অদ্ভুত সত্য শেষ পর্ব

0 17
Avatar for LittleBird
3 years ago

 

গত পর্বে সমকামী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। শেষ পর্বের শুরুতে আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করাটা জরুরী। নয়তো অনেকে অনেক বিষয় গুলিয়ে ফেলতে পারেন।

 

#হিজড়া সম্প্রদায় কী? গে লেসবিয়ান এদেরকেই কি হিজড়া কিংবা তৃতীয় লিঙ্গ বলা হয়ে থাকে? উত্তর হচ্ছে 'না' হিজড়া এবং সমকামী সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। হিজড়া কোনো সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার নয়। এরা জন্মলগ্ন থেকেই বিকৃত ভাবে সৃষ্ট এক ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধী। ক্রোমোজমের ত্রুটির ফলে এদের শারীরিক জননাঙ্গ গুলো মিশ্র ভাবে তৈরি হয়ে থাকে। এদের মাঝেও অনেককে ছেলে মেয়ে আলাদাভাবে পৃথক করা যায়। হিজড়াদের সাধারণত চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেসব হিজড়াদের পুরুষ জননাঙ্গের কার্যক্ষমতা এবং পুরুষালি স্বভাব বেশি এদের "আকুয়া" বলা হয়ে থাকে। যেসব হিজড়া নারী সুলভ দেহ অবয়ব কিংবা নারী জননাঙ্গের কার্যক্ষমতা বেশি নিয়ে জন্মায় এদেরকে "জেনানা" বলা হয়। এবং যাদের নারী পুরুষ কোনোটিই সহজভাবে নির্ণয় করা যায় না, লিঙ্গহীন কিংবা উভয় লিঙ্গের গঠন নিয়ে জন্মায় যা নির্ধারণ করতে পরবর্তীতে বিজ্ঞ চিকিৎসক অথবা বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় এদেরকে "খুনসায়ে মুশকিলা" বলা হয়ে থাকে। আর সর্বশেষ ধাপটি হচ্ছে "খোঁজা" এদেরকে কৃত্রিমভাবে যৌনক্ষমতা নষ্ট করে হিজড়া বানানো হয়।

 

রাষ্ট্রীয় ভাবে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ বলা হলেও ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী তৃতীয় লিঙ্গ বলে আলাদাভাবে নামকরণের কোনো বিষয় নেই। ধর্মে এদেরকে শারীরিক ত্রুটি যুক্ত নারী পুরুষ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা শারীরিক যৌন প্রতিবন্ধী। অন্যান্য অঙ্গহীন প্রতিবন্ধীদের মতোই এরা সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য। স্বাভাবিক অন্যান্য মানুষের মতোই এরা সামাজিক এবং ধর্মীয় যেকোনো সুবিধা ভোগের দাবীদার। পুরুষের দাবী না-কি নারীর দাবী কে কোনটা ভোগ করবে কিংবা কে কোন নিয়ম অনুসরণ করবে তা নির্ধারণ করে দেয় সে কোন ক্যাটাগরির হিজড়া তার উপর। ক্যাটাগরির ভিত্তিতে যৌন ক্ষমতা ঠিক ঠাক থাকলে তাদেরও বিয়ে করার অনুমতি রয়েছে কিন্তু সমকামী হয়ে যাওয়ার অনুমোদন নেই।

 

#ট্রান্সেক্সুয়্যালিজম কী? যাদের নিজেদের জননাঙ্গ সার্জারীর মাধ্যমে অন্য লিঙ্গে পরিণত হওয়ার প্রবল ইচ্ছে জন্মায় এদের এমন আচরণকে ট্রান্সেক্সুয়ালিজম বলা হয়ে থাকে। ট্রান্সসেক্সুয়াল তারা যারা তাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলেছে। অনেক ট্রেনজেন্ডার হিজড়া কিংবা সমকামী যে কারো ভিতর এমন লিঙ্গ পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্খা জন্মাতে পারে।

 

