বিবাহের পূর্বে দেশাচার

0 17
Avatar for Adnan334
4 years ago

কথা পাকাপাকি হলে বিবাহের দিন হবে। তবে কেবল দিন করার জন্য ঘটা ও আড়ম্বরপূর্ণ মজলিস করা এবং রাজকীয় পান-ভোজনের বিপুল আয়োজন ও ব্যবস্থা করা অপব্যয়ের পর্যায়ভুক্ত। বরপক্ষের উচিৎ, তা খেয়াল রাখা এবং সর্বোত্তম খাওয়ার ব্যবস্থা না হলে দুর্নাম না করা। কেবলমাত্র একজন লোক গিয়ে অথবা না গিয়ে টেলিফোনের মাধ্যমেও বিবাহের দিন ঠিক করা যায়। নিজেদের সুবিধামত যে কোন দিনে যে কোন মাসে দিন স্থির করতে কোন বাধা নেই। আল্লাহর দিন সবই সমান। পঞ্জিকা দেখে শুভাশুভ দিন নির্বাচন বিদআত এবং বিজাতির অনুকরণ।

নিমন্ত্রণ করার সময় নিমন্ত্রণপত্রের কোণে হলুদ লাগিয়ে দেওয়া বিদআত। এতে কোন শুভলক্ষণ আছে বলে মনে করা শির্ক।

এরপর পৃথক করে হলুদ মাখার কাপড় পাঠানো এবং বিবাহ-বন্ধনের ৫/৭ দিন পূর্বে কনের বাড়ি ‘লগন’ পাঠানোর প্রথা ইসলামী প্রথা নয়। তারপর এর সঙ্গে যায় বরের ভাই-বন্ধু ও বুনাইরা। সাজ-পোশাক, প্রসাধন-সামগ্রীর সাথে পুতুল জরুরী, অনেকে পাঠায় লুডু এবং তাসও! তার সাথে চিনি, পান-সুপারি, মাছ, মুদ্রা, হলুদ মাখার শাড়ি থাকবেই। এই ‘লগন-ধরা’ ও মুখ দেখার অনুষ্ঠান এক ব্যয়বহুল ব্যাপার। এতে যা খরচ হয়, তা একটা ইসলামী বিবাহ মজলিসের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু হায় রে! পরের কান খোলামকুচি দিয়ে মললেও তাতে নিজের ব্যথা কোথায়?

দিনের শেষে অনুষ্ঠিত হয় মুখ দর্শনের অনুষ্ঠান। পাত্রীকে সুসজ্জিতা করে ‘আলম তালা’র (পাত্র-পাত্রীর বসার জন্য বিশেষ সুসজ্জিত বিছানা বা) আসনে বসানো হয়। এরপর অঙ্গরাগে সজ্জিত সেই চেহারা দর্শন করে পাত্রের ঐ ভাই-বন্ধুরা। আঙ্গুলে বা টাকায় চিনি নিয়ে পাত্রীর অধরে স্পর্শ করে! অঙ্গুরীয়র উপহার তার সুসজ্জিত আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়, ঘড়ি পরিয়ে দেয় সুদর্শন হাতখানি টেনে! এর ফাঁকে দু’চারটি ঠাট্টা-উপহাস তো চলেই। কারণ, এরা দেওর, নন্দাই, বন্ধু---উপহাসের পাত্র তাই!

অতঃপর সুগোল কব্জিখানিতে সুতো বাঁধে, ললাটে লাগায় হলুদ বাঁটা এবং হাতে দেয় জাঁতি বা কাজললতা! অথচ এদেরকে চেহারা দেখানোও হারাম। প্রিয় নবী (সাঃ) সত্যই বলেছেন,

إذا لَم تَستَحي فَاصنَع مَا شِئتَ.

‘‘লজ্জা না থাকলে যা মন তাই কর।’’[1] অর্থাৎ নির্লজ্জ বেহায়ারাই ইচ্ছামত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে পারে। পক্ষান্তরে কোন মু’মিন নির্লজ্জ হয় না। কারণ, ‘‘লজ্জা ঈমানের অংশবিশেষ।’’[2]

প্রকাশ যে, এর পর থেকে হাতে বা কপালে সুতো বেঁধে রাখা ও কাজললতা বা জাঁতি সর্বদা সাথে রাখা বিদআত। বরং এর মাধ্যমে যদি কোন মঙ্গলের আশা করা হয়, তবে তা শির্ক।

পাত্র-পাত্রীকে এরপর দিনগুলিতে বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়া। এই দিনে মসজিদ বা পীরের থানে সিন্নি বিতরণ করা প্রভৃতি বিদআত ও শির্ক।

