- এমনভাবে বলছো যেন রোডসাইড রোমিও'র সাথে প্রেম করে তুমি মহৎ একটা কাজ করে ফেলেছো। তাছাড়া তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো আজ তোমার গায়ে হলুদ আর কাল বিয়ে।
- কোন শাস্রে লেখা আছে যে বিয়ের আগের দিন প্রাক্তন প্রেমিকের স্মৃতি মনে করা যাবে না?
- কতদিনের রিলেশন ছিল?
- হিসেব করিনি। ছয়মাস ধরে শুধু রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখতো। সামনে এসে কিছু বলার সাহস পেতো না।
- ধুর, ভীতুর ডিম ছিল একটা তাহলে। এমন ভীতু প্রকৃতির পুরুষ মানুষের সাথে প্রেম করে সুবিধা করা যায় না খুব একটা। হোপলেস কেইস। কি ব্যাপার, এভাবে ঠোঁট চেপে হাসছো কেন?
- এই ভীতুর ডিমটাই একটা হলুদের প্রোগ্রামে সবার সামনে আমার ডান গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে চোখমুখ কঠিন করে প্রপোজ করেছিলো আমাকে।
- সিরিয়াসলি? কাহিনী বলো প্লিজ।
- তুই না আমার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিস? কই?
- ওহ্, ভুলেই গিয়েছিলাম। ঠিক হয়ে বসো। আর ওদিক থেকে দুটো বালিশ নিয়ে হাতের নিচে রাখো।
- বাসায় এত গেস্ট এসেছে কেন? মামাকে বলেছিলাম কম আয়োজন করতে।
- বাদ দাও তো। গেস্টদের ব্যাপারটা বাবা-মা'র উপর ছেড়ে দাও। তুমি ভীড়ভাট্টা পছন্দ করো না বলে আমি কিন্তু রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে রেখেছি। এখানে কেউ তোমাকে বিরক্ত করতে আসবে না।
- কিন্তু মামীর কত কষ্ট হয়ে যাচ্ছে বল্ তো? মানুষটা একটু বিশ্রামও পাচ্ছে না।
- উঁহু, বাদ দাও না আপু। মা এসবে অভ্যস্ত আছে। তুমি শুরু করো।
- কি?
- কি আবার? প্রপোজ করার ব্যাপারটা...
- প্রথম প্রথম ওকে এতটা পাত্তা দিতাম না। তবে ভার্সিটিতে যাওয়া-আসার সময় প্রতিদিনই দেখতাম। যখন বুঝতে পারলাম, ছেলেটা আমাকে দেখার জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকে তখন ওর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম। রিপোর্ট ভালোই পেলাম। কিন্তু আমার কেন জানি কোনো আগ্রহ কাজ করতো না ওর ব্যাপারে।
- তাহলে খোঁজখবর নিতে গেলে কেন?
- বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এমনিই...
- আচ্ছা তারপর?
- সুমনের কথা মনে আছে তোর? আরে আমার কলেজ ফ্রেন্ড। ওর বড় ভাইয়ের হলুদের প্রোগ্রামে ছেলেটার সাথে সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলো। তখনো কথা হয়নি কিন্তু। সেদিন সবার তালে তাল মেলাতে গিয়ে হালকা একটু ড্রিংক্স করে ফেলেছিলাম। বাসার ছাদেই হয়েছিলো হলুদের অনুষ্ঠানটা। এলোমেলোভাবে নাচানাচি করতে গিয়ে শাড়ির আঁচলটা হয়তো একটুখানি সরে গিয়েছিলো। ছেলেটা দূর থেকে ব্যাপারটা নোটিস করে তেড়ে এসে আচমকা এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আমার গালে, তাও আবার সবার সামনে! ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। "নিজেকে সামলাতে না পারলে এসব প্রোগ্রামে একা আসা ঠিক না" এই বলে খানিকক্ষণ আমাকে খুব ঝাড়লো। তারপর চোখমুখ কঠিন করে সরাসরি প্রপোজ করে বসলো- "উইল ইউ বি মাই হালাল ভ্যালেন্টাইন?"
- ও মাই গড! তোমার এন্সার কি ছিল?
- তুই হলে কি উত্তর দিতি?
- সাথে সাথে এক্সেপ্ট করে নিতাম।
- তো আমি তোর ফুফাতো বোন হয়ে কি করে এর ব্যতিক্রম কিছু করি?
- আচ্ছা! তারপর থেকেই রিলেশন শুরু তাহলে?
- হুম।
- দেখতে কেমন ছিল?
- ঠিকঠাক। হাইট ভালো, শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ, মাথাভর্তি ঘন চুল, চাপদাড়ি আর চোখের তারায় মায়া মিশে থাকে সবসময়।
- তুমি তাহলে এই বিয়েটা কেন করছো? বাবা লাভ ম্যারেজ মেনে নিবে না বলে? এখন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কি হবে?
- আমাদের দেখা হত মাসে দু'দিন। ঘন ঘন দেখা করা ওর পছন্দ ছিল না।
- মানে কি? রিলেশনের পর আর রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করতো না?
