এই শিরনাম দেখেই আমার শত্রুপক্ষ অতীব আনন্দিত হচ্ছেন জানি। একই খবরে প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব করা বাকিরা ততোধিক উল্লসিত তাও জানি। বছরের শেষের দিকে সব পক্ষকেই খুশি রাখা উচিত। এই কারণেই উপলব্ধির বিবরণ। ঘটনা কি বলি তাইলে।
কয়েকদিন আগেই মনে হয় ঘুম কম হওয়ার কারণে শরীর একটু অন্য রকম লাগছিল। বুক ভার , শ্বাস নিতে কষ্ট , ঘাম হচ্ছিল বেশ। জোর করে চোখ বুজে ছিলাম ,এক সময়ে অতলে তলিয়ে যাওয়ার মতো একটা অনুভব আর তারপরে একটা ঘন্টার মতো আওয়াজ। এরপরেই বেশ হালকা ভাব । জেগেই দেখি ,একটা টুলের মতো কিসে জানি বসে আছি। আমার বিপরীতে বেশ অমায়িক মুখের জনা তিনেক লোক। পোশাক আশাক সব বেশ আধুনিক। যে জায়গায় বসে ছিলাম তার চারপাশে বেশ একটা মোলায়েম আলো ,প্রখর না আবার কম ও না।যাই হোক ,এদেরই এক নেতা গোছের হবে , গালে একটা সর্বহারা গোছের হালকা দাড়ি ,মুখে বেশ ইয়েচুরি ধাঁচের ভাব। বলে উঠলোuআজিজুল , শুনতে পাচ্ছেন ?
আমি থতমত খেয়ে বললাম , 'হ্যা , হ্যা " এমনিতেই এই ধরণের কোনো স্বাক্ষাৎকারের পালা এলে বড় ভয় হয় আর এ তো পুরো অন্য রূপ !
পালের গোদা , ওই ইয়েচুরি ধাঁচের লোকটা কাকে যেন বলে উঠলো " অনুবাদক বেড়ে কাজ করছে , স্টিভের হাতের কাজ বেশ খাসা হে ! "
এবার গম্ভীর ধাঁচের অন্য একটি লোক বলে উঠলো , " আজিজুল ,আপনি আপাতত ইহলোকের থেকে পরলোকের মাঝে একটা বিচারের জন্য আছেন। আপনার সামনে এখন একটি পরিমাপক যন্ত্র আসবে ,এতে আপনার ইহ জগতের করা পাপ আর পুণ্যের হিসাব হবে।
আবার সেই ইয়েচুরি ধাঁচের লোকটা একটা অমায়িক হাসি হেসে বললে " আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। আমরা খুব নিঁখুত ভাবে সব কিছু পরিমাপ করব "
" ইয়েস! সেন্ট পার্সেণ্ট নিঁখুত । ডোণ্ট ওয়ারি ম্যান! ও ইয়েস! ইউ আর এ ম্যান! আশে পাশে সব ই ডেবড্যুড! ম্যান বলার চান্স ই পাই না! থ্যাঙ্কস গড! ওয়ান্স ইন এ হোয়াইল মর্টাল ম্যান এর দেখা পাই! " তিন নম্বর লোকটা কায়দা মেরে বলে ওঠে।
এবার কারাত সুলভ শান্ত লোকটি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন বলে মনে হল । তিনি বললেন "এখন পর্যন্ত রিপোর্টে আপনার জন্য সুখবর আছে!"
এই অজানা বিষয় বুঝেই উঠতে না পেরেও স্বদর্থক কথা শুনে একটু নড়ে চড়ে বসি
ক্লিন শেভড কারাত এর মতো লোকটা একটু ভিলেনী হাসি হাসলেন! "আগেই এত হ্যাপি হবেন না মিস্টার! পিকচার আভি বাকি হ্যায় মাই নন ফেইসবুক ফ্রেন্ডো!! "
এইটা কোন ভাষা?! " মাঝ খানের জন্য অবাক হয়ে বললেন ।
"বাংলাই তো , এইটা বাংলা পক্ষ অনুমোদন দিয়েছে ,তোমার খায় কিসে ?" তিন নম্বর লোকটা একটু খেঁকুরে ভাবে বলে
"ও আচ্ছা! আমরা আবার পরিমাপনে ফিরে আসি । তো যা বলছিলাম আপনার এখন পর্যন্ত বিচার বিশ্লেষণ ধনাত্নক । "
"ধনাত্নক মানে কি?" ক্লিনশেভড কারাত জিজ্ঞেস করেন ।
"মানে ইতিবাচক, ওই যাকে চলিত বাংলায় বলে পজিটিভ " তিন নম্বর প্রাঞ্জল করে
"ও ইয়া ! এখন আবার স্বর্গের ফরমান এসেছে ,এনি ওয়ে , ডাউট হয় সামটাইমস , ইউ নো ড্যুড! "
"আজেবাজে আলাপ রাখো , এই অনুবাদক কিন্তু কাজ করবে না এরপরে " সেই ইয়েচুরি গোছের নেতা সতর্ক করে ।
"ঠিক আছে! আজিজুল । আপনার পার্থিব ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে আপনি অন্যায় কাজ তেমন করেন নি ! "
"স্ট্রেঞ্জ!" বলে ক্লিনশেভড অবাক হয়ে ঘাড় নাচালেন ।
এবার খুশিই লাগে । কথা সত্যি। সত্যিই তো তেমন খারাপ কাজ করি নাই !