এবার রইল গায়ে হলুদ, তেল চাপানো, সাতুশী ও নাপিতের নখ কাটা প্রভৃতি প্রথা। তেল চাপানোতে সধবা নারী হতে হবে। বিধবা আসতে পাবে না। নির্দিষ্ট কাপড়ে কাবা-মুখে বসিয়ে হলুদ মাখাবে। কাপড়ে লিখা পাত্র-পাত্রীর নাম। পাত্রকে এমন মহিলারা হলুদ মাখাবে যাদের ঐ পাত্রকে দেখা দেওয়া হারাম! পাত্রের এমন অঙ্গে (জাঙ্গে, নাভীর নীচে) হলুদ মাখায় যে অঙ্গ পুরুষকে দেখানোও হারাম। সুতরাং এমন প্রথা ইসলামে কি হতে পারে?

পক্ষান্তরে পুরুষ রঙ ব্যবহার করতে পারে না। তাই হাতে-পায়ে মেহেন্দি লাগাতে পারে না। হলুদ ব্যবহার করাও তার জন্য শোভনীয় নয়। বিশেষ করে হলুদ রঙের পোশাক তার জন্য নিষিদ্ধ।[3]

একদা সাহাবীর গায়ে হলুদ রঙ দেখে নবী (সাঃ) বুঝেছিলেন, তিনি নব-বিবাহিত।[4] সেটা হলুদের রঙ নয়। বরং স্ত্রীর দেহের (মহিলাদের ব্যবহার্য্য একপ্রকার সুগন্ধি) ‘খালুক’এর রঙ; যা তাঁর কাপড়ে লেগে গিয়েছিল।[5] সুতরাং এটাকে পাত্র-পাত্রীর জন্য হলুদ মাখার বৈধতার দলীল মানা যায় না। হ্যাঁ, তবে যদি কেউ দেহের রঙ ‘কাঁচা সোনার মত উজ্জ্বল’ করার উদ্দেশ্যে নিজ হাতে মেখে ধুয়ে ফেলে, তবে সে কথা ভিন্ন। তাছাড়া বিয়ের পাত্র-পাত্রীর জন্য এই দিয়ে লগ্ন শুরু করা বিদআত।

অবশ্য পাত্রী হাতে-পায়ে মেহেন্দি ব্যবহার করতে পারে। বরং মহিলাদের হাতে সর্বদা মেহেন্দি লাগিয়ে রাখাই বিধিসম্মত।[6]

এরপর রাত্রে ক্ষীর মুখে দেওয়ার দেশাচার। সাধারণতঃ এ প্রথা পাশর্ববর্তী পরিবেশ থেকে ধার করা বা অনুপ্রবেশ করা প্রথা। আর প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই দলভুক্ত।’’[7]

তাছাড়া এমন মহিলারা পাত্রের ওষ্ঠাধর স্পর্শ করে তার মুখে ক্ষীর-মিষ্টি দেয়, যাদের জন্য ঐ পাত্রকে দেখা দেওয়াও হারাম! অনেক সময় উপহাসের পাত্রী (?) ভাবী, নানী হলে হাতে কামড়েও দেওয়া হয়! বরং পাত্রও ভাবীর মুখে তুলে দেয় প্রতিদানের ক্ষীর! অথচ এই ‘‘স্পর্শ থেকে তার মাথায় সুচ গেঁথে যাওয়াও উত্তম ছিল।’’[8]

অনুরূপ করে পাত্রীর সাথেও তার উপহাসের পাত্ররা! বরং যে ক্ষীর খাওয়াতে যায় তার সাথেও চলে বিভিন্ন মস্করা।

আর তার সাথে চলে ‘গীত-পার্টি’ যুবতীদের গীত। শুধু গীতই নয় বরং অশ্লীল গীত ও হাততালি সহ ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে গীত। এর সঙ্গে থাকে ‘লেডি ড্যান্স’ বা নাচ। আর শেষে বিভিন্ন অশ্লীল ও অবৈধ অভিনয় বা ‘কাপ’! এমন পরিস্থিতি দেখে-শুনে প্রত্যেক রুচিবান মুসলিম তা ঘৃণা করতে বাধ্য। কিন্তু বহু রুচিহীন গৃহকর্তা এসব দেখে-শুনেও শুধু এই বলে ভ্রূক্ষেপ করে না যে, ‘আম কালে ডোম রাজা, বিয়ে কালে মেয়ে রাজা।’ ফলে ইচ্ছা করেই অনুগত প্রজা হয়ে তাদেরকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেয় অথবা মেয়েদের ধমকে বাধ্য হয়েই চুপ থাকে। তাই নিজ পরিবারকে নির্লজ্জতায় ছেড়ে দিয়ে বাড়ির বাইরে রাত কাটাতেও লজ্জা করে না। অথচ ‘‘গৃহের সমস্ত দায়িত্ব সম্পর্কে কিয়ামতে গৃহকর্তার নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।’’[9]

