গ্রিস - তুরস্ক

0 17
Avatar for MasudRanaPro
4 years ago

গ্রিস -তুরস্ক: তুরস্কের আলোচনার আহ্বান, ভূমধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতি কোন পথে....

১০ আগস্ট তুরস্ক পূর্বভূমধ্যসাগরে কাস্টেলোরিজো উপকূলে (সাইপ্রাস এবং ক্রিট দ্বীপের মাঝের এলাকাটিতে) গ্যাস ড্রিলিং জরিপের জন্য ওরাক রেইস নামক একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে খনন কাজ চালানোর জন্য টার্কিশ পেট্রোলিয়াম কোম্পানিকে বেশ কয়েকটি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে গ্রিসের রোডস এবং ক্রিট দ্বীপের নিকটবর্তী সামুদ্রিক এলাকাও রয়েছে।

কৃষ্ণ সাগরে খনন কাজ চালিয়ে বিশাল গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে তুরস্ক। টুনা-১ নামক গ্যাস কূপ যা উপকূল থেকে ১৮৫ কি.মি দূরে এবং ২১০০ মি গভীরে।এটিতে পাওয়া যাবে ৩২০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস, যা দিয়ে তুরস্কের ২০ বছরের প্রয়োজন মিটে যাবে। এই গ্যাসের বর্তমান মূল্য ৬৫ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের চলতি বছরের বাজেটের প্রায় সমান। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের গবেষণায় জানা যায় -ভূমধ্যসাগরে ১২২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে।যা ইরাকের মোট মজুদের সমান।

এই গ্যাস তুরস্কের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে। তুরস্ক প্রায় শতভাগ জ্বালানি আমদানি নির্ভর দেশ। ২০১৯ সালে দেশটি জ্বালানি আমদানির জন্য ৪১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যার ফলে তুরস্কের অর্থনীতিতে চলতি হিসাবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই আমদানি কমাতে পারলে তুরস্ক উদ্ধৃত্ত বাজেটের দেশে পরিণত হবে। বর্তমান তুরস্ক আজারবাইজান থেকে বেশিরভাগ জ্বালানি তথা গ্যাস আমদানি করে থাকে। এছাড়াও রাশিয়া ও ইরান থেকে ও আমদানি করে। তুরস্ক বছরে ৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে। শুধু গ্যাস আমদানির জন্য তুরস্কের ব্যয় হয় ১৩ বিলিয়ন ডলার।

কৃষ্ণসাগরে তুরস্কের গ্যাস পাইপলাইনে যোগ হতে আরো ৩-৪ বছর লাগলেও তার আগে থেকেই দেশটির অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া শুরু করবে এই খনি আবিষ্কারের কারণে। ২০১৯ এর তুলনায় চলতি বছর রাশিয়া থেকে তুরস্কের আমদানি ৬০ভাগ কমেছে। ইরান ও রাশিয়ার বড় জ্বালানি বাজার তুরস্ক। তুরস্ক এ দুটি দেশ হতে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দিলে তাদের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। এই সুযোগে তুরস্ক ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে বেশ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়াও সেখানে আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতায় নামবে । ইউরোপে জ্বালানি রপ্তানির উৎস হয়ে উঠবে তুরস্ক। নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্যে জাহাজ চলাচলের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে তুরস্ক। যা তুরস্কের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।

এদিকে তুরস্কের জাহাজ পাঠানোর খবরে গ্রিসের সাথে তুরস্কের তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ব্যাপারটি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল।গ্রিস তুর্কিদের পর্যবেক্ষণের জন্য ঐ অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে।ফলে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা সংঘর্ষ বেধে যায়। পূর্ব থেকেই জলসীমা, মহীসোপান ও অভিবাসী বিষয় নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের সম্পর্ক ভালো ছিল না। তারমধ্যে তুরস্কের দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি গ্যাসক্ষেত্রের সেই জায়গাটি গ্রিসের একটি দ্বীপের নিকটবর্তী। গ্রিসের কাস্টেলোরিজোর অবস্থান হচ্ছে তুরস্কের মূলভূমি থেকে মাত্র ২ কি.মি.দূরে।

গ্রিসের মতে -তুরস্কের ড্রিলিং জরিপের এলাকার মধ্যে এই দ্বীপের অনেকখানি পড়ে যায়।

তুরস্কের মতে- তারা জাতিসংঘের সমুদ্র সংক্রান্ত আইন মেনে কাজ করছে।আর সমুদ্র সীমানা রক্ষায় যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

সমুদ্রসীমা ছাড়াও এখানে আছে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা। একটি হচ্ছে তুরস্ক- লিবিয়ার মধ্যে, অন্যটি সাইপ্রিয়ট বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা যাতে রয়েছে- লেবানন, মিশর, ইজরায়েল। এগুলোর সীমানা হতে পারে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত।

ভূমধ্যসাগর এলাকার তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উপকূল নিয়ে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সাথে ফ্রান্স ও মিশর তুরস্কের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বাধা দেয়। ফ্রান্স ভূমধ্যসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর কথা বলে। ইতিমধ্যে গ্রিস ও মিশর নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করে। কিন্তু মিশরের কোন উপকূল না থাকায় তুরস্ককে থামানোর সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়। এর আগে লিবিয়ার সঙ্গে তুরস্কের মেরিটাইম চুক্তির ফলে আঙ্কারা তার প্রতিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম আটকে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। গ্রিসের বিরোধিতা সত্ত্বেও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিতর্কিত এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা, লিবিয়ায় বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের সৈন্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ এর পাশাপাশি কুর্দি বিদ্রোহীদের প্রকাশ্য সমর্থন, আরব আমিরাতের সাথে নিয়ে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে এবার ফ্রান্স। যাতে রয়েছে আমেরিকার সমর্থন। কিন্তু আমেরিকা এই মুহূর্তে নিজেদের নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত। তাই এই বিষয়ে তারা নিজেদেরকে জড়াবে না বলে ধারণা করা হয়।

এক মাসের ও বেশি সময় ধরে সাগরে জাহাজটি থাকার পর কূট-কৌশল হিসবে নিজেদের বন্দরে ফিরিয়ে নেয়।তবে আবারও অনুন্ধান কাজ শুরু করবে তারা।ভূমধ্যসাগর নিয়ে বিরোধ মেটাতে তুরস্ক গ্রিসকে নিঃশর্ত আলোচনার আহ্বান জানান।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে তুরস্কের এজিয়ান সাগরে রাশিয়ার সামরিক মহড়ার ঘোষণায় ন্যাটো কর্মকর্তারা তৎপর হয়ে ওঠে। রাশিয়ার সাথে দৃঢ় সম্পর্ক হলে এই চাপ সামলানো কঠিন হবে না তুরস্কের। তাছাড়া জার্মানি ও ইতালির সাথে তুরস্কের রয়েছে নিবিড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। ফলে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।তাই তুরস্কের সাথে আলোচনায় বসতে গ্রিসের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন ন্যাটো। এছাড়া কুর্দিস্তান রিজিওনাল গভার্নমেন্ট এর প্রধানের ইস্তাম্বুল সফরে ইরাকের কুর্দি নেতাদের উপর তুরস্কের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।সব মিলিয়ে তুরস্কের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রিসের সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় জাতিসংঘ দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে।

1
$ 0.03
$ 0.03 from @TheRandomRewarder
Avatar for MasudRanaPro
4 years ago

Comments