২৪জুলাই,২০২০
ধরুন,আপনি কাজে বের হবেন।বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষিকা আপনি।প্রতিদিনকার মত বের হলেন।গলির বাইরে দাড়িয়ে রিক্সার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন।রাস্তায় ব্যস্ত মানুষ প্রতিদিনের মত ছোটাছুটি করছে, যার যার কর্মক্ষেত্রে সময় মত পৌঁছাবে বলে।এমন সময় আপনি অনুভব করলেন কেউ আপনার সংবেদনশীল জায়গায় বাজেভাবে স্পর্শ করলো।।মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন একটা লোক তাড়াহুড়া করে চলে যাচ্ছে।বেশভুষায় নিপাট ভদ্রলোকই মনে হল।আপনি হঠাত গুটিয়ে গেলেন। মিলিসেকেন্ডের মধ্যে হয়ে যাওয়া একটা ঘটনা আপনার সারাদিনের জন্য জমানো উৎসাহকে শেষ করে দিল।হঠাত আপনার মনে হল,বাসায় গিয়ে বালিশে মাথা রেখে একটু কান্না করে নিলে হালকা লাগত।।কিন্তু বাচ্চা রা তো অপেক্ষা করে আছে ক্লাসে প্রতিদিনের মত প্রিয় মিস এর গল্প শুনবে,ড্রয়িং করবে,নতুন কিছু শিখবে।
তখনের মত সামলে নিয়ে আপনি স্কুলের পথে রওনা হলেন।রিক্সায় উঠে শাড়ির আচলের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন।অনেক রকম চিন্তা খেলে গেলো আপনার মাথায়।মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কোনো আঙ্কেলের কথা, যার কথা হয়ত আপনি মা কে কোনোদিন ও বলতে পারেননি।অথবা দুই বেণী ঝুলিয়ে বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সময় বাসের ঘটনা টা অথবা প্রথম শাড়ি পড়ে বান্ধবীদের সাথে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে যেদিন গিয়েছিলেন,সেদিনের কথা।
এরকম কত শত চিন্তা করতে করতে আপনি পৌছে গেলেন স্কুলে।স্কুলের মাঠ ছোটদের কলকাকলিতে মুখর।ক্লাস শুরু হয়ে যাবে একটু পর।।আপনি দ্রুত টিচার্স রুমে গেলেন,একটু ফ্রেশ হয়ে নিলেন।জানালা দিয়ে চোখ চলে গেলো হঠাত। খেলার মাঠে এক কোণায় সাদা ফিতায় দুই বেণী ঝুলিয়ে কয়েকটা আদরের পুতুল ওপেনটি বায়োস্কোপ খেলছে।
বুকে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব হল। মনে হল ওরা ও যদি আপনার মত কারো নোংরা মানসিকতার শিকার হয়? নিষ্পাপ প্রাণগুলোকে কিভাবে বাচাবেন, যাতে তাদের ফুল ফুল মনে কোনো ক্ষত সৃস্টি না হয়?ও হ্যা,,আপনার তো একটা আদরের ভাইঝি আছে,পরী।।পরী কখনো এসবের শিকার হয়নি তো?
না,আমার সাথে যা হয়েছে,হয়েছে।আমি পরীকে আগলে রাখবো,ভেবে নিলেন আপনি।আজকের ক্লাসের টপিক ঠিক করে ফেললেন,'ব্যাড টাচ'।যারা মাত্রই দুনিয়াকে জানতে শুরু করেছে,তাদেরকে দুনিয়ার নোংরা দিকের সাথে ও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।যাতে তারা বুঝে এরকম পরিস্থিতিতে ভয় না পেয়ে,লজ্জিত না হয়ে, নিজেকে না গুটিয়ে কিভাবে এটাকে সামাল দিতে হয়।
পরিশেষে,পাশের বাড়ির মেয়ে @girlnextdoor আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সময় নিয়ে আর্টিকেল টি পড়ার জন্য। চিরতরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য এর 'ছাড়পত্র' কবিতার লাইন লিখে বিদায় নিচ্ছি।ভালো থাকবেন।
এসেছে নতুন শিশু,তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ,মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জন্জাল
এ বিশ্বকে-এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
Wow good writing with good topics👍