয়েই আশফির মুখে জোরে একটা ঘুষি মারলো। মিহু সাথে সাথেই দু'হাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো। মেঘ আবারও মারতে গেলে আশফি মেঘের হাতটা ধরে ফেলে।
।
আশফি: কি ব্রো মারছো কেন?
।
মেঘ: তোকে তো আমি মেরেই ফেলব।
।
আশফি: আমার ফল্ট কি সেটা তো বলো?
।
মেঘ: তুই কোন সাহসে মিহুকে টাচ করিস?
।
আশফি: কেন আমি কি ওকে টাচ করতে পারি না?
।
মেঘ: কোনোভাবেই তুই ওকে টাচ করতে পারিস না।
।
আশফি: ভাই তোমার কি সমস্যা? আমার যা মন চায় আমি তাই'ই করব ওর সাথে। এতে তোমার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
।
মেঘ: ইউ ব্লাডি***
।
মেঘ আশফির মুখে আবারও ঘুষি দিল। মিহু এসে মেঘকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। মানিক আর নীলা দু'জনেই হতবাক হয়ে গেল মিহুর কাজে। মেঘ চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো মতেই ওর রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।
।
মিহু: হাউ ডেয়ার ইউ? আশফির গায়ে হাত তোলার সাহস কোথায় পাও তুমি? আর ও আমার গায়ে হাত দিল কি দিল না এতে তোমার কি সমস্যা? ডোন্ট ফরগেট না আমি তোমার কিছু লাগি আর না তুমি আমার কিছু লাগো। সো বিহেভ ইয়র সেলফ।
।
মেঘের এতো পরিমাণে রাগ বাড়ছে যা বলার বাইরে। ও আর কিছু না বলে মিহুর হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মানিক, নীলা, আশফি, নীল আর অনু জোরে হেসে উঠলো।
।
আশফি: এরা আসলেই পাগল।
।
অনু: মেঘ তো একটা মাথামোটা।
।
মানিক: আর মিহু একটা ডাম্বো।
।
অনু: খবরদার আমার বোনকে ডাম্বো বলবে না।
।
মানিক: আমার ভাইকেও তুমি মাথামোটা বলবে না।
।
অনু: লিসেন মেঘের চাচাতো ভাই! তুমি যদি আবার আমার বোনের নামে কিছু বলেছো তো তোমার একদিন কি আমার একদিন।
।
মানিক: আরে যাও যাও তুমি করবা কচু।
।
অনু: কচুটা দিয়ে তোমার মাথায় দিব একটা বারি।
।
মানিক: আমি কি তোমাকে ছেড়ে দিব নাকি? তোমার গলা দিয়ে কচুর রস ঢেলে দিব।
।
অনু: তুমি তো খুব বদমাশ ছেলে।
।
মানিক: জাস্ট লাইক ইউ।
।
অনু: তুমি একটা ব্লাইন্ড। ভালো করে দেখো আমি ছেলে না আমি একটা মেয়ে।
।
মানিক: ওহ্ রিয়েলি? মেয়েদের কোনো স্বভাব তো আমি তোমার ভেতর দেখি না।
।
অনু: আমাকে কি তোমার ফেন্সি মনে হয় যে সব সময় ঢং করব?
।
মানিক: এতো ঝগড়া কিভাবে করতে পারো তুমি?
।
অনু: ট্যালেন্ট থাকতে হয় বুঝলে? যা তোমার নেই।
।
মানিক: দরকার নেই আমার তোমার মতো এমন ঝগড়ুটে ট্যালেন্ট।
।
অনু: তুই ঝগড়ুটে! তোর পুরো ১৪ গুষ্টির ফ্রেন্ড সার্কেল ঝগড়ুটে।
।
মানিক: ইউউউউউউ।
।
অনু: ভিইইইইইই।
।
মানিক: মানেহ্?
।
অনু: এ বি সি ডি আমিও পারি হাহ্।
।
মানিক: রিডিকিউলেস্।
।
মানিক রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।
।
নীল: হে আল্লাহ্ আমার বোনকে দেখো তুমি।
।
নীলা: কেন তোমার বোন কি কোনো জল্লাদের সাথে গেছে নাকি যে এভাবে বলছো?
।
নীল: তো তোমার মামাতো ভাই জল্লাদের চেয়ে কিছু কম নাকি?
।
নীলা: আমার ভাইকে জল্লাদ বলো কত বড় সাহস তোমার😡
।
নীল: জল্লাদকে তো জল্লাদ'ই বলব।
।
নীলা: তুমি কি? টিকটিকি একটা।
।
নীল: তুমি তো ডান্সিং ডাইনী।
।
নীলা: এই একদম আমাকে এই নামে ডাকবে না।
।
নীল: ১০০ বার ডাকব। ডাইনী একটা!!! তাও কোনো নরমাল ডাইনী না! ডান্সিং ডাইনী।
।
নীলা: নীঈঈঈঈল......
।
নীল: তোমার মতো বয়রা না আমি যে এভাবে চিৎকার করে ডাকতে হবে আমাকে।
।
নীলা: তোমাকে আমি পরে দেখে নিব।
।
নীল: এখন আমি অদৃশ্য না।
।
নীলা: উফফফ অসহ্যকর!!!
।
এই বলে নীলা রেগে চলে গেল। আশফি এদের ঝগড়া করা দেখে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলো। আর মনোযোগ সহকারে পাস্তা খেতে লাগলো।
এদিকে মেঘ মিহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ওকে ভেতরে এক প্রকার ছুঁড়ে ফেললো। মিহু চেচামেচি করতে লাগলো।#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_5_6
.
এদিকে মেঘ মিহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ওকে ভেতরে এক প্রকার ছুঁড়ে ফেললো। মিহু চেঁচামেচি করতে লাগলো। মেঘ গাড়ির দরজাটা শব্দ করে লাগিয়ে, নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
।
মিহু: স্টপ দ্যা কার!!! আই সেইড স্টপ দ্যা কার!!!
।
মেঘ: (.....নিশ্চুপ....)
।
রাগে মেঘের চেহারা পুরো লাল হয়ে আছে। যে কোন সময় জোয়ালামুখী হয়ে ফেটে পরতে পারে। মিহুরও মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে মেঘের এরূপ কর্মকাণ্ডে। মিহু সমানে চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বলছে। কিন্তু মেঘ মিহুর কথায় কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টো রাগে আরও বেশি স্পিড বাড়িয়ে দিল গাড়ির। তাতেও মিহুর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
।
মিহু: আমি তোমার নামে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করব।
।
মেঘ এবার গাড়িটা থামালো। আচমকা ব্রেক লাগায় মিহু সিটের সাথে একটু জোরেই বারি খেল। মিহু রেগে মেঘের দিকে তাকানোর সাথে সাথেই মিহু ভয়ে এক ঢোক গিললো। মেঘ ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। মিহু সাহস জুটিয়ে নিয়ে বলল।
।
মিহু: ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
।
মেঘ: ছেলেটা কে ছিল?
।
মিহু: তোমাকে কেন বলব?
।
মেঘ: মিহু আমি কিন্তু নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছি না। সো ভালোয় ভালোয় বলো ছেলেটা কে ছিল?
।
মিহু: তোমার রাগের পরোয়া কে করে?
।
মেঘ রেগে স্টেয়ারিং এর সাথে নিজের হাত জোরে বারি দিল। মিহু হালকা কেঁপে উঠলো। মেঘ কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো।
।
মেঘ: আমার সাথে তোমার এতো সমস্যা কিসের?
।
মিহু: তোমার মেন্টালিটি আমার সমস্যা।
।
মেঘ: মানে?
।
মিহু: তুমি অলওয়েজ নিজের স্ট্যাটাসের দিকে খেয়াল রাখো। তোমার সাথে যাদের স্ট্যাটাস ম্যাচ হয় না তাদের দিকে তো ঘুরেও তাকাও না। উল্টো তাদেরকে যেভাবে ইনসাল্ট করো! দেখে মনে হয় তুমি একজন ফিলিংস ছাড়া মানুষ। আচ্ছা!!! স্ট্যাটাস'ই কি মানুষের আসল পরিচয়?
।
মেঘ: (.....নিশ্চুপ.....)
।
মিহু: আমি যতদূর জানি তুমি আমাকে মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে ভাবো। কারন আমি তোমার মতো অহংকার নিয়ে চলি না বলে। বাট ফর ইয়র কাইন্ড ইনফরমেশন আমিও তোমার মতোই হাই ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। বাট তোমার মতো শো অফ করা আমার পছন্দ না।
।
মিহুর কথা শুনে মেঘ অবাক হয়ে গেল।
।
মেঘ: তুমি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে নও?
।
মিহু: না আমি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করি না। বরং তোমার বাবা যেই কলেজে ওউনার! আমার বাবাও সেই একই কলেজের ওউনার। বাট আমি তোমার মতো বলে বেরাই না। আর আমাকে যেহেতু মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে ভাবতে তাহলে আমার পেছনে এভাবে আঠার মতো লেগে থাকো কেন? লিসেন আই জাস্ট হেইট ইয়র এ্যারোগেন্ট এ্যাটিটিউড। সো লিভ মি এ্যালোন।
।
মিহু নিজে গাড়ির লক খুলে বেরিয়ে গেল। মেঘ পেছন থেকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু মিহু কোনো পাত্তা না দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেল। মেঘেরও কেন জানি ভালো লাগছে না। এখন তো মিহুর পেছনে ঘুরেও লাভ নেই কারন মিহু এনগেজড। এই কথা ভেবে মেঘ গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেল।
এদিকে মিহু বাসায় আসতেই আশফি, অনু আর নীল ধরে বসলো।
।
আশফি: ছেলেটা তোমাকে ওভাবে নিয়ে গেল কেন?
।
মিহু: গড নোউস।
।
নীল: কোথায় নিয়ে গিয়েছিল তোকে মেঘ?
।
মিহু: উত্তরার দিকে।
।
অনু: কেন?
।
মিহু: আমি কি জানি? বাট দেখে মনে হলো অনেক রেগে ছিল। আমাকে বারবার আশফির কথা জিজ্ঞেস করছিল যে আশফি আমার কি লাগে।
।
আশফি: বলতে পারলে না হবু বর লাগি তোমার।
।
আশফির কথা শুনে পেছন থেকে এক মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো।
।
আমিশা: কে কার হবু বর লাগে?
।
আশফি: আমিশা!!!
।
আমিশা: সারপ্রাইজ!!!
।
আশফি: তুমি কখন, কিভাবে আসলে?
।
আমিশা: একটু আগেই আসলাম। তোমার মেয়ে তোমার জন্য কান্নাকাটি করে একাকার করে ফেলেছে। তাই আসতে বাধ্য হলাম।
।
আশফি: আমার আরিশা মামনি কোথায়?
।
আমিশা: ঘুমোচ্ছে উপরে।
।
মিহু: হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ সিস!!!
।
আমিশা: আমার জামাইকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে তোর তাই না?
।
মিহু: তোমার জামাইয়ের হাফ বউ আমি।
।
আমিশা: কিহ্? হাফ বউ মানে?
।
মিহু: এই দেখো এই রিং ফিঙ্গারে পরানো রিংটা তোমার জামাই পরিয়ে দিয়েছে আমাকে। তো সেই ক্ষেত্রে আমি আর তোমার জামাই এনগেজড। আর তোমার বোন হিসেবে আমি তোমার জামাইয়ের শালিকা লাগি। আর শালি মানেই আধি ঘার ওয়ালি।
।
আমিশা: বইন মাফ চাই চুপ থাক।
।
মিহু: কি সত্যি কথা ভালো লাগলো না?
।
আমিশা: তুমি যে কত সত্যবাদী তা আমার জানা আছে।
।
মিহু: বাবু তুমি কিছু বলবে না তোমার এই বউকে?
।
আশফি: আহ্ আমিশা আমার ছোট বউটাকে এভাবে বলছো কেন?
।
আমিশা: ডিভোর্স পেপার রেডি করব আমি?
।
আশফি: আরে না না আমি তো মজা করছিলাম।
।
আমিশা: হাহ্ উপরে যেয়ে মেয়ের সাথে দেখা করে আসো যাও।
।
আশফি: আচ্ছা,,,বাট তার আগে মেঘের খবর বলো কেউ। কেন ও মিহুকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল?
।
নীল: আই থিংক হি লাভ'স মিহু।
।
অনু: ইউ থিংক!!!! এন্ড আ'ম সিয়র দ্যাট মেঘ লাভ'স মিহু।
।
মিহু: গাইস স্টপ কিডিং।
।
আশফি: ইট'স নট কিডিং মিহু। আই অলসো এগরি উইথ নীল এন্ড অনু।
।
আমিশা: আই অলসো।
।
মিহু: কিন্তু মেঘ তো কিছু বলল না।
।
আমিশা: হয়তো বলতে চায় কিন্তু পারছে না।
।
আশফি: কিছু একটা হয়তো ওকে বাঁধা দিচ্ছে।
।
মিহু: আবার কি!!! ওর ইগো, ওর স্ট্যাটাস ওকে বাঁধা দিচ্ছে।
।
নীল: তুই কেন ওর সাথে এমন করিস?
।
মিহু: ওর এ্যারোগেন্ট মুড আমার মেজাজ খারাপ করে দেয়।
।
অনু: সামথিং সামথিং মিহু???
।
মিহু: হোয়াট রাবিশ!!! হ্যাভ ইউ গনা ম্যাড?
।
সবাই: অকে অকে কুল মিহু। উই আর জাস্ট কিডিং।
।
মিহু কিছু না বলে রেগে উপরে নিজের রুমে চলে গেল।
মিহু চলে যাওয়ার সাথে সাথেই ওরা চারজন অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। আশফি কোনোমতে নিজের হাসি থামিয়ে উপরে চলে গেল নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে। আমিশা আড্ডায় বসে পরলো নীল আর অনুর সাথে।
এদিকে মেঘ রুমে পায়চারি করছে। মিহুকে এতো সহজে ভুলে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব নয়। আসলেই আজকে মিহুর কথা গুলো যুক্তি যুক্ত ছিল। কিন্তু ওর রাগ লাগছে মিহু এনগেজড এই কথা ভেবে।
।
মেঘ: আমি আয়ান আহমেদ মেঘ চৌধুরী কি'না টেনশন করছি একটা মেয়ের জন্য। অবশ্য এই মেয়েটা কোনো সাধারণ মেয়ে না। এই মেয়েটা আমার নেশা। আমার এ্যাডিকশন এই মেয়ে। কিন্তু ও তো এনগেজড। এখন কি করি? কিভাবে ওকে বুঝাই যে আমি ওকে ভালোবাসি? ওকে কি আমি ভুলে যাবো? জাস্ট বিকজ অফ ও এনগেজড বলে আমি ওকে ভুলে যাবো? নো, নেভার। তাহলে কি করব? প্রপোজ করব ওকে? কিন্তু না করে দিবে জানা কথা। তাহলে কি করব আমি? কি করলে ও আমার প্রতি একটু সদয় হবে? অহ্ গড...... কিছুই বুতে পারছি না।
।
মেঘ একা একা বকবক করছিল। তখনি ওর বাবা ওর রুমের দরজায় কড়া নাড়লো।
।
ড্যাড: মেঘ!!!
।
মেঘ: অহ্ ড্যাড! কাম ইন।
।
ড্যাড: কি হয়েছে তোমার? কিছু নিয়ে চিন্তিত মনে হচ্ছে?
।
মেঘ: নো নাথিং সিরিয়াস ড্যাড। তুমি বলো কোনো দরকার ছিল?
।
ড্যাড: আগামীকাল বিকেলে মিস্টার রায়জাদার বাড়িতে যাচ্ছি আমরা। তার একমাত্র মেয়ের জন্মদিন আগামীকাল। সেই উপলক্ষে তিনি একটা পার্টি থ্রো করছেন। সো তুমি রেডি হয়ে থেকো কিন্তু।
।
মেঘ: মিস্টার রায়জাদা কে ড্যাড?
।
ড্যাড: আমাদের কলেজের আরেকজন ওউনার এবং মিহুর বাপি।
।
মেঘ: মিহুর বার্থডে কালকে?
।
ড্যাড: ইয়েস! কেন তুমি জানো না?
।
মেঘ: না তো!!!! এই ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
।
ড্যাড: অকে নো প্রবলেম এখন তো জেনেছো? সো রেডি হয়ে থেকো। আগামীকাল বিকেলে আমরা যাচ্ছি ওদের বাড়িতে।
।
মেঘ: অকে ড্যাড।
।
মেঘের বাবা চলে যাওয়ার পর মেঘ বেডে ধপ করে বসে পরে।
।
মেঘ: কাল মিহুর বার্থডে!!! আর আমি জানি না? হাউ ইজ ইট পসিবল? মানিক আর নীলার খবর আছে। এই দু'টোকে তো আমি পঁচা পানিতে চুবিয়ে মারবো। মিহুর বার্থডে!!! কি গিফট দিব ওকে? কি দেওয়া যায়? ফোন দিলে কেমন হয়? ধ্যাত ফোন তো আছেই ওর কাছে। তাহলে পারফিউম? এটাও কোনো মেয়ের বার্থডে তে দেওয়ার জিনিস? তাহলে কি? আল্লাহ্ প্লিজ কিছু তো আইডিয়া দাও।
।
পরেরদিন মিহুদের বাড়ি খুব সুন্দর করে লাটিং করে সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন রকম ফুল দিয়ে সাজিয়ে বাড়িটার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। চারিদিকে মেহমানদের আনাগোনা শোনা যাচ্ছে। মিহু বাড়িতে নেই। ওকে অনু, আশফি, আমিশা আর নীল মিলে ওদের সাথে নিয়ে গিয়েছে।
।
মিহু: আচ্ছা আমাকে জোর করে শপিংমলে কেন নিয়ে এসেছিস তোরা?
।
অনু: শপিং করব বলে চল।
।
মিহু: বাট আমার কোনো শপিং এর প্রয়োজন নেই।
।
আমিশা: বাট আমাদের আছে, সো চঅঅঅঅঅল।
।
মিহু: আরেএএএএ.....
।
অনু আর আমিশা মিলে মিহুর জন্য একটা রোজ রেড কালারের বারবি গাউন নিলো।
।
মিহু: বারবি গাউন কার জন্য?
।
অনু: তোর জন্য।
।
মিহু: কিন্তু কেন?
।
আমিশা: গিফট।
।
মিহু: কি উপলক্ষে?
।
আশফি: এতো জেনে কি করবে তুমি?
।
নীল: চুপচাপ যা হচ্ছে শুধু দেখে যা।
।
মিহু এবার রেগে বম হয়ে গেল।
।
মিহু: আজব তো তোরা এমন করছিস কেন? এই শপিং গিফটস্ এগুলো কেন কিনছিস? কিছুই বলছিস না। শুধু শুধু ধাঁধার মধ্যে কেন ফেলে রেখেছিস আমাকে?
।
নীল: শশশশ চল আমাদের সাথে এখন।
।
মিহু: যাব না আমি কোথাও তোদের সাথে।
।
আশফি: অকেহ্ তোমার যেতে হবে না আমিই নিয়ে যাচ্ছি।
।
এই বলে আশফি মিহুকে কোলে তুলে নিলো।
।
মিহু: আরে আশফি!!! কি করছো? নিচে নামাও আমাকে।
।
আশফি: একটাও কথা বললে ফেলে দিব কিন্তু কোল থেকে।
।
মিহু: এই না না না আমি চুপ করেছি তো। এই দেখো একদম ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে গেছি।
।
আশফি: হুমম গুড গার্ল।
।
অনু: জিজু ওকে গাড়িতে বসাও। এখন যাবো আমাদের বাসায় ওকে রেডি করানোর জন্য।
।
আশফি: অকেহ্।
।
আশফি মিহুকে গাড়িতে বসিয়ে দিল। ওরা সবাই অনুদের বাসায় চলে গেল।
আমিশা আর অনু মিলে মিহুকে সাজানো শুরু করলো। রোজ রেড কালারের বারবি গাউনটায় মিহুকে দেখতে অপূর্ব লাগছে। ঠোঁটে গাঢ় রোজ রেড কালারের লিপস্টিক। কানে লম্বা হোয়াইট স্টোনের চেন কানের দুল। গলায় একটা সিম্পল হোয়াইট ডায়মন্ড স্টোনের চিকন চেনের সাথে হোয়াইট স্টোনের লকেট। দু’চোখে টানা টানা করে আইলাইনার দেওয়া। চোখের উপরে ও নিচে আইস্যাডো দেওয়া। এক হাতে হোয়াইট স্টোনের ব্রেসলেট আর অন্য হাতে হোয়াইট স্টোনের চিকন কিছু চুড়ি। চুল গুলো মেসি বান করা। আর পায়ে হাই হিল পরা।
।
অনু: ওয়াও লুকিং গর্জিয়াস।
।
আমিশা: মিহু রে কারও নজর যেন না লাগে তোর।
।
মিহুকে নিয়ে রুমের বাইরে আসার পর আশফি আর নীলও হা করে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে।
।
নীল: ওয়াও ক্রাশ!!!!