ওই তিন নম্বর খেঁকুরে লোকটা আবার বলে ওঠে , এতে এতো লাফানোর কিছু নেই , আসলে আপনি তেমন সুযোগ পান নি। সরকারি চাকরি পান নি ,মানে সফল হন নি তাই টু পাইস কমানোর সুযোগ হয় নি। আবার বেসরকারি চাকরিতে বসের খিস্তি খেয়েছেন। এই জন্য আপনার ছাড় বেড়েছে। "যাক , আরো খুশি হই , নিজের ব্যর্থতায় এই রকম খুশি আগে হই নি।
তিন নম্বর ছাড়ে না , বলে ওঠে " কিন্তু বস কে লুকিয়ে লুকিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছেন ! " দেখলাম পাপের মিটারের কাঁটা একটু উপরে উঠে গেল ।সেই আগের কারাত বেশ মাই ডিয়ার মনে হলো , বলে উঠলো " আপনি মেয়েদের দিকে তেমন তাকান নি ! আপনার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত কোন অভিযোগ আসে নেই । "
খুশি হয়ে দেখলাম পুণ্যমিটার বেশ খানিকটা উপরে উঠল ।এই ভাবে নানান চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখলাম পুন্য বেশি না হলেও পাপের ভাগ ওই তুলনায় বেশ কম। বেশ খুশিই লাগতে লাগলো।
আবার সেই খেঁকুরে লোকটা বলে উঠলো " অয়েল , আজিজুল , এত খুশি মানে ফাল পাড়ার কোনো কারন নেই , এবার আপনার অনলাইন দুনিয়ার হিসাব হবে " এবার আমার গলা থেকে সব থেকে সব শুকিয়ে যেতে লাগলো
সেই তিন নম্বর লোকটা বলে উঠলো " বাস্তবে সেই রকম বদমাইশ না হলেও এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনি অতীব ইয়ে "
ইয়েচুরি বলে ওঠে "এহেম , এর বেশি বলা কি ঠিক হবে ?"
" কামন ম্যান! সরি ফেরেস্তা ! বি এ ম্যান! আপনার কারণে তো কথাই ঠিকমত বলা যায় না! আমাদের সব পাপের কথা এক্সপোজ করতে হবে! এনিওয়ে । ডিফরেণ্ট টাইপ এর পাপ মানে সিন এর জন্য আমাকে সাহায্য করার জন্য আজ আমাদের সাথে সাহায্যের জন্য আছে প্রয়াত মডারেটররা ! (পেছনের সারিতে বসা দেবদূতদের দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি )
বাম পাশের সারির প্রথম জন দাঁড়িয়ে বলা শুরু করলেন "যত আলোকিত লোক আছে ,তাদের পিছনে সমানে কাঠি করেছে সময়ে অসময়ে , আইন বাঁচিয়ে এদের অতীব খারাপ ভাবে গালাগাল করেছে " ... (পাপোমিটার এর কাঁটা তড়তড় করে উপরে উঠতে লাগল। )
শান্ত ইয়েচুরি ধাঁচের লোকটি বেশ জোরে কেশে বলে ওঠেন "আমরা আর গভীরে না যাই!"
পাপোমিটার এর কাঁটা উপরে উঠতে থাকে!
ডান দিকের একজন দাঁড়িওয়ালা লোক উঠে বললো " অকারণে সহি পথের লোকেদের সকালে সন্ধ্যায় গুমরাহ করেছে ,আজাইড়া প্রশ্ন করেছে আর একই ভাবে আইন বাঁচিয়ে আবার কখনো স্বাধীনতার সুযোগে অশ্লীল গালাগাল দিয়েছে "
মাঝের একজন নিরীহ দর্শন সুশীল গোছের লোক উঠে বলে " একই সাথে , মডারেট এবং ভদ্র লোকেদের উস্কে গিয়েছে , কাপড় খোলার হুমকি দিয়েছে কথায় কথায় "
এইভাবে তিনি বিভিন্ন পাপ এর কথা বলতে লাগলেন আর পাপোমিটার এর কাঁটা উপরে উঠতে লাগল ।আবার বাম দিকের পিছনের সারির লোকটা বলে ওঠে "তিনি অনেক আজে বাজে গ্ৰুপ এর মধ্যে ঢুকেছে ,অনেক জায়গায় সুযোগ পেলেই এডমিন সেজে বসেছে । ওই গুলোতে এডমিন হয়ে নাম গোপন রেখে আরো অনেক সহি এবং আলোকিত লোকের জীবন অতিষ্ট করেছে। "
আমি আর পাপোমিটার এর দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছিলাম না । তবে কাঁটা যে খুব তড়তড় করে উঠছে তা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছিলাম ।
এবার সেই মধ্যবর্তী সুশীল ধাঁচের লোকটা বলে ওঠে "এতেই না , কিছু আজেবাজে গ্রূপ এ আবার সুযোগ পেলেই লিখেছে রূপবতী বালিকা, ভয় দ্বিধা রেখে হও খালি গা//লুঙ্গি পিন্দাও পরনে ,কারণ কঠিন হাওয়ায় লুঙ্গি........"