#ড্রেসক্রসিং কী? শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে নারী পুরুষ একে অপরের পোষাক পরার আসক্তি থেকে। যাদের ভেতর বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পরিচ্ছদ নিজে পরিধানের জন্য প্রবল ভাবে আকর্ষণ কাজ করে এদের ড্রেসক্রসিং বলা হয়৷ হিজড়া, সমকামী ছাড়াও অন্য নারীপুরুষেরও এমন স্বভাব থাকতে পারে৷ টিকটক ফেসবুকে ইতোমধ্যে এমন অনেক ভিডিও দেখেছেন যেখানে ছেলেরা খুব সুন্দর করে নারীদের মতো সেজে নিজেকে নারীরূপে উপস্থাপন করছে। মানুষদের থেকে তার রূপ সাজসজ্জায় বাহ বাহ পেতে পছন্দ করছে। এরাই ড্রেসক্রসিং এর অন্তর্ভুক্ত। ড্রেসক্রসিং এ পুরুষদের থেকে নারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে চোখ মেলে আশেপাশে একটু তাকালে এমন অনেক পুরুষ বেশী নারী পেয়ে যাবেন।

 

ড্রেসক্রসিং এর কুফল কি কি হতে পারে এর ব্যখ্যা কারো থেকে জেনে নয় বরং নিজ চোখে দেখা একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। গত পর্বে একটি লেসবিয়ান মেয়ে নিয়ে কথা বলেছিলাম মনে আছে? আমার নানু বাড়ির পাশের বাড়ির মেয়ে৷ নিশ্চয়ই মনে আছে সবার৷ মেয়েটিকে আমি খুব কাছ থেকে বড় হয়ে উঠতে দেখেছি, কেননা ছোটবেলায় আমরা নানু বাড়ি ঘুরতে গেলে পাড়ার সবাই একত্রে খেলাধুলা করতাম। সেই মেয়েরা মোট তিন বোন। বড় দুই বোনের খুব ইচ্ছা ছিল তাদের একটা ভাই হবে। সেই আমলে পরিবারে একটি ছেলে জন্মের আশা কমবেশি সব বাবা মায়ের থাকতো। যখন তৃতীয় সন্তানটিও মেয়ে হয়ে জন্মায় তখন তারা এটা সহজে মেনে নিতে পারলো না৷ তারা ছোট মেয়েকে সখ করে ছেলের মতো করে বড় করে তুলে। ছোট থেকেই তাকে ছেলেদের পোশাক পরিয়ে রাখতো। বোনেরা তাকে ছেলেদের খেলনা কিনে দিত। আমি তাকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেদের প্যান্ট শার্ট গেঞ্জি পড়ুয়া অবস্থায় দেখেছি। কখনো কখনো ভুলেই যেতাম ও যে একটি মেয়ে। আশেপাশের মানুষ তাদের বাড়ির মানুষদের অনেক বুঝাতো মেয়েকে এভাবে রাইখেন না, সে এখন বড় হচ্ছে, লোকে খারাপ বলবে। কে শুনতো কার কথা৷ সে মিশতোও ছেলেদের সাথে বেশি। এরপর স্থানীয় এক প্রাইভেট টিচারের ধমক খেয়ে খেয়ে আস্তেধীরে সে মেয়ে পোশাক পরা শুরু করলো। বড় হওয়ার অনেক বছর পর শুনতে পেলাম তার সেই লেসবিয়ান কেলেঙ্কারির ঘটনাটি। এবার আপনারাই বলুন, তার মেয়ে সুলভ আচরণ পরিবর্তন হওয়ার পেছনে কি তার বাল্যকালের পরিবেশ একটুও দায়ী নয়? আমি মনে করি তার লেসবো হয়ে উঠার পেছনে তার পরিবারই প্রধান দায়ী। তাকে ছোট থেকে ছেলের মতো করে জামাকাপড় পরিয়ে বড় করেছে, সখ্যতাও গড়ে উঠেছে ছেলেদের সাথে। একই ধাঁচে যৌবনে এসে তার মানসিক পছন্দও হয়ে গিয়েছিল ছেলের মতন, যার ফলে প্রেমে পড়ে যায় অপর একটি নারীর। তার এরূপ পরিবর্তনের জন্য আমি তার বাল্যকালের পরিস্থিতিকেই দোষ দেব, যা তার স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বিকৃত করে দিয়েছে।

 