।
আশফি: আমিশা ডিভোর্স দিবে নাকি?
।
আমিশা: তোমাকে তো আমিইইইইই.......
।
আশফি: না না না ঠিক আছে ঠিক আছে।
।
ওরা সবাই মিহুর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামাতেই মিহু গাড়ি থেকে নেমে গেল। মিহু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর বাড়ির দিকে। একদম অন্ধকার হয়ে আছে বাড়িটা। দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভূতের বাড়ি। অনু, আমিশা, নীল আর আশফি মিহুকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকার সাথে সাথেই চারপাশ থেকে বেলুন ফাটিয়ে আলো জ্বেলে উঠলো। মিহু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবাই জোরে চেচিয়ে বলে উঠলো, “হ্যাপি বার্থডে মিহু”। মিহু দু'হাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো। আজকে যে ওর জন্মদিন ও ভুলেই গিয়েছিল। মিহুর বাপি আর মাম্মাম মিহুর কাছে এলো।
।
বাপি: হ্যাপি বার্থডে প্রিন্সেস।
।
মাম্মাম: হ্যাপি বার্থডে মামনি।
।
মিহু: থ্যাংক ইউ মাম্মাম। থ্যাংক ইউ বাপি।
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_6
.
বাপি: হ্যাপি বার্থডে প্রিন্সেস।
।
মাম্মাম: হ্যাপি বার্থডে মামনি।
মিহু: থ্যাংক ইউ মাম্মাম। থ্যাংক ইউ বাপি।
।
আশফি, আমিশা, অনু & নীল: হ্যাপি বার্থডে সুইটু।
।
মিহু: লাভ ইউ সো মাচ গাইস।
।
আশফি, আমিশা, অনু & নীল: লাভ ইউ ঠু।
।
সবাই এসে মিহুর সাথে কথা বলছে ওকে উইশ করছে। মিহুও হেসে হেসেই কথা বলছে। ও খুব খুশি এরকম একটা সারপ্রাইজ পেয়ে। তখনি মিহুর বাপি মিহুকে ডাক দিল। আর মিহুও ওর বাপির কাছে চলে গেল।
।
বাপি: প্রিন্সেস এটা হলো তোমার ইরফান আঙ্কেল।
।
মিহু: লিসেন বাপি তোমার পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না ওনার সাথে। কারন আমি আঙ্কেলকে আগে থেকেই চিনি।
।
বাপি: তাই নাকি?
।
মিহু: জ্বিইই... আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। ভালো আছেন আপনি?
।
ইরফান চৌধুরী: ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি আম্মু। তুমি কেমন আছো?
।
মিহু: জ্বি আঙ্কেল ভালো আছি।
।
ইরফান চৌধুরী: তোমার সাথে আজকে একজনের পরিচয় করিয়ে দিব।
।
মিহু: কার সাথে আঙ্কেল?
।
ইরফান চৌধুরী: আমার ছেলের সাথে।
।
মিহু: অহ্ আচ্ছা তো কোথায় তিনি?
।
ইরফান চৌধুরী: এখানেই তো ছিল কোথায় গেল? ওই তো ওই যে আসছে।
।
মেঘ এদিকে আসতেই ওর চোখ দু'টো আটকে গেল মিহুর দিকে। ভয়ংকর সুন্দর লাগছে তার মেঘপরীকে। চোখ ফেরানোও যে দায় হয়ে পরেছে। চোখ দু'টো যেন সরতেই চাইছে না।
মিহু পেছনে তাকিয়ে দেখে মেঘ, মানিক আর নীলা একসাথে এদিকেই আসছে। মেঘকে দেখে মিহুর চোখ দু'টো ছোট ছোট হয়ে গেল। কারন মেঘকে কে ইনভাইট করলো সেটাই ভাবছে ও।
"দেখতে তো প্রচুর ড্যাসিং লাগছে। এই হ্যান্ডসাম ছেলেটার মেজাজটা যে কেন এত এ্যারোগেন্ট টাইপের আল্লাহ্ মাবুদ জানে" ভাবছে মিহু।
মেঘ ওর বাবার পাশে এসে দাঁড়ালো।
।
মেঘ: হেই ড্যাড ডেকেছিলে আমাকে?
।
ইরফান চৌধুরী: হ্যা! মিহু এই হচ্ছে আমার একমাত্র ছেলে আয়ান আহমেদ মেঘ চৌধুরী।
।
মিহু হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। "মেঘ ইরফান আঙ্কেলের ছেলে?"
।
মিহু: কিহ্? এই ইডিয়ট আপনার ছেলে?
।
মেঘ: হোয়াট?
।
মিহু: না মানে আঙ্কেল আপনি সিয়র ও আপনার ছেলে?
।
মেঘ: হোয়াট ননসেন্স!!!
।
ইরফান চৌধুরী: হসপিটাল থেকে তো এটাই বলেছিল যে ও আমার ছেলে।
।
মিহু: আঙ্কেল এমনও তো হতে পারে আপনার ছেলে এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। প্লিজ আঙ্কেল একটা ডিএনএ টেস্ট করিয়ে ফেলেন।
।
ইরফান চৌধুরী: আমিও মাঝে মাঝে ভাবি এই কথা।
।
মেঘ: ড্যাড আর ইউ ম্যাড? তুমি আমাকে ডাউট করছো? আর এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি? তুমি আমার ড্যাডকে কিসব বোঝাচ্ছো হ্যা?
।
মিহু: তো বলব না? এতো শান্তশিষ্ট আর বিনয়ী প্রকৃতি লোকের ছেলে কি'না এরকম এ্যারোগেন্ট আর এ্যাংরি ভাবা যায় এগ্লা?
।
মেঘ: সাট আপ!!!
।
মিহু: তোমার কথায়?
।
মেঘ: অবশ্যই।
।
মিহু: বাধ্য নই হাহ্।
।
মেঘ: তোমার আজকে খবর আছে।
।
মিহু: ফুসসসস।
।
মিহু: চুপ একদম চুপ!!!
।
মেঘের ধমক খেয়ে মিহু চুপ হয়ে গেল। ইরফান চৌধুরী আর আরমান রায়জাদা মিটমিটিয়ে হাসছেন ওদের ঝগড়া দেখে। মিহু গাল ফুলিয়ে ওদিক থেকে চলে আসলো। তখনি মিহুর বাপি মিহুকে ও সকলকে ডাকলো কেক কাটার জন্য। মিহু কেক কাটার সাথে সাথে সবাই জোরে হাত তালি দিয়ে উঠলো। সবার প্রথমে বাপি এবং মাম্মামকে কেক খাওয়ালো মিহু। তারপর আশফি, অনু, নীল, আমিশা, নীলা, মানিক তারপর মেঘের বাবাকে খাওয়ালো। মিহুর কি যেন মনে হলো ও কেক নিয়ে মেঘের সামনে যেয়ে ওর মুখের সামনে কেক ধরলো। মেঘ পুরো অবাক হয়ে গেল। মনে মনে খুশিতে ট্রাউজার ডান্স দিচ্ছে। ও মিহুর হাত ধরে অল্প একটু খেয়ে নিলো।
"এতো লোকের সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাই না বলে বাধ্য হয়ে খাওয়ালাম। নাহলে তোমাকে কেক খাওয়াব আমি? ইম্পসিবল। এ্যারোগেন্ট লোক একটা" ভাবছে মিহু।
ওদিকে আরমান রায়জাদা আর ইরফান চৌধুরী কি নিয়ে যেন কথা বলছেন। তাদের সাথে যেয়ে যোগ দিয়েছে আশফি, আমিশা, নীল, নীলা, মানিক ও অনু। মেঘ এদিক থেকে ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে। মিহু ওর কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিল। তখনি মেঘ খেয়াল করলো একটা ছেলে মিহুর দিকে কেমন করে যেন বারবার তাকাচ্ছে। ছেলেটার চাহনিটা যে সুবিধাজনক না তা ও বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। মেঘ নিজের হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে রাগে।
মিহু কথা বলতে বলতে হঠাৎ ওর কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগলো। ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে নেই। এই সুযোগে ও উপরে ওর রুমে চলে গেল। ওর গাউনের চেনটা কিভাবে যেন খুলে গেছে। চেনটা বড় হওয়ার কারনে ও লাগাতেও পারছে না। হঠাৎ পিঠে কারও হাতের স্পর্শ পেতেই ও পেছন ঘুরে তাকাতেই ওর চোখ দু'টো কপালে উঠে গেল।
।
মিহু: একি তুমি এখানে কি করছো?
।
মেঘ: আমি নিচে থাকতেই খেয়াল করেছি যে তোমার গাউনের চেইনটা খুলে গেছে। তাই হেল্প করতে এসেছি।
।
মিহু: হেল্প করতে এসেছো নাকি সুযোগ নিতে এসেছো?
।
মেঘ: মিহু মাইন্ড ইয়র ল্যাঙ্গুয়েজ।
।
মিহু: ভুল তো কিছু বলি নি। তুমি হেল্প করতে চাইলে অনু অথবা নীলাকে পাঠাতে পারতে। কিন্তু না তুমি তা করো নি। তুমি নিজে এসেছো। তার মানে তো এটাই দাঁড়ালো যে তুমি সুযোগ নিতেই এসেছো।
।
মেঘ: সাট আপ মিহু। আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইছি না। তুমি এতো ডিজগাস্টিং চিন্তা ভাবনা কিভাবে করতে পারো?
।
মিহু: তুমি করতে পারো সেই বেলায় কিছু না আর আমি বললেই সেটা ডিজগাস্টিং চিন্তা ভাবনা হয়ে গেল তাই না?
।
মেঘ মিহুর গাল এক হাত দিয়ে চেপে ধরে মিহুর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। মিহু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হাত দিয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিতেই মেঘ মিহুর থেকে সরে গেল। সাথে সাথেই মিহু মেঘের গালে জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
।
মিহু: ছিহ্ তুমি এই কাজটা কিভাবে করতে পারলে? আমি ঠিকই ছিলাম তার মানে। তুমি সুযোগ নেওয়ার জন্যই এসেছিলে।
।
মেঘ: ভালোবাসি তোমাকে ড্যাম ইট!!! সেজন্যই সব সময় তোমার আশেপাশে থাকি। তার মানে এই না যে তোমার সুযোগ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি আমি। নিজের চিন্তা ভাবনা গুলো একটু বদলাও।
।
এই কথা বলেই মেঘ মিহুকে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে গাউনের চেইনটা লাগিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
মিহু ওখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর এক হাত ওর ঠোঁটে উপর রয়েছে। আরেক হাতে নিজের জামা শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রেখেছে। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে ও।
হঠাৎ দরজায় কারও শব্দ শুনে মিহু পেছনে তাকালো। একজন অপরিচিত ছেলেকে নিজের রুমে দেখে মিহুর কিছুটা রাগ হলো।
।
মিহু: আপনি কে? আর এভাবে নক না করে আমার রুমে কেন ঢুকেছেন?
।
অজানা: আমি রাফি,,,আপনার বাবার বন্ধু মিস্টার আজওয়াদ রহমানের ছেলে।
।
মিহু: তো আমাকে কেন বলছেন এসব?
।
রাফি: তুমি অপরিচিত বললে না! তাই পরিচয় দিয়ে নিলাম।
।
মিহু: সরি বাট আমি আপনার কথা শুনতে ইচ্ছুক নই। প্লিজ আমার রুম থেকে চলে যান।
।
রাফি: আরে এত তাড়াতাড়ি যেতে কেন বলছো?
।
মিহু: মানেহ্?
।
রাফি: কিছুক্ষণ গল্প করি দু'জনে একসাথে। তারপর নাহয় নিচে যাওয়া যাবে।
।
মিহু: আরে আজব মানুষ তো আপনি। আপনাকে যখন আমি বলেছি যে আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই! তাহলে আমাকে এভাবে জোর করার মানে কি?
।
রাফি: আই থিংক আই লাইক ইউ।
।
মিহু: সেটা প্রতিদিন অনেকেই করে। তাই বলে আমার যে সবাইকে টাইম দিতে হবে তার কোনো মানে নেই।
।
রাফি: বাট আমি তোমাকে নিয়ে সিরিয়াস।
।
মিহু খেয়াল করলো রাফি ওর দিকে বাজে ভাবে তাকাচ্ছে।
।
মিহু: প্লিজ লিভ মাই ওয়ে।
।
মিহু রাফির পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলে রাফি মিহুর হাত ধরে ফেললো।
।
মিহু: আরেহ্ কি করছেন কি আপনি? আপনি আমার হাত কেন ধরেছেন?
।
রাফি: এত তাড়াতাড়ি তো তোমাকে ছাড়তে মন চাইছে না। আর কিছুক্ষণ থাকো। দু'জন একসাথে কিছুক্ষণ একা সময় কাটাই।
।
মিহু: হাত ছাড়ুন আমার।
।
রাফি: এত সহজে তো কখনোই না।
।
মিহু: প্লিজ হাত ছাড়ুন নয়তো আমি চিৎকার করব।
।
রাফি: কোনো লাভ হবে না। নিচে লাউড মিউজিক বাজছে। কেউ তোমার চিৎকার শুনতে পাবে না।
।
মিহু: আপনি এমন কেন করছেন আমার সাথে? প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন আপনি।
।
রাফি: এখন তো শুধু হাতটা ধরেছি। এখনো তো আরও কাছে আসা বাকি আছে।
।
রাফি জোর করে মিহুর কাছে এসে মিহুর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর মিহু বারবার ওকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ও রাফির শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। মিহুর চোখ থেকে পানি পরছে। রাফি জোর করে মিহুকে কিস করতে গেলেই পাশ থেকে রাফিকে কে যেন জোরে ঘুষি দিয়ে সরিয়ে দিল। মিহু পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘ রক্তচক্ষু নিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। #Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_7+8
.
রাফি জোর করে মিহুর কাছে এসে মিহুর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর মিহু বারবার ওকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ও রাফির শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। মিহুর চোখ থেকে পানি পরছে। রাফি জোর করে মিহুকে কিস করতে গেলেই পাশ থেকে রাফিকে কে যেন জোরে ঘুষি দিয়ে সরিয়ে দিল। মিহু পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘ রক্তচক্ষু নিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
মিহু কান্নারত অবস্থায় মেঘকে দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেঘও এক হাতে মিহুকে জড়িয়ে ধরলো। রাফি উঠে এসে মেঘের সামনে দাঁড়ালো।
।
রাফি: কি ভাই আমাকে মারলে কেন?
।
মেঘ: তুই ওর গায়ে হাত দিয়েছিস কোন সাহসে?
।
রাফি: এই মালটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তাই একটু.....
।
মেঘ আবারও রাফির মুখে এক হাত দিয়ে ঘুষি দিল। তাতে রাফির নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পরতে লাগলো। রাফি উঠে এসে মেঘকে ধাক্কা দিল। শুরু হয়ে গেল দু'জনের মধ্যে মারামারি।
তখনি মিহুর রুমে মানিক, নীলা, অনু, নীল, আমিশা আর আশফি ঢুকলো। ওরা এই অবস্থা দেখে মিহুর কাছে আসলো। মিহু ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। মিহুর কাছে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই মিহু রাফির করা বাজে আচরণের ব্যাপারে সব বলে দেয়। মেঘ ওর মতো রাফিকে মারতেই আছে। অবস্থা বেশি বেগতিক দেখে আশফি, নীল আর মানিক গিয়ে মেঘকে আটকালো। মেঘ তারপরও ছুটে যেয়ে মারতে চাইছে রাফিকে। কিন্তু আশফি, মানিক আর নীল শক্ত করে ধরে রেখেছে বলে পারছে না।
আশফি আর নীল মিলে রাফির কলার ধরে ওকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। বাড়ির বাইরে যেয়ে ওরা দু'জনে মিলে একসাথে কয়েকটা ঘুষি আর থাপ্পড় দিয়ে বের করে দিল ওকে। রাফি রাগে, জিদে, ক্ষোভে আর অপমানে চলে গেল ওখান থেকে।
এদিকে আমিশা, অনু আর নীলা মিলে মিহুকে ধরে বেডে বসিয়ে দিল। অনু বেড সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে মিহুকে খাওয়ালো। তখনো মেঘ রাগে ফুঁসছে। মিহু একদম চুপ হয়ে গিয়েছে। মেঘ রেগে সেন্টার টেবিলটায় এক লাথি দিয়ে ভেঙে ফেললো। মিহু কেঁপে উঠলো মেঘের এমন রাগে। মেঘ সাথে সাথেই হুংকার দিয়ে উঠলো।
।
মেঘ: আমাকে বলতে পারো আমি তোমার সুযোগ নিতে এসেছি! ওকে দেখে বুঝতে পারো নি যে ও তোমার সুযোগ নিতে এসেছে? আমার গায়ে হাত তুলতে পারো তোমাকে কিস করেছি বলে! ওর গায়ে হাত তুলতে পারো নি তোমার সাথে জোর জবরদস্তি করছিল বলে? রাগ শুধু আমার উপরই দেখাতে পারো তুমি তাই না? আর কারও উপরে রাগ দেখাতে তোমার কষ্ট লাগে?
।
মিহু: (.....নিশ্চুপ....)
।
মেঘ: এই এই একদম চুপ করে থাকবে না আমার সামনে। নাহলে দু'গালে দুইটা মেরে একেবারে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিব বলে দিলাম।
।
মিহু ভয়ে কেঁপে উঠলো। কিন্তু তাও চুপ করে রইলো।
।
মেঘ: কি হলো কথা বলো। [ধমক দিয়ে]
।
মিহু: ক..কি?
।
মেঘ: চুপ একদম চুপ!!! আবার জিজ্ঞেস করছো কি?
।
মিহু এবার শব্দ করেই কেঁদে দিল মেঘের বকা দেওয়ায়। মেঘ বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালো। মিহুর দিকে তাকাতেই ওর রাগ সব গলে পানি হয়ে গেল। বাচ্চাদের মতো নাক টানছে সমানে। আর ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদছে। দুধে আলতা চেহারাটা লাল টমেটো হয়ে গেছে ফুলে। নাকের মাথাটা লাল টকটকে হয়ে আছে। দেখতে অনেক কিউট লাগছে ওকে। মেঘের ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ফুটে উঠলো। মুহূর্তেই আবার চেহারায় রাগী ভাব নিয়ে আসলো।
।
মেঘ: ড্যাম ইট!!!
।
মেঘ বেরিয়ে গেল মিহুর রুম থেকে। মেঘের পেছন পেছন নীলা আর মানিকও বেরিয়ে গেল। আশফি, আমিশা, নীল আর অনু মিহুকে শান্তনা দিয়ে নিচে চলে গেল। মিহু সাথে সাথেই রুমের গেট লক করে দিল। ও আর নিচে যায় নি। মিহুর বাপি আর মাম্মাম মিলে সব গেস্টদের বিদায় দিয়ে, তারাও ফ্রেশ হয়ে নিলো। মিহুর মাম্মাম মিহুকে রাতে ডিনার করার জন্য ডাকতে গেলে মিহু সাফ মানা করে দেয় যে ও খাবে না। এরপর মিহুর মাম্মাম-বাপি উভয়ই মিহুকে ডেকেছে খাওয়ার জন্য। কিন্তু মিহু রাজি হয় নি। ইনফ্যাক্ট ও রুমের দরজাই খুলে নি। মিহুর বাপি আর মাম্মাম মিহুর জেদের কাছে হার মেনে চলে গেল।
এদিকে মিহুর কিছু ভালো লাগছে না। বারবার শুধু একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভাবছে। ঘটনাটা মনে পরতেই ওর পুরো শরীর শিউরে উঠছে। মেঘ যদি আজ ঠিক সময় না আসতো তখন কি হতো ওর? বড় টেডিটার কোলে শুয়ে, মাঝারি সাইজের টিডিটাকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে ও। মেঘ যে ওকে ভালোবাসি কথাটা বলেছে, ভাবতেই ওর চেহারায় খুশির ঝলক দেখা দিল।
মিহু আরও জোরোসরো হয়ে টেডির কোলের ভেতরে ঢুকে গেল। মেঘের কথা গুলো ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে ও।
"আজকে যখন মেঘ কিস করছিল, তখন মনে এক অজানা অনুভূতি কড়া নাড়ছিল। অনুভূতিটা খুবই প্রখর ছিল। এমন অনুভূতি হচ্ছিল তখন, মনে হয়েছিল সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো তবে মন্দ হতো না।"
"মেঘ যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকে, তাহলে এতদিন বলে নি কেন এই কথা? মনে হয় নার্ভাস ছিল খুব তাই। হ্যা এটাই হবে হয়তো।"
"ইশশ!!! আজকে মেঘকে ওভাবে থাপ্পড় মারাটা আমার একদম উচিত হয় নি। ও তো নিশ্চই খুব রাগ করেছে আমার উপর।"
"কিন্তু ও যে আমাকে কিস করলো! তখন কিন্তু সত্যি বলতে আমার একটুও রাগ হয় নি। বরং ভালো লেগেছিল। এক অন্য রকম ভালো লাগা আর লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি কাজ করছিল।"
"আচ্ছা আমি ওকে নিয়ে এতো কেন ভাবছি? তবে কি আমার মনে ও জায়গা করে নিয়েছে? আর এই অনুভূতি কি প্রথম প্রেমে পরার অনুভূতি বলা যায়?"