- তখন চাকরী হয়ে গিয়েছিলো ওর।
একদিন জ্যামের কারণে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো বলে কি শাস্তি দিয়েছিলো জানিস? পার্কের বেঞ্চে বসে ওর পিঠ চুলকে দিতে হয়েছিলো। আর আশেপাশের সব মানুষ ঘুরে ঘুরে আমাদের দেখছিলো। তারপর আবার সাথে সাথেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারও কিনে দিয়েছিলো অবশ্য। উফ, এখন তো আমার পিঠ চুলকাচ্ছে।
- এই দাঁড়াও দাঁড়াও, নড়বে না তুমি, মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে। আমি চুলকে দিচ্ছি। আচ্ছা এমন অদ্ভুত ক্যারেক্টার কেউ হাতছাড়া করে নাকি?
- আরো আছে। ওর চাকরীটা হওয়ার পর আমাকে ট্রিট দিবে বলেছিলো। ভেবেছিলাম কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাবে। আর তুই তো জানিস বাইরের খাবার আমার পছন্দ না। তাই আমি "না" করছিলাম বারবার। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে আসলো আমার জন্য। অথচ আমি তাকে কখনো বলিও নি যে, আমার বাইরের খাবার পছন্দ না।
- বাহ্, এ তো দেখি অলরাউন্ডার। রান্নাও জানতো!
- ধুর, ছাই জানতো। খেতে কত কষ্ট হয়েছিলো জানিস? মাংসের মশলা দিয়ে মাছ রান্না করে নিয়ে এসেছিলো। একটায় লবণ বেশি, আরেকটায় ঝাল বেশি। আমার ফোন বাজছে। কে কল করেছে দেখবি একটু?
- দুলাভাই। রিসিভ করে দিবো?
- নাহ্, কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বাজতে থাকুক।
- এখনো ওই ছেলেটাকে ভালবাসো তুমি?
- আমার রাগ ভাঙাতো কি করে জানিস?
- কি করে?
- টিএসসির ওখানে এক ফুচকাওয়ালা বসে। ওই মামার ফুচকা আমার অনেক পছন্দ। কাঁচামরিচ আর টক বেশি করে দেয়। ও করে কি, যেখানেই থাকুক না কেন, ওই ফুচকাওয়ালা মামাকে সাথে করে নিয়ে এসে আমাদের বাসার পেছনের গলিটাতে দাঁড়িয়ে আমাকে ফোনের পর ফোন দিতে থাকে। যখন আমি ধরি না, তখন টেক্সট করে।
- আপু তোমার মোবাইলে মেসেজ এসেছে।
- দেখ্ তো কি মেসেজ।
- "তোমাদের পেছনের গলিটাতে আজ এত মশা কেন? ফুচকাওয়ালা মামাকে নিয়ে সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি আসবে নাকি আমি বাসায় উঠে যাবো?"
- চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছিস কেন? কাল রাতে খুব ঝগড়া করেছি, তাই রাগ ভাঙাতে এসেছে।
- মানে কি এসবের? তবে যে বললে প্রাক্তন প্রেমিক!
- প্রাক্তনই তো। আজ বাদে কাল বিয়ে, সে কি আর আমার প্রেমিক থাকবে? বর হয়ে যাবে না?
- কিন্তু সবাই তো জানে এটা এরেঞ্জ ম্যারেজ!
- লাভ ম্যারেজকে এরেঞ্জ ম্যারেজে ডাইভার্ট করতে না পারলে প্রেম করার যোগ্যতাই অর্জন করা যায় না, বুঝলি? তাছাড়া বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মামার কাছে মানুষ হয়েছি আমি। মানুষটা এত আদরযত্ন দিয়ে বড় করেছেন, তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে পারিনি। তবে আমি কিন্তু মামাকে ঠকাই নি। বিয়েটা হয়ে গেলে মামী সব বুঝিয়ে বলবেন মামাকে। তুই চিন্তা করিস না।
- মাও জানে! আমি তাহলে কোন আসমান থেকে ঠুস করে পড়লাম?
- তোকে বলার সময়টা কোথায় পেয়েছি? চুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর মাসে কয়বার আসিস বল তো?
- কোথায় যাচ্ছো?
- আমি একা না, তুইও যাচ্ছিস। ফুচকার লোভ সামলাতে পারছি না আর।
- আপু শোনো না...
- কি?
- বলছি যে, আমিও না একটা রিলেশনে আছি। কিন্তু বাবা তো...
- সময় হলে হালাল ভ্যালেন্টাইন হওয়ার প্রসেসিংটা বলে দিবো। এখন চল তাড়াতাড়ি।
- এই দাঁড়াও, ওড়নাটা তো নিতে দাও। কিন্তু যাবে কি করে? বাসায় কত মানুষ, জানো?
- উঁহু, পার্লারের নাম করে যাবো। দেখছিস না, জিনিসপত্র সব সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি? আহা, এখন আবার জড়িয়ে ধরার কি হলো?
- আই এম ভ্যারি হ্যাপি ফর ইউ।
- মি টু...