আসসালামুআলাইকুম সবাইকে। আমি @Afi.Amatullah আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি এক নতুন গল্প। বস্তব জীবন থেকে নেওয়া একটি গল্প।
আমি যখন ক্লাস 3 তে, তখন প্রায় সময়ই এক ভিক্ষুককে দেখতাম। ভিক্ষুকটি ছিলো অনেক বৃদ্ধ, হেলে হেলে লাঠির উপর ভর করে চলতো। আমার সাথে আমার ২ বান্ধবী ছিলো,আমরা প্রতিদিন একসাথে স্কুল থেকে হেটে হেটে বাসায় আসতাম। বাসায় আসার পথে সেই ভিক্ষুকটির সাথে প্রায়ই দেখা হতো। আমাদের দেখে তিনি মুচকি হাসতেন। সাধারনতই ভিক্ষুকরা ছাত্র ছাত্রীদের দেখে হাত পেতে কিছু চায়। কিন্তু তিনি কখনই কোনো কিছু চান নি। বরং আমাদের দেখে আমাদের মাথায় হাত বুলায় দিতেন, আমাদের ৩ জনের নামও রেখে দিয়েছিলেন। আমাকে ময়না বলে ডাকতেন,আর আমার বাকি দুই বান্ধবীকে টিয়া আর ঘুঘু বলে ডাকতেন। উনার আন্তরিকতাগুলো খুব ভালো লাগতো। উনাকে দেখলেই দাদু বলে সালাম দিতাম।
একদিন আমরা স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের মসজিদে গিয়েছিলাম। সেদিন ছিলো শুক্রবার, তখন ১১ টা কি ১২ টা বাজে। মসজিদটি ছিলো অনেক সুন্দর, খোলামেলা এবং ফুল গাছে ভরপুর। তাই সেখানে যেতে ভালো লাগতো। শুক্রবারে আমাদের হাফ স্কুল হতো এবং তাড়াতাড়ি ছুটি হতো, তাই আমরা মসজিদে যেতাম সময় কাটাতে। সেদিন মসজিদে গিয়ে আমরা খেলা করছিলাম, মসজিদের ভিতরে যাইনি বাইরেই ফুল গাছগুলোর ওখানে খেলা করছিলাম। হঠাৎ করে জুতা খুলে মসজিদের ভিতরে যেতেই দেখি সেই ভিক্ষুকটি ছাড়া আর কেউ নেই। তিনি মসজিদের এক কোণে বসে আছেন,হয়তো আল্লাহর কাছে দুয়া করছিলেন। সাধারণতই উনাকে একটু ময়লা কাপড় পড়ে ভিক্ষা করতে দেখেছি। কিন্তু সেদিন তিনি একটি পরিস্কার সাদা ছেড়া পাঞ্জাবী পড়েছিলেন। আমি ভিতরে ঢুকতেই তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। তার চোখ ছিলো অশ্রুসিক্ত। উনাকে দেখেই মনটা গলে গেলো।
বার বার মনে হতে লাগলো, একজন ভিক্ষুক, সে আমাদের চেয়েও হয়তো খারাপ অবস্থায় আছে, কিন্তু তবুও সে তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যায়নি। জুম্মার দিনে সবার আগেই মসজিদে হাজির হয়েছে। সকলের অগোচরে তার প্রভুর কাছে তার চাওয়া পাওয়া, মনের কথা ব্যক্ত করছে, অশ্রু জলে তার প্রভুর কাছে চাচ্ছে। তার প্রভু কি করে তাকে ফিরিয়ে দেবে!!! তারপর থেকে সেই ভিক্ষুককে আর কোনোদিন দেখতে পাইনি, জানি না তিনি বেঁচে আছেন কিনা!!!
Great work..