read.cash is a platform where you could earn money (total earned by users so far: $ 799,810.81).
You could get tips for writing articles and comments, which are paid in Bitcoin Cash (BCH) cryptocurrency,
which can be spent on the Internet or converted to your local money.
ছবিতে যে বাশের খুঁটিগুলো দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো পাহাড়িদের নিজেদের তৈরি মোবাইল টাওয়ার। টাওয়ারের মাথায় এনালগ ফোন রেখে দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি মোবাইলটা হাতে নেন, কথা বলতে পারবেন না। বাশের মাথায় মোবাইল রেখেই, বাশের গোড়ায় বসে ডায়াল করে লাউডস্পিকার অন করে কথা বলতে হবে। এক ইঞ্চি সরালেই নেটওয়ার্ক গায়েব। জায়গাটার নাম থুইসাপাড়া। বান্দরবন থেকে চিম্বুক পাহাড় চান্দের গাড়িতে তিন ঘন্টা পাড়ি দিলেই থানচি। থানচি থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবেন না। কোটিকোটি পাথর ঠেলে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু হয়ে নৌকায় তিন ঘন্টা পাড়ি দিলে রেমাক্রি। নেটওয়ার্ক কিন্তু এখনো নেই। রেমাক্রি থেকে হেঁটে দুই ঘন্টা পাড়ি দিলে নাফাখুম। নাফাখুমের ঝর্নাকে পেছনে ফেলে আরো ঘন্টা তিনেক হাঁটলে জিন্নাপাড়া। সেখানে থাকে ২৬ মারমা পরিবার। এখানেও নেটওয়ার্ক নেই। জিন্নাপাড়া থেকে একটা পাহাড় ডিঙ্গালেই থুইসাপাড়া। থুইসাপাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে গহীন এলাকার একটি। আদিম ও আজব জায়গায় যেতে ঘন্টার পর ঘন্টা হাঁটতে হবে। মানুষ নেই। দিক ভুলে গেলে কাউকে জিজ্ঞাসা করার উপায় নেই। সাথে রাখতে হয় লোকাল গাইড। পথ চিনে নিতে হয় সাঙ্গুকে দেখে। আপনার দল, সাঙ্গু আর মাঝেমাঝে দুয়েকটা সুপেয় ঝর্না, এই হল আদিমযুগে প্রবেশ করার একমাত্রসঙ্গী। রোদে ক্লান্ত? পানি খাবেন? নদীর পানিই খেতে হবে। পরিষ্কার, টলমলে, শীতল পানি। ঝর্ণার পানি আসে পাথরের ভেতর থেকে। এই পানির নাম খনিজ পানি। মাম-মুক্তা কিংবা ফ্রেস-প্রাণের পানির চাইতেও নিরাপদ এবং সুস্বাদু। নাস্তা করবেন? ভাত খাবেন? উপায় নেই। তবে কয়েকটা পরিবার আছে যারা কমার্শিয়ালি ট্যুরিস্টদের রান্না করে খাওয়ান। মেন্যু অল্প। ডাল থাকবে। আমার কাছে এই একটা খাবারই ভাল লেগেছে। বনমোরগ কদাচিৎ। পালিত মোরগের মাংস। অথবা ডিম। সাথে অতিরিক্ত হিসেবে আলুভর্তা। যাত্রাপথে শুরুর দিকে, সাঙ্গুর তীরে ইচ্ছেমত কলা কিনে খেতে পারেন। কলার দাম কম। একটা একটাকা। কলা চাষ হয় খাড়া পাহাড়ের গায়ে।
রাতে পাহাড়ের কিনারে বাশের বেঞ্চে বসে আছি। কারা যেন পাশের পাহাড়টায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। মশালের মত লাগছে। একটা পাহাড়ের সমান বাশ। তার মাথায় আগুন। যাত্রাপথে অনেকগুলো পাহাড়ে আগুন দেখলাম। পাহাড়িরা ফসল তোলার পর গাছগুলো কেটে দেয়। এরপর একমাস রাখে। শুকোলেই সেগুলোয় আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলে। আবার চাষ হয় সেখানে। থানচির গহীন পাহাড়ে অদ্ভুত জিনিসটা হল সেখানে কোন হিংস্র পশু নেই। বাদর, হরিণ, হাতি ঘোড়া কিছু নেই। না থাকার একটামাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে সেখানে কোন কাষ্ঠলগাছ নেই। মাইলের পর মাইল জঙ্গল। মাঝেমাঝে কলাগাছের বাগান। বাশের বাগান কিন্তু কাঠ হবে এমন গাছ নেই। বড়গাছ বা ফলের গাছ না থাকায় পাখিও নেই তেমন। রাতভর জোছনা ছিল। হয়তো ক্লান্তি নিয়ে মাচাঙে বসে আছি খালিগায়ে। জোছনায় ভেসে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। পাহাড় বেয়ে আসছে শীতল বাতাস। অথচ দিনে আগুনের মত উত্তপ্ত সব। যাদের বাড়িতে ছিলাম, তাকে রাতে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘কারো অসুখ হলে কী করেন?’
