তারপর, সে প্রাচীন গরাদ খুলে প্রবেশ করল সেই অদ্ভুত বাড়িতে আমাদের বাইরে দাঁড়াতে বলল। কিছুক্ষণ পরেই টাকার একটা চেক নিয়ে লোকটি ফেরত এলো। চেকে যার সই রয়েছে তার নাম আমি বলতে চাই না। তিনি একজন নামকরা ব্যক্তি। তার নাম এই শহরে সবাই জানে। চেকটি লেখা হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে। স্বাক্ষর ও নিখুঁত, পরিষ্কার।
এসব সত্ত্বেও পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হল কারো শেষ রাতে অন্যের বাড়িতে ঢুকে একশ পাউন্ড এর একটা চেক সংগ্রহ করা যা ত ব্যাপার নয়।
সেই ভাবলেশহীন, কিম্ভূতকিমাকার লোকটাকে সে কথা বলতেই তিনি বললেন, কোন অসুবিধা নেই। চেকটি জাল নয়। ব্যাংক না খোলা পর্যন্ত আমি আপনাদের সঙ্গে থাকতে পারি।
লোকটা তখনও নিরুত্তাপ নির্বিকার।
আমরা সবাই মিলে আমার বাসাতেই বাকি রাতটুকু কাটিয়ে দিলাম। সকালে ব্যাংকে গেলাম। আমার ঘোরতর সন্দেহ যে চেকটা জাল। কিন্তু আশ্চর্য! চেকটা ভাঙাতে কোন কষ্টই হলো না। চেকে কোন ভেজাল নেই। এ পর্যন্ত শুনে আটারসন বললেন, আশ্চর্য ঘটনা! বল কি তুমি? এনফিল্ড বললেন, সত্যিই আশ্চর্য! অমন অমন বাজে লোক আমি দ্বিতীয় দেখিনি। কিন্তু যার চেক সে নিয়ে এলো তিনি একজন সত্যিকারের নামজাদা ব্যক্তি। আমার ধারণা এর মধ্যে কোন রহস্য আছে। নামকরা ব্যক্তিটি হয়তো তার কোন অপরাধের খেসারত দিচ্ছেন। ব্ল্যাকমেল যাকে বলে। সেই থেকে এই দরজাওয়ালা বাড়িটিকে আমি ব্ল্যাকমেল হাউস বলি।
হাঁটতে হাঁটতেই আটারসন জিজ্ঞেস করলে, ওই বাড়িটি সম্পর্কে আর কিছু জানো তুমি??
'না'। জানার আগ্রহ নেই আমার। এমনিতে ওটাকে বাড়ি বলে মনে হয় না। কাউকে কখনো ঢুকতে বা বের হতে দেখিনা। উপরতলায় জানালা আছে কিন্তু নিচের তলায় তাও নেই। মাঝে মাঝে রান্নাঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখি। অর্থাৎ লোকজন হয়ত থাকে। এই বাড়িটির কোথায় শুরু কোথায় শেষ কিছুই বলতে পারিনা।
দুজনে এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটতে লাগলেন।
'এনফিল্ড'।
ডাক দিলে না আটারসন।
'আমি একটাই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই'।
বল!
মেয়েটিকে আহত করল যে ভয়ঙ্কর লোকটি তার নাম কি জানা আছে তোমার??
হ্যাঁ। তার নাম হচ্ছে হাইড।
হুম। কি দেখতে কি রকম একটু বলতে পারো কি?
তাকে বর্ণনা করা খুব সোজা নয়। তার আচার-আচরণে অদ্ভুত ব্যাপার আছে। চেহারাটাই খাপছাড়া - দেখলেই ঘৃণা হয়। কদর্য, বিশ্রী- ঘৃণা না করে উপায় নেই। কেন যে ঘৃণা হয় তাও ঠিক ভাবে বলতে পারবোনা। শরীরটাও বিকৃত। দেখতে ভয়ঙ্কর। অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। না ভাই ওর চেহারার বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সেই কুৎসিত চেহারা টা আমার চোখের সামনে এখনো স্পষ্ট হয়ে আছে।
আবারো কিছুক্ষণ একসঙ্গে হাঁটলেন তারা। আটারসন হঠাৎ আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি নিশ্চিত যে লোকটার কাছে চাবি ছিল??
'অবশ্যই'।
বাড়ির মালিকের নাম আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি এনফিল্ড। কারণ আমি ভদ্রলককে ভালোমতো চিনি। কিন্তু মিস্টার হাইড এর যে ঘটনাটি তুমি বললে, সেটি খুব আশ্চর্যের। তাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব জানতে চাইছি আমি।
এনফিল্ড বললেন যা যা ঘটেছিল আমি তার একটুও বাড়িয়ে বলিনি। লোকটার কাছে এখনো চাবি আছে। কারণ কিছুদিন আগে তাকে আমি দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি।
আটারসন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ মেরে গেলেন। আপন মনে কি যেন ভাবছেন তিনি। তারপর সেই রহস্যময় ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে আর কোন আলাপ হলো না।
সন্ধ্যা ভ্রমণ শেষে তারা যে যার বাড়িতে ফিরে গেলেন।
Bah khub sundor