"না না আমি এসব কি ভাবছি? ধুর!!! ভাবছি তো ভাবছি কি হয়েছে এতে? কিন্তু সত্যি কি এটা প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি? না'কি অন্যকিছু?"
"অন্যকিছু কিই'বা হবে? তারপরও নিজেকে কিছুদিন সময় দিয়ে দেখতে চাই আমি। এমনও তো হতে পারে এটা শুধু আমার ভালো লাগা!!!"
মিহু এমন নানা ধরনের কথা ভাবছে। এসব ভাবতে ভাবতেই ও ঘুমিয়ে গেল।
এদিকে মেঘ ভিষণ রেগে আছে মিহুর উপর। কারন একটাই মিহু ওকে থাপ্পড় মেরেছে। আজ পর্যন্ত কেউ ওর গায়ে হাত তোলার সাহস পায় নি। কিন্তু আজ মিহু সেই সাহসটা দেখিয়েছে। ভাবতেই রাগ লাগছে মেঘের। হঠাৎ ওর মন পরলো মিহুর থাপ্পড় মারার কারনটা। সাথে সাথেই মেঘ মাথায় হাত দিয়ে চুল আঁকড়ে ধরলো।
"অহ্ নো.... এটা আমি কি করেছি? আমি মিহুকে.... আমি.... আমি ওকে কিস করেছি? তাও রাগের মাথায়? আবার আই লাভ ইউ'ও বলে দিয়েছি? অহ্ গড!!!! ড্যাম ইট!!! কাজটা একদম ঠিক হয় নি।"
"আর বাই দা ওয়ে! রাফির সাহস কি করে হলো মিহুকে টাচ করার? আজকে তো ওকে আমি মেরেই ফেলতাম যদি না ওরা আমাকে আটকাতো। কেন যে আটকাতে গিয়েছিল ওরা আল্লাহ্ জানে!!! নাহলে আজকেই ওর শেষ দিন হতো এই পৃথিবীতে।"
"বাট মিহু তো এখন সত্যি সত্যি এটাই ভাববে যে আমি ওর সুযোগ নিতে চেয়েছি। তাই ওকে কিস করেছি।"
"মিহুর তো রিয়্যাক্ট করার কথা ছিল'ই। কারন ও এনগেজড। সো অন্য একজন ওকে কিস করলে অবশ্যই ও সেটা স্বাভাবিক ভাবে নিবে না।"
"মিহুর মাইন্ডে এখন আমাকে নিয়ে কি চলছে? ওর কি আমার প্রতি একটুও ফিলিংস নেই?"
"না না এসব আমি কি ভাবছি!!! আমার প্রতি ওর কোনো ফিলিংস কেন থাকবে? ও তো আমাকে সহ্য'ই করতে পারে না।"
"কি দোষ করেছিলাম আমি? তোমাকেই কেন আমার ভালোবাসতে হলো?"
এসব নানা ধরনের কথা ভাবতে ভাবতে মেঘ ওয়াইনের গ্লাসে মুখ দিল। ওর দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে সামনে ল্যাপটপে থাকা মিহুর হাসিমাখা ছবিটার দিকে।
মেঘ বর সেজে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয়তমার জন্য। মিহু মুচকি হেসে মেঘের দিকে এগিয়ে যেতে গেলেই অন্য একটি মেয়ে এসে মেঘের হাতে হাত রাখে। মেঘও সেই মেয়েটির হাতে চুমু দিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে। মিহুর সামনে মেঘ অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে চলে গেল বিয়ে করতে।
এসব স্বপ্ন দেখে মিহু লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেললো। ও এখনো চোখ বন্ধ করে বসে আছে। রাগে ওর শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কারন একটাই! মেঘ কেন অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করতে নিয়ে গেল!!! এসব ভেবেই সকাল সকাল মিহুর মেজাজটা বিগড়ে গেল। ও কম্বলের নিচ থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। মুখে কতক্ষণ পানির ঝাপটা দিতেই ও বুঝতে পারলো ও স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু তাও মেজাজ ৮৮০ ভোল্ট গরম হয়ে আছে। মিহু ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ধীরেসুস্থে রেডি হয়ে নিচে চলে গেল।
এতো সকালে মিহুকে দেখে মিসেস রায়জাদা হা হয়ে গেলেন। মিস্টার রায়জাদা নিজের চোখ ডলে ভালো করে দেখলেন এটা আসলেই তার মেয়ে মিহু।
।
মাম্মাম: মিহু!!!
।
মিহু: হু...
।
মাম্মাম: তুমি এতো সকালে?
।
মিহু: কয়টা বাজে?
।
বাপি: মাত্র ৮ টা বাজে।
।
মিহু: অহ্।
।
বাপি: কি হয়েছে মামনি তোমার মুড অফ মনে হচ্ছে?
।
মিহু: কিছু হয় নি বাপি।
।
মাম্মাম: গতকাল রাতে কি হয়েছিল? এতো করে ডিনারের জন্য আমি আর তোমার বাপি তোমাকে ডাকলাম, কিন্তু তুমি কোনো সারাই দিলে না।
।
মিহু: ভালো লাগছিল না তাই।
।
বাপি: আমার মামনিকে কে কি বলেছে বলো তো?
।
মিহু: কেন?
।
বাপি: গাল ফুলিয়ে রেখেছে কেন তাহলে?
।
মিহু: এমনি বাজে স্বপ্ন দেখেছি তাই।
।
মাম্মাম: কি এমন স্বপ্ন দেখেছো যে সব সময় যেই মুখে হাসি থাকে আজ সেই মুখে চন্দ্রগ্রহণ হয়ে আছে?
।
মিহু: মাম্মাম ওই মে.... না কিছু না।
।
"এই রে একটু হলেই তো স্বপ্নে দেখা মেঘের কথাটা বলে দিতাম। একটুর জন্য বেঁচে গেছি।"
।
বাপি: কিছু একটা বলতে যেয়েও থেমে গেলে মনে হলো?
।
মিহু: আচ্ছা তোমরা আমাকে জেরা করছো কেন?
।
মাম্মাম: জেরা কোথায় করছি? জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম।
।
মিহু: হুম!!! ব্রেকফাস্ট দাও তাড়াতাড়ি।
।
মাম্মাম: দিচ্ছি বসো।
।
মিসেস রায়জাদা মিহুকে খাবার দেওয়ার পর মিহু তাড়াতাড়ি করে খেয়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে গেল। ও গাড়ি ড্রাইভ করছে আনমনে। মাথায় বারবার স্বপ্নে দেখা দৃশ্য গুলোই কড়া নাড়ছে। ও চাইছে না এসব ভাবতে। কিন্তু তাও এসব ভাবা বন্ধ করতেও পারছে না। স্পেশালি মেঘের দৃশ্যটা না'ই। মিহুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আবার মুহূর্তের মধ্যে।
পার্কিং-এ গাড়িটা রেখে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো ও। কোথাও মেঘের গাড়ি নেই।
"তার মানে মেঘ এখনো আসে নি। কিন্তু ওর তো এতক্ষণে চলে আসার কথা। তাহলে কি আমি আজকে বেশি আগে চলে এসেছি?"
"ধুর!!! কি সব ভাবছি আমি? যাই অনু আর নীলের সাথে দেখা করে আসি।"
মিহু ক্যান্টিনে চলে গেল। ক্যান্টিনে ঢুকতেই দেখতে পেলো অনু আর নীলকে। মিহুকে আজ এতো তাড়াতাড়ি দেখে নীল আর অনুর চোখ তো কপালে উঠে গেল। অনু আর নীল একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার মিহুর দিকে তাকালো। নিজেদের চোখ ভালো করে মুছে নিয়ে দেখলো আসলেই মিহু এসেছে।
।
অনু: কিরে সূর্য আজকে কোন দিকে উঠেছে?
।
নীল: ভুল দেখছি না তো? তুই আসলেই মিহু তো?
।
মিহু ওদের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে তাকালো ওদের দিকে।
।
মিহু: থাপ্পড় না লাত্থি কোনটা দিলে বিশ্বাস করতে সুবিধা হবে তোদের?
।
অনু & নীল: একটাও দেয়া লাগবে না।
।
মিহু: তাহলে এমনি এমনি বিশ্বাস করে নে।
।
নীল: চল ক্লাসে যাই।
।
মিহু: হুম চল।
।
অনু: অকেহ্।
।
মিহু, নীল আর অনু হল রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ই একটা পরিচিত গানের কন্ঠ শুনতে পেলো। মিহু সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেল ওখানে। নীল আর অনুও দাঁড়িয়ে গেল মিহুকে দাঁড়াতে দেখে।
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_8
.
মিহু, নীল আর অনু হল রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ই একটা পরিচিত গানের কন্ঠ শুনতে পেলো। মিহু সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেল ওখানে। নীল আর অনুও দাঁড়িয়ে গেল মিহুকে দাঁড়াতে দেখে। মিহু হল রুমের সামনে যেয়ে গেট খুলতেই দেখতে পেলো মেঘকে। মেঘ হাতে গিটার নিয়ে বসে আছে। মেঘের গিটার বাজানো দেখে মিহু কিছুটা অবাক হলো। কারন ও জানতো না যে মেঘ গিটার বাজাতে জানে।
গিটার বাজাতে বাজাতে মেঘের চোখ গেল গেটের দিকে। ওখানে মিহুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই মুচকি হাসলো। আজকে ওর মুড খুব ফ্রেশ। যার কারন হলো মেঘের ড্যাড। মিহুকে দেখে মেঘ গিটার বাজিয়ে গান ধরলো।
ঠিক এমন এভাবে,
তুই থেকে যা স্বভাবে।
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই,
আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল, ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা।
কথা দেওয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
তোরই মতো কোন একটা কেউ,
কথা দিয়ে যায়, ছায়া হয়ে যায়।
তোরই মতো কোন একটা ঢেউ,
ভাসিয়ে আমায়, দূরে নিয়ে যায়।
ছুঁয়ে দে আঙুল, ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা।
কথা দেওয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
আটকে তোকে রাখতে চাইছি খুব,
সকালে আমার, বিকেলে আমার।
তুই ডাক না দিলে থাকবো আমি চুপ,
দিনেতে আমার, দুপুরে আমার।
ঠিক এমন এভাবে,
তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই,
আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল, ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা।
কথা দেওয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
গান শেষ করে মেঘ মিহুর দিকে তাকালো। মিহু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। মেঘের গানের গলা যে এত সুন্দর তা মিহুর আগে জানা ছিল না। গানটা যে মিহুকে ডেডিকেট করে গাওয়া, তা বুঝতে সময় লাগলো না ওর।
মেঘ আড়চোখে মিহুর দিকে তাকাচ্ছে। ও এখন যথাসম্ভব মিহুর থেকে দূরে থাকতে চায়। কারন মিহু ওকে থাপ্পড় মেরেছে তাই। মেঘ মিহুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে উঠে মিহুর পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
মেঘকে এভাবে চলে যেতে দেখে মিহু ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর যাওয়ার দিকে। মিহুও আর কিছু না ভেবে মেঘের পেছন পেছন দৌড়ে গেল।
অনু আর নীল হল রুমেই দাঁড়িয়ে রইলো। নীলা আর মানিকও হল রুমেই বসে ছিল। মেঘকে এভাবে চলে যেতে দেখে ওরা একটু অবাক হলো। ওরা মেঘের পেছনে যেতে যেয়ে মিহুকে মেঘের পেছনে যেতে দেখে ওরা আর গেল না। মানিক অনুর দিকে তাকাতেই অনু মুখ ভেংচি দিল। নীল নীলার দিকে তাকাতেই নীলা ভাব দেখিয়ে ওর কাঁধের সামনে আসা চুল গুলো পেছনে ছিটিয়ে দিল।
।
মানিক: পেত্নী মুখ ভেংচি দিও না। নাহলে মুখটা বাঁকা হয়ে যাবে।
।
অনু: আমি পেত্নী আমি জানি। তোমার বলতে হবে না।
।
মানিক: নিজের প্রশংসা নিজেই!!!
।
অনু: হ্যা তো?
।
মানিক: আচ্ছা এতো ঝগড়া কেন করো তুমি?
।
অনু: কিহ্ আমি ঝগড়া করি? আমি ঝগড়া করি?😡
।
মানিক: এই দেখো এখনো তো কেমন ঝগড়া করছো।
।
অনু: আমি না ঝগড়া তুই করিস। তোর ১৪ গুষ্টির ফ্রেন্ড সার্কেল ঝগড়া করে।
।
মানিক: আমার ১৪ গুষ্টির ফ্রেন্ড সার্কেল এখানে কোত্থেকে এলো?
।
অনু: তো আমাকে বললি কেন আমি ঝগড়া করি?
।
মানিক: আরে তুই তোকারি কেন করছো?
।
অনু: সব দোষ তোর। আমার মেজাজটাই খারাপ করে দিছিস তুই। শয়তান বজ্জাত পোলা জানি কোথাকার।
।
অনু হনহন করে হল রুম থেকে বের হয়ে গেল। মানিক হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনু হল রুমের বাইরে এসে ফিক করে হেসে দিল। ও হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে গেল।
নীলা বসে বসে চ্যাটিং করছে দেখে নীল ওকে খোঁচা মেরে বলল।
।
নীল: কোন ভালো মানুষের হায়াত কমাচ্ছো?
।
নীলা: মানে কি?
।
নীল: তুমি তো কোনো মানুষের সাতে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলো না। তাই বললাম আর কি।
।
নীলা: তুমি কি বলতে চাইছো আমি অস্বাভাবিক আচরণ করি?
।
নীল: সে আর বলতে?
।
নীলা: তুমি মনে হয় খুব স্বাভাবিক আচরণ করো?
।
নীল: এনি ডাউট?
।
নীলা: চেহারাটা একবার আয়নায় দেইখো একদম বান্দরের মতন লাগে দেখতে।
।
নীল: কিহ্? আমার মতন এমন হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে তুমি এটা বলতে পারলে?
।
নীলা: এহ্ আসছে হ্যান্ডসাম ছেলে!!! এর থেকে তো তেলাপোকাও কিউট হয়।
।
নীল: হোয়াট দ্যা.....
।
নীলা: হেল!!!
।
নীল রেগে কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেল। আর হনহন করে হল রুম থেকে বের হয়ে গেল। নীলা ওখানেই হেসে দিল। ও হাসতে হাসতে আবার ফোন টিপতে লাগলো।
এদিকে মেঘ ক্যান্টিনে যেয়ে বসলো। মিহুও মেঘের পেছন পেছন এসে মেঘের সামনে বসলো। মেঘ একবার মিহুর দিকে তাকিয়ে নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মিহু বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে বসে রইলো। কিন্তু মেঘ ওর সাথে কোনো কথা বলছে না দেখে মিহু এবার রেগে গেল। মেঘের হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নিলো ও। মেঘ বিরক্ত হয়ে তাকালো ওর দিকে। মিহু মেঘের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। মেঘ মিহুর কাজে অবাক হয়ে গেল। মিহু পার্কিং-এ এসে মেঘের হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো। মিহুর চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
।
মেঘ: হোয়াট ইজ দিস্?
।
মিহু: আমাকে ইগনোর করছো কেন?
।
মেঘ: সরি!!! আমি কেন তোমাকে ইগনোর করব?
।
মিহু: তাহলে কথা বলছো না কেন?
।
মেঘ: এমনি মুড নেই।
।
মিহু: মুড নেই বললেই হলো? তাহলে গতকাল কিস কেন করেছিলি বল?
।
মেঘ: কিস করতে মন চেয়েছিল তাই করেছি।
।
মিহু: ওই আমাকে কি তোর সরকারি মনে হয়! যে যখন ইচ্ছে তখন কিস করবি?
।
মেঘ: চুপ!!! একদম চুপ। সরকারি মানে কি হ্যা? নিজেকে এতো সস্তা কেন ভাবো তুমি?
।
মিহু: আমি নিজেকে সস্তা ভাবি?
।
মেঘ: না ভাবলে এই কথাটা বলতে পারতে না।
।
মিহু: তাতে তোর কি?
।
মেঘ: অনেক কিছু। আর তুই তোকারি বন্ধ করো।
।
মিহু: আমি আজকে দেখেছি তুমি আমাকে সামনে রেখে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছো। এটা কি সত্যি?
।
মেঘ: সত্যি তো না তবে হতে পারে। কজ আমার বিয়ে ফিক্সড হয়ে গিয়েছে।
।
মিহু: কিহ্?
।
মেঘ: ইয়াপ।
।
মিহু: আর ইউ কিডিং মি?
।
মেঘ: নোপ!
।
মিহু: তাহলে আমাকে কিস করলি কেন গতকাল রাতে?
।
মেঘ: ইট'স নট এ বিগ ডিল।
।
মিহু: তোকে আম......
।
মুহূর্তেই মিহু নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। আর ওর হাত দু'টো আবদ্ধ হলো মেঘের শার্টের কলারে। মেঘ পরম আবেশে মিহুর ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে যাচ্ছে। মেঘের দু'হাত মিহুর কোমড়ে আবদ্ধ হয়ে আছে। কতক্ষণ যে ওরা এভাবে ছিল তার হিসেব নেই। কিছুক্ষণ পরে মিহুকে ছেড়ে দিতেই মিহু চিল্লিয়ে উঠলো।
।
মিহু: ওই হুতুম পেঁচা তোর না বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? তারপরও তুই আবার আমাকে কিস করলি? লুচু হনুমান জানি কোথাকার। তোর বউয়ের উপরে ঠাডা পরব। তুই বিধবা হবি। তোর বউ চারচোখা হইবো। বজ্জাত পোলা, লাল মুরগী, ট্যারা বান্দর, কান কাটা পেত্নু, লেজ ছাড়া টিকটিকি, ছাল ছাড়া মোরগ, ইবলিশ শয়তান, জাপানিজ বিল্লি, নাইজেরিয়ান এনাকন্ডা, অস্ট্রেলিয়ান জিরাফ, আফ্রিকান ডাইনোসর আর যেন কি???
।
মেঘ: এগুলো কি ছিল?
।
মিহু: তোর জন্য অভিশাপ আর আমার স্পেশাল গালি।
।
মেঘ: আমার বউয়ের ব্যাপারে এতো কিছু বলার সাহস কে দিল তোমাকে? আমার বউ সবার থেকে আলাদা। ওর সাথে কারও তুলোনা হয় না। ও একদম আমার মনের মতো। আমার মনের রাণী ও। আমার মেঘপরী ও। তার মধ্যে তুমি কে?
।
মেঘের কথা শুনে মিহুর চোখে পানি চলে আসলো। এই ছেলেটা গতকালই ওকে বলল যে ভালোবাসে! আর আজকেই তার সমস্ত ভালোবাসা অন্য একটা মেয়ের নামে করে দিল? এটা কিভাবে সম্ভব? ভাবছে মিহু।
।
মিহু: সরি।
।
মিহু আর কিছু না বলে দ্রুত পা চালিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে চলে গেল।
।
মেঘ: আরে মি....
।
মেঘ মিহুর এমন ব্যবহারের মানে কিছুই বুঝলো না। ও কি ভুল দেখলো? মিহুর চোখে কি সত্যি পানি ছিল? কে জানে এখন ওর এতো কিছু ভাবার সময় নেই। ও চলে গেল ওখান থেকে।
মিহু নাক টানতে টানতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাশেই বসে আছে মিহুর বাপি। মিহুর মাম্মাম রান্নাঘরে রান্না করছে। মিহু আসার পর থেকেই কান্না করে যাচ্ছে। কান্না তো না একে বলে ন্যাকা কান্না। কিন্তু চোখের পানি আছে এতে। মিহুর বাপি মেয়ের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু মিহু কোনো কথা বলছে না। উল্টো আরও জোরে কান্না করছে।
।
বাপি: মামনি কি হয়েছে তোমার?
।
মিহু: (ন্যাকা কান্নায় ব্যস্ত)
।
বাপি: তুমি না বললে আমি বুঝব কি করে?
।
মিহু: (ন্যাকা কান্নায় ব্যস্ত)
।
বাপি: আচ্ছা তোমাকে কে কি বলেছে আমাকে বলো। আমি তার ১৪ গুষ্টির তুষ্টি করে ফেলব।
।
মিহু: বাপিইইইই...... (ন্যাকামি করে)
।
বাপি: বলো মামনি।
।
মিহু: ওই... ওই মেঘ
।
এটুকু বলেই আবার ন্যাকামি করে কাঁদতে লাগলো।
।
বাপি: মেঘ! মানে ইরফান চৌধুরীর ছেলে?
