এ তো গেল কনে ও মনের কথা; কিন্তু আসল ও পণের কথাটা বাকীই থেকে গেছে; যা বর্তমান বিবাহের মূল স্তম্ভ! বউ কেমন হবে না হবে, তার দ্বীন ও চরিত্র কেমন সে তো গৌণ বিষয়। মুখ্য বিষয় হল, ‘কত কি দিতে পারবে?’ তাই তো নতুন জামাই শবশুর বাড়ি গেলে ‘জামাইটা কার?’ প্রশ্নের উত্তরে একই কথা বলা হয় ‘জামাই টাকার!’
পণ? পণ এক আশ্চর্য যাদু! পণের ‘সোনার কাঠি’ ও যৌতুকের ‘রূপার কাঠি’ দ্বারা মেয়ে শবশুরবাড়িতে ইচ্ছাসুখ পেতে পারে।
পণ; নারীর অবমাননা, নারীর মর্যাদায় কুঠারাখাত, তার অধিকার হরণ।
পণ; যুবজীবনের অভিশাপ। অশান্তির বিষাক্ত দাবানল।
পণ; স্ত্রীর নিকট ব্যক্তিত্ব বিক্রয়ের মূল্য।
পণ; ইসলামী বিধানের নির্লজ্জ বিরুদ্ধাচরণ।
পণ; অর্থ-লোলুপতা, শোষণ ও পীড়ন।
পণ; এক প্রকার ঘুষ। আর প্রিয় নবী (সাঃ) ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই অভিশাপ করেছেন।’’[1]
পণ; অসৎ উপায়ে অন্যের অর্থ আত্মসাৎ। আর আল্লাহ বলেন,
﴿وَلاَ تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقاً مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالأ<ِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
‘‘তোমরা অন্যায় ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না এবং জেনে-শুনে লোকেদের ধন সম্পদের কিয়দংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে উৎকোচ দিও না।[2]
বরপণের মাল হারামের মাল। কন্যাপক্ষের কথায় ‘হারামের মাল হারামে যাক।’ কারণ, সাধারণতঃ তা হয়, পূর্ব থেকেই ‘ফিক্স্ড ডিপোজিট’ করা সূদের অর্থ অথবা চুরি বা হরফ করা অথবা ভিক্ষা করা যাকাতের টাকা। পণে দেওয়া হালাল টাকা খুব কমই হয়। হালাল হলেও পণের নর্দমায় পড়ে তা হারামে পরিণত হয়ে যায়।
কিন্তু এই সর্বনাশী বিষজীবাণু এল কোত্থেকে? অর্ধাঙ্গিনী পেতে গেলে তো অর্থ প্রদান করতে হয়; যেমন বহু মুসলিম দেশে আজও প্রচলিত। কিন্তু এ সমাজে এর প্রাদুর্ভাবের কারণ কি? এর কারণ কি বিজাতির অনুকরণ নয়? পণপ্রথার কারণ, মুসলিমের দ্বীন থেকে ঔদাসিন্য, নারী প্রগতির নামে বেলেল্লাপনা ও পর্দাহীনতা। পারা খসে পড়লে আয়নার এবং ছিলা থাকলে কলার মূল্য ও কদর অবশ্যই থাকে না।
পাত্রীপক্ষের উচ্চ আশা; ঘুষ, হাদিয়া, বখশিশ্ বা পারিতোষিক দিয়েও বড় ঘর ঢোকা। উচ্চ শিক্ষিত সরকারী চাকুরী-জীবি পাত্রের জন্য কন্যা সহ লাখ টাকার নিলাম ডাকা!