এছাড়া আমাদের দেশে এক শ্রেণীর মানুষদের দেখতে পাবেন যারা নারীদের পোশাক অলংকার পরিধান করে নারীদের নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন। একটিবার তাদেরকে চোখ মেলে দেখুন। তারা যতই স্বাভাবিক পুরুষ হোক তবুও এদের অনেকের ভাবভঙ্গি কথাবার্তা কিংবা হাত পা চালনে অনেকাংশ নারী রূপ খুঁজে পাবেন। এখানেও কিন্তু দীর্ঘদিন নিয়মিত নারী পোশাক অলংকার ধারণের ফলে স্বভাবের মাঝে অনেকটা পরিবর্তন খুঁজে পাওয়া যায়৷

আমরা অনেকেই বাচ্চাদের মজা করে মেয়ে সাজিয়ে দেই, অনেককে ছেলে বানিয়ে দেই। বাচ্চাদের সাথে এরূপ আচরণ করা মোটেও উচিত না। বাচ্চারা দীর্ঘ দিন এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে একটা সময় তার চরিত্রের মাঝেও এর কু প্রভাব চলে আসতে পারে৷ তাছাড়া আমাদের ইসলাম ধর্মে কঠোর ভাবে নিষেধ রয়েছে, নারী পুরুষ একে অপরের বেশভূষা ধারণ করা হারাম। কেন নিষেধ এই উত্তরটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই পেয়ে গিয়েছেন।

 

অদ্ভুত সত্য: ১৩ (শেষ)

 

এবার বর্ণনা করতে যাচ্ছি মানব ইতিহাসের সব চেয়ে জঘন্য সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডারের নাম। এই পর্যন্ত যত ধরনের অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেয়েছে এবার সব কিছুকে টপকে জঘন্যতম স্থানে যায়গা পেতে যাচ্ছে যে বিকৃত ব্যধি তার নাম #ইনসেস্ট অর্থাৎ অজাচার। সকল অস্বাভাবিক বিকৃত মানুষ থেকে বেঁচে থাকতে যে নিরাপদ স্থানে নিশ্চিন্তে নিজের দেহকে আগলে রাখা হয় ঠিক সেই স্থানেই এসব রোগীর বসবাস। ইসসেস্ট হচ্ছে নিজ ঘরে আপন মানুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার। রক্তের সম্পর্কিত কেউ যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন অথবা কাছের আত্মীয় চাচা, মামা, খালু, ফুফা, চাচি, মামি, খালা, দাদা, দাদি, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি এই যাবতীয় যত কাছের আত্মীয় আছে যাদেরকে নিজ বাসায় অভিভাবক হিসেবে ঠাই দেওয়া যায় এদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার ইনসেস্টের আওতায় পড়ে। এটিকে 'The Last Taboo' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ট্যাবু বিকৃতি কত ধরনেরই তো হয়, তবুও কিন্তু সবকিছুর একটা লিমিট আছে। ইনসেস্ট সেই লিমিটকেও অতিক্রম করে ফেলেছে। পৃথিবীর উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এই বিকৃত রোগীর বসবাস নেই। প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে কাছের মানুষের বিষাক্ত ছোবলে। যা মুখ ফোটে সহজে কেউ প্রকাশ করতে চায় না৷

 

রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে উঠে, শিকার তখন অথর্ব হয়ে লুটিয়ে পড়ে, তখন শান্তিতে দুফোঁটা জল ফেলার যায়গাটাও আর খুঁজে পায়না। কার কাছে গিয়ে কাকে কি বলবে দিক দিশারা খুঁজে পায়না, বাহিরে যেখানেই নালিশ করুক ঘুরেফিরে কোপ তার গায়েই এসে পড়বে। তার পরিবার তছনছ হয়ে যাবে। ফ্যামিলির বাকিসব মেম্বার, লোকলজ্জা এবং ভবিষ্যৎ সামাজিক নিরাপত্তার ভয়ে নব্বই শতাংশের অধিক অজাচারে শিকার হওয়া ভিকটিম মুখ বন্ধ রেখে দেয়। হঠাৎ কিছু ঘটনা তীব্র মাত্রায় চলে গেলে সমাজে তা প্রকাশ পেয়ে যায়। কয়েক বছর আগে এমন এক ভিডিও দেখেছিলাম পুলিশ এক ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক লোককে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, পাশে তার মেয়ে বসা। মেয়েটা শুধু অঝোরে কাঁদছে। এরপর পরিচয় জানা বয়স্ক লোকটি তার পিতা। চিকিৎসার অজুহাতে সিলেট থেকে মেয়েকে ঢাকা নিয়ে আসে, এরপর রাতে হোটেলে থেকে মেয়েকে ধর্ষণ করে! আরেকটি আলোড়িত খবর টিভিতে দেখেছিলাম এক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা তার মেয়ের উপর দীর্ঘদিন যৌন নির্যাতন চালায়। শহর, গ্রাম, শিক্ষিত, অশিক্ষিত বলতে কিছু নেই, সব স্থানে এমন রোগীর বসবাস থাকতে পারে। আরও কত নিউজ কানে আসে যেগুলো বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এসব নির্যাতন প্রাথমিক অবস্থায় কোথাও প্রকাশ পায় না, যখন ধৈর্য্যর সীমা অতিক্রম হয়ে যায়, ঘটনা বারংবার ঘটতেই থাকে তখনি এসব কিছুকিছু প্রকাশ্যে চলে আসে। ধরে নিলাম আমাদের দেশে পিতামাতা ভাইবোন দ্বারা এসব ঘটনা খুব বেশি নেই, কিন্তু বাকি যারা চাচা মামা লেভেলে রয়েছে এদের দ্বারা নির্যাতিত সংখ্যা কিন্তু অসংখ্য অগণিত। পাশের দেশ ভারতে ৫৩% বাচ্চা নানা ভাবে যৌন লাঞ্চিত হয়ে থাকে। এদের ৩২% শিশুর বয়স দুই থেকে দশের মধ্যে হয়ে থাকে। এই ইনসেস্ট এমন এক ভয়ানক ব্যধি এর সাথে বাকি কিছু বিকৃত যৌনাচার ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে। যেমন পেডোফাইল, সমকামীতা এগুলোও কিন্তু পরিবারের ভেতর নির্যাতনের অংশ হতে পারে৷

আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৫৫ সালে আমেরিকাতে প্রতি মিলিয়নে মাত্র একজন মানুষ অজাচারে লিপ্ত হতো। আর এখন? প্রতি তিনটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে তাদের বয়স ১৮ হবার আগে নিজ গৃহেই অজাচারের শিকার হচ্ছে! কী ভয়ানক পরিবর্তন! লাগামহীন ভাবে অজাচারের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে, আমরাদের দেশটাও ধীরে ধীরে এদের পথেই হাঁটছে। যেখানে আগে কখনো এমন খবর খুব একটা শুনতে পেতাম না আর এখন কয়দিন পরপরই এসব বীভৎস খবর গিলতে হয়।

 

শেষ কিছু সতর্কতা:

 

এতো এতো রোগীদের নিয়ে আমাদের বসবাস, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

 

একবাক্যে বলতে গেলে সচেতনতাই সর্বোৎকৃষ্ট মহাঔষধ। এতো ধরনের রোগীকে খুঁজে বের করে ধরে ধরে সুস্থ করে তুলা চাইলেও সম্ভব না। নিজেদের সচেতনতা সবার আগে প্রয়োজন। নিজ সন্তানদের আগলে রাখাটাই এখন অভিভাবকদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সবার উচিত কিছু রুলস অন্ধের মতন ফলো করে চলা। যে রুলস পালনে বিবেক বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। যে রুলস হওয়া চাই শক্তিশালী, যে রুলস হওয়া চাই সবার জন্য সমান।

 

কেমন শক্তিশালী রুলস চাই?