।
মিহু: হুমম বাপি ওই মেঘ। ও... ও আমাকে.... (আবার ন্যাকা কান্না)
।
বাপি: ওকি বলেছে তোমাকে মামনি?
।
মিহু: ও গতকাল আমাকে বলেছে আমাকে নাকি ভালোবাসে। আর আজ যখন আমি ওর সাথে কথা বলতে গেছি তখন ও বলল ওর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
।
মিহু ন্যাকামি করে কথা গুলো বলে আবার কাঁদতে লাগলো। মিহুর বাপি মেয়ের কথায় হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছেন না।
।
বাপি: তো তুমি কি মেঘকে ভালোবাসো?
।
মিহু: জানি না তো বাপি। কিন্তু মেঘের মুখে অন্য একটা মেয়ের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি তো ওর হবু বউকে ইচ্ছে মতো অভিশাপ দিয়ে এসেছি। কত বড় সাহস ওর যে আমার মেঘকে বিয়ে করবে!!!
।
বাপি: তোমার মেঘ!!!
।
মিহু: বাপিইইইইইই........
।
বাপি: অকে অকে মামনি আ'ম সরি।
।
মিহু: এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ......
।
বাপি: মামনি কান্না করে না।
।
মিহু: তার মানে আমার দেখা স্বপ্ন সত্যি হয়ে গিয়েছে।
।
বাপি: কোন স্বপ্ন?
।
মিহু সব ওর বাপিকে খুলে বলল। ওর বাপি মিটমিট করে হাসছে মেয়ের কান্ড দেখে।
।
বাপি: মামনি শোনো আমি তোমাকে আইডিয়া দেই।
।
মিহু লাফ দিয়ে ওর বাপির দিকে ঘুরে বসলো।
।
বাপি: আগে কান্না থামাও।
।
বাপি মিহুর গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিল।
।
মিহু: এবার বলো।
।
বাপি: শোনো মামনি! ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়েটা তো আর হয়ে যায় নি তাই না?
।
মিহু: হুম।
।
বাপি: তাই তুমি ওকে এখন ইচ্ছে মতো জ্বালাও বা এমন কিছু করো যাতে ওর মন আবার তোমার দিকে চলে আসে।
।
মিহু: থ্যাংক ইউ বাপি। ইউ আর জিনিয়াস।
।
বাপি: ওয়েলকাম মামনি।
।
মিহু উঠে ওর রুমে চলে গেল। রুমে যেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেলো মেঘ ওর এনগেজমেন্টের ই
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_9+10
.
মিহু উঠে ওর রুমে চলে গেল। রুমে যেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেলো মেঘ ওর এনগেজমেন্টের ইনভাইটেশন পাঠিয়েছে। এটা দেখেই মিহু রেগে গেল।
এদিকে মিহুর বাপি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে মেয়ের কথা গুলো ভেবে। তখনি মিহুর বাপির ফোনে কল আসলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইরফান চৌধুরী কল দিয়েছে। উনি মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করলেন।
।
ইরফান: কি খবর বেয়াই সাহেব?
।
আরমান: বেয়াই সাহেব খবর তো পুরাই গরম।
।
ইরফান: কেন?
।
আরমান রায়জাদা তার মেয়ের সব কথা বললেন ইরফানকে। ওদিকে ইরফান চৌধুরীও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এদিকে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। মিহু মেঘের সাথে কথা বলতে গেলেই মেঘ মিহুকে এড়িয়ে যায়। যা মিহুর একদম ভালো লাগে না। এখন আশফির সাথে থেকে মেঘকে জেলাস ফিল করাতে চাইলেও পারে না। কারন মেঘ পাত্তা দেয় না। মিহুও দিন দিন চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। মেঘের এই ব্যবহার গুলো ভালো লাগছে না ওর। তাই ও ঠিক করেছে ও মেঘের বাসায় যাবে আজকে। আর মেঘের বাবাকে পটাবে।
এদিকে কলেজ ক্যাম্পাসের মাঠে বসে আছে অনু আর নীল। তখনি ওরা দেখলো মানিক আর নীলা একসাথে কলেজে ঢুকছে। মানিক আর নীলাকে এতোটা ক্লোজ দেখে নীল আর অনুর কোনো রিয়্যাকশন নেই। কারন ওরা জানে যে মানিক আর নীলা বেস্ট ফ্রেন্ড। সো ক্লোজ হতেই পারে। কিন্তু আশেপাশের অনেকেই বলাবলি করছে যে, "হাউ কিউট কাপল দে আর"। এই কথাটা শুনেই অনু আর নীলের মেজাজা গরম হয়ে গেল।
অনু উঠে মানিকের সামনে গেল। নীলা অনুকে দেখে 'হাই' দিল। অনু নীলাকে কিছু না বলে মানিকের কলার ধরে টেনে ওখান থেকে মানিককে নিয়ে যেতে লাগলো। মানিক আর নীলা দু'জনেই হতবাক অনুর কাজে।
নীলা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি ওর পেছনে নীল এসে দাঁড়ালো। নীল নীলার হাত শক্ত করে ধরে পার্কিং-এ নিয়ে গেল। নীলা চেঁচামেচি করছে। কিন্তু নীল কানে তুলছে নীলার কথা। পার্কিং-এ এসে নীলার হাত ছেড়ে দিল নীল।
।
নীলা: আজব তো এভাবে টেনে আনলে কেন আমাকে?
।
নীল: মানিক তোমার জাস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড রাইট!!!
।
নীলা: হ্যা কিন্তু কেন?
।
নীল: তুমি জানো তোমাকে আর মানিককে এতো ক্লোজ দেখে কলেজের অনেকেই মন্তব্য করছে তুমি নাকি মানিকের গার্লফ্রেন্ড।
।
নীলা: কিহ্?
।
নীল: জ্বি।
।
নীলা: হোয়াট দা হেল।
।
নীল: তাই বলছি একটু ডিস্টেন্স মেন্টেইন করে চলবে এখন থেকে মানিকের কাছ থেকে।
।
নীলা: ইম্পসিবল!!! হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। আর এখন কি আমি মানুষের কথার জন্য নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথেও মিশতে পারব না?
।
নীল: মানুষের কথা গুলোও তো একটু চিন্তা করতে হবে তাই না?
।
নীলা: এক্সকিউজ মি!!! আমি পারব না। মানুষের কথা চিন্তা করার মতো সময় আমার কাছে নেই। আমি আমার মতো থাকতে পছন্দ করি অকেহ্?
।
নীল: আর আমার যে তোমার সম্পর্কে এসব উল্টো পাল্টা কথা শুনতে ভালো লাগে না সেই বেলায়?
।
নীলা: নিজের কান বন্ধ করে রাখো তাহলে আর শুনতে হবে না।
।
নীল: নীলা!!!
।
নীলা: লিসেন তোমাকে মিহুকে আর অনুকে নিয়েও অনেক কথা হয় কলেজে। কোথায় আমি তো কিছু বলতে আসি নি তোমাকে। তাহলে তুমি কেন বলবা?
।
নীল: মানে? মিহু আর অনু আমার বোন! আমার কাজিন ওরা।
।
নীলা: তো মানিক আর মেঘও তো আমার কাজিন! আমার ভাই লাগে ওরা।
।
নীল: তোমরা তিনজনও কাজিন?
।
নীলা: হ্যা কেন? এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আগে জানতে না।
।
নীল: সিরিয়াসলি আমি আগে জানতাম না।
।
নীলা: অহ্ গুড এখন তো জানো? তাই নেক্সট টাইম কিছু বলতে আসবে না এই ব্যাপারে।
।
এই বলে নীলা চলে গেল ওখান থেকে। নীল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে এখনো। ও এক হাতে নিজের চুল টানছে।
অনু মানিকের শার্টের কলার ধরে টেনে মানিককে হল রুমে এনে দাঁড় করালো। অনুর চেহারায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। মানিক হাবলার মতো বিস্ময় নিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
।
অনু: কিরে মুখপোড়া হনুমান আমার দিকে এভাবে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছিস কেন?
।
মানিক: তুমি আমাকে এভাবে টেনে আনলে কেন? আর তুই তোকারি কেন করছো?
।
অনু: চুপ!!! একদম চুপ। আমি তোকে প্রশ্ন করেছি তুই উত্তর দিবি। তা না করে তুই উল্টো আমাকে প্রশ্ন করছিস? সাহস কত বড় তোর?
।
মানিক: আরেহ্।
।
অনু: চুপ!!! যা বলেছি তার উত্তর দে।
।
মানিক: তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
।
অনু: কচি খোকা তো তুই। তাই কিছুই বুঝতে পারছিস না।
।
মানিক: আমি কি করেছি বলবি তো আই মিন বলবা তো।
।
অনু: কিহ্? তুই আমাকে তুই বলে সম্বোধন করলি? যা তোর সাথে আর কথাই বলব না। ফাজিল, বজ্জাত ছেলে, তেলাপোকা, ইন্দুরের ডিম, কুতুবউদ্দিনের নাতি।
।
মানিক: থামো থামো সরি আমার ভুল হয়েছে। আমি আর কখনো তোমাকে তুই বলে সম্বোধন করব না।
।
অনু: তোর ১৪ গুষ্টির তুষ্টি,,,সর সামনে থেকে।
।
মানিক: আরে বাবা সরি তো।
।
অনু: ওই ছেমরা আমি তোর কোন জন্মের বাবা লাগি! হ্যা?
।
মানিক: ঘাট হয়েছে আমার। তোমার সাথে কথা বলা আর দেওয়ালের সাথে মাথা বারি দেওয়া একই ব্যাপার। [বিরবির করে]
।
অনু: কি বললি তুই?
।
মানিক: কিছু না, কিছু না।
।
অনু: নীলার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
।
মানিক: মানে?
।
অনু: আজকে সত্যি কথা শুনেই ছাড়ব আমি। বল নীলা তোর কি লাগে?
।
মানিক: নীলা আমার বেস্টফ্রেন্ড + কাজিন,,,কেন?
।
অনু: সত্যি তো?
।
মানিক: হ্যা রে মা।
।
অনু: তাহলে ক্যাম্পাসের কিছু কিছু মানুষ কেন বলছে তুমি আর নীলা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড লাগো?
।
মানিক: কিসব আবোল তাবোল বলছো?
।
অনু: আবোল তাবোল কিছুই বলি নি। সত্যি কথাই বলেছি।
।
মানিক: লিসেন অনু আমি সিরিয়াসলি বলছি নীলার সাথে আমার সম্পর্ক শুধু মাত্র একজন বেস্টফ্রেন্ড + কাজিন + ভাইয়ের। এর থেকে বেশি আমাদের মধ্যে আর কিছুই নেই।
।
অনু: সত্যি তো?
।
মানিক: বিশ্বাস করছো না কেন তুমি? এন্ড ওয়েট ওয়েট!!!
।
অনু: কি?
।
মানিক: আর ইউ জেলাস?
।
অনু থতমত খেয়ে গেল মানিকের কথা শুনে। ও কোনোমতে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। তারপর মানিকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
।
অনু: আমি কেন জেলাস হতে যাব? পগল তুমি?
।
মানিক: না আমার মনে হলো আর কি।
।
অনু: তুই থাক তোর মন নিয়ে ফাজিল জানি কোথাকার।
।
এই বলে অনু চলে গেল হনহন করে। মানিক বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। অনুর এরূপ আচরণের মানে বুঝলো না ও। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ও নিজেও চলে গেল
মেঘ বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল। তখনি বাসার বেল বেজে উঠলো। একজন সার্ভেন্ট এসে গেট খুলে দিল।
।
সার্ভেন্ট: জ্বি কাকে চাই?
।
মিহু: আমি মিহু! ইরফান আঙ্কেল আছে?
।
সার্ভেন্ট: জ্বি আছে,,,আপনি ভেতরে এসে বসুন আমি স্যারকে ডেকে দিচ্ছি।
।
মিহু: না না আপনাকে ডেকে দিতে হবে না। আপনি শুধু আমাকে একটু দেখিয়ে দিন উনি কোথায় আছে। আমি নিজেই চলে যাব ওনার রুমে।
।
সার্ভেন্ট: আচ্ছা আসুন।
।
সার্ভেন্ট মিহুকে ইরফান চৌধুরীর রুম দেখিয়ে দিল। মিহু রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো ইরফান চৌধুরী দাবার বোর্ড নিয়ে বসে আছে একা একা। মিহু যেয়ে ইরফান চৌধুরীর পাশে বসে পড়লো। মিহুকে দেখে ইরফান চৌধুরী বেশ অবাক হলো।
।
ইরফান: আরে মা তুমি?
।
মিহু: আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
।
ইরফান: ওয়ালাইকুমুস সালাম।
।
মিহু: ভাবলাম আপনি সারাদিন বাসায় একা একা থাকেন। তাই আপনার সাথে কিছুক্ষণ বসে আড্ডা দিয়ে যাই।
।
ইরফান: খুব ভালো করেছো এসে। এখন তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে আমার মনটা ফ্রেশ থাকবে।
।
মিহু: তো কি করছিলেন একা একা?
।
ইরফান: দাবা খেলতে পারো?
।
মিহু: হ্যা বাপির কাছ থেকে শিখেছি।
।
ইরফান: আমার সাথে খেলবে?
।
মিহু: অবশ্যই,,,তো শুরু করা যাক।
।
ইরফান চৌধুরী আর মিহু দাবা খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। ওরা দু'জন খেলছে আর জোরে হাসাহাসি আর হৈ হুল্লোড় করছে। মেঘ উপর থেকে এত চেঁচামেচির শব্দ শুনে ল্যাপটপ বন্ধ করে নিচে নেমে এলো। মেঘের বাবার রুম থেকে সাউন্ড আসছে দেখে ও ওদিকে চলে গেল। বাবার রুমে ঢুকে মিহুকে দেখে অবাক হয়ে গেল ও। মিহু আর মেঘের বাবা বাচ্চাদের মতো করছে। মেঘের বাবা মিহুর গুটি খেয়ে ফেলছে দেখে মিহু ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে রেখেছে। আর বলছে, "আঙ্কেল আমি কিন্তু কান্না করে দিব"। মেঘের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো ওর বাবাকে এতো হাসিখুশি দেখে। আর মিহুর কার্যকলাপ দেখে হেসে দিল ও। পরক্ষণেই ওর মাথায় আসলো যে মিহু এখানে কি করে। তখনি মেঘের বাবার গলা শুনে মেঘ ওদিকে তাকালো।
।
ইরফান: আরে মেঘ!!! ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।
।
মেঘ: না ড্যাড দেখতে এসেছিলাম তুমি কি করো।
।
ইরফান: আয় বোস দেখ কে এসেছে।
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_10
.
ইরফান: আরে মেঘ!!! ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।
।
মেঘ: না ড্যাড দেখতে এসেছিলাম তুমি কি করো।
।
ইরফান: আয় বোস দেখ কে এসেছে।
।
মিহু: হাইইই।
।
মেঘ: হ্যালো মিহু।
।
মিহু চোখ রাঙিয়ে তাকালো মেঘের দিকে। মেঘ চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।
।
মিহু: দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো!!!
।
মেঘ: না না ইট'স অকেহ্।
।
মিহু মেঘের হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দিল। মেঘ একটু সরে বসলো মিহুর থেকে। মিহু দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো মেঘের দিকে।
।
মিহু: আঙ্কেল আপনার ছেলে একটা রসহীন মানুষ।
।
মেঘ চকিতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো মিহুর দিকে। মিহু এখনো দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে।
।
ইরফান: আমার ছেলেকে তোমার রসহীন মনে হলো?
।
মিহু: হ্যা আঙ্কেল প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
।
ইরফান: আরে না না মাইন্ড কেন করব? সত্যি কথা বললে মাইন্ড করার কি আছে?
।
মেঘ: ড্যাড!!!
।
ইরফান: না তো আমি তো কিছু বলি নি।
।
মিহু: আরে আঙ্কেল জাস্ট চিল। নিজের ছেলেকে এতো ভয় কিসের?
।
মেঘ: এই তুমি চুপ করো।
।
মিহু: কে তুমি? তোমার কথায় চুপ করব কেন?
।
মেঘ: আমার বাসায় এসে আমাকেই জিজ্ঞেস করছো আমি কে?
।
মিহু: এক্সকিউজ মি!!! বাড়িটা তোমার না! বাড়িটা আঙ্কেলের।
।
মেঘ: আর সেই আঙ্কেলের ছেলে আমি। সো বাড়িটা আমারও।
।
মিহু: কোনো প্রুফ আছে?
।
মেঘ: কিসের?
।
মিহু: তুমি যে আঙ্কেলের ছেলে তার প্রুফ কি?
।
মেঘ: ড্যাড নিজেই প্রুফ। আর আমিও প্রুফ।
।
মিহু: আঙ্কেল ও কি আপনার ছেলে?
।
বলেই মিহু ইরফান চৌধুরীকে এক চোখ টিপ দিল। ইরফান চৌধুরী মিহুর মজা করা বুঝে, উনিও তালে তাল মেলালেন।
।
ইরফান: না রে মা, আমার ছেলেটার সাথে ও হাসপাতালে এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। তাই আর কি করার ওকেই নিজের ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছি।
।
মেঘ: ড্যাড!!!
।
ইরফান: উই আর জাস্ট কিডিং মাই সান।
।
মেঘ: তোমাদের সাথে আর কথাই বলব না।
।
মেঘ উঠে চলে গেল নিজের রুমে। মিহু আর ইরফান চৌধুরী হেসে দিয়ে একে অপরের সাথে হাই ফাইভ করলেন। তখনি একজন সার্ভেন্ট এলো রুমে।
।
সার্ভেন্ট: স্যার লাঞ্চ রেডি।
।
ইরফান: যাও আমি আসছি।
।
সার্ভেন্ট: ওকে স্যার।
।
ইরফান: চলো আম্মু আমরা আজকে একসাথে লাঞ্চ করব।
।
মিহু: না আঙ্কেল অন্য একদিন করব আজকে আমি যাই।
।
ইরফান: উঁহু তোমার কোনো কথা আমি শুনছি না। আজকে তুমি আমাদের সাথে লাঞ্চ করবে মানে আমাদের সাথেই করবে।
।
মিহু: আচ্ছা আঙ্কেল ঠিক আছে, চলেন।
।
ইরফান চৌধুরী আর মিহু ডাইনিং টেবিলে যেয়ে বসলো। কিন্তু মেঘ নেই এখানে। তাই ইরফান চৌধুরী মেঘের কথা জিজ্ঞেস করলেন একজন সার্ভেন্টকে।
।
ইরফান: মেঘ কোথায়?
।
সার্ভেন্ট: ছোট স্যার বললেন খাবেন না।
।
ইরফান: কিন্তু....
।
মিহু: আঙ্কেল তুমি খাও। আমি নিয়ে আসছি তোমার জেদি ছেলেকে।
।
ইরফান: তুমি পারবে?
।
মিহু: অবশ্যই।
।
ইরফান: তুমি যদি পারো তাহলে তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই'ই দিব।
।
মিহু: পাক্কা তো?
।
ইরফান চৌধুরী হেসে দিলেন মিহুর বাচ্চা বাচ্চা কথা শুনে।
।
ইরফান: পাক্কা।
।
মিহু: অকেহ্ তার আগে আমার কিচেনে কিছু কাজ আছে।
।
ইরফান: কিচেনে কি কাজ।
।
মিহু: তোমার ছেলেকে জব্দ করার হাতিয়ার আছে।
।
ইরফান: যেমন?
।
মিহু: অজানাই থাক।
।
ইরফান: আচ্ছা।
।
মিহু এক দৌড়ে কিচেনে চলে গেল। মেঘের খাবারের জন্য যে তরকারির বাটি রাখা হয় সেই বাটিটা নিয়ে ইচ্ছে মতো বাটিতে মরিচের গুঁড়া মিক্স করে দিল। তারপর সেই খাবার নিয়ে উপরে যেতে লাগলে একজন সার্ভেন্ট মিহুকে আটকে দেয়।
।
সার্ভেন্ট: ম্যাম এটা কি ছোট স্যারের জন্য?
।
মিহু: হুমম কেন?
।
সার্ভেন্ট: কিন্তু ম্যাম উনি তো ঝাল....
।
মিহু: খুব পছন্দ করে তাই তো? সেই কারনেই তো বেশি করে দিয়েছি।
।
সার্ভেন্ট: না ম্যাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
।
মিহু: আমার কোথাও ভুল হচ্ছে না, সাইড প্লিজ!!!
।
মিহু সার্ভেন্টকে উপেক্ষা করে খাবার নিয়ে উপরে চলে গেল। মেঘের রুমের সামনে উঁকি দিয়ে দেখে মেঘ বেডে বসে আছে ল্যাপটপ নিয়ে। মিহুকে খেয়াল করে মেঘ বলে উঠলো।
।
মেঘ: ওভাবে চোরের মতো উঁকি দিচ্ছো কেন?