কিছু না নিয়ে বিয়ে করতে বা দিতে চাইলে পাত্রীপক্ষ ভাবে, পাত্রের নিশ্চয় কোন ‘খুঁত- টুঁত’ আছে। একথা কানে এলে সদিচ্ছা নিমেষে মোটা পণে পরিণত হয়।
পণ না নিয়ে থাকলে সামান্য কলহ-দ্বনেদ্বর ফলে পাত্রীপক্ষ সন্ধির বদলে সহজে তালাক (খোলা) নিতে প্রস্ত্তত হয়। তালাক হলে দ্বিতীয় বিবাহে মোটা টাকার পণ নেওয়ার এরাদা পাক্কা হয়েই থাকে।
মেয়েকে বঞ্চিতা করে ছেলের নামে জমি-ভিটে ইত্যাদি রেজিষ্ট্রী করে দেওয়াও পণ প্রথার এক কারণ। তবে এইভাবে বঞ্চিতা করার এক কারণও পণ-প্রথা। যেহেতু মেয়ের বিবাহের সময় পণ ও যৌতুকের জন্য ২/৩ বিঘা জমি বিক্রয় করে অথবা না করে সর্বমোট প্রায় ৪/৫ বিঘা জমির মূল্য যদি ব্যয় হয়ে থাকে, তবে তার আর অন্যান্য অংশীদাররা কেন বাকী জমির ভাগ ঐ মেয়েকে দেবে? যদিও এরূপ বুঝা ও আচরণ আল্লাহর ভাগ-বণ্টন আইনে অবৈধ হস্তক্ষেপ।
সমাজে বিশেষ করে বিবাহ-শাদীতে উপহার উপঢৌকন দেওয়া-নেওয়ার প্রথা ও লৌকিকতার রেওয়াজ বড়। উপহারে প্রেম ও ভালোবাসা বর্ধিত হয়। নববধূর মন যেমন এই শুভ মুহূর্তে নতুন মানুষদের নিকট থেকে উপহার রূপে কিছু পেতে আকাঙ্ক্ষী হয়, তেমনি হয় নব জামাতার মন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনুভূতিহীন পাত্রীপক্ষের জবাব থাকে ‘চায় না তো কি দোব? চাক্ তবে দোব।’ ফলে সেই আকাঙিক্ষত লৌকিকতার সামান্য উপহারটুকু ‘চাওয়া’র ছাঁচে পড়ে ভবিষ্যতে অসামান্য পণরূপে প্রকাশ পায়।
আবার পাড়ার ‘শাঁকচুন্নী’দের কথায় নিজেদের সম্ভ্রম রাখতে গিয়ে অনেক বরের মা দেখাদেখি পণ চেয়ে বসে। কনে সুন্দরী হলেও অনেকে পণে টাকা, জমি, টিভি, গাড়ি না নিয়ে চালাকী করে জামাই-বেটীকে সাজিয়ে দিতে বলে!
‘করেছিনু পণ, লইব না পণ বৌ যদি হয় সুন্দরী,
কিন্তু আমায় বলতে হবে সবর্ণ দেবে কয় ভরি?’
কিন্তু এই পণপ্রথার অনিবার্য পরিণতি কি?
এই বরপণ দিতে না পারলে শবশুরবাড়িতে কন্যার ভাগ্যে জোটে অকথ্য নির্যাতন, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, গঞ্জনা, ভৎর্সনা। স্বামী বা তার বাড়ির লোকের পাশবিক অত্যাচার, অনাদর, অবহেলা। কমপক্ষে হতে হয় স্বামীর সোহাগহারা। পরিশেষে বিবাহ-বিচ্ছেদ; নচেৎ বধূর আত্মহত্যা অথবা লোভী পাষন্ডদের পরিকল্পিত বধূহত্যা।
এই ভয়েই নারী নারীর দুশমন। মাতৃজঠরে কন্যা-ভ্রূণ হত্যা করা হয়। জন্মের পরও কন্যাহত্যা করা হয়। পরপর কন্যা জন্মালে স্বামী ও তার বাড়ির লোক বধূর প্রতি বেজার হয়ে যায়। এদের অবস্থা হয় সেই জাহেলী যুগের মানুষদের মত; যাদের-
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدّاً وَهُوَ كَظِيمٌ، يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ﴾
‘‘কাউকেও যখন কন্যা-সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। ওকে যে সংবাদ দেওয়া হয় তার গ্লানি-হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। (সে চিন্তা করে,) অপমান সহ্য করে ওকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে! সাবধান! ওরা যা সিদ্ধান্ত করে তা অতি নিকৃষ্ট।’’[3]
এই পণের কারণে স্বামীর ভাগ্যে মনমত স্ত্রী জোটে না। স্ত্রীর নির্মল প্রেম ও শ্রদ্ধা থেকে হয় বঞ্চিত। ‘তীর-বিঁধা-পাখী’ কখনো কি গান গাইতে পারে? নিজ পিতাকে যে পথে বসিয়েছে তাকে সুখ-সিংহাসনে কোন চক্ষে দেখবে? এর ফলে স্বামী স্ত্রীর দেহের স্পর্শ পায়, কিন্তু মনের নাগাল পায় না। কাজ পায় কিন্তু ‘খিদমত’ পায় না। যেমন শবশুর-বাড়িতেও সে হয় মানহারা, ওজনহীন।
আর পাত্রীপক্ষের কথা? কত মেয়ের বাপ এই পণ-বন্যায় হচ্ছে ধবংস, পথের ভিখারী। পণের অভিশাপে নেমে-আসা দারিদ্র ও সহায়-সম্বলহীনতা তাকে ঠেলে দিচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির পথে। বর বা তার বর্বর বাপ নিজের বিলাস-উদ্যান গড়তে উজাড় করে দিচ্ছে কনের বাপের ক্ষুদ্র নীড় খানিকে!