এই ধরনের অসার ও অশ্লীল মজলিসে কোন মুসলিম নারীর উপস্থিত হওয়া এবং ক্ষীর খাওয়ানো নিঃসন্দেহে হারাম। যেমন মহিলাদের এই কীর্তিকলাপ দর্শন করা বা নাচে ফেরি দেওয়া পুরুষদের জন্য বিশেষভাবে হারাম। এমন নাচিয়েকে ফেরি দেওয়ার বদলে তার কোমর ভেঙ্গে দেওয়া উচিৎ মুসলিমের---বিশেষ করে তার অভিভাবকের। কিন্তু হায়! ‘শাশুড়ী যদি দাঁড়িয়ে মুতে, তাহলে বউ তো পাক দিয়ে দিয়ে মুতবেই!’

আইবুড়ো বা থুবড়া ভাতের (অবিবাহিত অবস্থার শেষ অন্নগ্রহণের) অনুষ্ঠানও বিজাতীয় প্রথা। এই দিনের ক্ষীর-সিন্নি বিতরণও বিদআত। বরং পীরতলায় বিতরণ শির্ক। আর এই দিন সাধারণতঃ পাকান বা বাতাসা বিতরণ (বিক্রয়ের) দিন। যাদেরকে এই পাকান বা মিষ্টি দেওয়া হবে তাদেরকে পরিমাণ মত টাকা দিয়ে ‘ভাত’ খাওয়াতেই হবে। না দিলে নয়। এই লৌকিকতায় মান রাখতে গিয়েও অনেকে লজ্জিত হয়। সুতরাং এসব দেশাচার ইসলামের কিছু নয়।

তারপর আসে তেল নামানোর পালা। ঝোমর ডালা হয় পাত্র বা পাত্রীকে কেন্দ্র করে হাততালি দিয়ে গীত গেয়ে ও প্রদক্ষিণ করে!

এ ছাড়া আছে শিরতেল ঢালার অনুষ্ঠান। সধবাদের হাতের উপরে হাত, স্বার উপর নোড়া, তার উপর তেল ঢালা হয় এবং তা পাত্রীর মাথায় গড়িয়ে পড়ে। এই সঙ্গে আরো কত কি মেয়েলি কীর্তি। তাছাড়া এ প্রথা সম্ভবতঃ শিবলিঙ্গ পূজারীদের। কারণ, অনেকেই এই প্রথাকে ‘শিবতেল ঢালা’ বলে থাকে। তাছাড়া এর প্রমাণ হল শিবলিঙ্গের মত ঐ নোড়া!

সুতরাং যে মুসলিম নারীরা মূর্তিপূজকদের অনুরূপ করে তারা রসুলের বাণীমতে ওদেরই দলভুক্ত। আর এদের সঙ্গে দায়ী হবে তাদের অভিভাবক ও স্বামীরাও।

এই দিনগুলিতে ‘আলমতালায়’ বসার আগে পাত্র-পাত্রীর কপাল ঠেকিয়ে আসনে বা বিছানায় সালাম বিদআত। কোন বেগানা (যেমন বুনাই প্রভৃতির) কোলে চেপে আলম-তালায় বসা হারাম। নারী-পুরুষের (কুটুম্বদের) অবাধ মিলা-মিশা, কথোপকথন মজাক-ঠাট্টা, পর্দাহীনতা প্রভৃতি ইসলাম বিরোধী আচরণ ও অভ্যাস। যেমন রঙ ছড়াছড়ি করে হোলী (?) ও কাদা খেলা প্রভৃতি বিজাতীয় প্রথা। এমন আড়ম্বর ও অনুষ্ঠান ইসলামে অনুমোদিত নয়।

সুতরাং মুসলিম সাবধান! তুলে দিন ‘আলমতালা’ নামক ঐ ‘রথতালা’কে পরিবেশ হতে। পাত্র-পাত্রীও সচেতন হও! বসবে না ঐ ‘রথতালা’তে। ক্ষীর খাবে না এর-ওর হাতে। কে জানে ওদের হাতের অবস্থা কি? ছিঃ!

[1] (বুখারী ৩৪৮৪নং) [2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৫নং) [3] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৭নং) [4] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২১০নং) [5] (ফাতহুল বারী- ইবনে হাজার আল-আসকালানী ৯/১৪৪) [6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং) [7] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৭নং) [8] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২২৬নং) [9] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৬৮৫নং)

4
$ 1.46
$ 1.46 from @TheRandomRewarder
Sponsors of Adnan334
empty
empty
empty
Avatar for Adnan334
4 years ago

Comments