।
মিহু: কিহ্ আমি চোর?
।
মিহু খাবারটা টেবিলে রাখলো। তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে মেঘের সামনে এসে দাঁড়ালো।
।
মিহু: তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে চোর বলস!! তোর উপর টাটকা টাটকা ঠাডা পরব বজ্জাত পোলা জানি কোনহানকার। ইন্দুরের মতো চেহারাখান লইয়া এতো ভাব দেখাও কিল্লাই? তোর থেইকা তো আমার চেহারা যথেষ্ট ভালো দেখতো।
।
মেঘ: জাস্ট সাট আপ!!!
।
মেঘের ধমক শুনে মিহু ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেল।
।
মেঘ: এই মেয়ে এগুলো কি ধরনের ভাষা!!! হ্যা?
।
মিহুর এতক্ষণে মাথায় আসলো ও আসলে মেঘকে কি কি বলেছে। মনে পরতেই জিহ্বে কামড় দিল। আর ঠোঁট কামড়াতে লাগলো।
মেঘ মিহুর এমন পাপ্পি ফেস দেখে মুচকি হেসে দিল। তারপরেও চেহারায় একটু রাগ রাগ ভাব এনে রাখলো।
।
মিহু: ইয়ে মানে বলছিলাম কি.... সরি।
।
মেঘ: কি বললে শুনতে পাই নি।
।
মিহু: সরি বললাম সরি।
।
মেঘ: আরেকটু জোরে বলো।
।
মিহু: ওই শালা কানে শুনোস না তুই? [রেগে]
।
মেঘ এক ঝটকায় মিহুর সামনে চলে গেল। মিহু দেওয়ালের সাথে লেগে দাঁড়ালো আর কয়েকটা ঢোক গিললো। ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো পালানোর কোনো রাস্তা আছে কি'না। কিন্তু ততক্ষণে মেঘ ওর একদম কাছে চলে গিয়েছে। এটা দেখে মিহু চোখ বন্ধ করে ফেললো। মেঘর শ্বাস মিহুর মুখের সাথে বারি খাচ্ছে। মিহুর শ্বাস ঘন হয়ে আসলো। মেঘ মিহুর চেহারার দিকে তাকিয়ে টুপ করে মিহুর গালে একটা চুমু দিয়ে বসলো। ঘটনার আকস্মিকতায় মিহু তাড়াতাড়ি চোখ খুলে বড় বড় করে তাকালো। মেঘ খাবারের প্লেট নিয়ে বেডে বসলো খাওয়ার জন্য।
।
মিহু: এটা কি হলো?
।
মেঘ: কোনটা?
।
মিহু: এই যে একটু আগে তুমি আমার গালে চুমু দিলে যে!!!
।
মেঘ: প্রমাণ আছে যে চুমুটা আমিই দিয়েছি?
।
মিহু: তো ঘরে কি ভূত ঢুকেছিল?
।
মেঘ: ঢুকতেই পারে।
।
মিহু: অসভ্য একটা।
।
মিহু হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মেঘের রুমের বাইরে এসে মিহু নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।
।
মিহু: খা না খা খাবারটা একবার বুঝবি মজা। কত ধানে কত চাল তখন টের পাবি যখন ঝালে ফোঁপাতে শুরু করবি। শালা বদমাইশ পোলা জানি কোথাকার। আমাকে কিস করার সাজা ভোগ করবি তুই এখন।
।
মেঘ তরকারি দিয়ে ভাত মুখে দিতেই ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেল। কারন ঝালে ওর এলার্জি আছে। ও বেশি ঝাল একদমই খেতে পারে না। ঝালে ও ফোঁপাতে লাগলো।মিহু ফোঁপানোর আওয়াজ পেয়ে মেঘের রুমে উঁকি দিল। মেঘের চোখমুখ একদম লাল দেখে ও নিজেই ভয় পেয়ে গেল। ও রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দিল মেঘকে।
মেঘ মিহুর দিকে একবার তাকিয়ে আর দেড়ি না করে হুট করেই মিহুর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের ভাঁজে নিয়ে নিলো। মিহুর হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিচে পরে গেল। মিহুর হাত দু'টো মেঘের কাঁধের শার্ট খামছে ধরলো। মেঘ পাগলের মতো নিজের ঝাল মেটানোর জন্য মিহুর ঠোঁটে কিস করে যাচ্ছে।
প্রায় অনেক্ষণ পর মিহুকে ছেড়ে দিল মেঘ। মেঘ নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো। ও আর সহ্য করতে পারছে না। এদিকে মিহু ঝালে অস্থির হয়ে গিয়েছে। ও জগ ধরে পানি খেতে লাগলো। ওদিকে মেঘ নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে নিচে পরে গেল।
মিহু জগ রেখে তাড়াতাড়ি মেঘকে ধরলো। ও অতিরিক্ত ভয় পেয়ে গেল। পারে না শুধু এখনি কান্না করে দিতে। ও জোরে চিৎকার করে ইরফান চৌধুরীকে ডাকতে লাগলো। মিহুর চিৎকার শুনে ইরফান চৌধুরী আর কিছু সার্ভেন্ট দৌড়ে উপরে এলো। ইরফান চৌধুরী ছেলের এমন অবস্থা দেখে পাগল প্রায় হয়ে গেলেন। সার্ভেন্টরা মেঘকে ধরে বেডে শুইয়ে দিল। ইরফান চৌধুরী দ্রুত ডক্টরকে কল করে আসতে বললেন।
ইরফান চৌধুরী মিহুকে মেঘের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে মিহু কান্না করে দেয়। এবং সব দোষ যে ওর সেটাও বলে। ইরফান চৌধুরী মিহুকে কিছু বললেন না। কারন মিহু কাজটা ইচ্ছাকৃত ভাবে করে নি। ও জানতো না ঝালে মেঘের এলার্জি আছে। তাই ভুল বসত ঝাল দিয়ে ফেলেছে। এতে উনি কিছু মনে করেন নি।
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে মেঘকে দেখে গেলেন। যাওয়ার আগে একটা ইনজেকশন ও কিছু মেডিসিন দিয়ে গেলেন খাইয়ে দেওয়ার জন্য। মিহু কান্না করছে আর সমানে দু-হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছছে। চোখ দু'টো ফুলে গিয়েছে। চেহারাটা ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। ওকে দেখতো এতটা কিউট লাগছে যা বলার বাইরে। ওকে দেখতে পুরো স্ট্রবেরির মতো লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর মেঘের জ্ঞান ফিরলো। তখনো মিহু মেঘের পাশে বসে ছিল। অবশ্য বসে ছিল বললে ভুল হবে। মিহু তখন মেঘের পাশেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইরফান চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘ 'ড্যাড' বলে ডাকতেই মেঘের বাবা মেঘের পাশে এসে বসলেন।
।
ইরফান: এখন কেমন লাগছে বাবা?
।
মেঘ: বেটার ড্যাড। বাট মিহু কোথায়?
।
ইরফান: তোর পাশে তাকিয়ে দেখ।
।
মেঘ ওর অন্য পাশে তাকিয়ে দেখে মিহু গুটিশুটি হয়ে বসে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যেও চোখ দিয়ে পানি পরছে আর ঠোঁট উল্টিয়ে রেখেছে। এটা দেখে মেঘ হেসে দিল।#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_11+12
.
মেঘ ওর অন্য পাশে তাকিয়ে দেখে মিহু গুটিশুটি হয়ে বসে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যেও চোখ দিয়ে পানি পরছে আর ঠোঁট উল্টিয়ে রেখেছে। এটা দেখে মেঘ হেসে দিল।
।
মেঘ: পুরাই একটা বাচ্চা।
।
ইরফান: তোদের দু'জনকে মানায় ভালো।
।
মেঘ: তাই?
।
ইরফান: জানিস মেয়েটা কেঁদে কেঁদে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছে।
।
মেঘ: কেন?
।
ইরফান: ও জানতো না যে ঝালে তোর এলার্জি তাই। ও না বুঝে ঝাল দিয়ে ফেলেছে তোর তরকারিতে।
।
মেঘ: হুমম বুঝতে পেরেছি।
।
ঘুমের মধ্যেই মিহুর মাথা পরে যেতে লাগলে মেঘ যেয়ে মেঘের কাঁধ এগিয়ে দেয়। মিহু মেঘের কাঁধে মাথা দিয়ে ওর হাত জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে। ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে মিহু আর ওকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে মেঘ। যেন কোনো ঘুমপরী। মেঘের বাবা গলা ঝেড়ে নিলেন।
।
ইরফান: তোরা থাক আর মিহুকে এখন জাগানোর দরকার নেই। ওকে ঘুমোতে দে। আর তুইও রেস্ট নে।
।
মেঘ: অকেহ্ ড্যাড।
।
ইরফান: অকেহ্ মাই সান, গুড লাক।
।
মেঘ হালকা হাসলো ওর ড্যাডের কথা শুনে। ওর ড্যাডও মুচকি হেসে চলে গেল। মেঘ মিহুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
"মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে, যা আমাকে ওর কাছে টানে? আমি নেশাগ্রস্ত হয়ে পরি প্রতিবার তোমায় দেখলে। ভালোবাসি তোমায় মনের অজান্তেই। তোমায় নিজের করে পেতে চায় এই মন। তুমি হবে শুধু আমারি। Because #Your_love_is_my_Addiction"।
মিহু ঘুমের মধ্যেও মেঘের কথা গুলো শুনে মুচকি হাসলো। তা দেখে মেঘ নিজেও হাসলো। মিহুর কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল মেঘ। আর ওভাবেই ঘুমিয়ে পরলো ও।
প্রায় রাত নয়টার দিকে মিহুর ঘুম ভাঙ্গলো। ও ঘুম ঘুম চোখে আরও শক্ত করে কোলবালিশটি জড়িয়ে ধরে। ঘুম ঘুম কন্ঠে " মাম্মাম কফি দিয়ে যাও" বলে চিল্লিয়ে উঠলো। কোলবালিশটা বেশি শক্ত লাগছে বলে ও হালকা চোখ মেলে তাকালো। সাথে সাথেই ওর ঘুম গায়েব হয়ে গেল। আর জোরে চিৎকার করে উঠলো।
।
মিহু: আআআআআআআআআআআ.......…
।
মেঘ মিহুর মুখ চেপে ধরলো। মিহু চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। মিহুর চোখ জোড়া যেন মেঘের চোখের সাথে আটকে গিয়েছে। মেঘ মিহুর মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলার পরও মিহু একইভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মিহুর এমন দীর্ঘ দৃষ্টি দেখে মেঘের নেশা লেগে যাচ্ছে। তাই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো অনেক কষ্টে। আর মিহুর কপালে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিল। মেঘের ছোঁয়া পেয়ে মিহুর সম্মতি ফিরলো।
।
মিহু: কি হয়েছে?
।
মেঘ: কিছু না।
।
মিহু: আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
।
মেঘ: করো।
।
মিহু: সত্যিই কি তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে?
।
মেঘ: হুমম এতে মিথ্যে বলার কি আছে?
।
মিহু: না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
।
মেঘ: অহ্...
।
মিহু: তাহলে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে জেনেও আমার সাথে ওমন কেন করলে?
।
মেঘ: ওমন বলতে!!!
।
মিহু: কিস।
।
মেঘ: ব্যাপার না করতেই পারি।
।
মিহু: আর ক'জনকে আমার মতো ইউস করেছো?
।
মেঘ: মানে?
।
মিহু: মানে আমার মতো আর ক'জনকে কিস করেছো?
।
মেঘ: মিহু!!!
।
মিহু: আচ্ছা থাক বলতে হবে না।
।
মিহু উঠে বসলো তারপর উঠে চলে যেতে গিয়েও ফিরে তাকালো।
।
মিহু: সরি আজকে খাবারে ঝাল মেশানোর জন্য। আমি জানতাম না যে তোমার ঝালে এলার্জি আছে! নাহলে আমি কখনো তোমাকে ঝাল খেতে দিতাম না। আমি না জেনে শুনে করে ফেলেছি কাজটা।
।
মেঘ: ইট'স অকেহ্।
।
মিহু: হুমম আচ্ছা আসছি এখন। পরে কথা হবে আবার বাই।
।
মেঘ: আরেহ্ মিহু!
।
মিহু কোনো কথা না বলে নিচে চলে গেল। মেঘের বাবা মাত্রই স্কচের গ্লাসটা হাতে নিয়েছিল,,,তখনি ওনার ফোন বেজে উঠলো। উনি স্কচের গ্লাসটা টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে কথা বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেলেন।
মিহু নিচে এসে মন খারাপ করে দাঁড়ালো টেবিলের সামনে। ওর খুব পিপাসা লেগেছে তাই ও পানি ভেবে স্কচের গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটু খেয়ে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। "পানির টেস্ট এমন কেন? যাই হোক মজাই আছে।" মিহু পুরোটা গ্লাস এক ঢোকে খেয়ে নিলো। মেঘের বাবা ফিরে এসে মিহুকে স্কচ খেতে দেখে মাথায় হাত দিলেন।
।
ইরফান: সাত্তেয়া নাশ হোগেয়া😬
।
মিহু: আরে আঙ্কেল তুমি মাথায় হাত দিয়ে আছো কেন?
।
ইরফান: মামনি তুমি এটা কি করলে?
।
মিহু: কোনটা? জাস্ট একটু পানিই তো খেয়েছি। তাই তুমি এমন করছো? যাও কথাই বলব না তোমার সাথে। থাকব না তোমার বাড়িতে।
।
মিহু ঢুলতে ঢুলতে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। ইরফান চৌধুরী মেঘকে চিল্লিয়ে ডাকলেন। বাবার গলা শুনে মেঘ দৌড়ে নিচে নেমে আসলো।
।
মেঘ: কি হয়েছে ড্যাড?
।
ইরফান: তুই তাড়াতাড়ি মিহুর সাথে যা।
।
মেঘ: কেন কি হয়েছে?
।
ইরফান: ও আমার স্কচ খেয়ে ফেলেছে।
।
মেঘ: কিহ্?
।
ইরফান: আরে মেয়েটা মনে হয় পানি ভেবে খেয়ে ফেলেছে। এখন যা ওকে দেখ কোথায় গেল কে জানে?
।
মেঘ: আচ্ছা আমি দেখছি।
।
মেঘ এক প্রকার দৌড়েই বেরিয়ে গেল। রাস্তায় যেয়ে মিহুকে খুঁজতে লাগলো। ও খেয়াল করলো মিহু রাস্তার মাঝখানে বসে আছে। আর একটা কুকুরের সাথে কথা বলছে। ও ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল ওদিকে। মিহু রাস্তার মাঝখানে আসাম করে বসে আছে।
।
মিহু: এই বাসান্তি উঠো,,,তুমি রাস্তার মাঝখানে কেন ঘুমোচ্ছো? জানো না এটা ঠিক না। যদি কোনো ট্রাক চলে আসে তখন কি হবে?
।
মেঘ মিহুর কথা শুনে বিরবির করে বলতে লাগলো, "এখন কুকুরকে জ্ঞান দিচ্ছে। যদি হুঁশ থাকতো তাহলে কুকুর দেখে যে কয়টা লাফ দিতো তার নেই কোনো ঠিক।" মেঘ মিহুর সামনে এসে দাঁড়ালো। মিহু গাল ফুলিয়ে তাকালো মেঘের দিকে।
।
মিহু: এই পঁচা ছেলে সরো সামনে থেকে।
।
মেঘ: তুমি উঠো।
।
মিহু: না আমি উঠবো না।
।
মেঘ: তোমাকে কিন্তু আমি কাঁধে করে নিয়ে যাব।
।
মিহু: যাব না, যাব না, যাব না।
।
মেঘ নিচে ঝুঁকে হাত ধরে টেনে মিহুকে দাঁড় করালো।
।
মেঘ: চুপচাপ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো।
।
মিহু: পঁচা ছেলে এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।
।
মেঘ: চুপ!!!
।
মিহু ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেল। মেঘ পকেট থেকে ফোন বের করে ড্রাইভারকে কল করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলল। কথা বলা শেষ করে মেঘ পেছনে তাকিয়ে দেখে মিহু নেই।
মেঘ ভয় পেয়ে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো ও মিহুকে। অবশেষে দেখতে পেলো মিহু আবারও নিচে বসে পরেছে। মেঘ আবারও মিহুর হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। সাথে সাথেই মিহু মেঘের টি-শার্টের কলার ধরে টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো। মেঘ হা করে দেখছে মিহুর এই রূপ। মিহু দুম করে মেঘের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলো। মেঘ হতভম্ব হয়ে গেল পুরো।
তখনি ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসলো। মেঘ মিহুর হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিল। ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো।
মিহু নিজের সিট থেকে উঠে এসে মেঘের কোলে বসে পরলো।
।
মেঘ: আরে মিহু!!!
।
মিহু: চুপ পঁচা ছেলে একটা।
।
মিহু মেঘকে জরিয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো। মেঘ হালকা হাসলো শুধু, কিছু বলল না। গাড়ি মিহুর বাড়ির সামনে এসে থামালো মিহু তখন ঘুমে মগ্ন। মেঘ মিহুকে জড়িয়ে ধরলো। কারন মিহু এখনো ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তারপর মিহুকে ছেড়ে কয়েকবার ডাক দিল ওকে। কিন্তু মিহু কোনো রেসপন্স করলো না দেখে মেঘ বুঝতে পারলো মিহু ঘুমিয়ে গিয়েছে।
মেঘ হাত দিয়ে গাড়ির ডোর ওপেন করলো। মিহুকে কোলে নিয়ে বের হলো ও। মিহুর বাড়িতে যেয়ে বেল দিল। কিছুক্ষণ পরেই মিহুর আম্মু গেট খুলে দিল। মিহুকে এভাবে আনতে দেখে মিহুর বাবা-মা চমকে গেল।
।
মেঘ: ভয়ের কিছু নেই। ও আসলে ঘুমিয়ে পরেছে। ডেকেছিলাম বেশ কয়েকবার। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গে নি ওর। তাই এভাবে আনতে হয়েছে।
।
মিহুর বাপি: ওহ্ আচ্ছা। উপরের প্রথম রমটা মিহুর রুম। তুমি ওকে নিয়ে যাও,,,রেখে আসো।
।
মেঘ: আচ্ছা আঙ্কেল।
।
মেঘ মিহুকে নিয়ে উপরে চলে গেল। মিহুর রুমে গিয়ে মিহুকে বেডে শুইয়ে দিল। মেঘ মিহুর কপালে চুমু দিয়ে চলে আসতে নিলে মিহু মেঘের হাত ধরে ফেললো। মেঘ চমকে উঠলো। পেছনে তাকিয়ে দেখে মিহু ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
।
মেঘ: তুমি না ঘুমোচ্ছিলে?
।
মিহু: উঁহু।
।
মেঘ: কি?
।
মিহু উঠে দাঁড়ালো মেঘের সামনে।
।
মিহু: আই ওয়ান্ট আ কিস।
।
মেঘ: কিহ্?
।
মিহু: ইয়েস আই ওয়ান্ট আ কিস। সো কিস মি।
।
মেঘ: মিহু তুমি এখন নিজের মধ্যে নেই। সো ঘুমাও এখন।
।
মিহু: নোপ,,,ইউ হ্যাভ টু কিস মি রাইট নাউ।
।
মেঘ: মিহু আমার কথাটা শুনো।
।
মিহু: তুমি কিস করবে নাকি আমি চিৎকার করব?
।
মেঘ: মিহু....
।
মিহু: আআআআআ....
।
মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে মিহুর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিল। মিহু মেঘের চুল মুষ্টিবদ্ধ করে আঁকড়ে ধরলো। ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে সেই অবস্থাতেই বেডে পরে গেল। মেঘ উম্মাদের মতো মিহুর ঠোঁটে কিস করে যাচ্ছে। প্রথম কিছুক্ষণ মিহুর রেসপন্স পেলেও হঠাৎ করে মিহুর রেসপন্স পাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে ও চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মিহু ঘুমিয়ে গেছে। ওই মুহূর্তে মেঘের প্রচুর হাসি পাচ্ছিলো। হাসতে চেয়েও হাসে নি ও। মিহুর ঠোঁটে ডিপলি একটা কিস করে মিহুকে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে চলে গেল।
মিহুর বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল ও।
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_12
.
মিহুর বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল ও। মেঘের ঠোঁটে এখনো হাসি লেগে রয়েছে। মিহুর কাছ থেকে ও এতো বড় কিছু এক্সপেক্ট করে নি। কিন্তু তাও ও পেয়ে গেছে। ওর মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। ও গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
সকাল বেলা ফোনের শব্দে মিহুর ঘুম ভাঙ্গলো। মিহু ফোন হাতে নিয়ে দেখে মিসড কল উঠে আছে অনেক গুলো। ও মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে ওর। ও কোনোমতে উঠে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। তারপর নিচে চলে গেল। নিচে গিয়েই মিহু ওর বাপির কাঁধে মাথা দিয়ে বসে পরলো।
।
মিহু: মাম্মাম একটু কফি করে দাও না প্লিজ। মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে।
।
মাম্মাম: দিচ্ছি বোস।
।
মিহু: হুমম আচ্ছা।
।
বাপি: কি হয়েছে আমার আম্মিটা এতো চুপচাপ কেন?