এতে কি ঐ লোভাতুর সংসারে শান্তির কিরণ থাকে? নেমে আসে নিরন্তর অশান্তি ও কলহের ছায়া।
এই সর্বগ্রাসী যৌতুক প্রথার ভয়ানক আক্রমণের ফলে সমাজে কত বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। পণ দিতে না পারায় বিবাহ না হলে অথবা বিলম্ব হলে বেড়ে চলে অবৈধ প্রণয়, ব্যভিচার, বেশ্যাবৃত্তি। পণ আনে অন্যান্য পাপ। গানবাজনার কথা বলতে গেলে পণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলে, ‘গান-বাজনা হারাম, আর পণ নেওয়া হারাম নয়? গান-বাজনা হলে বিয়েতে থাকবে না, আর পণ-নেওয়া বিয়েতে কি করে অংশগ্রহণ করেছ?’
পণপ্রথার মহামারীর কারণেই নারী-শিক্ষার গুরুত্ব যাচ্ছে কমে। কারণ বিয়ের সময় টাকাই যখন লাগবে তখন আবার শিক্ষা-দীক্ষা, আদব দানে কি লাভ? মেয়ের চরিত্র ও ধর্মের দিকটা খেয়াল করার প্রয়োজন কি? বরং টাকার অভাবেই কত শিক্ষিতার বিবাহ হচ্ছে অধম নিরক্ষরের সাথে। তাই বহু মূর্খ অভিভাবকের মন বলে,
‘কন্যা ঘরের আবর্জনা, পয়সা দিয়ে ফেলতে হয়,
রক্ষণীয়া পালনীয়া শিক্ষণীয়া আদৌ নয়।’
পণ থেকে বাঁচার জন্য অভিভাবক মেয়েকে করছে মেহনতী, সবনির্ভরশীলা, ঠেলে দিচ্ছে পর্দাহীনতার পথে। নারী-পুরুষের অবাধ মিলামিশার চাকুরী ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যভিচারের পথে। ঘরে-বাইরে তাকে সুযোগ দিচ্ছে অবৈধ প্রণয়ে; ভাবছে, ‘ঘটে তো ঘটে যাক, পটে তো পটে যাক!’ কারণ, মেয়ে নিজেই স্বামী নির্বাচন করে নিতে পারলে তাদের রেহাই! কিন্তু ফল তাতে বিপরীত হয়ে কেবলমাত্র দুর্নাম এবং শবশুরবাড়িতে অকথ্য নির্যাতন ও দুঃখ তার সাথী হয়। আর সর্বশেষে পণ বা যৌতুক দিতে না পারলে বিচ্ছেদ ছাড়া আর কি?
পণ চাই। নগদ চাই। ধারের কারবার নাই। এত খরচ, এত কিছুর পর বিয়ে ঘুরে যাবে। বর উঠে যাবে বিবাহ মজলিস থেকে; যদি কিছু টাকা বাকী থেকে যায় আক্দের সময়! এই ধৃষ্টতার ফলে কনে ও তার বাপ-মায়ের মাথায় কত বড় বজ্রাঘাত যে হয় তা অনুমেয়। কিন্তু সে আঘাত সমাজের মুখে কেবল ‘আহা’ হয়েই থেকে যায়। কনের আত্মহত্যার খবর শুনেও মনে আতঙ্ক আসে না। নিস্তেজ জড় সমাজের অভ্যন্তরে কোন চেতনা, কোন অনুভূতি, কোন আন্দোলন আনতে পারে না। এর কারণ অনেকটা এই যে, এই আঘাত যে খায় সেই এর জবাবে আরো বড় আঘাত দেয়। সুতরাং মার খেয়ে ও মার দিয়ে সমাজের অবস্থা হয়েছে মার-প্রতিযোগিতার মারমুখী কুশ্তীগীরদের মত। তাই শক্ত মাশুলে তা কোন আসরই করে না। কিন্তু এই মারে মারা পড়ে তারাই, যারা কুশ্তীগীর নয়। অর্থাৎ যারা কেবলমাত্র কন্যার পিতা অথবা যার কন্যার সংখ্যা তুলনামূলক বেশী।