কিছুই করে না। অসুখ হলে মারা যায়। ঔষুধ কিংবা হাসপাতাল নেই। বিত্তবান কিংবা ক্ষমতাসীনদের কেউকেউ চারজন মানুষের কাঁধে উঠে থানচি আসে। তবে সেটা অনেক বছরে একবার ঘটে। কেউ মরলে মাটিতে পুতে রাখে। এক পাহাড়ের ঢালে কয়েকটা এপিটাফ (থুইসাপাড়া যেতে)। এপিটাফের গায়ে ইংরেজি হরফে কী যেন লেখা। সেখানে পোতা আছে অনেকের লাশ। বিশাল আর্টিকেল ফাঁদার কারণ বলি। দুপুরে একটা মাচাঙে বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। কয়েকজন মারমা মহিলা গোসল করছেন। অনিচ্ছাকৃত চোখ চলে গেল। কোমরের উপরে কাপড় নেই। চোখ সরালাম। সা সুই মারমা নামে তরুণ নৌচালককে জিজ্ঞাসা করলাম,
সা সুই মারমা গলাভর্তি এলাচি ঢালল। এলাচি হল স্থানীয় মদ।
‘কোন মেয়েকে ভাল লাগলে যদি পালিয়ে বিয়ে করো?’
‘কেউ পালিয়ে বিয়ে করে না।’
‘কোন ঘরেই দরজা নাই। যদি চুরি হয়?’
‘চুরি হয় না।’
‘কী হয়? খারাপ কী কী ঘটে জানতে চাই!’
সা সুই একবার তাকাল। সুদর্শন তরুণ। বয়স ২২। কিন্তু কয়েকদিন আগেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। মাসে একবার ট্যুরিস্টদের সাথে গহীনে আসে। তার চোখের ভাষা পড়া যাচ্ছে না। সমতলের চোখমুখ দেখে হাসি কান্না আলাদা করা যায়। মারমাদের যায় না। সবাই দেখতে একই রকম। হাসি আনন্দে কান্নায় তাদের মুখের ভঙ্গি বদলায় না। শেষ রাতে মাচাঙে বসে থাকতে থাকতেই রাত কেটে যাচ্ছে। দলের কয়েকজন স্থানীয় উৎকট গাঁজা, চোলাই মদ খেয়ে মাচাঙের উপর নিয়ন্ত্রণহীন নাচছে। নাচের চোটে ঘরবাড়ি দুলছে। আমি দুনিয়ার বিবিধ খারাপ জিনিস নিয়ে ভাবছি। থানচি থেকে নৌকায় উঠার সময় ছোটছোট পাথর দেখে যাত্রা শুরু হয়েছিল। যত গহীনে এসেছি ততই বড় হয়ে যাচ্ছিল পথের পাথর। ব্যস্তানুপাতে কমছিল মানবিক ত্রুটি। যেন ছোট পাথরের দুনিয়ার মানুষ বড়পাপের, আর বড় পাথরের দুনিয়ার মানুষ ছোটপাপের। টানা তিনদিন আমরা সবাই নেটওয়ার্কের বাইরে। মোবাইলগুলো নিতান্তই ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অধিকাংশ সময় ব্যাগবন্দি হয়ে ঘুমিয়ে থাকছে। সবাই রোদে পুড়ছে, পাহাড়ে চড়ছে। পানিতে ডুবছে, টানা বারান্দায় ডাল, ভর্তা খাচ্ছে। কেউ মোবাইল চাপছে না। কেউ কাউকে চেনে না কিন্তু সবার জন্য সবার অসীম দরদ। কারো পায়ে ফোস্কা পড়েছে। আরেকজন টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার ভারী ব্যাগ। অথচ তারও হয়তো কোমরে বাথা, হাঁটুতে শক্তি নেই। ঘরে ফিরব। চতুর্থ রাত একসময় ভোর হল। চাঁদটা ডুবে গেল পাহাড়ের ওপাশে। থানচি পৌছে সূর্যটাও ডুবল পাহাড়ের ওপাশে। কিন্তু প্রবেশ করলাম এক বিচিত্র জগতে। মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসল। শ্রী লঙ্কায় যাদের জীবিত রেখে যাত্রা শুরু হয়েছিল তাদ