আমার বাচ্চাটি একেকী কারো বাসায় রেখে যাব না, কাউকে একাকী নিয়ে যেতেও দেব না, প্রতিবেশী বাচ্চাকে যতই আদর করুক তাদের হাতে একাকী ছেড়ে দিব না। কেউ যত ভালো মানুষ ই হোক, তার প্রতি বিন্দুমাত্র সন্দেহ না থাকুক, তবুও তার হাতে একাকী সন্তানকে রেখে আসব না৷ যতই বলুক মুখের উপর মানা করে দিব, একা যাওয়া আমার পার্টনার পছন্দ করে না, প্রয়োজনে মিথ্যা বলবো, প্রয়োজনে অসামাজিক আখ্যা পাবো তবুও দেবো না মানে দেবো না, এমনটাই হওয়া চাই রুলস।

 

কেমন শক্তিশালী রুলস চাই?

আত্মীয়স্বজন এলে আমার সন্তান যেই রুমেই থাকুক একটু পরপর মাঝেমধ্যে গিয়ে ঘুরে দেখে আসবো। বিবেকে অবশ্য বাঁধা দিবে মন বলবে ছি ছি কাকে নিয়ে কী ভাবছি! তারা আমার আপনজন, কিন্তু না, এখানে ভাবাভাবির কিছু নেই, আমরা শুধুমাত্র রুলস ফলো করে যাবো, সম্ভাবনা সন্দেহ থাকুক বা না থাকুক কিছুক্ষণ পরপর ঘুরে দেখে আসবো। এমনটাই হওয়া চাই রুলস।

 

এক সপ্তাহ আগের একটি ঘটনা বলি। এক আঙ্কেলের বাসায় গিয়েছিলাম কিছু বিষয়ে কথা বলতে। তিনি বাসায় ছিলেন না। বুঝলাম আন্টি বাসায় একা। ভেতর থেকে তিনি ইনিয়েবিনিয়ে বললেন তোমার আঙ্কেল সম্ভবত অমুক দোকানে আছে, ঐদিকে গেলেই পাবা। আমিও বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমরা তাদের পাশের বাসায় একত্রে পাঁচটা বছর থেকেছি, আমাকে অনেক আদর করতেন, ভালো মন্দ রান্না করলে বাসায় দিয়ে যেতেন। এতদিন পর আমি সেখানে গিয়েছি অথচ তবুও তিনি দরজা খুলে আমাকে বসতে বললেন না। আমি জানি উনি আগে থেকেই পর্দানশিন ও সচেতন মহিলা। আমিও দ্রুত বিদায় নিলাম, যাওয়ার সময় উনি অনেক রিকুয়েষ্ট করে বারবার বলেছেন "বাবা তুমি কিন্তু চলে যাবা না, কথা শেষ হলে তোমার আঙ্কেলরে নিয়ে বাসায় আসবা, আইসো কিন্তু" অথচ তিনি বললেন না যে একটু বসো তোমার আঙ্কেল এখনই চলে আসবে। উনি কি আমাকে চিনেন না? আমার সম্পর্কে জানেন না? উনি জানে, শতভাগ নিশ্চিত আমাকে বসতে দিলে তার কোনো ক্ষতি নেই, তবুও তিনি বাসায় একা তাই দরজা খুলবেন না, এটাই হচ্ছে তার শক্তিশালী রুলস।

 

আমাদেরকেও এমন হতে হবে। যাকে তাকে গবেষণা না করে সবার সাথেই সচেতনতা বাড়িয়ে দিতে হবে। দশটা ভালো মানুষের মাঝে যদি একটা বাজে মানুষ থেকে থাকে শুধুমাত্র স্ট্রিক্ট রুলস ফলো করার জন্য আমরা তাদের কুনজর থেকে মুক্তি পেতে পারি।

অন্যদের ধর্মের ব্যাপারে জানি না। আমাদের ইসলাম ধর্মের একটি রুলস শুনাই। ধর্মে বলা আছে নিজের আপন, পর, কাজিন যেই হোক দুই ভাই অথবা দুই বোন তারাও যদি একত্রে ঘুমায় তবে এক কাথা চাদরের নিচে যেন না ঘুমায়। ধর্মে এটাও বলা আছে, মেয়ে বড় হয়ে গেলে সে যেন বাবা ভাই এদের সাথে গা ঘেঁষে অথবা তাদের সামনে অশালীন ভাবে না থাকে। একটা সময় এসব কথা শুনে মানুষ অবাক হয়ে বলতো এগুলো কেমন উদ্ভট নিয়ম! নিজের আপন মানুষ সবাই এক কাথার নিচে ঘুমালেই বা কি হয়। কি হয় সেই গবেষণা যিনি রুলস প্রদান করেছেন তিনি আমাদের থেকে অনেক বেশি জানেন, তিনি আগে থেকেই জানেন মানুষ জাতিদের দ্বারা কি কি সম্ভব।