।
মিহু: বাপি মাথাটা একটু টিপে দাও অনেক ব্যাথা করছে।
।
বাপি: কালকে যে ড্রিংক্স করেছো তার সাইড ইফেক্ট এটা।
।
মিহু চমকে উঠে বসে পরলো।
।
মিহু: কিহ্? আমি ড্রিংক্স করেছি? লাইক সিরিয়াসলি বাপি?
।
বাপি: ইয়েস আম্মি তুমি ভুল করে কালকে ইরফান আঙ্কেলের স্কচ পানি ভেবে খেয়ে ফেলেছিলে। তারপর মেঘ এসে তোমাকে দিয়ে গিয়েছে।
।
মিহু হা করে আছে বাপির কথা শুনে। ওর মাথা ব্যাথা মনে হয় এখন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। কারন ওর কিছুই মনে পরছে না। তখনি মাম্মাম এসে কফি দিয়ে গেল মিহুকে। মিহু এতোটাই ভাবনায় মশগুল হয়ে ছিল যে গরম কফিতে ভুলে হাত দিয়ে দিল। আর সাথে সাথেই চিল্লিয়ে উঠলো। বাপি তাড়াতাড়ি মিহুর হাত ধরে দেখতে লাগলেন। মাম্মাম দৌড়ে এলো মেয়ের চিৎকার শুনে। মিহুর বাপি আর মাম্মাম দু'জনেই অস্থির হয়ে পরলেন। মেয়ের সামান্য ব্যাথা লাগায় ওনাদেরই কষ্ট হচ্ছে। কারন এই একমাত্র মেয়ে যে তাদের কলিজার টুকরা। মিহু কান্না করে দিয়েছে ব্যাথায়। মিস্টার রায়জাদা তাড়াতাড়ি ডক্টরকে কল করে বাসায় আসতে বললেন।
একটু পরেই ডক্টর এসে মিহুর হাত ধরে দেখলেন পোড়া জাগায় ফোঁসকা পরে গিয়েছে। আর জায়গাটা অসম্ভব লাল হয়ে গিয়েছে। ডক্টর মেডিসিন লাগিয়ে জায়গাটা ব্যান্ডেজ করে দিলেন। মিহু এখনো সমানে নাক টানছে। ও যে কান্না করেছে তা ওর চেহারা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। নাকের মাথাটা লাল টকটকে হয়ে আছে। পুরো চেহারা লাল হয়ে গিয়েছে।
নীল আর অনু খবরটা পাওয়া মাত্রই মিহুদের বাসায় চলে আসলো। মিহু ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বসে আছে। বাপি মেয়ের ব্যান্ডেজ করা হাতে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে। মাম্মাম মেয়েকে নিজের কোলে শুইয়ে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নীল আর অনু বাসায় ঢুকে মিহুর চেহারা দেখে দৌড়ে ওর কাছে এলো।
।
নীল: তুই ঠিক আছিস?
।
অনু: এখন কেমন লাগছে?
।
মিহু: ব্যাথা করছে প্রচুর।
।
মিহুর গলার আওয়াজ শুনে নীল আর অনু একে অপরের দিকে তাকালো। আবার মিহুর দিকে তাকালো।
।
মিহু: এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
।
নীল: তুই কি জানিস তোর গলার আওয়াজ কতটা কিউট লাগছে?
।
অনু: মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলি।
।
মিহু: সর তোরা আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যা। এহ্ আসছে আমার গলার আওয়াজ খেয়ে ফেলার জন্য হাহ্।
।
নীল: আহ্ রাগ করছিস কেন?
।
অনু: আমরা তো কথার কথা বললাম।
।
নীল: তুই কি একটু দেখে কাজ করতে পারিস না?
।
অনু: ও করবে দেখে কাজ? তাহলে বদমাইশি কে করবে শুনি?
।
মিহু: মাম্মাম-বাপি দেখো না ওরা আমাকে কি বলছে!!!
।
মাম্মাম: ঠিকই তো বলেছে।
।
বাপি: আম্মি তুমি একটু তো নিজের খেয়াল রাখতে শিখো।
।
মিহু: আমার খেয়াল রাখার জন্য তোমরা তো আছোই।
।
মাম্মাম: সব সময় কি আর আমরা থাকব নাকি?
।
মিহু: কোথায় যাবে তোমরা আমাকে রেখে?
।
বাপি: একদিন না একদিন তো তোমাকে এ বাড়ি থেকে বিদায় নিতে হবে তাই না?
।
মিহু: মানে?
।
নীল: তোর বিয়ে দিতে হবে না?
।
অনু: বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবি তো।
।
মিহু: আমি কোত্থাও যাব না। আমি এখানেই থাকব।
।
বাপি: তা বললে কি চলে নাকি মামনি?
।
মাম্মাম: সব মেয়েদেরই একদিন না একদিন বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে যেতে হয়। তোমাকেও যেতে হবে।
।
মিহু: তোমরা আমাকে তাড়িয়ে দিবে?
।
নীল: ধুর পাগলি তোকে তাড়াতে যাবে কেন?
।
অনু: এটাই আমাদের সমাজের নিয়ম।
।
মিহু: আমি মানি না এই নিয়ম। আমি যাকে বিয়ে করব সে নিজে এসে এ বাসায় থাকবে। আমি যাব না এখান থেকে।
।
বাপি: আচ্ছা আম্মি এবার উঠে বসো তো। একটু খেয়ে নাও।
।
মিহু হালকা কিছু খেয়ে নিলো। এদিকে মেঘ কলেজে এসে মিহুকে খুঁজে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও মিহুকে দেখতে পাচ্ছে না। এমনকি নীল আর অনুকেও খুঁজে পাচ্ছে না ও। মেঘ রাগে লাল হয়ে আছে মিহুকে না পেয়ে। ও যেয়ে পার্কিং-এ নিজের গাড়ির বোনাটের উপর উঠে বসলো। পাশের গাড়ির বোনাটের উপর মানিক শুয়ে আছে। আর নীলা ওর গাড়ির উপরে বসে আছে।
।
মানিক: কি ব্যাপার স্যার! আপনার মুডের ১২ টা বেজে আছে কেন?
।
মেঘ: মিহু আসে নি কলেজে।
।
নীলা: মিহু ও মিহুরে তুই অপরাধী রে।
।
মেঘ: সাট আপ নীলা।
।
নীলা: ইউ সাট আপ।
।
মেঘ: মানিক আমি বাসায় গেলাম তোরা থাক।
।
মেঘ কাউকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। পরের দিনও মেঘ কলেজে এসে মিহুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সেদিনও মিহু আসে নি কলেজে। এমনকি অনু আর নীলও আসে নি। মেঘের রাগ সেদিন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। মিহুকে পেলে মনে হয় কাঁচা চিবিয়ে খাবে এমন অবস্থা।
পরেরদিন মেঘ, নীলা আর মানিক পার্কিং-এ বসে আছে। তখনি মিহুর গাড়ি ঢুকলো পার্কিং প্লেসে। মেঘ মিহুর গাড়ি দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো। মিহুর গাড়ির ড্রাইভিং সিট থেকে নীল বের হলো। সাইড থেকে মিহু বের হলো। অনু পেছন থেকে বের হলো। মেঘরা কেউই মিহুর হাতের ব্যান্ডেজ খেয়াল করলো না। মেঘ হনহন করে এসে মিহুর হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে গেল। মিহু জোরে চিল্লিয়ে উঠলো। সেদিকে মেঘের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
।
অনু: মিহু!!!
।
অনু মিহুর কাছে যেতে গেলে মানিক অনুর হাত ধরে ফেলে। অনু মানিকের দিকে তাকিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। মানিকের উপর অনুর প্রচুর রাগ জমে আছে। কারন মাথা মোটা মানিকটা এটা বুঝে না যে অনু ওকে ভালোবাসে।
।
মানিক: এনি প্রবলেম?
।
অনু: মিহুর কাছে যাব।
।
মানিক: ওদের দু'জনকে একটু স্পেস দাও। সব সময় এতো মিহু মিহু করো কেন?
।
অনু: তাতে তোমার কি?
।
মানিক: আমার বন্ধু হয় মেঘ। তাই ওর প্রেমের মাঝখানে ব্যাঘাত ঘটালে তো আমার লাগবে তাই না?
।
অনু: শালা সবার প্রেম বুঝস আমারটা বুঝস না? [বিরবির করে]
।
মানিক: কি বললে শুনতে পাই নি।
।
অনু: কই কিছু না তো।
।
মানিক: ওহ্ আচ্ছা।
।
অনু ক্যান্টিনে চলে গেল কিছু না বলে। মানিক একটু অবাক হলো কারন অনু ওকে এড়িয়ে গেল এটা ভেবে।
নীল নীলার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। নীলা আড়চোখে নীলের দিকে তাকালো।
।
নীলা: কি হয়েছে?
।
নীল: কিছু বলার ছিল তোমাকে।
।
নীলা: কি?
।
নীল: না মানে ইয়ে কে..কেমন আছো?
।
নীলা রাগী চোখে তাকালো নীলের দিকে। তা দেখে নীল এক ঢোক গিললো।
।
নীল: বু..বুঝেছি ভা..ভালোই আছো।
।
নীলা: হাহ্।
।
নীল: মানে বলছিলাম কি......
।
নীলা: কি?
।
নীল: কিছু না কিছু না।
।
নীলা: আজব তো।
।
নীল: হ্যা মানে আমি আসি কেমন?
।
নীলা: তো যাও না তোমাকে আটকে রেখেছে কে?
।
নীল: কেউ না হিহিহি টাটা।
।
নীলা: রিডিকিউলেস্।
।
নীল ঢোক গিলে তাড়াতাড়ি চলে গেল ওখান থেকে।
এদিকে মেঘ মিহুকে গার্ডেনের দিকে নিয়ে আসলো। মিহুর হাত এখনো শক্ত করে ধরে আছে মেঘ। মিহু কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। মেঘ মিহুর দিকে তাকিয়ে জোরে এক ধমক দিল। মিহু মেঘের ধমক খেয়ে কেঁপে উঠলো। মেঘ মিহুর হাত ছেড়ে দিয়ে পাশের বেঞ্চে জোরে লাথি দিল। মিহু কাঁদতে কাঁদতে হাত ধরে নিচে বসে পরলো। কারন মেঘ মিহুর ব্যান্ডেজ করা হাত চেপে ধরেছিল।
মেঘ মিহুর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহুর হাতের দিকে চোখ গেল ওর। ও দু'চোখ বড় বড় করে ফেললো। তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে মিহুর সামনে বসে পরলো ও। মিহু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল মেঘের থেকে। মেঘ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে।
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_13+14
.
মেঘ মিহুর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহুর হাতের দিকে চোখ গেল ওর। ও দু'চোখ বড় বড় করে ফেললো। তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে মিহুর সামনে বসে পরলো ও। মিহু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল মেঘের থেকে। মেঘ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে।
।
মেঘ: আমি সত্যি বলছি আমি একদমই খেয়াল করি নি তোমার হাতে যে ব্যান্ডেজ করা।
।
মিহু নাক টানছে সমানে। ওর হাত জ্বলে যাচ্ছে ব্যাথায়।
।
মেঘ: কি হয়েছে তোমার হাতে? ব্যান্ডেজ কেন হাতে? আর এই দু'দিন কলেজে আসো নি কেন?
।
মিহু: হাতে গরম কফি পরে পুড়ে গেছে। তাই ব্যান্ডেজ করা। আর এই হাতে ব্যাথার জন্য হালকা জ্বর ছিল বলেই কলেজে আসি নি।
।
মেঘ: কিহ্? হাত পুড়লো কিভাবে? তুমি এতো কেয়ারলেস কেন মিহু?
।
মিহু: আমার হাত জ্বলছে। তুমি আমার হাতে ব্যাথা দিয়েছো। আমার হাতে প্রচুর ব্যাথা করছে।
।
মেঘ: সরি আমি খেয়াল করি নি জান। দেখি আমার সাথে আসো।
।
মিহু: নাআ! আবার ব্যাথা দিবে তুমি আমাকে।
।
মেঘ: প্রমিস আর ব্যাথা দিব না।
।
মিহু: সত্যি তো?
।
মেঘ: বাচ্চাদের মতো স্বভাব তোমার যাবে না তাই না?
।
মিহু: আমি তো এমনই।
।
মেঘ মনে মনে ভাবছে, "সে কারনেই তো তোমায় এতো বেশি ভালোবাসি। তোমার এই বাচ্চামি'ই তো আমাকে মুগ্ধ করেছে তোমার প্রতি।"
।
মেঘ: এ কারনেই তো তোমায় এতো ভালো লাগে।
।
মিহু ঠোঁট ফুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘের দিকে। মেঘ গলা ঝেড়ে নিলো মিহুর তাকানোর স্টাইল দেখে।
।
মিহু: মানে?
।
মেঘ: কিছু না তোমার বোঝার বয়স হয় নি।
।
মিহু: ১৯+ হয়ে গেছে আমার হাহ্। আমি আর ছোট নেই।
।
মেঘ: তো কি বড় হয়ে গিয়েছো?
।
মিহু: অবশ্যই।
।
মেঘ: তোমার কার্যকলাপ তো তা বলে না।
।
মিহু: তাতে তোমার কি?
।
মেঘ: আচ্ছা চলো এবার আমার সাথে।
।
মিহু: যাব না।
।
মেঘ: জেদ করে কোনো লাভ নেই। তাই বলছি চলো।
।
মিহু: তোমার সাথে কোথাও যাব না। তুমি একটা পঁচা ছেলে। এক নম্বরের পঁচা ছেলে তুমি। পঁচা একটা, পঁচা পঁচা পঁচা ছেলে তুমি।
।
মেঘ: তাই? আমি পঁচা ছেলে?
।
মিহু: পঁচা'ই তো।
।
মেঘ: কেন পঁচা আমি?
।
মিহু: জানি না।
।
বলেই মিহু মুখ অন্যদিক ঘুরিয়ে ফেললো। ওর গাল দু'টো লাল হয়ে গিয়েছে মুহূর্তেই। মেঘ বুঝতে পেরে হালকা হাসলো। সাথে সাথেই আবার হাসি লুকিয়ে একটা গম্ভীর ভাব এনে কিছু না বলেই মিহুকে কোলে তুলে নিলো। মিহু চমকে উঠলো হাওয়ায় নিজেকে ভাসতে দেখে। মুহূর্তেই ও বুঝতে পারলো ও মেঘের কোলে। সাথে সাথেই ও ছুটোছুটি করতে লাগলো।
।
মিহু: ওই কি করছো? ছাড়ো নিচে নামাও।
।
মেঘ: চুপ করে থাকো নাহলো কিন্তু ফেলে দিব।
।
মিহু সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেল। মেঘ মিহুকে মেডিকেল রুমে নিয়ে গেল। মিহুকে চেয়ারে বসিয়ে ও ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। কেঁচি দিয়ে মিহুর হাতের ব্যান্ডেজ কেটে ফেললো মেঘ। ব্যান্ডেজ কেটে ফেলে দিয়ে নিজেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। কারন মিহুর হাতের ফোঁসকা পুরো থেঁতলে ছিঁলে গেছে। যা দেখতে ভয়ংকর লাগছে। মেঘ চোখ খুলে মিহুর দিকে তাকালো। মিহু ভয়ে চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে মেঘের শার্টের কলার চেপে ধরেছে। মেঘ ভালো করে মেডিসিন লাগিয়ে আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিল। মিহু মেডিসিন লাগানোর সময় ব্যাথায় নিঃশব্দে কান্না করে দিল। মেঘ উঠে মিহুর দু'গালে হাত রেখে ওর চোখের পানি মুছে দিল। মিহুকে আবার কোলে তুলে নিয়ে পার্কিং-এ চলে গেল। নিজের গাড়িতে মিহুকে বসিয়ে দিল। আর ও যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
।
মিহু: কোথায় যাচ্ছি আমরা?
।
মেঘ: শপিং-এ।
।
মিহু: কার শপিং?
।
মেঘ: আমার হবু বউয়ের শপিং-এ।
।
মিহুর মুখটা সাথে সাথেই বাংলার পাঁচ হয়ে গেল। মেঘ তা খেয়াল করে বাঁকা হাসলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বের হয়ে গেল শপিং মলের উদ্দেশ্যে। শপিংমলে এসে মিহুকে বলল কয়েকটা শাড়ি পছন্দ করতে। মিহু রেগে ওর সবচেয়ে অপছন্দের কালার হলুদ, আকাশী, কমলা ও ধূসর রঙের চারটা সফট জর্জেটের শাড়ি বেছে দিল। মেঘ মিহুর রাগ বুঝতে পারলো। মনে মনে মেঘ সমানে হাসছে। মেঘ মিহুর বেছে দেওয়া সেই চারটা শাড়িই কিনে নিলো। তারপর আবার কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। মিহুকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে মেঘ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
এদিকে মিহু রেগে বম হয়ে আছে। কারন মেঘ ওর উড বি ওয়াইফের সাথে দেখা করতে গেছে। আর এই শাড়ি চারটা গিফট করতে গেছে। কথাটা শুনেই মিহুর প্রচুর রাগ লাগছে। কেন লাগছে ও বুঝতে পারছে না। একটু পরেই নীল আর অনু ক্লাস করে বেরিয়ে এলো। মিহু আগে থেকেই গাড়িতে বসে ছিল। নীল এসে ড্রাইভিং সিটে বসলো। অনু পেছনে বসে সমানে মিহুকে খোঁচানো শুরু করলো মেঘকে নিয়ে।
।
মিহু: কি হয়েছে খোঁচাচ্ছিস কেন?
।
অনু: মেঘ তোকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?
।
মিহু: জাহান্নামে নিয়ে গিয়েছিল তাতে তোর কি রে?
।
অনু: আহা রাগ করিস কেন?
।
মিহু: তো কি তোকে চুমু খাব?
।
অনু: বইন তুই চুপ থাক।
।
মিহু: আমার মুখ দিয়ে আমি কথা বলব। তোর কি রে?
।
অনু: কিছুই না তুই বল।
।
মিহু: হাহ্ আমার হায়াত কমে যাবে না বেশি কথা বললে!!!
।
অনু: আল্লাহ্ তুমি হেদায়েত দান করো এই মেয়েকে।
।
মিহু: হাহ্।
।
নীল: এই দু'জন ঝগড়ুটের মাঝে আমি এক অবলা পাটিসাপটা।
।
মিহু: তুই অবলা? তুই তো একটা ঝগড়াইট্টা।
।
নীল: তোদের মতো ভাবিস নাকি আমাকে?
।
মিহু: তোকে কিন্তু এখন এক লাথি দিয়ে এই গাড়ি থেকে ফেলে দিব বলে দিলাম নীলের বাচ্চা কিল, বিল, ঝিল।
।
নীল: আমার নাম নিয়ে ভেঙ্গাবি না একদম।
।
মিহু: আমি ভেঙ্গাব, একশোবার ভেঙ্গাব। তোর কি রে? তোর বাপের'ই বা কি?
।
নীল: আমার বাপ তোর যেন কি লাগে?
।
মিহু: এই রে!!!😅 সরি মিস্টেক।
।
নীল: হুহ্।
।
মিহুকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে নীল আর অনু চলে গেল। মিহু ওর রুমে চুপ করে বসে আছে। ওর প্রচুর রাগ লাগছে মেঘের হবু বউয়ের কথা ভেবে। মিহু ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। মেঘকে ফোন দিবে কি না ভেবে পাচ্ছে না ও।
"মেঘ তো আর আমাকে ভালোবাসে না। ও এখন ওর হবু বউকে ভালোবাসে। কিন্তু তাও আমাকে এতোবার করে কিস কেন করলো ও? আমার মনে তো ও নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু কি দরকার ছিল ওর এমনটা করার। আমাকে যদি ও সেদিন ভালোবাসার কথা না বলতো তাহলে তো আমি নিজের মনে ওর জন্য জায়গা তৈরি করতাম না। ভালোবেসে ফেলেছি ওকে নিজের মনের অজান্তেই। কারন ওর ভালোবাসায় আমি নেশাগ্রস্ত হয়েছি। #Your_love_is_my_Addiction মেঘ।"
মিহু এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ফোনটা হাত থেকে রেখে দিল। মেঘের ব্যাপারে আর কিছু ভাবতে চাইছে না ও। ওর খুব ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে। তাই ও বেডে থাকা বড় টেডিটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও ঘুমিয়ে পরলো।
চলবে,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_14
.