অনেক ক্ষেত্রে পণ নেওয়ার মত পাপের দায়িত্ব বর অথবা বরের বাপ স্বীকার করতে ইতস্ততঃ করে। একটু দ্বীনদরদী যুবক হলে নিজে পণ চায় না, কিন্তু মা-বাপ চায়। সে যদি তাদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে মা-বাপের নাকি নাফরমান হয়ে যায়। কারণ, ‘মা-বাপ নারাজ হলে খোদা নারাজ!’ তাদেরকে নারাজ না করে মাতৃ-পিতৃভক্তির পরিচয় দেয় এবং স্রষ্টার অবাধ্য ও সৃষ্টির বাধ্য হয়ে পরের গলায় ছুড়ি চালায়। পক্ষান্তরে অন্যান্য ক্ষেত্রে মা-বাপের কথায় কোন আমলই দেয় না।
আবার মা-বাপকে বললে বলে, ‘ছেলে মানে না, নিতে চায়।’ কিন্তু এই বলে তারা ছেলের কাছে অসহায়তা ও পিতামাতা হবার অযোগ্যতার প্রমাণ দেয়। প্রকৃতপক্ষে এসব কিছুই লুটেরাদের একটা পরিকল্পিত ছলনা মাত্র। পরের টাকা আত্মসাৎ করে সমাজের চোখ থেকে আত্মগোপন করার এক অপকৌশল।
অনেকে এ বড় অঙ্কের অর্থকে ‘পণ’ ব’লে নিতে লজ্জাবোধ করে। তাই ঋণ, সাহায্য বা ব্যবসার পুঁজি ইত্যাদি নাম দিয়ে সমাজের চোখে ধূলো দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে তো আর ফাঁকি দেওয়া যায় না।
চিরসাথী, শয্যাসঙ্গিনী ও অর্ধাঙ্গিনীকে টোপ বানিয়ে তাকে নানারূপ যন্ত্রণা দিয়ে অর্থ শিকারের বুদ্ধি, একটি নারীকে পণবন্দিনী করে সন্ত্রাসীর মত তার বাপের নিকট মুক্তিপণ চাওয়ার কৌশল, নিরীহ নারীকে জুয়ার গুটি করে অর্থলুটার ধান্দা, নির্লজ্জ বেহায়া ভিখারীর মত অন্যের নিকট হাত পেতে অর্থ আদায়ের মত ধৃষ্টতা কি কোন মুসলিম, কোন মানুষের হতে পারে?
শীতের শাল চাই, ঈদের সেলামী চাই, মেলা দেখতে (?!) হাতখরচ চাই, বর্ষায় জামাই ও তার চোদ্দগুষ্ঠির জন্য গামছা চাই, সাতশ পরিবারে বিতরণযোগ্য আম-কাঁঠাল চাই, এ চাই, ও চাই। কোন্ অধিকারে এত চাই-চাই? শুধু এই জন্য নয় কি যে, বিয়াই-বাড়ির একটা মানুষ (বউ)কে খোরপোশ সহ তারা তাদের পদতলে অনুগ্রহ করে আশ্রয় দিয়েছে তাই?!
অথচ একটি জীবন; যে তার যথাসর্বসব, আত্মীয়-সবজন, মা-বাপ সকলকে ছেড়ে তার দৈহিক খিদমতকে শবশুর-শাশুড়ীর এবং তার দেহ-যৌবনকে স্বামীর পদতলে উৎসর্গ করার কোন মূল্য নেই?
বাকী থাকল যদি কোন মা-বাপ তার মেয়ে-জামাইকে কিছু যৌতুক, কিছু উপহার খুশী হয়ে সেবচ্ছায় দেয়, তবে তা দূষণীয় নয়; না দেওয়া, না নেওয়া। নবী (সাঃ) তাঁর কন্যা ফাতেমাকে কিছু যৌতুক দিয়ে স্বামীর বাড়ি পাঠিয়েছিলেন। যৌতুক হিসাবে তাঁকে দিয়েছিলেন একটি পশম-নির্মিত সাদা রঙের চাদর বা বিছানা, একটি ইযখির ঘাস-নির্মিত বালিশ এবং একটি চর্ম-নির্মিত পানির মশক।[4]
তবে জামায়ের মনে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং না পেলে অন্তরে ব্যথা বা কারো নিকট অভিযোগ ও কথা যেন না হয়।[5]
মুসলিম সমাজে পণ এক মহামারী। একে রুখবো কিভাবে?