আজ এতকিছু শোনার পর হয়তো অনেকের বুঝে আসতে পারে কেন ঘরে বাহিরে সবখানেই সচেতনতার রুলস ফলো করা উচিত। কারণ পুরো সিরিজ পড়ে দেখতেই পাচ্ছেন কত ধরনের সাইকো মানুষের বসবাস রয়েছে চারিপাশে। কেউ পূর্ণাঙ্গ সাইকো, কেউ আংশিক, কেউ আবার হঠাৎ সুযোগে বিকৃতমনা হয়ে উঠে। তাই পরিবারের ভেতরেও এমন কিছু কিছু রুলস ফলো করা উচিত, শুধু নিজেদের জন্য নয়, পরবর্তী প্রজন্মদের কথা ভেবে হলেও অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। আপনি জানেন আপনার পরিবারের কারো দ্বারা এমন কিছু হবে না, তবুও ঐ যে নিয়মকে নিয়মের মতো করেই মেনে যাবেন, এতেই মঙ্গল। এখান থেকে বাকি দশজন আপনার থেকে শিখতে পারবে। তাদের কেউ হয়তো ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারে।

 

এসব বিকৃত রোগের প্রতিকার কী?

 

শুরুতে একটি বাক্য আবার সরণ করিয়ে দেই.. "কেউ পূর্ণাঙ্গ সাইকো, কেউ আংশিক, কেউ আবার হঠাৎ সুযোগে বিকৃতমনা হয়ে উঠে"

এই পর্যন্ত যেসব ধারাবাহিক রোগের বর্ণনা দিয়ে গেলাম আমাদের আশেপাশে যতগুলো এমন পূর্ণাঙ্গ রোগী আছে এর থেকে বহুগুণে বেশি আছে যাদের মাঝে এসব রোগের আংশিক প্রভাব রয়েছে৷ বহু মানুষের মনে শুধুমাত্র সুযোগের অভাবে রোগগুলো সুপ্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। সেসব ঘুমন্ত রোগগুলিকে জাগিয়ে তোলা কিংবা নতুন করে রোগের জন্ম দেওয়ার অন্যতম প্রধান রসদ হচ্ছে পর্ণগ্রাফি। বিভিন্ন বিকৃত পর্ণ ভিডিও আমাদের সুস্থ চিন্তা চেতনাকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। বিকৃত যৌন চিন্তাভাবনা, বিকৃত চটি বই, বিকৃত ভিডিও এসব রোগের পুষ্টি যোগানোর মাধ্যম। এগুলো তাদের সুস্থ চিন্তাধারায় অনেক বড় বিকৃতি ঘটাতে পারে। কৌতুহল বসত বিকৃত চর্চা করতে গিয়ে অনেকে আংশিক কিংবা পূর্ণাঙ্গ রোগীতে পরিণত হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো বিনা চিকিৎসায় এসব তাকে আজীবন ভুগাতে পারে।

 

যাদের মাঝে বিকৃত ইচ্ছাগুলির কোনওটার সামান্য প্রভাব রয়েছে বলে মনে হয় এদের জন্য প্রথম সতর্কতা হচ্ছে বিকৃত ইচ্ছার খাবার যোগান দেওয়া বন্ধ করে ফেলুন। নিজের ইচ্ছা অনুয়ায়ী কোনো বিকৃত চর্চা করবেন না হোক সেটা কল্পনায় কিংবা বাস্তবে৷ খাবার না পেতে পেতে একটা সময় বিকৃত ইচ্ছেগুলো মরে যাবে৷ তখন নিজেই পূর্বের উদ্ভট ইচ্ছাগুলো ভেবে বিরক্ত হবেন। বয়সের সাথেও অনেকের বিভিন্ন ফ্যান্টাসি জাগতে পারে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন সময়ে একটা সময় ঠিক হয়ে যাবে। এতগুলো বর্ণনা থেকে একটি বিষয় খেয়াল করে দেখুন প্রত্যেক সেক্টরের রোগী যার যার হাতের কাছে সহজলভ্য এমন অস্বাভাবিক কিছু চেষ্টা করতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছে বেশি। বিস্টিয়ালিটিদের সংখ্যা খামারি আর পোষা প্রাণী পালনকারীদের ভেতর বেশি পাওয়া যায়, নেক্রোফিলিকদের মর্গে বেশি পাওয়া যায়, বাইসেক্সুয়ালদের হোস্টেল জেলখানা এসবে বেশি পাওয়া যায়। যৌনক্রিয়ার এসব মাধ্যম যাদের কাছে সহজলভ্য তারা হঠাৎ ফ্যান্টাসিকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে একেকজন পুরোদমে সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাই বিকৃত কিছুর সুযোগ পেলেও নিয়ন্ত্রণে থাকাটা আবশ্যিক।