"ওই প্রাণী আসলে ছেলে , আমি ওটাকে ধরিয়ে দিতে লিখেছি , দোষ আমার ! " এইবার আমি মরিয়া
ওই আসল নকল আসবে , তবে এই সব গ্রুপে সদস্য হবার জন্য পাপ পয়েন্ট! " সুশীল প্রতিনিধি তার কথা শেষ করেন ।
এবার ডান দিকের পিছনের সারির লোকটা বলে ওঠে " এবার নিজের সব আজেবাজে লেখা , ধর্মের উপরে ব্যঙ্গ আর তাল বুঝে ঈমান এর উপর আঘাত " এই ভাবে তিনি নানা সময়ে নানান কাজের কথা বলে যেতে লাগলেন ।পাপোমিটার এর কাঁটাও নড়তে লাগল ।
এতেও থামলো না , এরপরে বলে " এ , নানান ঈশ্বরের পক্ষের জায়গায় গিয়ে অকারণে ঝামেলা পাকিয়েছে,অকারণে সাম্যবাদী ইশ্বরের কন্যা মানে এক শঙ্করী কে শংকায় মানে দৌড়ের উপরে রেখেছে "
এতক্ষন শান্ত থাকা ওই ইয়েচুরির ধাঁচের লোকটা বলে উঠলো "শেইম ম্যান! তুমি ঈশ্বরের স্বাক্ষাত কন্যা বা পুত্রদের প্রত্যঙ্গে ইয়ে দিয়েছ!এদের কোনো পেজের প্রচার ও করো নি ! যত রকম ভাবে পেরেছো বিরুদ্ধে প্রচার করেছো "
বেশ ষণ্ডামত একজন এতক্ষন চুপ করে পিছনে থাকলেও এবার স্লোগানের ধাঁচে বলে ওঠে "একদম শেষের নরকে মানে দোজখে দাখিল করা হোক ! " ভয়ে আমার আর মুখে কথা সরে না । অন্যদিকে পাপোমিটার এর কাঁটা উঠছে তো উঠছেই!এত দ্রুত কাঁটা নড়ছে ,মনে হচ্ছে যেন কাঁপছে! (কাঁপাকাঁপির যুগ! )
কারাত গোছের সেই আগের লোকটা এবার বলে ওঠে " শেইম ম্যান! আর কোনো নতুন রিপোর্ট আছে?"
আরেকটা ছোটখাটো চ্যালা গোছের লোক নাক গলায় ,বলে ওঠে " হ্যা স্যার। আরো আছে! উনার ফেইক প্রোফাইল ছিল! অনেক গুলো পরিচয়ে লোক খেপিয়ে বেরিয়েছে “
"ড্যুড, ইউ আর সো ডেড! রিয়েল পরিচয় হিডেন করে অন্য পরিচয়ে ঘুরে বেড়াও! হুমম?!! !" এবার ইয়েচুরির মতো লোকটা বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলতে থাকেন ।
সেই ছোটখাটো লোকটা তবু থামে না, বলেই চলে "স্যার এখানেই শেষ নয়। এর মধ্যে একটা মেয়ে প্রোফাইল আছে! যার ফ্রেন্ড সংখ্যা কয়েক হাজার এর উপর! "
এটা বলার সাথে সাথেই "ঠাস" করে শব্দ হল ।
পাপোমিটার ভেঙে গেছে!
আমি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠি , "হে বিষ্ণুমাতা ! হে বাবা এগারো নম্বর পিং , রক্ষা করো !
সম্বিৎ ফিরে পাই , দেখি বিছানায় বালিশ আঁকড়ে কাঁপছি।
না , বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি। রাতে এতটা মাংস খাওয়া ঠিক হয় নি !
পুনশ্চ : আজিজুল ত্রিশংকু মানে মরা বাঁচার মাঝে থাকলেও সে দেহান্তরে থাকে। তাই চাইলেও সে যাচ্ছে না , আরো কিছুদিন আছে। অতীব খুশি হওয়া বন্ধুরা বা হালকার উপরে খুশি হওয়া শত্রুরা নিশ্চিন্তে থাকার এখনো সময় হয় নি!