একে রুখার সবচেয়ে বড় ও একমাত্র উপায় হল পাক্কা ঈমান আনা। সমাজ যদি ঈমানের ছায়ায় আশ্রয় নেয় তাহলে এমন আরফার রোদের তাপ হতে সকলেই রেহাই পাবে। পরকালের উপর পূর্ণ বিশ্বাস না এলে এবং আল্লাহর কঠোর শাস্তিকে প্রকৃত ভয় না করলে পণ রুখা সম্ভব নয়। অর্থলোভ বড় মারাত্মক। যত পাওয়া যায় তত পেতে চায় আরো মন। কোন আইন, কোন সংগঠন পারে না এ মনের গতি রোধ করতে। কারণ, আকাশে ফাঁদ পেতে বনের পাখি ধরা অসম্ভব।
দ্বীন ও আল্লাহ-ভীতির মাধ্যমেই সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক শৈথিল্যের প্রগতি (!) বন্ধ হতে পারে। আর তা হলেই মানুষের মন থেকে রিপুর তাড়না দূরীভূত হবে। লোভ ও লিপ্সা কমে গেলে পরের ধনের প্রতি দৃক্পাত হবে না।
আল্লাহর আইন পর্দাপ্রথা প্রচলিত হলে, নারীদেহ নিয়ে অশ্লীল ও নোংরা ছবি, নারীদেহ নিয়ে ব্যবস্যা-বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বন্ধ ক’রে, নারী-সৌন্দর্য দুর্লভ ক’রে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করলে নারীকে পুরুষ পণ দিয়ে নয় বরং মন ও ধন দিয়ে খুঁজে আনবে।
সমাজের সকল সদস্যের ঐকান্তিক সত্যাগ্রহ ও প্রচেষ্টা যদি ‘পণ নেব না, পণ দেবও না’ এই শ্লোগানকে কর্মে রূপায়িত করা হয়, তবে পণ ‘হাড়োল’ এ বন হতে পলায়ন করে বাঁচবে।
সামাজিক যৌথ-বয়কটের মাধ্যমে পণ গ্রহীতাদেরকে অপদস্থ করলে পণপ্রথার বিলোপ সাধন হতে পারে। ‘পণ নেওয়া বিয়েতে অংশ গ্রহণ করব না, সে বিয়ে খাবও না, তার বরযাত্রীও যাব না’ -এই সংকল্প হতে হবে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যতীত তাতেও জয়লাভ সম্ভব নয়।
মসজিদের ইমামগণ পণ নেওয়া বরের বিয়ে না পড়ালে কিছুটা কাজ হতে পারে। তবে এর পরিণাম শুভ নয়। এতেও ভোট হবে আর সে ভোটে জিতে উঠাও কঠিন। কারণ, বর্তমানে সমাজের মানুষ ইমামদের উপদেশ অনুযায়ী চলে খুব কম; পরন্তু ইমামদেরকেই সমাজের নির্দেশ ও আদেশানুসারে বেশীর ভাগই চলতে হয়! তাছাড়া বিয়ে পড়াবার জন্য আরো কত নিম-মোল্লা কাযী বর্তমান।
সুতরাং দ্বীন, দ্বীনদার ও আলেম-ইমামদের যে সমাজে কোন মূল্যায়ন নেই, সে সমাজের ভ্রষ্টতার জন্য কেবল আলেম-ইমামদেরকে দায়ী করা ন্যায্য বিচার হবে না।
এক বড় আশা আছে ভাবী প্রজন্ম কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর উপর। এদের মধ্যে যদি দ্বীনী চেতনা ফিরিয়ে আনতে পারা যায়, তবে এরা, এই নওজোয়ানেরাই পারবে সমাজের এই দুর্গতির পথ অবরোধ করতে।
﴿وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
(হে মানুষ!) ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর নিঃসন্দেহে জেনে রাখ যে, আল্লাহর আযাব বড় কঠিন।’’[6]
অতএব হে যুবক বন্ধু! পণ দেখে নয়, বরং দ্বীন ও মন দেখে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেল। হ্যাঁ, তবে শুভকাজে দেরী করো না। আর তোমার এই শুভসন্ধিক্ষণে অশুভকে মোটেই স্থান দিও না। তবেই পাবে সেই সঙ্গিনী; যে হবে,
পতিপ্রাণা সতী অনুরাগমতি সবর্গসুষমা-সিক্তা,
প্রীতি-বন্ধনে আসিবে তোমার আপনারে করি রিক্তা।
[1] (ইরওয়াউল গালীল ২৬২১নং) [2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৮) [3] (সূরা আন-নাহল (১৬) : ৫৮-৫৯) [4] (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, সহীহ ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী ৩৩৪৯নং) [5] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/৯৯) [6] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৯৬)
nice article