মিহু এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ফোনটা হাত থেকে রেখে দিল। মেঘের ব্যাপারে আর কিছু ভাবতে চাইছে না ও। ওর খুব ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে। তাই ও বেডে থাকা বড় টেডিটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও ঘুমিয়ে পরলো।
অনুর মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে আছে। তার কারন একটাই মানিক অন্য একটা মেয়ের পেছনে ঘুর ঘুর করছে সেই সকাল থেকে। কলেজেও মানিক ওই মেয়েটার পেছনেই ঘুরছিল। আবার এখন কোচিং-এ এসেও রেহাই নেই। এখন কোচিং-এও ওই মেয়ের পেছনে পরে আছে। অনু পারছে না মানিকের মাথা ফাটিয়ে দিতে।
"কত বড় অসভ্য ছেলে দেখেছো! আমি ওনাকে ভালোবাসি, আর উনি অন্য মেয়ের পেছনে লাইন মারে। শালা খবিশ একটা, বজ্জাত পোলা।"
এদিকে সায়মার পাশে গেঁড়ে বসে আছে মানিক। এক পা'ও সরছে না সায়মার পাশ থেকে ও। ও সায়মার কানের সামনে সমানে বকবক করছে দেখে সায়মা বিরক্ত হচ্ছে। এক সময় আর সহ্য করতে না পেরে সায়মা চিল্লিয়ে উঠলো।
।
সায়মা: প্রবলেম কি তোমার? সেই সকাল থেকে আমাকে ডিস্টার্ব কেন করছো?
।
মানিক: আমি তোমাকে ডিস্টার্ব কোথায় করলাম? জাস্ট একটু কথাই তো বলছিলাম।
।
সায়মা: লিসেন মিস্টার... হোয়াট এভার। তুমি না নিজের সীমার মধ্যে থাকো। তুমি জানো আমি কে?
।
মানিক: আমার মতোই একজন মানুষ।
।
সায়মা: জ্বি বাট তাও আমার একটা রেপুটেশন আছে। আমি একটা হাই ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। সো নিজের ক্লাস দেখে মেশার চেষ্টা করো।
।
মানিক: আমাকে দেখে কি তোমার লো ক্লাস মনে হচ্ছে?
।
সায়মা: আর যাই হও না কেন আমার ক্লাসের যোগ্য তুমি না। আমার বাবা বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন। আর তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে তুমি মিডেল ক্লাস।
।
মানিক: তুমি নিজের ক্লাস বিবেচনা করে তারপর মেলামেশা করো?
।
সায়মা: অবশ্যই আমার কাছে আমার হাই রেপুটেশন অনেক ইম্পর্ট্যান্ট।
।
মানিক: তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো।
।
সায়মা: বেশ করেছি ইনসাল্ট করেছি। মেয়েদের পেছনে কুকুরের মতো ঘুরতে লজ্জা করে না?
।
মানিক: সায়....
।
অনু: সাট আপ! জাস্ট সাট আপ। কাকে কি বলছো তুমি?
।
সায়মা: তুমি কে? আমাদের কথার মাঝখানে শুধু শুধু কেন ঢুকছো তুমি?
।
অনু: আমি কে বা আমি তোমাদের কথার মাঝখানে কেন ঢুকছি তা তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। কারন তুমি আমার ব্যাপারে জানার যোগ্যতা এখনো অর্জন করো নি।
।
সায়মা: হাউ ডেয়ার ইউ?
।
অনু: আমার ডেয়ার কতটুকু তা তুমি এখনো জানো না।
।
সায়মা: তোমাকে আমি এই কলেজ থেকে বের করে দিব বলে দিলাম।
।
অনু: ওউ রিয়েলি? লিসেন সায়মা আমার বাবা আর এই যে যাকে তুমি এতক্ষণ ইনসাল্ট করলে, ওর বাবা দু'জনেই কলেজের ওউনার। সো তুমি আমাদের বের করতে পারো আর না পারো আমরা কিন্তু তোমাকে ঠিকই বের করে দিতে পারব।
।
সায়মা অনুর কথা শুনে বিস্মিত হলো। কারন ওর জানা ছিল না এটা।
।
সায়মা: নাইস জোক।
।
অনু: আমি ফান করছি না সত্যি বলছি কাল সকালে কলেজে টের পেয়ে যাবে।
।
সায়মা: কি করবে তুমি?
।
অনু: তোমাকে বের করব কলেজ থেকে উইথ রেড টিসি।
।
সায়মা: ইম্পসিবল!!!
।
অনু: সেটা তোমার মানিককে ইনসাল্ট করার আগে ভাবা উচিৎ ছিল। সবার স্ট্যাটাস আর ক্লাস'ই সব কিছু না। ও তোমার সাথে মন থেকে মিশতে চেয়েছিল। আর তুমি স্ট্যাটাস দেখে মিশতে চেয়েছো বলে ওকে অপমান করেছো। কাজটা তুমি একদম ঠিক করো নি। এখন তোমাকে ভুগতে তো হবেই।
।
সায়মা: তুমি মানিকের হয়ে এতো কথা কেন বলছো?
।
অনু: তোমাকে বলতে হবে নাকি?
।
সায়মা: জানার কৌতুহল।
।
অনু: কজ মানিককে আমি.... মানিক আমার ফ্রেন্ড তাই।
।
সায়মা: কিন্তু আমি তো অন্য কিছু টের পাচ্ছি।
।
অনু: আই ডোন্ট কেয়ার।
।
মানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। অনু ওকে এতোটা সাপোর্ট করছে দেখে ওর ভালো লাগছে। কিন্তু এর সাথে এক মিশ্রিত অদ্ভুত অনুভূতিও হচ্ছে ওর। যা এর আগেও ও হতো অনুকে দেখলেই। কিন্তু আজকের অনুভূতিটা তীব্র ভাবে হচ্ছে।
।
সায়মা: তুমি মানিককে ভালোবাসো অ্যাম আই রাইট!!
।
অনু রাগের মাথায় সত্যিটা স্বীকার করে নিলো।
।
অনু: ইয়েস ইউ আর রাইট। আই লাভ হিম। আই লাভ মানিক। ডু ইউ হ্যাভ এনি প্রবলেম?
।
সায়মা: আই নিউ ইট!!!
।
অনুর হুঁশ আসতেই ও মানিকের দিকে তাকালো। ও খেয়াল করলো মানিক হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও কি করবে বুঝতে না পেরে আবারও রাগী চোখে সায়মার দিকে তাকালো।
।
অনু: তোমার সাথে আগামীকাল কলেজে দেখা হচ্ছে। তোমার কি হাল আমি করব তুমি বুঝতেও পারবে না।
।
মানিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অনু এক প্রকার দৌড়ে'ই বেরিয়ে গেল কোচিং থেকে। মানিক অনুকে পেছন থেকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু অনু তাকালো না। তাই মানিকও ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে গেল অনুর পেছনে। মানিক কোচিং থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো অনু ওর গাড়িতে উঠছে। মানিক আবারও ডাকলো অনুকে। কিন্তু অনু ওর দিকে ফিরলো না। উল্টো তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে বসে চলে গেল। মানিক ভ্রু কুঁচকে তাকালো অনুর যাওয়ার দিকে। পরবর্তী মুহূর্তেই ওর ঠোঁটে বড় হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
নীলা রেস্টুরেন্টে বসে ওর কিছু ফ্রেন্ড’দের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। তখনি নীল আর নীলের কিছু বন্ধুরা ঢুকলো রেস্টুরেন্টে। নীলা কথার মাঝখানে খেয়াল করলো ওদের। পরক্ষণেই ও ভয়ে এক ঢোক গিললো। আর তাড়াতাড়ি টেবিলের নিচে বসে পরলো। নীলার বাকি বান্ধবীরা অবাক নীলার কার্যক্রমে। নীলাকে ওর বান্ধবী লিসা কিছু বলতে গেলে নীলা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে লিসাকে চুপ করতে বলে।
নীলরা ঠিক নীলাদের পাশের টেবিলেই বসে পরলো। নীল পাশের টেবিলের দিকে তাকিয়ে ভ্র কুচকে ফেললো। কারন ওই টেবিলের সব মেয়েরা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। নীলের বন্ধুদের মধ্যে সাগর বলে উঠলো।
।
সাগর: কি ভাই পাশের টেবিলে কি দেখিস?
।
নিলয়: কাউকে পছন্দ হলো নাকি?
।
আরিফ: মান মে লাড্ডু ফুটা?
।
আদি: লুচু ছেলে জানি কোথাকার।
।
আবির: তুই না নীলাকে ভালোবাসিস?
।
সিদ্ধার্থ: আমার হাতের কি অবস্থা করেছে ওই মেয়েটা দেখ।
।
মিহির: দেখে শুনে বাইক চালাতে পারিস না তুই?
।
নীল: কে ছিল মেয়েটা?
।
সিদ্ধার্থ: আরে একটা বাঁচাল মেয়ে ছিল। বোধহয় হাফ মেন্টালও ছিল।
।
নীলা: ওই কি বললেন আপনি?
।
একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনে সবাই নীলার দিকে তাকালো।
।
নীল: নীলা!!!
।
সিদ্ধার্থ: তুমিহ্!!!
।
নীলা: আমি বাঁচাল?
।
সিদ্ধার্থ: আগ্গে হ্যা।
।
নীলা: আমি হাফ মেন্টাল?
।
সিদ্ধার্থ: জ্বি।
।
নীলা: শালার ঘরের শালা। তুই বাঁচাল তোর চৌদ্দ গুষ্টির ফ্রেন্ড সার্কেল বাঁচাল। তুই হাফ মেন্টাল তোর চৌদ্দ গুষ্টির ফ্রেন্ড সার্কেল হাফ মেন্টাল।
।
সিদ্ধার্থ: এই কি বললে তুমি? তোমার সাহস তো কম না।
।
নীলা: তুই আমার সাহসের দেখছিস কি?
।
সিদ্ধার্থ: একদম তুই তোকারি করবে না।
।
নীলা: একশোবার করব তুই বলার কে? আর তোকে তো গাড়ি দিয়ে উস্টা মেরেছি জাস্ট। এখন তো মন চাইছে তোর উপর দিয়েই গাড়িটা উঠিয়ে দেই।
।
সিদ্ধার্থ: এই মেয়ে তুমি যে মেন্টাল + একজন খুনি তোমার বাবা-মা কি সেটা জানে?
।
নীলা: কিহ্ আমি খুনি? ওই আমি কি তোরে খুন করছি নাকি যে আমাকে তুই খুনি বললি?
।
নীল: স্টঅঅঅঅঅঅপ!!!!
।
নীলের চিৎকার শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল।
।
নীলা: পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হৈচৈ আছে?
।
নীল: এই নীলা চুপ!!!
।
নীলা: তুমি চুপ করো।
।
নীল: আগে বলো তুমি সিদ্ধার্থর বাইকে তোমর গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়েছো কেন?
।
নীলা: আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকি?
।
নীল: তাহলে?
।
সিদ্ধার্থ: অবশ্যই তুমি ইচ্ছে করে দিয়েছো।
।
নীলা: তোরে বলছে!!!
।
নীল: সিদ্ধার্থ চুপ থাক তুই। নীলা!
।
নীলা: কি?
।
নীল: ধাক্কা কি ভুলবশত লেগেছিল?
।
নীলা: হ্যা।
।
নীল: ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও।
।
নীলা: সেটা তুমি না বললেও যাব হাহ্।
।
নীলা ওর ফ্রেন্ডদের সাথে চলে গেল। নীল ওখানে বড় করে একটা শ্বাস ফেললো।
।
সিদ্ধার্থ: শালা তুই এমন একটা মেন্টালকে ভালোবাসলি কেমনে?
।
নীল: আল্লাহ্ জানে।
।
মিহির: তোর লাইফ তেজপাতা ছাড়া আর কিছু হবে না।
।
নীল: আল্লাহ্ ভরসা।
।
ওরা সবাই বসে কথা বলতে লাগলো। #Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_15+16(last)
.
ওরা সবাই বসে কথা বলতে লাগলো।
এদিকে মিহু বড়সড় একটা আড়ামের ঘুম দিয়ে উঠলো। উঠেই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ঘুমটা ওর বেশ ভালোই হয়েছে। কিন্তু মনটা এখনো খারাপ। কারন হলো মেঘ। মিহু বুঝতে পারছে না ওর কি করা উচিৎ। ও ভিষণ কনফিউজড। হঠাৎ ফোনের ম্যাসেজ টিউন বেজে উঠলো। ও ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজ চেক করে কেঁদে দিল। আজকে একটু পরে মেঘের এনগেজমেন্ট। আর তারই ইনভাইটেশন এসেছে ওর কাছে। ও কাঁদতে কাঁদতে ওর বাপির কাছে চলে গেল।
মিস্টার রায়জাদার অফিসের সামনে এসে মিহু চোখের পানি মুছে নিলো। তারপর সোজা ওর বাপির অফিসে ঢুকে পরলো। মিস্টার রায়জাদার পিএ মিহুকে দেখে দৌড়ে এলো।
।
পিএ: আরে ছোট ম্যাম আপনি?
।
মিহু: বাপি কোথায়?
।
পিএ: কনফারেন্স রুমে মিটিং-এ আছেন।
।
মিহু: আচ্ছা।
।
মিহু সেদিকে যেতে গেলে ওর বাপির পিএ মিহুকে আটকে দেয়। মিহু রাগী চোখে তাকায় পিএ-এর দিকে।
।
মিহু: কি হলো?
।
পিএ: স্যার এখন কাউকে ভেতরে যেতে এ্যালাও করতে না বলেছে।
।
মিহু: আমাকে আপনার কাউকে মনে হয়?
।
পিএ: না ম্যাম ঠিক তা না।
।
মিহু: নিজের চাকরি বাঁচাতে চাইলে আমার সামনে থেকে সরে যান।
।
পিএ: সরি ম্যাম আর এমন ভুল হবে না।
।
মিহু সোজা কনফারেন্স রুমে ঢুকে গেল। কনফারেন্স রুমের সবাই মিহুর দিকে তাকালো। মিহুকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো। কারন এখানে প্রায় কম বেশি সবাই মিহুকে চিনে। মিস্টার রায়জাদা মিহুকে দেখে ওর কাছে এগিয়ে গেলেন।
।
বাপি: কি হয়েছে মামনি তুমি এখানে এলে যে?
।
মিহু: বাপি আমার তোমার সাথে কথা আছে।
।
বাপি: এখানে বলা যাবে?
।
মিহু: নো বাপি কেবিনে চলো।
।
বাপি: আচ্ছা মামনি চলো।
।
মিহু: হুমম।
।
বাপি: সরি গাইস আজকের মিটিং'টা আর করা হবে না। আমি মিটিং-এর ডেট পরে জানিয়ে দিব সবাইকে।
।
সবাই: ইট'স অকেহ্ মিস্টার রায়জাদা।
।
মিহু আর ওর বাপি কেবিনে চলে গেল। বাপির চেয়ারে যেয়ে মিহু দু'পা উঠিয়ে বসে পড়লো।
।
বাপি: কি হয়েছে আমার মামনির?
।
মিহু: বাপি মেঘ!!!
।
মিহু ঠোঁট উল্টিয়ে ফেললো। ওর চোখে পানি জমে গিয়েছে।
।
বাপি: মামনি তোমার চোখে পানি কেন?
।
মিহু: বাপি মেঘের আজকে এনগেজমেন্ট।
।
বাপি: হ্যা মামনি আমি জানি তো। ইরফান চৌধুরী ইনভাইটেশন পাঠিয়েছে।
।
মিহু: বাপি আমি মেঘকে ভালোবাসি।
।
কথাটা বলেই মিহু মাথা নিচু করে ফেললো। মিহুর বাপি মুচকি হাসলো মেয়ের কথা শুনে। সাথে সাথেই আবার চেহারাটা আগের মতো করে ফেললেন।
।
বাপি: মামনি তুমি সিয়র যে তুমি মেঘকে ভালোবাসো?
।
মিহু: বাপি আমি ওকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু ওর এ্যাটিটিউড আর ওর অহংকারী স্বভাবটা আমার পছন্দ ছিল না। তাই আমি ওর সাথে কথা বলতাম না। আর সব সময় ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। কিন্তু এখন আর পারছি না। কারন ভালোবাসি ওকে আমি। ওর প্রতি আমার ভালোবাসা গুলো আগের থেকেও বেশি বেড়ে গেছে।
।
বাপি: মামনি শোনো আমি কখনো তোমাকে কোনো কিছুতে বাঁধা দেই নি বা না করি নি। তোমার মতের গুরুত্ব আমরা সব সময় দিয়েছি। আর এটা তো তোমার সারাজীবনের ব্যাপার! তাহলে কি করে তোমার গুরুত্ব না দেই বলোতো? তাই তুমি যা চাইবে তাই'ই হবে। বলো তুমি কি চাও এখন।
।
মিহু: আমি মেঘকে চাই বাপি।
।
বাপি: নিজের জিনিস তুমি সব সময় নিজে অর্জন করে নিয়েছো। তবে আজ কেন আমার কাছে চাইছো? আজকেও তুমি নিজে অর্জন করে নাও।
।
মিহু: কিন্তু কিভাবে বাপি?
।
বাপি: তুমি তো এতো ভীতু ছিলে না মামনি। তোমাকে আমি সব সময় কি শিখিয়েছি?
।
মিহু: যত বড় সমস্যাই হোক না কেন সব সময় সৎ সাহসের সাথে লড়াই করতে হবে।
।
বাপি: তাহলে এখন তোমার কি করা উচিৎ?
।
মিহু: মেঘের কাছে যেয়ে ওকে নিজের বলে দাবি করা।
।
বাপি: তো যাও।
।
মিহু: থ্যাংক ইউ বাপি। ইউ আর দ্যা বেস্ট ফাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।
।
বাপি: এখন যাও মামনি।
।
মিহু ওর বাপিকে জড়িয়ে ধরে তারপর দৌড়ে বেরিয়ে গেল। মিহু গাড়ি নিয়ে সোজা মেঘের বাসায় চলে গেল। মেঘের বাসার সামনে গাড়ি থামালো ও। পুরো বাড়িতে ফুল ভলিউমে গান চলছে। মেহমান দিয়ে পুরো বাড়ি ভরপুর। মিহু আশেপাশে তাকিয়ে মেঘকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু মেঘকে ও কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। হঠাৎ ওর চোখ গেল একপাশে কিছু মেহমানদের দাঁড়িয়ে কথা বলছে মেঘ। আর মেঘের হাত ধরেই দাঁড়িয়ে আছে এক সুন্দরী মেয়ে। হয়তো সেই মেয়েটার সাথেই মেঘের এনগেজমেন্ট হচ্ছে।
মিহু দৌড়ে মেঘের সামনে যেয়ে মেঘকে টেনে মেয়েটার থেকে আলাদা করলো। মেয়েটা অবাক হয়ে তাকালো মিহুর দিকে। মেঘ মিহুর দিকে তাকাতেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কারন মিহু একটা জিন্স আর শার্ট পরেই চলে এসেছে।
।
মিহু: তোমার সাথে আমার কথা আছে।
।
বলেই মিহু মেঘের হাত ধরে টেনে উপরে মেঘের রুমে নিয়ে গেল।
এদিকে নীলা আর মানিক বসে আছে। মিস্টার এন্ড মিসেস রায়জাদা সাথে অনু আর নীল এবং তাদের ফ্যামিলি চলে এলো মেঘদের বাসায়।
মানিকের চোখ গেল গেট দিয়ে ঢোকা অনুর দিকে। অনুর দিকে তাকাতেই ওর চোখ অনুর দিকেই আটকে গেল। বেবি পিংক কালার গাউনটায় ওকে দেখতে চমৎকার লাগছে।
নীলা মানিকের দিকে তাকিয়ে দেখে ও হা করে সামনে তাকিয়ে আছে। নীলা মানিকের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে মিহুর পুরো পরিবারকে দেখতে পেলো। নীলের দিকে চোখ যেতেই ও মনে মনে একটা কথাই বলল, "মিস্টার হ্যান্ডসাম।"
অনু আশেপাশে তাকিয়ে মানিককে খুঁজতে লাগলো। তখনি হঠাৎ ওর কানের সামনে গরম নিশ্বাস অনুভব করলো ও।
।
মানিক: আমাকে খুঁজছো?
।
মানিকের গলার আওয়াজে ও চমকে উঠলো। ও তাড়াতাড়ি পেছনে তাকিয়ে দেখে মানিকে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বাঁকা হেসে দাঁড়িয়ে আছে। অনু এক বড় ঢোক গিললো। তারপর নিজেকে দ্রুত স্বাভাবিক করে নিলো।
।
অনু: পাগল নাকি? তোমাকে খুঁজতে যাব কোন দুঃখে?
।
মানিক: আচ্ছা তাই? তো কাকে খুঁজছিলে?
।
অনু: আমি? আমি তো ইয়ে... মে..মেঘকে খুঁজছিলাম।
।
মানিক: মিথ্যে কথা বলছো কেন?