 

যারা সকল চেষ্টা করেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না, ঘুরেফিরে সেইসব নিষিদ্ধ বিকৃত দিকেই মন টানছে, বয়সের সাথেও উদ্ভট ভাবনাগুলির পরিবর্তন আসছে না, বিকৃত কোনো বিষয় আপনার যৌনতার প্রধান আনন্দের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন বুঝে নিতে হবে আপনি পুরোপুরি সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে ভালো একজন মানসিক যৌন বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে ফেলুন। লজ্জার কিছু নেই, আপনি মানুষ খুন করে ফেললেও একজন ডাক্তার আপনাকে ঠিকই সেবা করে যাবে। আপনি নিরাপদ ভাবেই চিকিৎসা পাবেন সুতরাং আপনি যতই উদ্ভট রোগী হোন, রোগ পুষে না রেখে সাইকো থেরাপি নিন, আশাকরা যায় অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাবেন। একটা কথা মাথায় রাখুন, মন যা চায় তাই কেউ করতে পারে না, সে সুস্থ অসুস্থ যেই হোক কারোরই অধিকার নেই নিজের মন মতলবি যৌনতা উপভোগ করার। বাধা নিষেধ সব খানেই বিদ্যমান। ডিসওর্ডার মানেই তার সাত খুন মাফ নয়। ডিসঅর্ডারকে প্রশ্রয় দিয়ে খারাপ কিছু করাটাই অপরাধ।

 

দুঃখজনক সত্য হচ্ছে আমাদের সমাজে যৌন রোগের জ্ঞান দেওয়ালে টাঙানো সাইনবোর্ডের মাঝেই সীমাবদ্ধ! অনেক শিক্ষিত মানুষের কাছে সেক্সুয়াল সমস্যা এখনো মিনিটের কাটায় আটকে আছে। এখনো তারা পর্ণগ্রাফিকে বাস্তবতার সাথে গুলিয়ে বসে আছে। এদেরই বা কি করার, যাদের বাল্য কালে যৌন ধারণাবলী শুরুই হয়েছে ইনসেস্ট এর মতন জঘন্য সব চটি গল্প দিয়ে। তারা আর কতই বা স্বাভাবিক ধারণা রাখবে। আমাদের দেশীয় এক যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উনার এক বক্তব্যে বলেছেন তার ত্রিশ বছর কর্ম জীবনে তিনি যতগুলো যৌন রোগী দেখেছেন এদের মাঝে শতকরা ৯৫ ভাগ রোগীদের প্রকৃতপক্ষে কোনো শারীরিক যৌন রোগ পাওয়া যায়নি! এরা বেশিরভাগ হারবালের বিজ্ঞাপন আর বানোয়াট গল্প পর্ণগ্রাফির ধারণা লালন করে করে একেকজন মনের রোগ বাঁধিয়ে নিয়েছে। তাই শারীরিক সেক্সুয়াল রোগের চেয়ে মানসিক সেক্সুয়াল রোগ নির্ণয় ও নিরাময় অতি জরুরী। (সমাপ্ত)

Sponsors of LittleBird
empty
empty
empty

@TheRandomRewarder

2
$ 0.00
Sponsors of LittleBird
empty
empty
empty
Avatar for LittleBird
3 years ago

Comments