।
অনু: মিথ্যে কথা কোথায় বললাম? যা সত্যি সেটাই তো বললাম।
।
মানিক: ইউ আর লাইং অনু।
।
অনু: নো।
।
মানিক: ইয়েস ইউ আর!
।
অনু: আরে আজব তো বললাম না আমি তো..তোমাকে খুঁজছিলাম না। আমি মেঘকে খুঁজছিলাম।
।
মানিক: আমাকে ভালোবাসো?
।
অনু: কিহ্? নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখেছো?
।
মানিক: হ্যা প্রতিনিয়ত দেখি। আর আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম আর পার্ফেক্ট একজন মানুষ।
।
অনু মনে মনে বলল, "মিস্টার পার্ফেক্ট"।
।
অনু: এহ্ নিজের ঢোল নিজেই পিটায়।
।
মানিক: আমার ঢোল তো আমাকেই পিটাতে হবে। অন্য কেউ এসে তো আর আমার ঢোল পিটিয়ে দিয়ে যাবে না তাই না?
।
অনু: হাহ্।
।
মানিক: নাউ টেল মি। ডু ইউ লাভ মি অর নট?
।
অনু: অ..অফকোর্স নট।
।
মানিক: তাহলে সায়মার সামনে বললে যে!!!
।
অনু: ত..তখন তো ভু..ভুলে মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
।
মানিক: সত্যি কথা সব সময় মুখ ফসকেই বের হয়।
।
অনু মানিকের সাথে কথায় পারছে না দেখে ও স্বীকার করে নিলো সত্যিটা।
।
অনু: হ্যা ভালোবাসি! তো কি হয়েছে? কি করবে তুমি? মাথা মোটা একটা। সবার ভালোবাসা বুঝে। খালি আমার ভালোবাসাটাই বুঝলো না। ঢেঁড়স জানি কোথাকার।
।
মানিক: আই লাভ ইউ ঠু।
।
বলেই মানিক অনুকে জড়িয়ে ধরলো। অনু থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ও বুঝতে পারলো না ওর সাথে কি হলো এই মাত্র। মানিক ওকে একটু জোরে জড়িয়ে ধরতেই ও চিল্লিয়ে উঠলো।
।
অনু: ছাড়োওওওও।
।
মানিক অনুর চিৎকার শুনেই অনুকে ছেড়ে দিল।
।
মানিক: কি হয়েছে, কি হয়েছে?
।
অনু: কি বললে একটু আগে?
।
মানিক: আই লাভ ইউ ঠু বলেছি।
।
অনু: শালা তুই আমারে ভালোবাসোস অথচ বলোস নাই! তুই আমারে দিয়া প্রপোজ করাইসোস। তোর সাহস তো কম না। আবার কস আই লাভ ইউ ঠু। তোর আই লাভ ইউ ঠু এর ১৪ গুষ্টি কিলাই।
।
মানিক: আরে আরে অনু থামো। কুল কুল মাথা ঠান্ডা করো। এতো হট হয়ে কি করবে বলো?
।
অনু: কি কইলি তুই? আজাইরা ফাঁপর মারার আর জায়গা পাস না তাই না?
।
"এই মেয়ের সাথে সারাজীবন থাকব কি করে আমি?" ভাবছে মানিক। চলতে থাকুক ওদের খুনসুটি ভালোবাসা এভাবেই।
নীল নীলার দিকে সেই কখন থেকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু নীলা ওকে উপেক্ষা করে অন্য একটা ছেলের সাথে হেসে কথা বলছে দেখে নীলের গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে।
"ভালোবাসি আমি আর তার ভিতর ভাগ বসাচ্ছে অন্য কেউ? না কখনো এটা হতে দেয়া যায় না। নীলা শুধু আমার। ভালোবাসি আমি নীলাকে। নাহ্ আজকে আমি আর চুপ থাকব না। আজকে নীলাকে আমি প্রপোজ করেই ছাড়ব হুম!!!" ভাবছে নীল।
নীল নীলার সামনে যেয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ালো। নীলা নীলের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই নীলের হাওয়া ফুস হয়ে গেল। নীলের হাত-পা কাঁপতে লাগলো। নীলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।
"আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু এই সামান্য কথাটা তুমি আমাকে বলতে পারছো না? প্রতিদিন বলতে এসেও না বলে চলে যাও। কেন নীল? একবার বলেই তো দেখো! আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিব না কখনো। আচ্ছা আজকেও কি না বলে চলে যাবে তুমি?" ভাবছে নীলা।
।
নীল: নী..নীলা!
।
নীলা: হ্যা বলো কিছু বলবে?
।
নীল: হ্যা মানে না মানে হ্যা....
।
নীলা: কি বলবে বলো।
।
নীল: না মানে আসলে....
।
নীলা: বলো নীল।
।
নীল: আমি আসলে আসলে আমি...
।
নীলা: কি হলো বলো!
।
নীল: আমি বলতে এসেছিলাম আসলে আমি....
।
নীলা: নীল তুমি প্রায়ই কিছু বলতে আসো কিন্তু বলো না। আজকে তোমাকে বলতেই হবে, বলো।
।
নীল: কিছু না নীলা সরি তোমার টাইম নষ্ট করার জন্য।
।
নীলা: নীল!!!
।
নীল: হুম!
।
নীলা: তুমি একটা মুখপোড়া হনুমান। বজ্জাত ছেলে, শয়তান একটা।
।
নীলা আশেপাশে তাকিয়ে ড্রিংকের গ্লাসটা নিয়ে নীলের মুখে মারলো।
।
নীলা: অসহ্য একটা।
।
নীলা রেগে হনহন করে চলে গেল। নীল বুঝতে পারলো না ওর সাথে কি হলো। ও বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু নীলা যে রেগে আছে তা ও বুঝতে পারলো। কিন্তু কেন রেগে রেগে আছে সেটা বুঝলো না। নীল রুমাল দিয়ে নিজের মুখ মুছে নীলার পেছন পেছন গেল। বাইরে এসে নীলার পেছনে যাওয়ার সময় ও খেয়াল করলো মানিক আর অনু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। নীলের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
চলবে,,,,
#Your_love_is_my_Addiction🖤
#মিহু
#Part_16 (Last Part)
.
নীলা রেগে হনহন করে চলে গেল। নীল বুঝতে পারলো না ওর সাথে কি হলো। ও বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু নীলা যে রেগে আছে তা ও বুঝতে পারলো। কিন্তু কেন রেগে রেগে আছে সেটা বুঝলো না। নীল রুমাল দিয়ে নিজের মুখ মুছে নীলার পেছন পেছন গেল। বাইরে এসে নীলার পেছনে যাওয়ার সময় ও খেয়াল করলো মানিক আর অনু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। নীলের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
নীল আবারও নীলার পেছন দৌড় দিল। ও খেয়াল করলো নীলা ছাদে যাচ্ছে। ও নিজেও ছাদে চলে গেল। ও ছাদে যেয়ে দেখে নীলা রেলিং ধরে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। নীল যেয়ে নীলার পেছনে দাঁড়ালো। নীলা তা টের পেলো।
।
নীলা: কি হয়েছে তুমি এখানে কেন?
।
নীল: না আসলে তুমি ওভাবে রেগে চলে আসলে তো তাই আর কি দেখতে এসেছিলাম।
।
নীলা: সুইসাইড করব না তাই টেনশন করতে হবে না। যাও এখন এখান থেকে।
।
নীল: আচ্ছা আমার দোষটা কি সেটা তো বলবে!!!
।
নীলা: ওই শয়তান তুই জানোস না তোর দোষ কি? প্রতিদিন ভালোবাসি কথাটা বলতে এসে চলে যাস এটা তোর দোষ। প্রতিটা নিয়ত আমাকে অপেক্ষা করাইসোস তোর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য। কিন্তু এখনো শুনলাম না। এটা তোর দোষ। আজকে এই মুহূর্তে যদি ভালোবাসি কথাটা না বলছিস তাহলে তোকে এই ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিব। এহ্ ভালোবাসি কথাটা বলতে গেলেই ওনার তু তু মে মে শুরু হয়ে যায় যত্তসব। বল ভালোবাসিস কি'না! নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। বল বলছি এখনি।
।
নীল: তুমি জানতে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি?
।
নীলা: আমি কেন তোর কাহিনি দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে তুই আমারে ভালোবাসোস। এখন বল না বলবি না প্রপোজ কর।
।
নীল: আ..আমি?
।
নীলা: তা নয়ত কি তোর বাপরে কইসি?
।
নীল: না না তা কেন?
।
নীলা: তাইলে?
।
নীল: আচ্ছা করছি।
।
নীলা: তাড়াতাড়ি।
।
নীল: নীলা আ..আমি তোমাকে মানে আমি আসলে তোমাকে ভাব...ভালোবাসি।
।
নীল চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে কথাটা বলে ফেললো। পরবর্তী মুহূর্তেই নিজের বুকে কারও অবস্থান টের পেলো ও। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নীলা ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নীল অনেক অবাক হলো।
।
নীলা: আমিও ভালোবাসি তোমাকে।
।
নীল খুশি হয়ে নীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আকাশের চাঁদ সাক্ষী হয়ে রইলো ওদের ভালোবাসার।
এদিকে মিহু আর মেঘ মেঘের রুমে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ মিহুর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো।
।
মিহু: কেন করছো আমার সাথে এমন?
।
মেঘ: কেমন করলাম?
।
মিহু: তুমি এই এনগেজমেন্টটা ভেঙ্গে দাও।
।
মেঘ: ইসসস কেন ভাঙ্গব? আমার উড বি বুঝি কষ্ট পাবে না?
।
মিহু: তুমি ওর কষ্টটা দেখছো আর আমারটা দেখতে পাচ্ছো না?
।
মেঘ: তোমার আবার কিসের কষ্ট?
।
মিহু: মেঘ অবুঝের মতো প্রশ্ন করবে না। তুমি ভালো মতোই জানো আমি কিসের কথা বলছি।
।
মেঘ: না তো আমি তো কিছু জানি না।
।
মিহু: তুমি না সেদিন আমাকে বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাহলে এখন এতো বউ বউ কেন করছো?
।
মেঘ: আমার বউ আমাকে খুব ভালোবাসে তাই।
।
মিহু: আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?
।
মেঘ: আল্লাহ্ কি বলছো এসব তুমি? আমার বউ শুনলে তো কষ্ট পাবে।
।
মিহু: মেঘ প্লিজ আমাকে একটু বুঝো।
।
মেঘ: অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে মিহু।
।
মিহু: মেঘ!!! [করুন চোখে]
।
মেঘ: একটু পরেই আমার এনগেজমেন্ট। তাই নিচে চলো।
।
মিহু আর কিছু বলল না। চোখ থেকে শুধু কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। মেঘ মিহুর দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
।
মিহু: চলো।
।
মেঘ: এক মিনিট!
।
মিহু: কি?
।
মেঘ: তুমি কাঁদছো?
।
মিহু: না তো।
।
মেঘ: ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি এই অবস্থায় নিচে যাবে?
।
মিহু: কোন অবস্থায়?
।
মেঘ: এই জিন্স আর শার্ট পরে!!
।
মিহু: হুমম তো?
।
মেঘ: আমার এনগেজমেন্ট মিহু। একটু তো ভালো জামা কাপড় পরে আসতে পারতে।
।
মিহু: আমি তো এখানে থাকতে আসি নি। আমি এখনি চলে যাব। তাই ভালো জামা-কাপড়ের কোনো দরকার নেই।
।
মেঘ: সেকি তুমি চলে যাবে মানে? তুমি কোথাও যাচ্ছো না। আমার এনগেজমেন্টের পরেই যাবে তুমি।
।
মিহু: সরি বাট আমি থাকতে পারব না।
।
মেঘ: থাকতে তো তোমাকে হবেই।
।
মিহু: প্লিজ মেঘ।
।
মেঘ: কোনো কথা না। এই নাও এইটা পড়ে আসো তাড়াতাড়ি। আমি তোমাকে হেল্প করার জন্য অনুকে পাঠাচ্ছি।
।
মিহু: কিন্তু...
।
মিহুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘ রুম থেকে বের হয়ে গেল। ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো অনু হাতে শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিহু শাড়িটা ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখলো এটা ওর পছন্দ করে দেয়া সেই ধূসর রঙের শাড়িটা। মিহুর চোখে পানি জমে গেল আবার।
অনু এসে মিহুকে শাড়িটা পরিয়ে দিল। ধূসর রঙের শাড়িতে সাদা পাথর গুলো চিক চিক করছে। শাড়ির পাড় কালো রঙের হওয়াতে আরও বেশি ভালো লাগছে। কানে লম্বা সাদা পাথরের চেন কানের দুল। গলায় একটা ছোট লকেট। হাতে কিছু চিকন চুড়ি। চোখে গাঢ় কালো কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চুল গুলো নিচে দিয়ে রিং করা। ব্যাস মিহুর সাজ কমপ্লিট।
।
মিহু: আমাকে সাজানোর মানে কি অনু?
।
অনু: মেঘ বলল তাই।
।
মিহু আর কোনো কথা বলল না। অনু মিহুকে নিয়ে নিচে গেল। সবার চোখ মিহুর দিকে। মিহুর মাম্মাম এই প্রথম মিহুকে শাড়িতে দেখে বেশ অবাক হলেন। কিন্তু মেয়েকে দেখতে যে ভারী মিষ্টি লাগছে। তাই আর কিছু বললেন না। মেয়ের সামনে যেয়ে মেয়ের মাথায় চুমু দিলেন উনি।
মিহুর বাপি মিহুর কাছে আসতেই মিহু মাথা নাড়িয়ে না ইশারা করলো। বাপি বুঝতে পারলেন মেঘ এখনো মিহুকে কিছুই জানায় নি। তাও উনি কিছু বললেন না।
মেঘ নেশাগ্রস্ত চাহনি মেলে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে। মিহুর দৃষ্টিও মেঘের দিকে স্থির হয়ে আছে। হঠাৎ নীলা এনগেজমেন্টের এনাউন্সমেন্ট করতেই মেঘ মিহুর দিকে এগিয়ে এলো। মিহু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ মিহুর দিকে এসে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। মিহু সাথে সাথেই মাথা উঁচু করে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ মুচকি হেসে দিল। মিহু প্রশ্নবোধক চাহনি মেলে তাকিয়ে আছে।
মেঘ মিহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। মিহু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
।
মেঘ: সেই প্রথম দিন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি। এতোটা ভালোবাসি যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কিন্তু এর মাঝে আমার ইগো আর এ্যাটিটিউড এতো বেশি ছিল যে তোমার থেকে নিজেকে সব সময় দূরে সরে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারি নি নিজেকে তোমার ভালোবাসার জাল থেকে সরাতে। তুমিও আমাকে পছন্দ করতে আমি জানতাম। কিন্তু কখনো বোঝার সুযোগ দেই নি তোমাকে। তুমি আমাকে আড়ালে "মিস্টার ক্রাশ" বলতে তাও জানি। এতোটা কিভাবে ভালোবেসে ফেললাম তোমাকে জানি না। শুধু এটাই জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি। Because #Your_love_is_my_Addiction. আজকে আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে চাই তুমিও কি ভালোবাসো আমাকে?
।
মিহু অবাকের চূড়ান্ত পর্যায় চলে গেল। মিহু মেঘের প্রশ্নের উত্তরে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
।
মেঘ: উইল ইউ ম্যারি মি মিহু?
।
একটা রিং এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো মেঘ। মিহু মুখ হাত দিল ওর চোখে খুশির জল চিকচিক করছে। মিহু আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না জবাব দিতে।
।
মিহু: ইয়েস আই উইল।
।
মেঘ মিহুর বাম হাতের অনামিকা আঙুলে রিং পরিয়ে দিল। মেঘ উঠে দাঁড়াতেই মিহু মেঘকে সবার সামনেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেঘ আলতো করে চুমু দিল মিহুর মাথায়। মেঘ মিহুর কানে ফিসফিস করে বলল।
।
মেঘ: মিহু সবাই কিন্তু দেখছে।
।
প্রায় সাথে সাথেই মিহু মেঘকে ছেড়ে দিল। মিহুর দিকে অনু একটা রিং-এর বক্স এগিয়ে দিল।
।
মিহু: কি করব?
।
অনু: আরে গাধী মেঘকে রিংটা পরিয়ে দে।
।
মিহু: অকেহ্।
।
মিহু মেঘকে রিংটা পরিয়ে দিল। সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো।
।
মেঘ: কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা?
।
মিহু: খুব খুব খুব ভালো। এই ওয়েট! তার মানে এনগেজমেন্টটা আমার সাথেই হচ্ছিল?
।
মেঘ: ইয়েস।
।
মিহু: কিহ্? তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো শয়তান ছেলে। আর বাপি-মাম্মাম তোমরাও আমাকে বলো নি কেন?
।
বাপি: মেঘ না করেছিল মামনি।
।
মিহু: ওকে তো আমিইই.... দেখে নিবো। করব না বিয়ে ওকে আমি। আর খুব ভালো সবাই দেখি ওর কথায় নাচানাচি করেছো। মানে মোট কথা হলো সবাই সবকিছু জানতে শুধু আমিই কিছু জানতাম না তাই তো?
।
মেঘ: আরে মিহু আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলতে মানা করেছিলাম।
।
মিহু: তোমার সারপ্রাইজের ১৪ গুষ্টির তুষ্টি। করব না তোকে বিয়ে আমি বান্দর ছেলে জানি কোথাকার। থাক তুই তোর সারপ্রাইজ নিয়ে বজ্জাত পোলা।
।
মিহু রেগে পুরো বম হয়ে আছে। মেঘ তা দেখে অসহায় চেহারা বানিয়ে রেখেছে। মিহু রেগে মেঘের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। মেঘ সেই তখন থেকে মিহুর পেছন পেছন ঘুরছে আর সরি বলছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। মেঘ এখন নিজের কপাল নিজেই চাপড়াচ্ছে। কেন যে মিহুকে সারপ্রাইজ দিতে গেল আল্লাহ্ জানে। এখন তো তার ফল ভোগ করছে।
মিহু মেঘের কোনো কথা শুনছিল না বলে মেঘ মিহুর হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে গেল।
।
মিহু: আরেহ্ ছাড়ো বলছি! তুমি আমাকে টাচও করবে না।
।
মেঘ: আমার সম্পত্তিতে আমি হাত দিব না তো কি অন্য কেউ দিবে নাকি?
।
মিহু: ওই আমি সম্পত্তি?
।
মেঘ: আইনত আমার বেটার হাফ তুমি।
।
মিহু: হাহ্ দূরে গিয়ে মুড়ি খাও।
।
মেঘ: নিজ হাতে খাইয়ে দিলে আমি খেতে রাজি আছি।
।
মিহু: এহ্ শখ কত সরো সামনে থেকে।
।
মেঘ: কেন সরবো?
।
বলেই মেঘ মিহুর মুখে ফুঁ দিল। আর নিজের মুখটা আরও মিহুর সামনে এগিয়ে নিলো।
।
মিহু: মে..মেঘ!!! প্লিজ সরো।
।
মেঘ: কেন?
।
মিহু: এ..এমনি।
।
মেঘ: না এমনি এমনি তো ছাড়া যাবে না। বলো কেন সরবো নাহলে ছাড়ব না।
।
মিহু: আমার কেমন যেন ফিল হচ্ছে। তাই বলছি সরো।
।
মেঘ: কেমন ফিল হচ্ছে? [বাঁকা হেসে]
।
মিহু: ধ্যাত ছাড়ো তো।
।
মেঘ মিহুর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আবার মিহুর চোখের দিকে তাকালো।
।
মেঘ: মিহু!!!
।
মিহু: হু..হুম।
।
মেঘ: মে আই কিস ইউ?
।
মিহু দু'চোখ বড় বড় করে তাকালো। মুহূর্তেই দু'চোখ চেপে বন্ধ করে ফেললো, মেঘের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে। কিছু সময় পর মেঘ মিহুকে ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই মিহু মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেঘও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো মিহুকে।
পার্টি শেষে মিহু মেঘদের বাসার ছাদে দোলনায় বসে আছে। পেছন থেকে মেঘ মিহুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। দুজনে বসে আকাশের তারা দেখছে আর কথা বলছে। মিহু আজ অনেক খুশি। ও মেঘকে নিজের জীবনে পেয়েছে বলে। মেঘ মিহুর চুলের ভেতর মুখ গুঁজে বসে আছে।
।
মিহু: একটা কবিতা শোনাবে?
।
মেঘ: কবিতা?
।
মিহু: হুমম।
।
মেঘ: আচ্ছা।
।
"তুমি আমার নীল আকাশ
আমি তোমার তারা
সব দুঃখ হাসি দিয়ে
জীবন মোদের ভরা
আঁধার কালো আকাশ কোনে
তুমি আমার ঊষা
হৃদয় মাঝে আছো তুমি
আমার ভালোবাসা"
★★★★★★★★★★সমাপ্ত★★★★★★★★★★